এই দেশ নিয়ে লজ্জায় দুঃখে নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকব কোনো একদিন ভাবিনি..
স্বাধীনতা যুদ্ধকালের স্লোগান 'ওরা মানুষ হত্যা করছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি'
শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় রাজশাহী নগরীর শালবাগান মোড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে এ সময় হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেলযোগে আসা দুই দুর্বৃত্ত তাকে পেছন থেকে ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে দ্রুত পালিয়ে যায়। সংবাদপত্র সুত্রে জানা যায়, আরএমপির আরেকজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তার ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়েছে। এতে তার ঘাড়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘাড়ে বড় বড় মোট তিনটি কোপ রয়েছে। এতে গলার সামান্য অংশ বাদে পুরোটাই কেটে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা গেছেন।
রেজাউল করিমের স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো শত্রু থাকতে পারে বলে আমার ধারণা নেই, কারো সঙ্গে তার কোনো ঝামেলাও ছিল না।।’ আমি চাই এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত করা হোক যাতে খুনিরা উপযুক্ত শাস্তি পায়। এ ছাড়া আমার আর বলার কিছু নেই।’মেয়ে শতভী বিছানায় পড়ে থেকে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘বাবা কেন রাস্তায় পড়ে থাকবে?’ ছেলে সৌরভ বারবার বাবার লাশের কাছে যাওয়ার জন্য ছুটে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। সবাই তাঁকে ধরে রেখে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
অধ্যাপক রেজাউল করিম ‘কোমলগান্ধ্যা’ নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা সম্পাদন করতেন। তিনি ভালো সেতার বাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। ‘সুন্দরম’ সংগঠনের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার সেকশন অফিসার হাসান রাজা বলেন, তিনি একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। তিনি যে ধরনের লেখালেখি করতেন তা খুবই সাধারণ।তিনি আরও বলেন, রেজাউল স্যার তার গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সেখানকার কিছু মৌলবাদী লোকের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়েছিল।
পুলিশের ধারণা, ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে তিনি খুন হয়েছেন।কমিশনার শামসুদ্দিন বলেন, ‘অতীতে যেভাবে ব্লগারদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, একই কায়দায় অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যা করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে- হত্যাকাণ্ডে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী জড়িত।’ অধ্যাপক রেজাউল আগে কখনও হুমকি পেয়েছিলেন কি না, তা কেউ জানাতে পারেননি। তিনি লেখালেখির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। এলাকায় একটি গানের স্কুল খোলার কাজ করছিলেন। গত বছর ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ছাড়াও বিদেশি ও যাজক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর কয়েকটিতে খুনিদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের নজির দেখা যায়।
হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ ঘটনায় আগামীকাল রবিবার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে রাবি শিক্ষক সমিতি। আজ শনিবার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও একই বিভাগের সহকর্মী ড. মো. শহীদুল্লাহ্ বলেন, প্রফেসর রেজাউল সিদ্দিকীর মতো একজন নিরীহ মানুষ এভাবে হত্যার শিকার হতে পারে তা ভাবা যায় না। একের পর এক শিক্ষক হত্যার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা আর কোনো শিক্ষকের লাশ দেখতে চাই না। এসময় তিনি দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এ ছাড়াও শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে কুপিয়ে খুন করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলন কে । ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের। দুইদিন পর ক্যাম্পাসের বাসার পাশের ম্যানহোলের ভেতরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় সকালে হাটতে বের হলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে।
(অতঃপর স্যার হত্যাকান্ড নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে,এবং তার ফলাফল ভিডিও ছাড়া)
অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী ভালো সেতার বাজাতেন। তার সেতারের প্রতিটা তারে ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়ার সুর বেজে উঠতো। তিনি একজন সংগীত ব্লগার ছিলেন।
সেতারের প্রতিটা তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অধ্যাপকের মৃত্যুর দায় তার নিজেকেই নিতে হবে। সরকারের কোন হাত নেই এই মৃত্যুতে। তিনি কেন সেতার বাজাতে গেলেন? দেশে কি আর কোন কাজ ছিলোনা?
মাষ্টার কেন সেতার বাজাবে? তিনি ক্লাস শেষে ঘরে বসে মুড়ি খাইতে পারতেন ।
সুত্র : ভোরের কাগজ - জনকন্ঠ - বিডি নিউজ ২৪ - প্রথম আলো