আজকের পর্বটা একটু অন্যরকম। পড়লেই বুঝবেন কেন আমি নাম দিতে অপারগ ছিলাম?
আগের পর্বগুলো:
কানাডার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (২য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (৩য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (চতুর্থ পর্ব)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৫)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৬) ১৮+
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৭) আমার ভারতীয়, পাকিস্তানী অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৮) কিছু ভারতীয় যে কারণে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৯): কেন প্রবাসি বাংলাদেশি বাচ্চারা কানাডিয়ান/ভারতীয় হয়ে যাচ্ছে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১০) সমকামিতা ১৮++
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১১) - কিশোরিবেলায় কানাডার প্রথম ভালোলাগা - এক গ্রিক দেবতারূপী সুদর্শন কানাডিয়ান ছেলে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১২) - বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাংলাদেশকে কিভাবে দেখে এবং আমার স্কুল জীবনে তার প্রভাব
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৩) - কানাডায় বিয়ে, লিভ টুগেদার, ডিভোর্স এবং কিশোরি আমি (১৮+)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৪) - বাংলাদেশীদের বিয়ে ভাবনা নিয়ে বিদেশীদের দৃষ্টিকোন এবং আমার নারী জীবন
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৫) - মায়ের বয়ফ্রেন্ড ও অত্যাচারিত মেয়েটি এবং অবাক, অসহায় আমি (কঠিনভাবে ১৮++)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৬) - পশ্চিমি অনেক নারীর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নীরবে সহ্য করার কারন এবং বোকা আমি
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৭) : কানাডায় আমার প্রথম হ্যালুইন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে vs এক আবেগী জাতির পাগলামি
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৮) : পশ্চিমের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড কালচার vs মফস্বলের প্রেম এবং চমকে যাওয়া আমি!
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৯) : কানাডিয়ান কৈশোর জীবনের কিছু উচ্ছৃঙ্খলতা এবং মফস্বলের বোকা মেয়েটি
আজ গল্প অনেক পিছে থেকে শুরু হবে। সেই শুরু থেকে যা কানাডা কাব্য শুরু করেছিল আমার জীবনে! একটা কিশোরি মেয়ের ছুটির সকাল দিয়ে। মেয়েটা রোজ অনেক ভোরে উঠত কিন্তু সেদিন ফজরের নামায পরে আবারো শুয়ে ১০ টা বাজিয়ে ফেলল ঘুমাতে ঘুমাতে! চোখ একটু একটু করে খুলে দেখল মা পাশে বসে চুলে বিলি কেটে আল্লাদ করছেন। মায়ের মুখটা কি ভীষন সুখী সুখী! মেয়েটা আস্তে আস্তে বলল, "কি হয়েছে?" মা ফিসফিস করে কানের কাছে বললেন, "আমরা কানাডা যাচ্ছি!" মেয়েটার বুকটা ধক করে উঠল। সবে তো বাবা বদলি হয়ে আসলেন নতুন জায়গায়, দুটো ভালো বান্ধবী হয়েছে! আবারো নতুন জায়গা! কিন্তু মেয়েটার ছোটবেলা থেকে অভ্যাস ছিল কোন এক সকালে বা দুপুরে মা বাবা বলবেন নতুন জায়গায় যাচ্ছি। সে তাই বেশি মাথা ঘামাল না, উঠে নাস্তা করে নরমাল দিন পার করল।
মেয়েটা আমি ছিলাম তাতো বুঝতেই পারছেন, আমিতেই ব্যাক করি। সেদিন অতকিছু বুঝতে না পারলেও কয়েকদিনেই মাথায় আকাশ ভেংঙ্গে পরল এটা বুঝতে পেরে যে এবার জায়গা না দেশ ছাড়ছি! বাংলাদেশকে ছাড়া আমি কি করে থাকব? ভাষা জানিনা, স্কুলে তো সব সাবজেক্টে ফেইল করব। তখন আমি জানতাম কানাডায় ফ্রেঞ্চও জানতে হয়। ইলিংশ কিছুটা পারলেও ফ্রেঞ্চ? পড়াশোনায় সিরিয়াস আমাকে ফেইল করার ভয়টা কাঁপিয়ে দিয়েছিল। পোশাক আশাক? না বাবা। আমি ব্যাটা ছেলেদের জিন্স প্যান্ট পরতে পারবনা। আর বরফের দেশে জমে যাব নাতো? এরকম ছোট থেকে বড় হাজারটা ভয়ে, দুশ্চিন্তায় সারাদিন লম্বা বারান্দাটায় মনমরা হয়ে পায়চারি করতাম। চিন্তায় চিন্তায় প্লেইন চালিয়ে কানাডায় চলে আসি এখন!
যা যা চিন্তা করেছিলাম তার অনেককিছুই সহ্য করতে হয়নি। ফ্রেঞ্চ জানতে হয়নি বা ব্যাটা ছেলেদের পোশাকও পরতে হয়নি। তবে অনেক ধরনের কল্পনাতীত স্ট্র্যাগল করে একপর্যায়ে মানিয়েই নিলাম! সবে মানিয়ে নিয়েছি এমন এক সময়ের গল্প বলি। সেদিন আমাদের সোশাল স্টাডিস ক্লাসে একটা ক্লাস টেস্ট ছিল। টেস্টটা ইজি হওয়ায় সবাই আধা ঘন্টা আগেই শেষ করে বসে আছে। টিচার বললেন আমি আজকের জন্যে অন্যকিছু প্ল্যান করিনি। সবাই ভাবছে বাকি আধাঘন্টা কিভাবে কাটাবে? টিচার বললেন, "একটা মজার খেলা খেলি চল। আমি প্রজেক্টরে একটা করে ছবি দেব বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত জায়গার। তোমাদেরকে বলতে হবে জায়গাটির নাম কি? যে আগে বলতে পারবে সে পয়েন্ট পাবে।" কেউ কেউ খুশি হলো, কেউ কেউ কানে এয়ারফোন লাগিয়ে বসে থাকল। তারা এসবে ইন্টারেস্টেড না। সেদিন আমি কিছু কারনে একটু মনমরা, প্রানহীন ছিলাম। আমি শুন্য দৃষ্টিতে স্ক্রিনে একটার পরে একটা ছবি দেখে যাচ্ছি। কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছিনা, অনেকগুলো জানতাম ও না। কেউ কেউ জবাব দিচ্ছে, অনেকগুলো কয়েকজন একসাথে বলে উঠছে। হঠাৎ করে তাজমহলের ছবি ভেসে উঠল। অতি পরিচিত স্থানটি দেখে আমি আনমনেই বলে উঠলাম "আগ্রার তাজমহল!"
আমার পেছনে বসত জেফ নামের এক দুষ্টু, চঞ্চল কানাডিয়ান ছেলে যে আমার পিছে খুব লাগত। অশালীন কিছু না ব্যাস কিছু চটুল কথাবার্তা আমার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে। প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগলেও একটা পর্যায়ে বুঝে গেলাম খারাপ ছেলে না। ব্যাস ক্লাসের সময়টুকু হার্মলেস কিছু দুষ্টুমি করে, এরপরে আর কোন কথা বলে না বা বিরক্ত করেনা। আমি উত্তরটা বলার সাথে সাথে ও প্রায় হাততালিই দিয়ে উঠল, আর মিসেস ভিকে জোরে জোরে জানাল যে আমি উত্তর দিয়েছি। মিসেস ভি মুচকি হাসতে হাসতে বললেন, "জেফফ! আমি শুনতে পাই! তোমার এত জোরে জোরে কে উত্তর দিচ্ছে না দিচ্ছে তা আমাকে বলতে হবে না! পারলে নিজের উত্তরটা বল!" ক্লাসের অন্য সবাই বুঝতে পারল দুষ্টুমিটা কোথায় যাচ্ছে। একজন বলে উঠল, "কি বলছ জেফ? ও তো উত্তর দেয়নি, জশ দিয়েছে!" জেফ তো প্রমান করেই ছাড়বে, বারবার আমার নাম নিয়ে বলে যাচ্ছে যে আমিই উত্তরটা দিয়েছি। একবার টিচারের দিকে আরেকবার অন্যসবার দিকে তাকিয়ে বলছে, "ট্রাস্ট মি গাইস!" যেন এটা জীবন মরন ব্যাপার! সবাই হাসি হাসি মুখ করে মজা দেখছে এমনকি টিচারও! এভাবে চলতে চলতে একটা ছেলে তো বলেই ফেলল, "জেফফ! স্টপ ফ্লার্টিং উইথ হার, উত্তর কে দিয়েছে আমরা সবাই শুনেছি!" এই ফ্লার্টিং এর কথা শুনে আমি বেশ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলাম। হাসছিলামও মুচকি মুচকি কেননা পরিবেশটা খুবই হিউমারাস ছিল। এই হাসি মজা করতে করতেই ছুটির ঘন্টা বেজে গেল।
আর আমি মজাটুকু ভুলে আবারো আগের মতো আনমনা হয়ে গেলাম। কিছু একটা আমাকে খুব অশান্তিতে রাখছিল, এবং আমি বুঝতেও পারছিলাম না। দেখতে গেলে আমার জীবনে সবই ঠিক চলছে। তখন কানাডায় বছর খানেকেরও বেশিই হয়ে গিয়েছে। এডজাস্ট করে নিয়েছি পুরোপুরি। ভাষা প্রায় পুরোপুরি আয়ত্বে, পড়াশোনায় মনমতো মার্ক পাচ্ছিলাম। বন্ধু খুব বেশি ছিলনা তখনো, তবে একাও ছিল না। কিছু ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন দেশের। সবমিলিয়ে আমার জীবনটাকে পারফেক্ট মনে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি ভীষন এক শুন্যতায় পরে গেলাম! আমার মন যেন একটা পাখি যে সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরার সময় সকল সাথী হারিয়ে পথ ভুলে হন্যে হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আকাশের চতুর্দিক! পথ জানা নেই ব্যাস গন্তব্য জানা আছে! রাতগুলো অবাক শুন্যতায় ভরা। কি হয়েছে আমি বুঝতেই পারছিলাম না। অনেক ভাবতে ভাবতে একদিন বুঝলাম দেশের জন্যে মন কাঁদছে। আমি আর থাকতে পারছিনা কানাডায়!
আসলে একবার কানাডায় মোটামুটি এডজাস্ট করে নেওয়ার পরে আর মন টিকত না। জানি অবাক লাগছে শুনে। বেশিরভাগেরই প্রথমদিকে বেশি কষ্ট হয়, কিন্তু আমার পরের দিকে বেশি কষ্ট হতো। প্রথমদিকে হাজারটা কালচার শক, ভাষা সমস্যা, পড়াশোনার স্ট্র্যাগল, বন্ধু বানানোর চেষ্টা সবমিলিয়ে আমি দেশ ছাড়ার আসল বড় কষ্টটাকেই মুহূর্তের জন্যে ভুলে ছিলাম। কিন্তু অন্য সবকিছু সামলে ওঠার পরে আসল কষ্টটা বুক চেপে ধরে নিঃশ্বাস আটকে ফেলল! কাউকে সবকিছু বলতে হবে। বাবা মাকে এসব বলে লাভ হবেনা, তাদের কানাডা মুগ্ধতা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে আমাকে এখানে এনেছেন, এখন ভালো লাগছে না বললে মনে কষ্ট পাবেন। বন্ধুদেরও বলিনি কেননা নিজের এই ভার্নাবিলিটি আমি সমসবয়সীদের দেখাতে তখন সাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি।
আমি আমার কাউন্সিলরের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করলাম। কানাডায় প্রতিটি স্টুডেন্টের কাউন্সিলর থাকে। তাদের দায়িত্ব ওয়ান ও ওয়ান সময় দিয়ে স্টুডেন্টকে বিভিন্ন একাডেমিক এবং পারসোনাল পরামর্শ দেওয়া। আমার কানাডিয়ান কাউন্সিলার মিসেস ডি একজন অসাধারন মহিলা ছিলেন। কানাডায় আমি টিকে থাকতে পেরেছিলাম ওনার কারনে। এর চেয়ে বেশি আর কি বলব প্রশংসায়? উনি একজন কানাডিয়ান, মধ্যবয়স্কা নারী ছিলেন। ছোটখাটো, ববকাট সোনালি চুল, চশমা পরা, নীল চোখ, পুতুল পুতুল চেহারা। মাঝেমাঝে লং স্কার্ট পরতেন, মনে হত আমাদেরই বয়সী! কি নরম গলা, বিনয়ী ব্যবহার! আমি বৈদেশের বৈরিতায় ওনার হাতই পরম বিশ্বাসে ধরে ছিলাম। যখনই ডিপ্রেসড হতাম ওনার কাছে যেতাম।
ওনার ছোট্ট অফিসরুমটা বেশ সাজানো গোছানো থাকত বিভিন্ন ছোট ছোট রঙিন ডেকোরেশন পিস দিয়ে। সেটুকু রুমে পা দিলেই বোঝা যাবে যে মহিলা রুচিসম্পন্না! ওনার টেবিলের ওপরে কম্পিউটার এবং জরুরি কাগজপত্র। তার সামনে ওনার চেয়ার এবং পাশে আরো দুটো চেয়ার। আমি অনুমতি নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরলাম। উনি জানতে চাইলেন প্রানবন্ত হাসিতে "কি সমস্যা?"
আমি বললাম যে সব ঠিক আছে। আমার পড়াশোনা, বন্ধু বান্ধব। কিন্তু আমি খুশি না। উনি কৌতুহলি চোখে ভুরু কুঁচকে তাকালেন। আমি অস্থির ভাবে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললাম বাংলাদেশকে ভীষন মিস করছি। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি বুঝতে পারছিনা কি করব? এটুকু বলার পরে নীরব হয়ে গেলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম ওনার কাছে গেলে কথার বন্যা বইয়ে দেব, মনে অনেককিছু জমে আছে। কিন্তু কিছুটা বলার পরে প্রবল এক শব্দহীনতা আমাকে জাপটে ধরল! চুপ হয়ে আছি আমি এবং মিসেস ডিও। ছোট রুমটা নীরব নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে এলো!
কিছুক্ষন পরে মিসেস ডি হালকা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে, বোঝার শব্দ করে বললেন, "আ আ, আই সি! লুক, তুমি বুদ্ধিমতী, স্মার্ট একটা মেয়ে। তুমি নিজের মনকে এনালাইজ করে তার অবস্থান বুঝতে পার। এটা দারুন একটা ব্যাপার! তোমার জন্যে এটা সহজ না। আমি একসময় কিছু বছরের জন্যে এমেরিকায় ছিলাম এবং হোম খুব মিস করতাম। আমেরিকা এবং কানাডার অনেক মিল তাও। আর আমি অনুমান করছি ব্যাংলাদেশ কানাডার চেয়ে অনেক আলাদা!" আমি উদাস নয়নে মাথা নাড়তে লাগলাম, কানাডা এবং বাংলাদেশ কত আলাদা তা তো আমি ভালোমতই জানি! এরপরে বললেন, "দুটো দেশ এত আলাদা হওয়ায় তোমার খুশি হওয়া উচিৎ!" আমি অবাক হয়ে তাকালাম। উনি হাত দুটো একসাথে এনে বললেন, "Look these two wonderful countries are very different to each other and you are lucky to have both of them! এত ভিন্ন দুটো কালচার তোমাকে কতকিছু শেখাবে, মানুষ হিসেবে গড়বে! তোমাকে খুশিমনে সবকিছুকে এমব্রেস করতে হবে, এবং তুমি তা ভালোভাবেই করতে পারবে!"
আমি জীবনের সেই সময়টাতে এত এলোমেলো ছিলাম যে সেভাবে বুঝতেই পারিনি উনি কি ভীষন সুন্দর সব কথা বলে চলেছেন! কি সহজ ভাবে উনি বুঝিয়ে দিলেন যে দুটো ভীষন সুন্দর দেশই আমার! আমার তো চিন্তার কিছু নেই! ওনার কথা শুনতে শুনতে আনমনে অফিস রুমের জানালা দিয়ে বিষন্ন তুষারপাত দেখে যাচ্ছিলাম। আকাশের বিষন্নতার সাথে নিজের মনের কি ভীষন এক মিল খুঁজে পেয়েছিলাম! উনি আমাকে আরো অনেককিছু বোঝালেন। তারপরে হালকা কথাবার্তা বললেন। সোশাল স্টাডিস টিচার ওনাকে জেফ কীর্তির গল্পটা বলেছিল। আমাকে সেটা নিয়ে একটু টিজও করলেন। আমি হেসে ফেললাম। বিদায় নিলাম মন হালকা করে। ওনার সাথে কথা বললেই মন হালকা হয়ে যেত। সত্যি বলতে আমার জীবনে তখন এসব গভীর ব্যাথা শেয়ার করার মতো আর কেউ ছিলনা! সেদিনের প্রতিটি শব্দ, কথা, বডি ল্যাংগুয়েজ আমার চোখে এখনো ছবির মতো ভাসে!
অনেকদিন কেটে গেল সে ঘটনার পরে। দেখতে দেখতে সিনিয়ার ইয়ার চলে এলো। মি: এমের E.S.L. ক্লাসের গল্প করি। তিনি একজন কানাডিয়ান, মধ্যবয়স্ক পুরুষ ছিলেন। ভীষন ভালো, জ্ঞানী ও বিনয়ী একজন মানুষ! সেই সেমিস্টারে আমি দ্বিতীয়বারের মতো মি: এমের টি.এ. হলাম এবং পরম আনন্দের সাথে দেখলাম জেরও একই সেকশনে ক্লাস পরেছে। আগেরবার তিনজনে অনেক মজা করেছিলাম, এবারও করব ভেবে প্রথমদিনেই ভীষন খুশি হয়ে গেলাম। একটা মজার ঘটনা বলি।
একদিন জে বলছে, "কানাডায় বয়ফ্রেন্ডকে বেবি বলে, আমার উইয়ার্ড লাগে! নিজেদের বেবী হলে বেবীকে কি বলে এরা কে জানে!" আমি বললাম তোমাদের কালচারে কি বলে বয়ফ্রেন্ডকে? ও বলল, "আমোর" (লাভ) বেশি বলে।" আমাকে জিজ্ঞেস করলে বললাম, আমাদের কালচারেও বাবু বলে যার মানে বেবী। আমারও অদ্ভুত লাগে। তবে আরো ডাক আছে যেমন জান বলে যার মানে লাইফ। ও খুব অভিভূত হল। বলল, "ওয়াও লাইফ!" এটা অনেক রোমান্টিক মনে হল ওর কাছে। লিখে নিল ডায়েরিতে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে ডাকবে বলে।
মি: এম আমাদের সব কথা শুনছিলেন সেটা আমরা জানতাম না। বেশ দূরে নিজের টেবিলের কাছে দাড়িয়ে এসব ফিসফিসানি কিভাবে শুনে ফেললেন জানিনা। রক্ষে আছে আর? হাটতে হাটতে আমাদের ডেস্কের কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তো তুমি লাইফই ডাকো না?" আমি বললাম, মি: এমমমম আমি নিজের কথা বলছিনা। অন্যরা ডাকে। জে বলল, "তুমি কি ডাকো?" আমি চোখ কটমট করে বললাম, জেএএ তুমি জানো আমি সিংগেল। কেন জিজ্ঞেস করছ? লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। মি: এম হাসতে হাসতে জে কে বললেন, "শি ইজ ব্লাশিং! সামথিং ইজ রং!" আমি একদম কপালে বাড়ি মেরে "হায় আল্লাহ!" বললাম। জে তো চেয়ার থেকে পরে যায় হাসতে হাসতে এমন অবস্থা! ওরা দুজনেই আমার স্বভাব জানত। অন্য বিষয়ে হিউমার সামলাতে পারলেও এসব বিষয়ে করা জোক যে আমার ওপরে ভারি পরে জেনেই পেছনে লাগা। বুঝলাম দুজনেই পেছনে লাগার মেজাজে আছে। এখন যাই বলি না কেন সেটাকে হাসির খোরাক বানিয়ে আরো ফাঁসিয়ে দেবে। আমি তাই অন্য একটা স্টুডেন্টকে হেল্প করার বাহানা করে সরে আসলাম। কিন্তু রুমের অন্য কর্নারে গিয়েও ওদের তুমূল হাসাহাসির আওয়াজ পিছু ছাড়ছিল না!
এভাবেই মজা করতে করতে সেমিস্টার শুরু হয়ে গেল। কানাডিয়ান স্কুলের ক্লাসগুলোতে ডেস্কের সামনে চেয়ার থাকে। স্কুলের শেষ ক্লাসটি হবার পরে প্রতিটি স্টুডেন্টকে নিজের চেয়ার নিয়ে গিয়ে রুমের কর্নারে পাইল করে রাখতে হয়। আবার পরেরদিন প্রথম ক্লাসে পাইলড চেয়ারগুলো থেকে একটা নিয়ে ডেস্কের সামনে এনে বসতে হয়। কানাডায় ক্লাসের শেষে টিচারেরা গলা উঁচিয়ে বারবার বলতে থাকেন, "গাইস! ডোন্ট ফরগেট টু স্ট্যাক ইওর চেয়ারস বিফোর লিভিং!" এই নিয়মটি করা হয়েছে যাতে স্কুল ক্লিনারদের ফ্লোর ক্লিন করতে কোন কষ্ট না হয়। এই নিয়মটা পৃথিবীর সব দেশে থাকেনা। এজন্য E.S.L. ক্লাসের অনেক স্টুডেন্টই ভুলে ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়। প্রথম প্রথম এরকম ভুল হলেও পরে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যায় ব্যাপারটিতে। টি.এ. হিসেবে আমি যদি দেখতাম অনেকে ভুলে গিয়েছে চেয়ার স্ট্যাক করতে, আমি করে দিতাম। এমনই একদিন কাজ করতে করতে জেও আমার সাথে লেগে গেল। আমি বললাম তুমি যাও, বাস ধর, সমস্যা নেই আমি করে ফেলব। এটাতো আমার কাজ। ও হেসে হাত নাড়িয়ে বলল, "না আমি হেল্প করে দেই।" আমিও হেসে সায় দিয়ে চেয়ার স্ট্যাক করতে করতে গল্প করতে থাকলাম ওর সাথে।
মি: এমও একটা ডেস্কের কাছে দাড়িয়ে এসাইনমেন্ট পেপারগুলো ফাইলে গুছিয়ে রাখছিলেন। ফাঁকা রুমে শুধু আমি, জে এবং মি: এম। সবকিছু গুছিয়ে রাখছি শেষবেলায়। একটা চেয়ার নিতে নিতে জে আমাকে লাইটলি জিজ্ঞেস করল, "আমার কয়মাসেই ব্রাজিল ছাড়া থাকতে থাকতে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তুমি এত বছর নিজের দেশকে ছেড়ে কি করে আছো? বাংলাদেশকে মিস করো না?" আমার বুকটা ধক করে উঠল প্রশ্নটায়। কেমন তীর ঢুকিয়ে দেওয়া একটা প্রশ্ন! কিভাবে আছি আমি? এতটা বছর কিভাবে আছি আমি? আমি আস্তে করে হাতের চেয়ারটা নামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় ওকে বললাম, সারাদিন সবার সাথে অনেককিছু ভুলে থাকি জে। কিন্তু রাতগুলো খুব কঠিন হয়। কিছু কিছু রাত ভীষন কান্নাভেজা, নিঃসংগ হয়! খুব অস্থির লাগতে থাকে আমার! এটা বলে দূরে দাড়িয়ে থাকা মি: এমের দিকে চোখ পরল। দেখলাম ভীষন গম্ভীর মুখে, ঠায়ে দাড়িয়ে আমাদের কনভার্সেশন ফলো করছেন। ওনার এত সিরিয়াস চেহারা আমি আগে কখনো দেখিনি। বুঝলাম আমার তীব্র কষ্ট ভেতর থেকে অনুধাবন করতে পারছেন।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বোঝানোর ভংগিতে বললেন, "একটা ব্যাপার কি জানো? কখনো কখনো আমরা জীবনে বেটার কিছু পাওয়ার আশায় হাতে থাকা বস্তুটিকে ছেড়ে দেই। কিন্তু নতুন জিনিসটি নিয়ে অতিরিক্ত আশা থাকার ফলেই হয়ত এক পর্যায়ে সকল আশা পূরন না হয়ে আশাহত হতে হয়! মনে হয় সবচেয়ে দামী জিনিসটিই হারিয়ে মরিচিকার পেছনে ছুটেছি! কিন্তু পেছনে ফিরে পুরোন জিনিসটির কাছে ফিরে যাওয়ার পথ ততদিনে বন্ধ হয়ে যায়! তাই সামনে এগিয়ে নতুন জিনিসটিকে আকড়ে ধরাই তখন বুদ্ধিমানের কাজ হয়। সেটা না করতে পারলে ভীষন এক শুন্যতা জাপটে ধরে!" ইংলিশে বলা কথাগুলোর অনুবাদ করে আমি কিছুটা হয়ত পাল্টে ফেলেছি। তাই উনি বলার সময় যতোটা সুন্দর মনে হয়েছিল ততটা হয়ত হয়নি। উনি যে কি ভিষন সুন্দর ভাবে কথাগুলো বলেছিলেন! ধীরে ধীরে, পারফেক্ট পজ নিয়ে, রিল্যাক্সড দাড়ানোর ভংগিতে, সহানুভূতিসম্পন্ন চোখে তাকিয়ে! মনে হলো একটা শিল্পকর্ম দেখলাম আমি!
আমি পুরো একটা ঘোরের মধ্যে ওনার সব কথা শুনলাম। ঘোর লাগা অবস্থায় বাকি চেয়ারগুলো জায়গায় রেখে জে, মি: এমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লকার থেকে জ্যাকেট, গ্লভস পরে বরফ মারিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। পুরোটা পথ ওনার কথাগুলো ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো কানের কাছে বেজে আমার অস্তিত্বকে ভেংঙ্গেচূড়ে দিচ্ছিল। ওনার কথার মানে ছিল বাংলাদেশে জলদিই ফেরা হচ্ছেনা, তাই এখন কানাডায় প্রকৃত সুখ খুঁজে নাও। নয়ত কষ্টের সাগরে পরে যাবে। কি সুন্দর বিশ্লেষন ছিল ওনার পুরো পরিস্থিতির! আমার জন্যে কি ভালো তা রূপক অর্থে বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু পোড়ামন তো বোঝেনা। সেতো পিছেই ছুটে যেতে চায়!
মোট কথা: প্রবাসীদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন যারা দুমাসের মধ্যেই দেশীয় কালচার এবং দেশকে পুরোপুরি ভুলে যায়। তারা দেশীয় নামটাও চেন্জ করে ফেলে, বাংলাদেশকে ব্যাংলাদেশ বলা শুরু করে দেয়! তবে বেশিরভাগ প্রবাসী ২০ বছর হোক বা ৪০ বছর দেশকে কখনো ভুলতে পারেনা। এরা উন্নত বিশ্বের হাজারটা সুযোগ সুবিধা ভোগ করে কিন্তু বুকে এক তীব্র হাহাকার নিয়ে জীবন কাটায়! অনেকে বাড়িঘর বেঁচে বিদেশে আসে। দীর্ঘ দিন বাইরে থাকার ফলে দেশে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ নাই হয়ে যায়। বারবার ফিরে যেতে চেয়েও বিদেশের সাজানো জীবন থেকে ফিরে আসতে পারেনা। ভয় পায় যে দেশে তো আবারো জীবন নতুন করে গড়তে হবে! লজিকালি দ্যাট ডিসিশান জাস্ট ডাস নট মেক এনি সেন্স! কিন্তু আবেগের তীক্ষ্ণ খোঁচা এই মানুষগুলোকে শান্তিতে থাকতে দেয়না। অনেক প্রবাসী সহ্য করতে না পেরে দেশে ফিরেও যান! সবাই মনে করে পাগল নাকি? অতো উন্নত জীবন ছেড়ে চলে এসেছে? কিন্তু সেই পাগলামীটুকু না করলে যে বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে যেত সেটা কে বুঝবে?
আমার কথা: এখনো নিজেকে প্রশ্ন করি যদি মা বাবা নিজে না আনতেন আমি কি বিদেশে আসার চেষ্টা করতাম? গল্পের শুরুর সেই সকালটা কি আমার জীবনের সবচেয়ে স্বর্নালী সকাল ছিল না নীলচে বেদনার? অনেকে অনেক কিছু বলবে, দেশের এই অবস্থা সেই অবস্থা! পাগল হয়ে যেতাম বিদেশে আসার জন্যে, এসে কদর করছিনা। কিন্তু আমার মন সজোরে বলে না না না! আমি আবেগী মানুষ, কখনো উন্নত বিশ্বে উন্নত জীবন গড়ার কথা মাথাতেই আসত না! মগজের খোরাক মেটাতে গিয়ে আবেগকে অবহেলা করতে পারতাম না! কে জানে আমার মন ঠিক বলে না ভুল?
আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভীষন মিস করি। মানুষ বলতে শুধু আত্মীয়, স্বজন বলছিনা। মানুষ বলতে সেই পরিচিত দোকানদারের কথা বলছি যিনি দেখলেই জিজ্ঞেস করতেন, "মামনী ভালো আছো?" কানাডাতেও জিজ্ঞেস করে "হাও আর ইউ ডুয়িং?" কিন্তু রোবটিক মনে হয়, সেই মামনী ডাকের আন্তরিকতা পাইনা। এখনো চোখে ভাসে, রিকশাওয়ালা মামাটা বারবার বলতেন "আম্মা ওড়নাডা ঠিক করেন, চাকার সাথে আটকাইয়া না যায়!" বান্ধবীদের মারা একদম নিজের মেয়ের মতো স্নেহ দেখাতেন। মফস্বলে এত আন্তরিকতা, ভালোবাসা নিয়ে বড় হয়েছি যে যান্ত্রিকতায় দমবন্ধ লাগে। আমি বেশ ক্রিকেট পাগল। যখন বাংলাদেশ দল ক্রিকেটে যেতে, আমি শূন্য চোখে দেশের মানুষের উল্লাস দেখি অনলাইনে, ভাবি যদি আমিও থাকতাম! আমি ভুলতেই পারিনা কিছু! বৃষ্টিতে শিলা কুড়ানো থেকে রিকশায় চড়া! রাস্তার ধারে দাড়িয়ে ফুচকা খাওয়া থেকে ঘরের তৈরি গরম ভাপা পিঠা! বানিজ্য মেলা থেকে বই মেলা। বৈশাখের রং থেকে থেকে ঈদের তারাবাতি। সবকিছুকে মিস করি সেই প্রথমদিনের মতোই! আবার এটাও ঠিক যে আমি দেশে না থাকাতে খারাপ অনেককিছুও মিস করছি কানাডায় কল্যানে! কানাডা আমাকে নতুন ভাষা শিখিয়েছে, বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের সাথে ওঠাবসার সুযোগ দিয়েছে। কতকিছু শিখেছি আমি এই মাটিতে! দেশটি যে আমাকে অকল্পনীয় এক উন্নত জীবনব্যবস্থা দিয়েছে, সে তো এক অনস্বীকার্য ধ্রুব সত্যি! উফফ! মন মগজের এ যুদ্ধে যেদিকেই যাই হার যে শেষ পর্যন্ত আমারই হবে!
তবে সবকিছুর পরেও আমার এখনো আগের মতো ছন্নছাড়া, অস্থির লাগে কিনা? হ্যা, লাগে। মনে হয় ধুর ছাই! কেন আমি নিজের দেশে থাকতে পারবনা? আমার কেন এটুকু অধিকারও থাকবে না? সব থেকেও যেন কিছুই নেই আমার! এত বছর পরেও বুকের পাজরের মধ্যে থেকে আগত দমবন্ধ সেই হাহাকারটি তাড়াতে পারিনি! বিশ্বের এত দেশের মানুষের ভীড়ে নিষঙ্গ মনের একাকীত্বময় খোঁচা পাগল করে দেয় প্রতিনিয়ত! বিরক্তি, তীব্র বিরক্তি! নিজের ওপরে, নিজের ঠুংকো আবেগের ওপরে। একটু মানিয়ে নিয়ে, মনকে বোঝালে আমার চেয়ে সুখী আর কে হত? নিজের অপারগতায় রাগ জন্মায়। যদি দেশকে মিস না করতাম তবেও মনে হত আমি আবেগহীন পাষান। যেই দেশটা জন্ম দিয়ে ঋনী করল তার জন্যেই মন কাঁদে না? অভিমান, ভীষন অভিমান সেই সকালটার ওপরে যে দেশ ছাড়ার খবর নিয়ে আমার জীবনে এসেছিল! উফফ! কি করি আমি? কোনদিকে যাই? যাই করি, যেদিকেই যাই নিজের ওপরে অসন্তুষ্টির তীক্ষ্ণ যন্ত্রনা বয়ে বেড়াতেই হবে! কত নির্ঘুম রাত যে এমন যায় হা হয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকি। দেশে থাকার সময়কার ছোট ছোট আনন্দময় স্মৃতিগুলো জীবন্ত দেখতে পাই! চোখের কোন দিয়ে পানি পরে বালিশ ভিজে যায়!
শুধু আমি না অনেক প্রবাসীরই এমন হয়! মিসেস ডির কথাটা এখনো কানে বাজে, "You are lucky to have both of them!" আচ্ছা আমি কি কোন দেশেরই হতে পেরেছি? এক দেশে শারীরিকভাবে নেই, আরেক দেশে মন টেকে না! অন্যায় করছি যেন দুটো পবিত্র, অসাধারন দেশের প্রতি! মি: এমের কথা ঠিকই ছিল। ভুলে নতুন জিনিসটাকে আকড়ে ধরতে না পারলে ভীষন এক শুন্যতা জাপটে ধরে! এই অন্তহীন শুন্যতার শুরু হলেও শেষ নেই! কোন শেষ নেই! তবে বিদেশি এই মানুষগুলো আমার শুন্যতাকে অনুধাবন করে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন প্রতিটি পদে সেই প্রাপ্তিতেই অনেককিছু ভুলে থাকতে পারি। দুটো দেশের মানুষই ভীষনরকম আন্তরিকতা, মমতার চাদরে সর্বদা আমাকে জড়িয়ে রেখেছে, রাখছে! হয়ত সেকারনেই সকল অতৃপ্তি একপাশে সরিয়ে হেসে উঠতে পারি আমি!
শেষ কথা: আজকের পর্বটির নাম আসলেই বুঝতে পারছিলাম না। কেননা এটা কানাডিয়ান জীবনব্যবস্থার কোন বিশেষ দিক নিয়ে ছিলই না। আমার মনের কিছু প্রবাসীয় দ্বন্দ নিয়ে ছিল। সেই অন্তহীন দ্বন্দকে এক লাইনে সামারাইজ করে টাইটেলে বসানো আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। নতুন পেন আনলে সেটা কিছু সময় মসৃণ ভাবে লেখেনা, এজন্যে খাতার ওপরে হিজিবিজি এঁকে নরম করা হয়। আজ আমি যেন কিবোর্ড ব্যবহার করে হিজিবিজি কিছু লিখে নিজের দ্বন্দকে তুলে এনেছি। এলোমেলো এই পর্বটা লিখতে গিয়ে কত গ্যালন চোখের পানি খরচ হয়েছে তা আর নাইবা বললাম। তবে ভালো লাগে আপনাদের সাথে এসব শেয়ার করে। পর্ব বিশ পর্যন্ত আপনাদের ভীষন রকমের অনুপ্রেরনায় টেনেছি। সাধারন আমার সাধারন গল্পগুলো যারা আগ্রহ নিয়ে পড়েন তাদের কাছে আমি ভীষনভাবে কৃতজ্ঞ! আশা করি সামনেও সাথেই থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০৯