somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ২১) : পশ্চিমি কালচারে নারী পুরুষের অবাধ ইনটিমেসি এবং রক্ষনশীল সমাজের স্তব্ধ আমি! (১৮++)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কানাডায় থাকাকালীন অনেক ধরনের কালচার শক পেয়েছি, চোখের সামনে কল্পনাতীত অনেককিছু দেখেছি, শুনেছি। আজকে সবচেয়ে বড় কালচার শকের বিষয়টি নিয়ে লিখব। শিরোনাম দেখেই অনুমান করতে পারছেন তা কি হতে পারে? ভূমিকা শেষ, এবারে স্মৃতিকথন শুরু করে দেই।

আগের পর্বগুলো:
কানাডার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (২য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (৩য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (চতুর্থ পর্ব)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৫)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৬) ১৮+
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৭) আমার ভারতীয়, পাকিস্তানী অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৮) কিছু ভারতীয় যে কারণে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৯): কেন প্রবাসি বাংলাদেশি বাচ্চারা কানাডিয়ান/ভারতীয় হয়ে যাচ্ছে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১০) সমকামিতা ১৮++
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১১) - কিশোরিবেলায় কানাডার প্রথম ভালোলাগা - এক গ্রিক দেবতারূপী সুদর্শন কানাডিয়ান ছেলে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১২) - বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাংলাদেশকে কিভাবে দেখে এবং আমার স্কুল জীবনে তার প্রভাব
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৩) - কানাডায় বিয়ে, লিভ টুগেদার, ডিভোর্স এবং কিশোরি আমি (১৮+)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৪) - বাংলাদেশীদের বিয়ে ভাবনা নিয়ে বিদেশীদের দৃষ্টিকোন এবং আমার নারী জীবন
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৫) - মায়ের বয়ফ্রেন্ড ও অত্যাচারিত মেয়েটি এবং অবাক, অসহায় আমি (কঠিনভাবে ১৮++)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৬) - পশ্চিমি অনেক নারীর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নীরবে সহ্য করার কারন এবং বোকা আমি
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৭) : কানাডায় আমার প্রথম হ্যালুইন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে vs এক আবেগী জাতির পাগলামি
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৮) : পশ্চিমের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড কালচার vs মফস্বলের প্রেম এবং চমকে যাওয়া আমি!
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৯) : কানাডিয়ান কৈশোর জীবনের কিছু উচ্ছৃঙ্খলতা এবং মফস্বলের বোকা মেয়েটি
কানাডার স্কুলে একদিন (পর্ব ২০) - জানি না আজকের পর্বের নাম কি হওয়া উচিৎ? অনেক ভেবেও কোন নাম খুঁজে পাইনি!

কানাডায় স্কুল যাওয়ার পথটুকু আমি খুব এনজয় করতাম। আমার বাড়ি থেকে স্কুল দশ মিনিটের পায়ে হাঁটার পথ ছিল। বাংলাদেশে গাড়িতে স্কুলে যেতাম। কিন্তু কানাডায় একা নিজে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যেতে অন্যরকম স্বাধীনতা বোধ করতাম। পাহাড়ি এলাকা ছিল। স্কুলের চারিপাশ ঘেরাও করে সারি সারি উঁচু পাহাড় দাড়িয়ে! সেই পাহাড়গুলোর ওপরে ছাদ হয়ে ঝকঝকে স্বচ্ছ নীল আকাশ! স্কুলে যাবার পথে একটা ঢালু মতো জায়গা পরত। তার কিছু আগে কচিকলাপাতা রংঙের ঘাসময় ছোট্ট একটা মাঠ, এবং সেই মাঠে প্রকান্ড একটা গাছ! আমি লাফিয়ে গাছটার একটা বড় ডাল ধরে ঝাঁকাতাম নিজের মাথার ওপরে। কখনো শুভ্র চিকচকে বরফ কুচি, বা শীতল ও কোমল বৃষ্টির ফোঁটা আর কখনো শরৎ এর ঝড়ে পড়া হলুদ পাতা মাথার ওপরে পরত। আমার তো বন্ধু ছিলনা প্রথমদিকে তেমন, এরাই আমার বন্ধু ছিল। এদের সাথে এভাবেই মিশে যেতাম আমি। ঢালুর আশেপাশে সুন্দর ছোট ছোট হলুদ রং এর বুনো ফুল ফুটে থাকত। সেগুলো যেন পায়ে পিশে না যায় সেজন্যে ঢালুটা সাবধানে পা ফেলে ফুলগুলোকে এড়িয়ে আসতাম। তারপরে দুপাশে মাঠঘেরা পিচঢালা পথ পেরিয়ে আমার স্কুলের চৌকাঠ!

আজ গল্প বেশ প্রথমদিক থেকে শুরু করব। আমি তখন নতুন নতুন। খুব চুপচাপ ভয়ে ভয়ে থাকি। ভাষা সমস্যায় বন্ধু তেমন নেই, একা একা বসি। চমকে চমকে উঠি বিভিন্ন আজব কানাডিয়ান রীতিনীতি দেখে। তবে পড়াশোনার গ্রিপটা ধরতে শুরু করে দিয়েছিলাম। নতুন সেমিস্টারে আমার ইংলিশ ক্লাসে একটা ছেলে ছিল নাম থমাস। ছেলেটা স্কুলের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং কুখ্যাত ছাত্র ছিল। বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সুদর্শন নবাবজাদা। ওকে একনামে সবাই চিনত। আমি অতোটা চিনতাম না। বেশ আত্মভোলা মানুষ আমি এমনিতেই, আর কানাডায় এডজাস্ট করার চাপে আশেপাশের অনেককিছুই চোখ এড়িয়ে যেত।
ওকে আমি প্রথম নোটিশ করি টিচারকে বলা ওর অমার্জিত কথাবার্তায়। একবার টিচার আমাদের সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন উইকেন্ডে কে কি করল তা নিয়ে। তিনি বলছেন, "বাড়ির অনেক কাজ ছিল। হাউস ক্লিনিং, ডিশিং, লন্ড্রি ইত্যাদি।" তখন থমাস খুব অহংকারী ভাবে বলে উঠল, "আমাদের তো মেইড আছে প্রতিটি কাজের জন্যে। এসব কাজ কেউ নিজে করে নাকি! গরিব হলে কত কষ্ট! উইকেন্ডে বাড়ির কাজ করতে হয়। হাহা।" আমি থ! টিচারকে কেউ এমন করে কি করে বলে! টিচার একটু বিব্রত হলেও ভীষন বিনম্র হওয়ায় পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন ভদ্রভাবে। আমি হতভম্ব ভাব কাটিয়ে সেই প্রথম মাথা ঘুরিয়ে পেছনের বেঞ্চে বসা থমাসকে খেয়াল করে দেখলাম। খুব লম্বা, চুল ছোট করে ছাটা, কাটা কাটা চেহারা। তবে আমার কাছে সুদর্শন মনে হয়নি শুধুমাত্র ওর চোখমুখের প্রবল অহংকারী ভাব দেখে। আমি অহংকারী মানুষদেরকে ছোটবেলা থেকেই তীব্রভাবে অপছন্দ করি। মানবজাতির হাজার দোষের এই দোষটি আমার সহ্যই হয়না! লাভ এট ফার্স্ট সাইট যেমন হয়, তেমন করে আমার হেইট এট ফার্স্ট সাইট হয়ে গেল। পরে খেয়াল করে দেখেছিলাম এছাড়াও আরো খারাপ দোষ আছে ছেলেটার। মেয়েদের পেছনে খুব লাগত। ফ্লার্ট করে কথা বলত সবার সাথে। কিছু কিছু মেয়ে ভীষন পছন্দ করত, আর কেউ কেউ বলত, "আই হেইট থমাস!" তবে ওভারঅল নারীকূলে ওর একটা গ্রহনযোগ্যতা ছিল। দে লাভ হিম অর হেইট হিম, দে সারটেইনলি ডিডন্ট ইগনোর হিম!

আমি সামনের বেঞ্চে চুপচাপ এককোনে বসতাম। আমার ভিন্ন বেশভুষা ও চুপচাপ থাকাটা ওর কাছে ইন্টারেসটিং লাগত বোধহয়। মাঝেমাঝেই আমার দিকে তাকাত, টিজ করার মতো কিছু বলতে গিয়েও বলত না। একদিন আমার দিকে দুষ্টু টাইপ হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্যে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল আজ বিরক্ত করেই ছাড়বে। ডাইরেক্ট কোন কথা ওর সাথে তখনো হয়নি। সেদিনের ঘটনায় আমার ওকে পছন্দ হয়না প্রথম থেকেই, আমি ওর হাত কোনভাবেই ধরব না। কি করা যায়! আমি করলাম কি, নিজের হাতটা বাড়িয়ে ওর সাথে না মিলিয়ে, ওর হাতের পাশ দিয়ে কাটিয়ে নিজের কানের কাছ দিয়ে নিয়ে নিলাম। আমি কোনকিছু না ভেবেই এমন একটা দুষ্টুমি করে বসলাম। অন্যসব স্টুডেন্টরা ছোট বিষয়টাতে অসম্ভব এক্সাইটেড হয়ে গেল। বেশ কয়েকটা মেয়ে বাহবা দিয়ে বলে উঠল, "ইয়ে গো গার্ল!" ছেলেগুলো বলল, "ওহো থমাস, শি ক্রাশড ইউ ম্যান!" আর থমাস তো আমার মতো নতুন মানুষের এমন দুষ্টুমিতে অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে অস্বস্তিভরা হাসিতে অপ্রস্তুত ভাবটা কাটানোর চেষ্টা করতে থাকল। আমি এখনো অবাক হই ভেবে যে এমন কাজ কিভাবে করলাম। এমন দুষ্টুমি করার মতো মানুষ আমি না। আমার উদ্দেশ্য ওকে ছোট করা ছিলও না, আমি ব্যাস কোনভাবে মজার ছলে হাতটা না মেলানোর জন্যে এমন করেছিলাম। সবাই এটাকে এতবড় করে দেখছে সেটা বেশ বিব্রত করে দিল আমাকে। কেউ আমার সাথে কথা বলেনা, আমার দিকে তাকায়ও না, সেখানে থেকে হঠাৎ করে সেন্টার অফ এটেনশন হয়ে গেলাম সেই ক্লাসে অনিচ্ছাকৃতভাবে। আসলে থমাস এত পপুলার ছিল যে ওর সাথে যাই হবে তাই খবর! আর আমিও একটা খবর হয়ে গেলাম!
অন্যসবাই ভুলে গিয়েছিল ব্যাপারটা থমাসকে কয়দিন ক্ষেপিয়ে। কিন্তু থমাস ভুলত না। ছোট্ট একটা আকস্মিক মজাকে কেন্দ্র করে নতুন, চুপচাপ, মিইয়ে থাকা মেয়েটি একটা ব্যাড বয়ের ব্যাড লিস্টে পরে গেল! সে কারনে ছোট ছোট কিছু সমস্যায় পরতে হতো। তা পরে কোন পর্বে শেয়ার করব।

তবে এখন ওর কথা যেকারনে উঠল বলি। একদিন স্কুলের লবি দিয়ে হেঁটে ক্লাসে যাচ্ছি এমন সময় পাশে দুইটা ছেলের কথা কানে এল। একজন থমাস এবং আরেকজন থমাসের বন্ধু। সেও খুব দুষ্টু ছিল। তবে অহংকারী, অভদ্র না, ব্যাস নরমাল হাসিঠাট্টা করত সবার সাথে। বন্ধুটি থমাসকে বেশ স্বাভাবিক স্বরেই বলছে "ওহ ম্যান! আজ কনডম নিয়ে এসেছি, ক্লাসের পরে গার্লফ্রেন্ডের সাথে.." বলে ইশারা করে কেমনভাবে হাসতে শুরু করল। আর থমাসও ওর সাথে তাল মিলিয়ে হেসে গেল। আমার কানে কথাটা যেন বাড়ি খেল, ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকালাম। মুখ হা হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। ওরা আমাকে নোটিশ করেনি, হাসতে হাসতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমার তো পা চলেনা আর। ঐ লবির একটু সামনে যেতেই একটা বেঞ্চ মতো ছিল বসার। ধপ করে বসে পরলাম। তারপরে কিছুক্ষন পরে হুশ ফিরল যে ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। কোনমতে শরীরটাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম ক্লাসে। সেখানে গিয়ে পড়াশোনার খেয়ালে মনটা ডাইভার্ট হল। বেশ কিছুক্ষন এমন বড় একটা কান্ড আমি কিভাবে যেন ভুলে ছিলাম। কিন্তু বাড়িতে এসে টিপ খুলে আয়নায় আটকাতে আটকাতে আবার কথাটা কানে বেজে উঠল। আর আয়নায় একটা হতভম্ব চেহারা দেখতে পেলাম।
আমারই ক্লাসমেট আমারই বয়সে এসব করে বেড়ায়? হায় হায়! এখন কি এসব করার বয়স? আর কি নির্লজ্জের মতো বলছিল সবার সামনে, ছি! ছি! আমার কানাডায় স্কুলে থাকাকালীন সবচেয়ে বড় শকিং ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল এটা। এসব নিয়ে একটা কিউরিসিটি মনের কোনে জমে গেল সেদিন। সেই ঘটনার পরেও অনেক সহপাঠিকেই সেক্স নিয়ে বেশ ওপেনলি গল্প করতে দেখেছি। টিচারের সামনে নয়, তবে নিজেদের মধ্যে। এ যেন কোন ব্যাপারই না! পার্ট এন্ড পার্সেল অফ টিনএজ লাইফ!

একদিন চ্যানেল শাফল করতে করতে একটা কানাডিয়ান শো চোখে পরল। তাতে বেশ কিছু পথে হাটা র‌্যানডম মানুষকে জিগ্যেস করা হচ্ছে কখন ভার্জিনিটি হারিয়েছ? অবাক হলাম, এসব টিভিতে বলবে সাধারন মানুষেরা? সেদিনের ঘটনার কারনেই বোধহয় আমি আগ্রহ নিয়ে দেখলাম কি হয়? বেশিরভাগই বলছে ১৩-১৭ র মধ্যেই এবং বেশ অকপটেই। অবশ্য অস্বস্তি বোধ করবেই বা কেন? এখানে বিয়ের আগে ভার্জিনিটি লুজ করা এবং সেটা সাবালক হওয়ার আগেই করা প্রেসটিজ ইস্যু। কেউ যদি অসফল হয় আর বন্ধুদের আড্ডায় মুখ ফসকে বলে ফেলে আমি ভার্জিন ব্যাস হাসাহাসি শুরু হয়ে যাবে। আমাদের দেশে বিয়ের আগে ভার্জিন হওয়াটা রেগুলেশন আর ওদের!

কিশোর কিশোরিদের মধ্যে এই প্রবনতা খুব খারাপ ফল বয়ে আনে বেশিরভাগ সময়েই। ভার্জিনিটি হারানোর জোশে অনেক মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় অতি কম বয়সেই। এত ছোট বয়সে অতি উত্তেজনায় প্রিকোশন ব্যবহার করতে ভুলে যায়। টিনএজ প্রেগন্যান্সি ওয়েস্টার্ন কিশোরিদের মধ্যে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। বয়ফ্রেন্ড সাধারনত ছেড়ে চলে যায় তারপরে। পড়াশোনা লাঠে ওঠে কর্মসংস্থানের জোগাড়ে। উন্নত বিশ্বের কত কিশোরি যে ঝড়ে পরছে এভাবে! পূর্বের কিছু পর্বে এরকম একজন জার্মান মেয়ের গল্প করেছিলাম আমি। তবে অনেক কিশোরি আছে যারা সিংগেল মাদার হয়ে পড়াশোনা কন্টিনিউ করে বা অন্যকোনভাবে অনেক সাকসেসফুল হয়েছে। তবে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরে স্কুল ড্রপ আউট হয়ে কোনমতে ছোটখাট কাজ করে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কিশোরিদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়! যে বয়সে নিজে বাচ্চা হওয়ার কথা সেই বয়সে বাচ্চার মা হয়ে যাওয়ার দায়িত্ব জীবনটাকে তছনছ করে দেওয়া জন্যে যথেষ্ট!

কানাডায় কাপলদের মধ্যে ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি ম্যাচ করা খুব জরুরি। ওরা বিয়ের আগে এসব এনকারেজ এজন্যে করে যাতে বিয়ের পরে ঝামেলা না হয়। আমাদের দেশে যেমন অনেকে প্রেম করে মন বুঝে নিতে চায় যাতে বিয়ের পরে এডজাস্ট করতে সুবিধা হয়! তেমনি ওরা শরীরকেও বোঝার চেষ্টা করে। গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডরা সাধারনত কয়েক ডেটেই বা প্রথম ডেটেই কেমিস্ট্রি ম্যাচ করলে শারীরিক সম্পর্ক করে। এখানে এটা কোন বড় ব্যাপার না। দুটো ছেলেমেয়ে একে অপরকে পছন্দ করে কি করবে না করবে তাতে সমাজ বাঁধা দেবেনা কোনভাবেই।
কিন্তু এখন আর এতে মজা লাগেনা অনেকের। কারও সাথে সিরিয়াস সম্পর্ক থাকলেই সেক্স না হলে না! সেটা কেন হবে? ওরা নাইট ক্লাবে/পার্টিতে যায়। ড্রিংক করতে করতে যার সাথে ভাল লাগল one night stand করে। প্রথমে ফ্রেইজটা শুনে মনে করেছিলাম সারারাত না ঘুমিয়ে দাড়িয়ে থাকা। যখন আসল মানে জানলাম দুটো জিনিস মনে হল ১) আমি কেন এত বোকা? ২) এ কোন দেশে এসে পরলাম? আসল মানে হল একরাত কাটিয়ে সকালে ভুলে যাওয়া! কোন সম্পর্ক বা ভালবাসা না শুধু জৈব তাড়না মেটানো দুজনের ইচ্ছায়! একটা সময় এসব শুধু হলিউড সেলিব্রেটিরাই করত। এখন সাধারনের মধ্যে পুরোদমে ছড়িয়ে গিয়েছে। এসবের কারনে STDs (sexually transmitted diseases) বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরছে। অনেকের প্রানহানিও ঘটছে কোন মরনব্যাধিতে। শুধু এডাল্টরাই না, টিনএজরাও এসবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্কুলে একটা কোর্স হত যা কিশোর কিশোরিদের বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক সমস্যা নিয়ে শিক্ষাপ্রদান করা করত। সেটা কম্পালসারি একটা কোর্স ছিল এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হত। সেই কোর্সে STDs টিনএজারদের কিভাবে সংক্রমন করছে সেই পরিসংখ্যান, এবং বিভিন্ন STDs কবলিত টিনএজারদের বেদনাদায়ক সত্যি গল্পগুলো পড়ে রীতিমত অবাক হয়েছিলাম। বাঁধনহারা জীবনধারনের কারনে অকালে এভাবে প্রান ঝড়ে যাওয়াটা সত্যিই খুব দূর্ভাগ্যজনক।

মি: এমের গল্প বলি। তিন অনেক জ্ঞানী, বিনয়ী, ও ভালোমানুষ ছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে ওনার আন্ডারে E.S.L. ক্লাসে টি.এ. ছিলাম, এবং গল্পে গল্পে অনেককিছু শিখেছি আমি ওনার কাছ থেকে। একদম সিনিয়ার ইয়ারে তখন, কৈশোরকে বিদায় জানাচ্ছি সবে, এক ধরনের ম্যাচিউরিটি অনুভব করি নিজের মধ্যে। যাই হোক, উনি একদিন বলছিলেন, "মানুষজন আজকাল ভালোবাসা খোঁজার জন্যে কতকিছু করে! আমি আমার ওয়াইফকে ভার্সিটিতে মিট করেছিলাম। কোন প্ল্যান ছিলনা, হঠাৎ করেই এসে গিয়েছিল জীবনে।" আমি তখন তাল মিলিয়ে হড়বড় করে বললাম, হুম, মানুষজন কতকিছু করে ভালোবাসা খোঁজার জন্যে। নাইটক্লাবে যায়, পার্টিতে যায়, ডেটিং ওয়েবসাইটে কত একাউন্ট! আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে। আজ এর নামের ট্যাটু তো সেই ট্যাটু অপারেশন করে রিমুভ করে কয়দিনেই অন্যকারো নাম! উফফ! কি করে না করে! উনি আমার নাম নিয়ে বললেন, "ইয়াহ, ড্রেডফুল, ড্রেডফুল! পিপল ডোন্ট আনডাস্ট্যান্ড ইউ ক্যান নট গো টুওয়ার্ডস লাভ! বাট লাভ কামস টুওয়ার্ডস ইউ। ট্রু লাভ কামস হোয়েন ইট সুড এজ ইট মাস্ট! অগনিত মানুষের সাথে মিশে ভালোবাসাকে জোর করে আনা যায়না। সেই একটা মানুষ যখন আসার এসেই যায়! খুঁজলেও আসে, না খুঁজলেও আসে!" ইশ! কি সুন্দর করে বলতেন! কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে!

এবারে এমন সময়ে আসি যখন আমি স্কুলে ওয়েল এডজাস্টেড। নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছি অনেক স্ট্র্যাগল করে। সবাই আমাকে চেনে স্কুলে। টিচারেরা অনেক পছন্দ করতেন, সহপাঠিদের প্রায় সবার সাথে ভালো সম্পর্ক। বন্ধু তখনও কম ছিল। তবে যারা ছিল তারা অনেক ভালো ছিল। তেমনই এক ভীষন ভালো বন্ধু ছিল ব্রাজিলের মেয়ে জে। আমার প্রানের বান্ধবী বলি ওকে আমি। ওর আর আমার দুজনের সবচেয়ে বড় মিল ছিল নিজেদের কালচার এবং দেশের প্রতি একটা টান। আমার এখনো মনে আছে যখন ব্রাজিলের ফুটবল খেলা এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা হতো দুজনেই সমান এক্সাইটেড হতাম। একে অপরের দেশকে সাপোর্ট করতাম প্রান দিয়ে। একে অপরের আবেগকে খুব করে ধরতে পারতাম। ওকে আমি মনখুলে বলতে পারতাম যে আমার দেশের কথা মনে পরে। বাংলাদেশের কত গল্প করতাম ওকে, আর ওর কাছে ব্রাজিলের হাজারটা গল্প শুনতাম। দুজনেরই স্বদেশবিহনে ভারী হয়ে যাওয়া মনটা একে অপরের সাথে মিশে হালকা হয়ে যেত।

ইংলিশ ক্লাসের কথা বলি। আমরা দুজন সেই ক্লাসে পাশাপাশি বসি। একবার একটা এসাইনমেন্ট পেলাম যে প্রেসেন্টেশন করতে হবে আফগানিস্তানের ওপরে। কেননা আমরা একটা উপন্যাস পড়ছিলাম আফগানিস্তানের সেটিং নির্ভর। উপন্যাসটির নাম ছিল দ্যা কাইট রানার। মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম একটানে, মনেই হয়নি যে পড়াশোনার জন্যে কষ্ট করে কিছু পড়ছি।

তো সেই প্রজেক্টে আমার পার্টনার হলো জে। আমরা অনেক খেটে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশন করেছিলাম আফগানিস্তানি খাবার, পোশাক, নাচ, গান, বিয়ে সবকিছু নিয়ে এজ পার রিকোয়েআর্মেন্ট। আফগানিস্তানের ট্রাডিশনাল পোশাক আমাদের সালোয়ার কামিজের মতোই, একটু ডিফারেন্ট কাট। সেই ছবি স্লাইডে প্রেসেন্ট করেছিলাম, আর এও বলেছিলাম আমার পরে থাকা পোশাকটার সাথে মিল আছে। তবে আমি আফগানিস্তানি না। সবাই হেসে ফেলল। প্রেসেন্টেশনে কিছু রিয়াল লাইফ গল্প, হিউমার থাকলে মার্ক অনেক বেড়ে যায়।

আফগানিস্তানি গানের ভিডিও দেখালাম কিছুক্ষন ওদের গান সম্পর্কে ধারনা দেবার জন্যে। তখন দুষ্টু ছেলেরা নাচানাচি শুরু করে দিল গানের তালে। আমাদের দুজনের নামকে সেই সুরে ফেলে গানও গেয়ে উঠল। টিচার থামানোর চেষ্টা করলেন, তবে নিজে হেসে ফেলেছিলেন বলে কোন কাজে লাগছিল না। আমি আর জেও একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে মুচকি হেসে যাচ্ছি। জানতাম এসব ফেইস করতে হবে আগে থেকেই। যাই হোক, প্রেসেন্টশনের মাঝে এমন সব দুষ্টুমি সত্ত্বেও বেশ ভালো করে শেষ করলাম দুজনে মিলে। শেষ হওয়ার পরে অন্য সহপাঠীরা প্রশ্ন করবে টপিকটি নিয়ে। একটা ছেলে প্রশ্ন করল, "আফগানিস্তানি কালচারে কি অনেকগুলো বিয়ে করা যায়?" বলে খিকখিক হাসি, ইশারাবাজি ক্লাসের সব ছেলের। সাথে সাথে আরেকজন জিজ্ঞেস করে উঠল, "কয়টা বিয়ে করা যায়? এক বাড়িতে থাকে সবাই?" পলিগামি কোন দেশে এলাউড সেটা ওদের কাছে দারুন ফ্যান্টাসি। আর আমাদের দুটো মেয়েকে জিজ্ঞেস করে বিব্রত করা তো বোনাস মজা। আমার বান্ধবী জে বেশ খোলামেলা, কিন্তু এক ক্লাস মানুষের সামনে দাড়িয়ে ও নিজেই দেখি দুষ্টুমিষ্টি লজ্জা পাচ্ছে। তবে আমরা আগেই জানতাম এমন প্রশ্ন আসবে, ওরা ওৎ পেতে আছে। আমি প্রিপেয়ার ছিলাম, বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে রিসার্চ করে গিয়েছিলাম। ওরা যে এটা নিয়েই যাবতীয় প্রশ্ন করবে জানতাম। আমি সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেলাম। ওদের হাসি আর জের লজ্জা পেরিয়ে। প্রশ্নের জবাব আমি দেব সেটা আগে থেকেই ঠিক ছিল কেননা জের ইংলিশ তখনো অতোটা ভালো ছিলনা। আমি কথা বলতে বলতে বুঝে যেতাম তবে অন্যরা একটু কষ্টে বুঝত।
প্রেসেন্টেশন শেষে টিচার খুব খুশি। ক্লাসের সবাইকে হাত উঁচু করে দেখিয়ে বললেন, "ওরা বারটাকে অনেক হাই করে দিয়েছে, তোমরা প্রেসেন্টেশন করার সময় সেটা মনে রেখো।" আমরা দুজনে সব শেষ করে ডেস্কে বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলাম, "উফফ বয়েজজজ!" তারপরে হেসে উঠলাম খিলখিল করে দুজনেই।

জে কে আমি ভীষন ভালোবাসতাম এবং এখনো বাসি, আর ও নিজেও আমাকে খুব মায়া করত। ওর সাথে বন্ধুত্ব গাড়ো হতে হতে একপর্যায়ে সব ব্যক্তিগত ব্যাপার একে অপরের সাথে শেয়ার করতাম। ও আমাকে কখন ভার্জিনিটি লুজ করেছিল তা বলছিল একদিন। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে, আমি ওর অনেক কাছের বান্ধবী হওয়ার পরেও অনেক হেসিটেশন নিয়ে বলছিল। কারন ও জানত আমি বেশ রক্ষনশীল মন মানসিকতার মেয়ে। ওর একটা দোটানা যেন। বান্ধবীকে সব বলতে চায়, আবার বান্ধবী এই জিনিসটাকে ভালোভাবে নেবে না তাও জানে। তবুও বলেছিল। আমি অবাক হইনি। ততদিনে আমার এসবে অবাক লাগেনা, আর ব্রাজিলিয়ান কালচার কানাডার চেয়ে আরেক কাঠি সরেস তাতো জানতামই। তখন ওর বয়স ছিল ১৩, সেটা জেনেও অবাক হইনি। আমার কাছে এসব ডালভাত হয়ে গিয়েছে ততদিনে। তবে অবাক হবার মতো বিষয় এরপরে আসল। ও নাকি Friends with Benefit এ ভার্জিনিটি লুজ করেছিল। মানে কোন রোমান্টিক সম্পর্ক ছাড়াই নিজের কোন বন্ধুর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করা এবং পরেরদিন ভুলে যাওয়া। আবারো বন্ধুর মতো থাকা।

আমি এই ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট জিনিসটা জে বলার আগে তেমনভাবে জানতাম না। জানার পরে ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছিলাম। তবে জিনিসটাকে আমার মূল্যবোধনুযায়ী যতোটা ঘৃনা করার কথা ততটা হনেস্টলি করতে পারিনি। কেননা আমার প্রানের বান্ধবী এই কাজটি করেছিল। আমি কিকরে ভাবি যারা এসব করে তারা খুব খারাপ? জে নিজেও এসব ফেইস করত আমার কারনে। পারিবারিক বিয়েটা ও মেনে নিতে পারতনা, কেননা ভাবত বিয়ে ভালোবাসার কারনে হবে। না জেনে বিয়ে করার মানে কি? আবার আমার কালচারে কমন বলে তেমন কিছু বলতেও পারতনা। আমরা দুজন ভীষন অমিলের কালচার থেকে এসে একই পরিস্থিতিতে পরেছিলাম। স্ট্রাগলগুলো একই প্রকারের ছিল দুজনের। কি অদ্ভুত সব বিব্রতকর পরিস্থিতি! যাকে আমি ভীষন ভালো বান্ধবী ভাবি, মনেপ্রানে পছন্দ করি তার চরিত্র এমন যা আমার কালচারে ভালো মেয়ের ক্যাটাগরিতে কোনভাবেই পরবেনা! কিন্তু আমার ওকে খারাপ মনে হয়না, সব পার্থক্য একপাশে সরিয়ে খুব ভালো একটা মেয়ে মনে হয়! আবার সেটা মনে হওয়াতে নিজের যেন কোথায় একটা অপরাধবোধ! ধুর! এত জটিলতা কেন সবকিছুতে?

রক্ষনশীল সমাজের স্তব্ধ আমি: কানাডার স্কুলে অনেক সময় কাটালাম। এখন টাইম মেশিনে চড়ে আমার সেই সরল ছোট্ট মায়াঘেরা মফস্বলে ঘুরে আসি কিছুসময়ের জন্যে। আমি তখন দুই বেনী করা স্কুলের ইউনিফর্ম পরা সদ্য কিশোরি! কিশোরি যে হয়েছি, আর বাচ্চা নেই, সে বোধও হতে শুরু করেনি ভালোমতো। একটা কোচিং সেন্টারে পড়তে যেতাম। সেই কোচিং এ কলেজ পড়ুয়া ভাইয়াদেরও ক্লাস হত। সেই বড় ভাইদের ভাইই মনে করতাম। অন্যকিছু মাথায় কখনোই আসত না। এজন্যে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতাম। একদিন কোচিং এর সামনে দাড়িয়ে আছি, মা নিতে আসবে, আমি অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা করতে করতে বোরড হয়ে একদম সামনে রাস্তার ওপাশের দোকানে ঘুরে ঘুরে হাবিজাবি জিনিস দেখতে লাগলাম। এমন সময়ে কোচিং এর এক বড় ভাইয়া এসে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম ভালো, এভাবে কথায় কথা বাড়ল। পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে? এসব কথা। এমন সময়ে মা পৌঁছে গেল, আমি ভাইয়াকে বাই বলে মায়ের সাথে চলে এলাম।

মা পুরোটা পথ বেশ গম্ভীর ছিলেন। যেন বজ্রপাত হবার আগে মেঘকালো আকাশ! আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করেছি! কিছু একটা গড়বড় করেছি তা নিশ্চিত, ভাবতে লাগলাম কি হতে পারে? মনে মনে তন্নতন্ন করে ঘাটতে লাগলাম গত কদিনে কি ভুল করেছি? হায়রে পেয়েছি! আমি যে মায়ের প্রিয় ডেকোরেশন পিসটা ভেংঙে ফেলেছিলাম, মা কি টের পেয়েছে? এত সুন্দর করে জোড়া লাগালাম, কি করে টের পেল? ইশ! আমিতো শেষ! সারা রাস্তা ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছি মায়ের দিকে। মা বেশি অপেক্ষায় রাখলেন না, বাড়িতে আসার প্রায় সাথে সাথেই বললেন, "শোন মা, এভাবে কোচিং এর বাইরে দাড়িয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলবে না। এসব খারাপ দেখায়!" আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম মায়ের কথায়। আমি বললাম কিন্তু মা কোচিং এর ভাইয়ার সাথেই তো কথা বলেছি, অপরিচিত না। বিশ্বাস করো শুধু পড়াশোনার খবরাখবর নিলেন। অন্যকিছু না। আমি "বিশ্বাস করো" কথাটা কি ভীষন আকুল, অসহায় কন্ঠে বলেছিলাম সেদিন! একটা ছেলের সাথে কথা বলার জবাবদিহিতা, শুধু কথা বলার জবাবদিহিতা করতে হয়েছিল আমাকে। আমার মা বলেছিলেন, "আমি তো বলিনি খারাপ কিছু বলেছ, ব্যাস মফস্বলে অনেকের চোখে অনেককিছু ভালো না। বড় হচ্ছ এসব বোঝা শেখ। ক্লাসের মধ্যে পড়াশোনার বিষয়ে কথা বললে ঠিক আছে। কোচিং এর বাইরে কেন? কার মুখে কি কথা রটে কে জানে!" আমি মাথা নেড়ে মেনে নিয়েছিলাম। এর বছরখানেক আগে যখন আমাকে বলা হয়েছিল এখন আর ছেলেদের সাথে খেলাধূলা করে বেড়ানো যাবেনা, তখনও মাথা নিচু করে মেনে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সমাজ এমনই। এই আমাদের রীতি এবং নীতি!

ওয়েস্টার্ন কালচার আমাদের মতো ভাবেনা সেটা প্রযুক্তির কল্যানে কিছুটা হলেও জানতাম। তবে যখন হলিউড ড্রামা/মুভিতে হওয়া জিনিসগুলো চোখের সামনে লাইভ হতে থাকে, আর চরিত্রগুলো আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহপাঠি, শিক্ষক, বাড়িওয়ালা হতে থাকে, জীবন কেমন যেন হয়ে যায়! খুব একটা ধাক্কা লাগে। এরা আমার আপনজন, আমার প্রিয়জন। কিন্তু এদের ভাবনা চিন্তাকে আমি সারাজীবন পাপ, মহাপাপ মনে করে এসেছি। ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড, ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট, টিন প্রেগনেন্সি এগুলো কঠিন সব শব্দ আমার কাছে। কে ভুল কে ঠিক সেটা ব্যাপার না। কোন কালচার বেটার সে তর্কে আমি নেই। আমি ব্যাস নিজের মনের দোটানা বোঝানোর চেষ্টা করছি। যেই আমাকে ছেলেদের সাথে কথা বলার সময়েও চক্ষুলজ্জার ভয় করতে শেখানো হয়েছিল, সেই আমাকে এমন খোলামেলা পশ্চিমি কালচার কেমন বোধ করাত তাতো সহজেই অনুমেয়। আমি যেই টার্মসগুলোর মানেও বাংলাদেশে থাকতে জানতাম না, সেগুলো ওখানে গিয়ে নিজের বন্ধুদের করতে দেখতাম। নিজেকে খুব একা মনে হত আমার! কানাডায় যেই জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশিবার মনে হয়েছে/হয় সেটা হলো, "আই ডোন্ট বিলং হেয়ার! আই জাস্ট ডোন্ট!" আমি যে ওদের বুঝিনা, আর ওরা আমাকে! কখনো আমি ওদের বা ওরা আমার কালচারকে অসম্মান করেনি। তবে আমার শুধু মনে হত আমার মতো মানুষ যদি পেতাম! বেশি না শুধু একটু মিলের ভাবনা, চেতনা, মূল্যবোধ! যার সাথে কথা বলে ধাক্কা খেতে হয়না। কিন্তু কানাডার ছোট্ট মফস্বলের সেই স্কুলটিতে বাংলাদেশী কোথায় পেতাম?

উফফ! এসব লিখতেও আমি প্রবল শুন্যতা অনুভব করছি। লজিক্যাল মানুষেরা বুঝবেন না আমার শুন্যতার কারন। কেননা লজিকে ভাবলে আমার কোন সমস্যা হচ্ছেনা। বুঝুক না বুঝুক ওরা আমার কালচারকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। আর আমাকেও ওদের কালচার ফলো করতে হচ্ছেনা। কিন্তু আবেগের দৃষ্টিকোন থেকে অনেকগুলো বছর কেটে গেল নিজেকে শুন্যতায় ঘেরা খুব স্বচ্ছ, খোলা চোখে দেখা যায় না এমন কাঁচের দেয়াল বন্দি ঘরে দেখে। সেই ঘরে অক্সিজেন শুধু ততটুকুই যতটুকু বাঁচার জন্যে দরকার, এর বেশি না কমও না! কাঁচবন্দি সেই ঘরটার মধ্যে থেকে সবাই আমাকে দেখতে পাচ্ছে, আমি সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কেউ কাছে এসে স্পর্শ করতে পারছেনা আমাকে। আমার ঠোঁট নড়ছে, অন্যদেরও। কতশত কথা বলে যাচ্ছে সবাই, কিন্তু দুপক্ষের কাছে কাঁচ ভেদ করে শব্দগুলো পৌঁছাচ্ছে না। আমি অসহায়ের মতো সবাইকে পাশে নিয়েই একা। আর কতবছর এভাবে কাটবে কে জানে....

বিশেষ কথা: এ পর্বটি লেখার সময় আমি বেশ অস্বস্তি বোধ করেছি। কারনটা খুব মজার। আমি যখন কিশোরিবেলার গল্প লিখি, লিখতে লিখতে নিজেও আসলেই কিশোরি বনে যাই। সেই মেয়েটি হয়ে যাই যে খুব চমকে যেত এসব ভিন্ন রীতিনীতি দেখে। সেই বয়সের হয়ে যাই যার এসব কথা বলতে, লিখতে অস্বস্তি বোধ হয়! আমাকে লেখাটা শেষ করতে বেগ পেতে হয়েছে আসলেই। তবে সব হেজিটেশন একপাশে সরিয়ে লিখে পোষ্ট করেই ফেললাম। সেইসব পাঠকদের জন্যে যারা প্রতি পর্বে আসেন অনুপ্রেরনা/সমালোচনার ঝুড়ি হাতে নিয়ে। তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৮
৭৪টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×