আজ হতে ১০০ বছর পূর্বে পৃথিবী যা ছিল আজ তা নেই। আমূল পরিবর্তন ঘটেছে পরিবেশ, প্রযুক্তি, সমাজ ব্যবস্থায়। ভবিষ্যতেও পৃথিবীতে ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। মানবজাতির বিকাশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে আজ হতে ১০০ বছর পরে তা নিয়ে প্রায় সবারই বিস্তর কৌতুহল রয়েছে। আজ তাই ভাবলাম ঘুরিয়ে আনি আপনাদের ভবিষ্যতে আমার টাইমমেশিনে করে! সো ফাস্টেন ইওর সিট বেল্টস ডিয়ার ব্লগারস!
পানির নিচে ভাসমান শহর!
সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে পৃথিবীর নানা বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সর্বোত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তা আটকানো যায়নি। হাজার হাজার মানুষের সংকটে আকাশ বাতাস হয়েছিল বিষাক্ত। সে সমস্যার মোকাবেলা করতেই পৃথিবীর এক অংশের মানুষ পানির নিচে ভাসমান শহর তৈরি করে বসতি গড়েছে! এসব শহরে আধুনিক আরাম, আয়েশ, নিরাপত্তার সকল সরঞ্জাম আছে। পানি, খাদ্য এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার চলমান মজুদে ভরপুর! মাটির ওপরে স্থায়ী যেকোন শহরের তুলনায় কোন অংশে কম নয়!
জোয়ার ও ঢেউ শক্তি, সমুদ্রতীর হতে আগত বায়ু, সৌর শক্তি ইত্যাদি নানা সোর্স হতে পাওয়ার উৎপাদিত হয় এ সকল শহরে। খাদ্য ফলানো হয় উন্নত প্রযুক্তিতে। পানি লোকালি আসে যা লবন সরিয়ে বিশুদ্ধ করে নেওয়া হয়। একেকটি ভাসমান শহরে লাখের মতো মানুষও বসবাস করছে! শহরগুলোতে ভিন্ন সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটছে বসবাসকারীদের জাতি, জীবনযাত্রা, সামাজিক নিয়মনীতির ওপরে ভিত্তি করে। প্রতিটি শহর নিজের আংঙিনায় নিজস্ব বেষ্টনী তৈরি করেছে। সমুদ্রতলের পৃথিবীতেও মানবজাতির বিভক্তি পরিলক্ষিত হয়! সমুদ্রের নিচে স্থাপিত এ সকল শহর মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর সর্বপ্রথম পন্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুগে যুগে প্রকৃতি নানা কারনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে, রিসোর্স ফুরিয়ে যে দুর্ভোগ কয়েক যুগ আগে চরম আকার ধারন করেছিল তা কমাতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে।
থ্রি ডি প্রিন্টেড খাবার, বাড়ি এবং যেকোনকিছু!
থ্রি ডি প্রিন্টারে আস্ত বাড়ি হয়ে যাচ্ছে তৈরি স্বল্পসময়ে! শুধু তাই নয় তাদের ভেতরের ফার্নিচারগুলোও প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসছে একইসাথে!
থ্রি ডি প্রিন্টারে খাবার তৈরি ১০০ বছর আগেই সম্ভব হয়েছিল। আজকাল এটি দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। পছন্দের শেফদের ডাউনলোডেড খাবার প্রিন্ট হয়ে খাবার জন্যে তৈরি নিমিষেই! প্রতিটি রান্নাঘরে থ্রি ডি প্রিন্টার থাকছেই!
প্রকান্ড টাওয়ার ট্রাডিশনাল শহরকে প্রতিস্থাপিত করা শুরু করেছে!
বিশ্বব্যাপী পরিবেশের নানা দূষন ও সমস্যা, প্রাকৃতিক রিসোর্চ নিঃশেষিত হওয়া, এবং জনসংখ্যার মারাত্মক বর্ধন মানবসভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এ যুগে মানুষ ধীরে ধীরে সকল সমস্যা সমাধান করে নতুনভাবে সভ্যতাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। দেশে দেশে সরকার বিশ্বের পরিত্যাক্ত স্থানগুলো প্রচুর অর্থ ব্যায়ে বসবাসের যোগ্য করে তুলছে এবং জনগনকে স্থানান্তরিত করছে। উন্নত দেশগুলো এ কাজটি সহজেই করছে। তবে বিশ্বের একটি বড় অংশ অনুন্নত দেশের তকমা পরে আছে। তারা নিদারুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে অনুর্বর জমি সম্পন্ন এবং প্রাকৃতিকভাবে বিধ্বস্ত এলাকা গুলোকে বসবাসের যোগ্য করে মানুষ প্রেরনে।
এ সমস্যা সমাধানে নতুন একটি সভ্যতার প্রচলন সবে শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপি। স্থাপত্য শিল্পে বিপ্লব ঘটে একটি পুরো শহরকে বিশাল স্ট্রাকচারের মধ্যে আনা সম্ভব হচ্ছে! এসব টাওয়ারের উচ্চতা সাধারনত ১.৫ কি.মি. এবং লক্ষ্য মানুষ আবাস গড়তে পারে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে আদিম যুগের সর্বোচ্চ টাওয়ার গুলোর পাশেও কি ভীষন প্রকান্ড এরা! উন্নত প্রযুক্তির রোবট এবং মেশিনারিস ব্যবহারের ফলে এসব স্থাপত্য তৈরি সম্ভব হয়েছে। নয়তো নির্মান সময়সীমা কোথায় পৌঁছাত কে জানে! এই টাওয়ারগুলো এত প্রকান্ড, এবং মজবুত ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে প্রাকৃতিক দূর্যোগের আঘাতেও তেমন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই!
এসব টাওয়ার বা শহরে মানুষের প্রয়োজনীয় সবকিছুরই ব্যবস্থা থাকছে। যানবাহনগুলো মানুষকে সোজাসুজি, ওপরে নিচে বা কোনাকুনি নিয়ে উড়ে চলেছে। উন্নত ক্যাবল ডিজাইন এবং তড়িৎচুম্বকীয় চালিকাশক্তিতে তৈরি আধুনিক এলাভেটর উচ্চ মাত্রায় গতিসম্পন্ন। যত উঁচু তলাই হোক না কেন মুহূর্তেই একবারে আরোহীকে নিয়ে যাচ্ছে। আদিম যুগের মতো মাঝপথে থামছে না অন্য আরোহীকে তোলার জন্যে।
এই অভাবনীয় নতুন ধরনের শহরগুলোকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেবার প্রচেষ্টা চলছে। কেননা এতে প্রকৃতির ওপরে অত্যাচার কমে পৃথিবী আবারো বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠবে! বিশ্বব্যাপি আস্তে আস্তে আদিম উপায়ে তৈরি শহর, রাস্তা, বিল্ডিংগুলো উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং জমি খালি করা হচ্ছে পরিবেশকে বসবাসের যোগ্য করার জন্যে। সিভিল ইনজিনিয়ািরিং, যানবাহন, স্থাপত্যশিল্পে যুগে যুগে অনন্য সাধারন বিপ্লব ঘটায় এসব কিছু সম্ভব হচ্ছে। এখনো বিশ্বে অনেক ট্রাডিশনাল শহর রয়েছে। তবে আধুনিক শহররূপি টাওয়ারগুলো আজ হতে ৫০ বছর (আমাদের এখন থেকে ১৫০ বছর) পরে সভ্যতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। মানব ও পরিবেশে মৈত্রী গড়বে নতুন করে!
বিনোদন!
ত্রিমাত্রিকতার অনন্য উৎকর্ষতায় বিনোদন জগৎ বাস্তবের চেয়েও বেশি বাস্তব হয়ে গিয়েছে। অভাবনীয় যেকোন কিছু হচ্ছে নিজের ড্রয়িং রুমে। নামী খেলোয়াড় বল ছুড়ে মারছেন, প্রকান্ড ডাইনোসরের হুংকারে দালান হচ্ছে প্রকম্পিত! টেলিভিশন স্ক্রিনে যা হচ্ছে তার অনুভূতি মানব মস্তিষ্কে ট্রান্সফার হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যে দর্শকও অনুভবে যান ভিজে, তীব্র শোকে কাতর হন, বিপুল আনন্দে আপ্লুত হন। ভুলে যান নিজেদের বাস্তব জীবনের উপস্থিতি! আদিম যুগের মতো বোতাম টিপে বা স্পর্শ করে অপশন পরিবর্তন করতে হয়না আর। আজকাল খুব ট্রাডিশনাল টিভিতে মুখে বলে অপশন পরিবর্তন করা হয়। তবে বেশিরভাগ মডেলেই মস্তিষ্কে চিন্তা করে পছন্দসয়ী অনুষ্ঠানটি সেকেন্ডের কম সময়ে চোখের সামনে হাজিরে সমর্থ হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।
চাঁদে মানব বসতি গড়ছে!
এবার ছুটিতে কোথায় যাওয়া যায় সে সিদ্ধান্ত আরো কঠিন হয়ে গিয়েছে মানুষের জন্যে। পৃথিবীর বাইরের গ্রহগুলোও যে মানুষের বসবাসগযোগ্য হয়ে উঠেছে! স্পেস ভ্রমন পৃথিবীর একটি বড় জনগোষ্ঠির সাধ্যের মধ্যে এসে গিয়েছে। চাঁদে অনেককগুলো স্থায়ী কলোনি স্থাপিত হয়েছে। সেল্ফ এসেম্বলি অফ ন্যানোটেকনোলোজির সহায়তায় এসব বাসস্থান ঘন্টা থেকে দিনের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে।
জেনেটিক ইনজিনিয়ারিং এর উত্তরোত্তর উন্নতিতে মানুষ চাঁদের গ্র্যাভিটিতে পুরোপুরি অভ্যস্ত! স্থায়ীভাবে বসবাস কারীদের মধ্যে রয়েছেন নানা সার্ভেয়ার, অনুসন্ধানকারী, বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ। আশা করা হচ্ছে আর কয়েক যুগের মধ্যেই পৃথিবীর জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশ চাঁদে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। যা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নানা সমস্যা দূর করে দেবে!
এছাড়াও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ চাঁদে আসছেন বেড়াতে এবং ট্যুর গাইডেরা ঘুরে দেখাচ্ছেন চাঁদের আনাচে কানাচে। যদিও তার প্রয়োজন কমই। ভার্টিকাল রিয়েলিটি সিমিউলেশনের সহায়তায় পৃথিবীতেই প্রতিটি সুক্ষ্ণ ডিটেইল যোগে চাঁদের পরিবেশ ভ্রমনার্থীদের জন্যে অনেকদিন ধরেই খোলা হয়েছে!
যন্ত্র মানব!
মানুষের নানা অংগপ্রত্যংগ ভার্চুয়াল অথবা রোবটিক অংগে স্থানান্তরিত হচ্ছে। মানব এবং মেশিনের মেলবন্ধনে তৈরি হচ্ছে উন্নত এক প্রজাতি! মানব মস্তিস্কে আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স প্রোগ্রাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে জ্ঞান ও গুন সাধনায় পেতে হয়না প্রাচীন যুগের মতো। এ যুগে যেকোন কিছু ব্রেইনে ডিরেক্টলি ডাউনলোড এবং রক্ষনাবেক্ষন করা হয়ে থাকে। উদাহরন হিসেবে বলা যায় একজন মানুষ মুহূর্তেই যেকোন ধরনের খেলা রপ্ত করতে পারে, আত্মরক্ষায় দক্ষ হতে পারে!
যদিও এ যুগের সকল মানুষ এই পরিবর্তনে আনন্দিত নয়। ট্রাডিশনাল, আদি চিন্তার মানুষেরা যন্ত্র শরীরে রিপ্লেস করতে অস্বস্তি বোধ করেন। তারা যেন আজ হতে ১০০ বছর আগের আদিম মানুষ। যাদের সবকিছু ঈশ্বরপ্রদত্ত ছিল! আধুনিক প্রযুক্তিতে আস্থাহীন এসব মানুষ চারিপাশের পরিবর্তনকে অদ্ভুত মনে করছেন। যার কারনে সমাজে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। আদিম মানুষ ও আধুনিক মানুষে বিভক্তি প্রতি যুগেরই নিত্য সংগী!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ভবিষ্যৎ নিয়ে ওপরের ছবি, তথ্যগুলো নানা গবেষনা থেকে এসেছে। এখন পরিবেশ, প্রযুক্তি কোথায় আছে তার ওপরে ভিত্তি করে আজ হতে ১০০ বছর পরে কোথায় যাবে তার একটি বাস্তবসম্মত গবেষনাভিত্তিক অনুমান। অন্তর্জালের নানা অলিগলি ঘেটে টাইমমেশিনটি তৈরি করা হয়েছে । ভবিষ্যতের সফরে আমার সংগী হবার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে!
নতুন একটি বছরের পদার্পন করতে যাচ্ছি আমরা। সবাইকে নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই! দোয়া করি সারাটি বছর আপনাদের জীবন সুখ, সমৃদ্ধি, সাফল্যে ভরে উঠুক। হ্যাপি নিউ ইয়ার!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৩