বিষাদের ডাকঘর
মিথ্যের আসবাবগুলো কখনোই তোমার সাথে খেয়াপার হতে চায় নি। সময়ের দোলনায় দুলতেও তার কোনো আপত্তি ছিল না। তবুও সাদাকালো পর্দায় সাজিয়ে রেখেছিলে অদৃশ্য শীৎকার—আমি দেখেছি; কী দেখিনি সে প্রশ্ন আজ আর করিও না। ধারাপাত শেখার বিকেল আর মৌয়াল হওয়ার সন্ধ্যা ঝাপসা হয়ে গেছে বিয়োগের বাহানায়।
নির্বাচিত মুহূর্তরা বাঁকা সংলাপে চুপ হয়ে গেলো। লোভহীন ব্রা’র ওমে নেতিয়ে আছে সুখের নিপল। এখন রাত বাড়লেই ছুতারের ফরমায়েশ পালনে ঘুমন্ত শহর খেয়ে হাওয়ার বাড়িতে চিঠি লিখি।
০৫-০৬-১৪ খ্রি:, কাশিপুর, বরিশাল।
সাত পাহাড়ের কান্না
হলুদ পাতার পাঁজরে ভোরের কঙ্কাল খেলা করে। শাপলার উঠোনে খেলি গোল্লাছুট। তোমার দৃষ্টিতে ছায়ার আহবান—শরীরে আতরের পেলবতা। নিশিশব্দে জেগে থাকা রূপার কৌটা খুলে চুষে নেই রূপকথার পাপড়ি। মায়ামৈথুন শিহরণ তুলে যায় কাপালিক ধ্যানে। দেখি জানালার গ্রিলে খেলা করে পরির চোখ, জড়ানো কণ্ঠের বাঙলায়নে সে বুঝে যায় অসুখ আমার প্রিয় বান্ধব।
চাঁদকে বলি শুনে যাও দুঃখ জাগানিয়া সুর—আমি তো— দুখপাখির কুটুম উড়ে উড়ে বেদনা বিলাই।
০৯-০৬-১৪ খ্রি:, কাশিপুর, বরিশাল।
ঐকিক জীবন
আগুনস্পর্শে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম বাষ্পীয় ধ্যান। সে এখন পিপাসার সনদ নিয়ে এশিয়ার উপত্যকায়, আফ্রিকার অভ্যন্তরে তৃষ্ণার্ত হরিণীর হাহাকারে বেঁচে আছে। ফোরাতমুখি স্রোতে ডুবি আর ভাসি। তবুও অনার্যের আবাদি জমিনে শস্য ফলাই; আগলে রাখি সবুজের ভাষা। শিশিরের আলিঙ্গনে তুমি হীরাপালঙ্কে দোল খাও—আমি পিপাসার্ত বাউলের ছদ্মবেশে যৈবতী সানকির অপেক্ষায় থাকি।
আদরের সিরাপ খেয়ে অতীতের লোমশ বুকে ঘুমিয়ে কেটেছে সলাজ সময়। শোকাভিমানে থেমে আছে যৌথকাব্যের জাহাজ। জুয়ার আসনে চেনামুখ অচেনা হয়ে যায়। মাতালের মিছিলে তুমি-আমি ঐকিক জীবন।
১১-০৬-১৪ খ্রি:, কাশিপুর, বরিশাল।
দেয়ালের অভিমান
অসুখস্বাদের মিঠাই খেয়ে অসতী ব্যথার আজাব মসকো করছি। তুমি মেরাজ পথে জাগিয়ে দিও বিজলিরঙের ফানুস। বোবাসঙের আকুতি নিয়ে সেও আমাকেই ডাকুক।
সীমানা পেরিয়ে চলে এলে, আমি ছুঁয়ে দিতেই হয়ে গেলে প্রজাপতি। ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো তোমার পাখনার কারুকার্য। তখন আমার দোজখে পুড়ছিল দেয়ালের ঘোষণাপত্র। দৌলাদিয়ার পোট্রেটে সীমাবদ্ধ থাকলো না যুগমন্ত্রের এলান। রঙে রঙ ছড়িয়ে পড়লো শরীরময়। তোমার চারদিকে লাল দাগ। কোন রঙে সাজবে তুমি? যদি লাল রঙ মুছে দিয়ে হলুদ কিংবা সবুজ বেছে নাও। তবুও কাঁটাতারের ব্যবধান ঘুচবে না কোনো দিন!
১৩-০৬-১৪ খ্রি:, কাশিপুর, বরিশাল।
আলোর নকশা
যৈবতী বিষণ্নতা কতোকাল আমাকে আলোর ঘোরে বেঁধে রাখবে! সুড়সুড়ি ভুলে নিঃশব্দের অন্তর্বাসে পিপাসার্ত মায়ার পেখমনাচ দেখাবে। আমার সকালটা তোমার কোলে রোদ্দুর হয়ে খেলছে। আকাশছবি মাতাল খেয়ায় তুলে দিয়ে আমি নীল ছায়ায় জিরিয়ে নিই।
তোমার ছায়ার অবয়বে কাঁদছে সন্ধ্যা—আমি কাঁদছি মাদুলির শহরে। মাগো আরো কিছু কান্না পাঠিয়ে দাও—রৌদ্রনদী দাও—কতো দিন হাসির ফোয়ারায় স্নান করি না।
০৫-০৭-১৪ খ্রি:, দক্ষিণ ভুতের দিয়া, বাবুগঞ্জ, বরিশাল।
মাশুকদ্রোহ
আমাকে আর কতো বার জাহান্নামে পাঠাবে? আমিতো আগুনে পুড়ে আগুনেই জন্ম নিয়েছি। পুড়ে পুড়ে অগ্নিকুণ্ড হয়ে গেছি। ইদানীং বিয়োগশব্দে বিভোর হয়ে থাকি। পতনের বংশবিস্তার কিছুতেই রোধ করতে পারি না। আপাদমস্তক তুমি, তুমি এবং তুমিতেই নিমজ্জিত হয়ে আছি; তা এভাবে আর কখনোই বুঝতে পারি নি।
বৈরাগ্যের তেলওয়াতেও তুমি ছিলে সরব। রাঙাফড়িঙয়ের স্পর্শে দোয়েল সকালগুলো অগ্রগামী সাঁতারে নামিয়েছিলাম। কৈশোরের এতেকাফদিনে তোমার বুকের খামে কতো পত্র লিখেছি তার হিসেব নেই। অবশিষ্ট উপসংহারে এই আমি—তুমি নামের জিকিরেই আটকে আছি। তবুও করুণাকাতর চোখ এড়িয়ে দীর্ঘশ্বাসের আলো পাঠালাম; প্রাপ্তি সংবাদ জানিও।
২৮-০৭-১৪ খ্রি:, দক্ষিণ ভূতের দিয়া, বাবুগঞ্জ, বরিশাল।
বই: কালো হাসির জার্নাল
লেখক: সানাউল্লাহ সাগর
ধরন: কবিতার বই
প্রকাশকাল: এপ্রিল ২০১৬ খ্রি.
প্রকাশনী: চৈতন্য
মলাটমূল্য: ১৪০ টাকা
পৃষ্ঠা: ৪৮
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৩