আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি জীবনের বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং কাহিনী ব্যবহার করে। তাই বেশি ভূমিকা না করে সোজা গল্পে চলে যাই।
আগের পর্বগুলো:
কানাডার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (২য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (৩য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (চতুর্থ পর্ব)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৫)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৬) ১৮+
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৭) আমার ভারতীয়, পাকিস্তানী অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৮) কিছু ভারতীয় যে কারণে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৯): কেন প্রবাসি বাংলাদেশি বাচ্চারা কানাডিয়ান/ভারতীয় হয়ে যাচ্ছে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১০) সমকামিতা ১৮++
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১১) - কিশোরিবেলায় কানাডার প্রথম ভালোলাগা - এক গ্রিক দেবতারূপী সুদর্শন কানাডিয়ান ছেলে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১২) - বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাংলাদেশকে কিভাবে দেখে এবং আমার স্কুল জীবনে তার প্রভাব
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৩) - কানাডায় বিয়ে, লিভ টুগেদার, ডিভোর্স এবং কিশোরি আমি (১৮+)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৪) - বাংলাদেশীদের বিয়ে ভাবনা নিয়ে বিদেশীদের দৃষ্টিকোন এবং আমার নারী জীবন
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৫) - মায়ের বয়ফ্রেন্ড ও অত্যাচারিত মেয়েটি এবং অবাক, অসহায় আমি (কঠিনভাবে ১৮++)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৬) - পশ্চিমি অনেক নারীর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নীরবে সহ্য করার কারন এবং বোকা আমি
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৭) : কানাডায় আমার প্রথম হ্যালুইন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে vs এক আবেগী জাতির পাগলামি
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১৮) : পশ্চিমের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড কালচার vs মফস্বলের প্রেম এবং চমকে যাওয়া আমি!
তখন কানাডার স্কুলে প্রথম সেমিস্টার পার করে ফেলেছি কষ্টেসৃষ্টে। একদিন খুব ভোরে মায়ের ডাকে ঘুম ভাংগল। আমি খুব ভোরে ওঠা মানুষ, নিজে উঠে বাড়ির সবাইকে ডাকি। কেউ আমাকে ডাকবে ঘুম ভাংঙ্গাবে সে অভ্যাস আমার নেই। সূর্য মামার আগেই উঠে বসে থাকতাম সেই ছোটবেলা থেকে। হুজুর কোরআন খতম দেওয়াতে আসতেন অন্ধকার থাকতে থাকতেই। সেই থেকে সারাজীবন ভোরেই উঠে গিয়েছি। কিন্তু সেদিন ভোরে মায়ের ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভাংঙ্গল! আমি ভাবলাম দেরী করে ফেলেছি নাকি? মায়ের গলার তৎপরতায় সাথে সাথে চোখ ডলতে ডলতে উঠে পরলাম। মা টানতে টানতে কাঁচঘেরা ব্যলকনির সামনে নিয়ে আসলেন। বললেন, "দেখ দেখ বাইরে দেখ!"
কনফিউজড আমি ঘুম ঘুম চোখে কাঁচের ওপারে তাকানো মাত্র সব ঘুম উধাও! মুখ লিটারেলি হা করে দেখলাম বুকে সজোরে ধাক্কা মারা প্রকৃতির ভয়ংকর সৌন্দর্য! প্রকৃতির সেরূপ আমি আগে কখনো দেখিনি। রাতেও স্বাভাবিক ছিল পুরো জায়গা, কিন্তু ভোর হতে হতে সব শুভ্র তুষারে ছেয়ে গেছে! আশেপাশের সকল বাড়ির চাল সাদা পরচুলো পরে নিথর, নিশ্চল! লম্বা লম্বা গাছগুলো শরীরের প্রতিটি রেখায়, শাখা/প্রশাখায় তুষার লেপ্টে নির্জীব দাড়িয়ে! উঠানের লম্বা চেরি গাছটির লাল চেরি ফলও বরফের প্রকোপে ঠকঠক করে কাঁপছে! সামনের বিশাল সবুজ ঘাসের মাঠটা উধাও; সেখানে একটি শুভ্র, শীতল তুষারসমুদ্র জায়গা করে নিয়েছে। পিচঢালা কালো রাস্তা সাদা চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছে শান্তভাবে। উঁচু উঁচু পাহাড় পর্বত প্রবল তুষারপাতে বুড়ি দাদীমার মতো পাকা চুল ও ধবধবে সাদা থান কাপড়ে দাড়িয়ে! আকাশে কেমন একটা ঔজ্জ্বল্য মেশানো দীপ্তি! জমিনে পরে থাকা হিরকখন্ডের মতো জ্বলজ্বলে তুষারকণা প্রজ্জলিত করছে এত উঁচুতে থাকা আকাশকে! ভোরের আলো আঁধারি পরিবেশে তুষারের কম্বল গায়ে জড়িয়ে পুরো শহরে কেমন যেন একটা গা ছমছমে নিস্তব্ধতা! মনে হলো চোখের সামনে প্রকৃতির একটি সাদাকালো নির্বাক চলচিত্র দেখছি আমি! এ কি করে সম্ভব? এক রাতে কোন যাদুতে সব সাদা হয়ে গেল? ঘোর লাগা চোখে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম, স্বপ্ন ভাবছিলাম তা নিজেও জানিনা।
মায়ের ঝাঁকিতে ঘোর কাটল। বললেন, হাতমুখ ধুতে। আমি টলতে টলতে হাতমুখ ধোয়া, নামাজ, ব্রেকফাস্ট সারলাম। এর মধ্যে বারবার ব্যালকনির কাছে ছুটে গিয়েছি। দরজা খুলিনি আমি সেদিন, ব্যাস কাঁচের অন্যপাশে দেখছিলাম বারবার। বারান্দাও বরফে ঢেকে গেছে, যেকেউ বরফ ছুঁতে চাইত হাত বাড়িয়ে। কিন্তু আমার তো তখনো তুষারপাত নামের নতুন জিনিসটির সাথে বন্ধুত্ব হয়নি! অস্বস্তি মেশানো মুগ্ধতা থেকে বারবার তাকিয়েছি শুধু। এভাবে দেখতে দেখতে স্কুলে যাবার সময় এসে গেল। মা বিশাল সাইজের জ্যাকেট দিলেন। আমার চেয়ে যেন সেটারই ওজন, উচ্চতা বেশি! গ্লাভস, টুপি সহ আরো অনেককিছু পরে জামা কাপড়ের দোকান হয়ে স্কুলে রওয়ানা হলাম। মায়ের চোখমুখ বরফের চেয়েও সাদা হয়ে গিয়েছে ভয়ে! জীবনে প্রথমবার বরফে হাটবে তার মেয়ে! পরে যায় যদি? নিজে আসতে চাচ্ছিলেন, আমি জেদ করে একা গেলাম।
পাঁচ মিনিটের পায়ে হাটার পথ পা টিপে টিপে ১৫ মিনিটে পার করলাম। জ্যাকেটের হুড দিয়ে ঢেকে রাখা মাথায় বরফ পরেই যাচ্ছে। আমি তখনো বরফ হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করছি না বা আশেপাশে অবাক চোখে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছি না। আমার সব নজর মাটিতে। পুরু বরফে দেবে যাওয়া পা উঠিয়ে উঠিয়ে কদম ফেলে হাটছি! সাবধানে, ধীরলয়ে ফেলছি প্রতিটি কদম। পথে কয়েকবার পড়তে পড়তে সামলালাম। চোখের পাপড়িতে কিছু বরফকুচির অস্তিত্ব টের পেলাম। হাত গ্লভস ভেদ করে কাঁটা হানছে। নাক লাল! এতসব কষ্ট পার হয়ে স্কুলে পা রাখামাত্র মনে হল যুদ্ধজয় করেছি আমি!
স্কুলে ঢুকে বড় একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বেশ খুশিমনে রেগুলার স্পিডে হাটতে গিয়ে খারাপ ভাবে পিছলে গেলাম। কোনমতে সামলে দেখি মেঝে ভেজা! স্কুলের দরজা পার হয়ে কিছু অংশ অনেক স্টুডেন্টের পদচারনায় ঢুকে পরা বরফে গলে ভিজে গিয়েছে। স্কুলের প্রতিটি দরজার সামনে ভিজে থাকা জায়গাগুলোতে "বি কেয়ারফুল! ওয়েট ফ্লোর!" সাইন বসিয়ে রাখা। সাবধানে হাটতে হাটতে শুকনো জায়গায় আসলাম। লকারে জ্যাকেট, গ্লাভস রাখলাম। বেনীটা দেখি বরফে ভেজা ভেজা। হাত দিয়ে লম্বা বেনীর ফাঁকে ফাঁকে লেগে থাকা বরফকুচি সরিয়ে একটু ঝেড়ে নিলাম। কপালের ওপরে পরে থাকা ছোট চুলগুলোকে হাত দিয়ে কানের পেছনে সরিয়ে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মোটামুটি ধাতস্থ হয়ে ক্লাসে গেলাম।
টিচার বসেই ছিলেন, কিছুক্ষনেই ক্লাস শুরু হবে। ইংলিশ ক্লাস। সেই ক্লাসের টিচার ছিলেন মিসেস হাওয়ি। তিনি একজন ছোটখাট, সুন্দর চেহারার, বাদামী চুলের, বয়স্কা কানাডিয়ান নারী ছিলেন। খুব আদর, স্নেহ ছিল তার মধ্যে। আমাকে দেখেই চিন্তিত মুখে প্রথম প্রশ্ন, "এত স্নোতে তুমি এই ড্রেসে (সালোয়ার কামিজে)? জমে যাওনি?" আমি হেসে ফেললাম, বললাম, আমি জ্যাকেট, গ্লাভস সব পরে এসেছিলাম। উনি বললেন, "ও, তুমি সবসময় ট্রাডিশনাল আউটফিটে থাক, ভাবলাম জ্যাকেট পরবে কিনা?" আমি বললাম আমাদের দেশেও শীতকালে জামার ওপরে সোয়েটার, জ্যাকেট পরে। আমার অসুবিধা হয়নি কোন। উনি হেসে বললেন, "ও ও অলরাইট, গুড ফর ইউ! সরি আমি বুঝতে পারিনি!"
এই টিচারকে টেনে আনা যে গল্পের জন্যে তা শুরু করি এখন। তিনি প্রতি শুক্রবারে মানে উইকেন্ডের আগের ক্লাসে একটা কথা বলতেন, "হ্যাভ আ সেইফ উইকেন্ড! ডোন্ট ড্রিংক এন্ড ড্রাইভ!" আমি প্রথম কয়বার বুঝতে পারিনি কি বলছেন, কানেও নিইনি। ক্লাসের শেষে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দেবার তাড়া থাকে। কিন্তু এক উইকেন্ডে কানে এসেই গেল এবং আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমরা সবে স্কুলে পড়ি, আমাদের কেউ ড্রাইভ করবে কেন? বাড়ির বড় কেউ বা ড্রাইভার করবে! আর ড্রিংক? ছি ছি! টিচার এমন উপদেশ এত রিলিজিয়াসলি নিয়ম করে কেন দিচ্ছেন আমাদের? খুব কৌতুহল হতো জানার জন্যে। কিন্তু বোকা আমিও ততদিনে বুঝে গিয়েছি কানাডিয়ান কালচার আমি কিছুই বুঝিনা। উদ্ভট কিছু জিগ্যেস করে বোকামি প্রকাশ হবে শেষে। এজন্যে চুপ করে থাকতাম।
কিন্তু হয়ত আমার কৌতুহল মেটানোর ইচ্ছে উপরওয়ালার ছিল। একদিন মিসেস হাওই নিজে থেকে এমনটা বলার কারন গল্পে গল্পে এক স্টুডেন্টকে বললেন। আমিও কান ফেলিয়ে শুনলাম। ওনার জবানিতে কথাগুলো ছিল, "আমার সিনিয়ার ইয়ারের এক ছাত্র ঐ থার্ড বেঞ্চের কোনে বসত। ছেলেটা পড়াশোনায় মোটামুটি তবে খেলাধূলায় তুখোড় ছিল। হাসিখুশি, তোমাদেরই মতো নরমাল টিনএজার। এক সোমবারে আমি দেখি ওর সিটটা ফাঁকা! খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ও উইকেন্ডে বন্ধুদের সাথে পার্টিতে ড্রিংক করে ড্রাইভ করতে গিয়ে এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরন করেছে।" এর পরে বেশ আবেগী কিন্তু জোর কন্ঠে ক্লাসের সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, "সেই থেকে আজ পর্যন্ত এতটা বছর আমি শুক্রবারে এই উপদেশটা দিতে কখনো ভুলিনি। তোমরা কেউ সাহসও করবেনা আবারো আমাকে অমন একটা ট্রমার মধ্যে পাঠাতে। সোমবারে আমি যেন কোন সিট খালি না দেখি, সবাই নিরাপদে আবার ফিরে আসবে। ক্লাস ডিসমিস!" কাঁপা কাঁপা আবেগী গলায় এসব বলে নিজের চেয়ারে গিয়ে আস্তে করে বসে পরলেন।
ওনার কথাগুলো আমাকে ভীষনভাবে হিট করেছিল। টিচার হিসেবে ওনার স্টুডেন্টের প্রতি মমতা আমার ভীষন ভালো লেগেছিল। কানাডিয়ানরা প্রফেশনাল, আবেগ কর্মক্ষেত্রে আনে না সেই ধারনা ভেংঙ্গে চূড়মার হয়ে গেল যেন এক পলকেই! কানাডায় ১৬ তে ড্রাইভারস লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব পরীক্ষায় পাশ করে বিভিন্ন ধাপ পেরোলে। কঠিন তবে সম্ভব। আর ড্রিংকিং প্রভিন্স ভেদে ১৮/১৯ বছর বয়সে লিগাল! যদিও কেউ কেউ অতদিন অপেক্ষা না করে বাবা মায়ের সংগ্রহ থেকে চুরি করে এনে পার্টিতে মেতে ওঠে। সে এক অন্য এডভেঞ্চার অনেক টিনএজারের কাছে, যেন বড় হওয়ার স্বাদ অনুভব করা! আর ১৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই বা কি? আমি মনে করি সেটাও বেশ কম বয়স ড্রিংক করে নিজেকে সামলানোর ম্যাচিউরিটি রাখার জন্যে। এজন্যে এখানে ইয়াংদের মধ্যে ড্রিংকিং এন্ড ড্রাইভিং এর কারনে মৃত্যুর রেট বেশ হাই! এসব জেনে ও ভেবে আমার খুব খারাপ লেগেছিল।
টিনএজরা বয়সের আগেই মদ খাচ্ছে সেটা খুব যে কমন তাও না, তবে সিগারেট এমন একটা জিনিস যা বেশ কমন! দেশে থাকতে মনে করতাম সিগারেট শুধু ছেলেরাই খায় তাও বেশ বড় হলে। তবে কানাডায় অবশ্যই এ ব্যাপারেও ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ নেই। আমার বাড়ি থেকে স্কুলে হাটার পথ ছিল। আসার পথে একটা গ্যারেজ পড়ত যার নিচ দিয়ে একটা সিড়ি চলে যেত। সেখানে মাঝেমাঝেই আমাদের স্কুলের কিছু স্টুডেন্টকে দলবেঁধে স্মোক করতে দেখতাম। ভীষন চমকে গিয়েছিলাম প্রথমদিন। পরে চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছিল। স্কুলের একটা পার্টিকিউলার এরিয়াজুড়ে টোবাকো আনা ও সেবন নিশিদ্ধ ছিল। তবে সেটুকু অংশ পার হয়ে অনেকেই স্মোক করত। বেশিরভাগই সিনিয়ার ইয়ারের স্টুডেন্ট যারা সবে এডাল্ট হয়েছে। তবে তাদের দেখাদেখি কিছু ইয়াং ছেলেমেয়েও গ্রুপে ঢুকে যেত! আমাদের দেশে যদি কোন শিক্ষক স্টুডেন্টকে স্কুলের বাইরে এমনকি অন্যকোন শহরেও স্মোক করতে দেখে তবে কান টেনে শাস্তি দেবেন সবার সামনেই। কানাডায় টিচারেরা স্কুলের প্রহিবিটেড অংশের বাইরে কাউকে স্মোক করতে দেখলে ফিরেও তাকাবেন না। তবে অনেকে ক্লাসে এসে সেই স্টুডেন্টকে উদ্দেশ্য না করে নরমালি বলে যাবেন স্মোকিং এর ক্ষতিকর দিকসমূহ। কাউকে লজ্জা না দিয়ে নিজের উপদেশ পৌঁছে দেবেন। যদি শিক্ষার্থী শোনে ভালো, না শুনলে নেই!
তখন সিনিয়ার ইয়ারে পড়ছি; স্কুলে ভালমতো এডজাস্ট করে নিয়েছি। বাড়ির মতোই কমফরটেবল স্কুলে! E.S.L. ক্লাসের টিএ আমি মি: এমের আন্ডারে। তিনি একজন কানাডিয়ান, মধ্যবয়স্ক পুরুষ। উনি অনেক বুদ্ধিমান, বিনয়ী এবং ভদ্র ছিলেন। ওনাকে ভীষন পছন্দ করতাম। ওনার সাথে অনেক গল্প করতাম; কতকিছু যে শিখেছি ওনার কাছে! উনি ক্লাসের প্রথম কিছুক্ষন লেকচার দিয়ে ওয়ার্কশিট দিতেন স্টুডেন্টদের। আমি তারপরে ঘুরে ঘুরে সবাইকে সেগুলো পূরন করতে সাহায্য করতাম। সবাই যখন মোটামুটি আইডিয়াটা বুঝে নিজের মনে কাজ করে যাচ্ছে তখন মি: এমের সাথে গল্প শুরু হয়ে যেত।
একদিন গল্পে গল্পে জিগ্যেস করলাম আমাদের স্কুলে ড্যান্স এলাউড না কেন? কোন ফাংকশনে গান, বিতর্ক, অভিনয় সব হবে। তবে ড্যান্সিং না! শুধু জিম ক্লাসে কাপল ড্যান্স শেখানো হত সামাজিকতার খাতিরে টিচারের তত্ত্বাবধায়নে। তবে স্টুডেন্টরা নিজের ইচ্ছাতে নাচের পরিবেশনা করতে পারবেনা। আমাদের মফস্বলেই যেকোন অনুষ্ঠানে নাচের আপুদের "মমচিত্তে নিতিনৃত্তে" শুরু হয়ে যেত। আর এতো খোলামেলা নিয়মকানুনের স্কুলে এলাউড না! আমাকে প্রশ্নটা খুব ভাবাত। অনেকদিনের জিইয়ে রাখা কৌতুহল আমি একদিন মি: এমের কাছে ভেংঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম।
উনি বললেন, "আমাদের স্কুলে একসময় ড্যান্স এলাউড ছিল। একটা সময় দেখা গেল এটার ভুল এডভানটেজ নেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে ছেলে মেয়ে খুব অন্তরংগভাবে নাচানাচি করত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিচারদের সামনেই পাগলের মতো ভালগার সব অংগভংগিতে মেতে উঠত। একদম ক্রেজী হয়ে যেত। স্টুডেন্টদের আচার ব্যবহার অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তদন্ত করা হলো। তখন কিছু স্টুডেন্ট বাথরুমে মদের বোতলসহ ধরা পরল! ওরা আসলে ড্রাংক হয়ে নাচানাচি করত। স্কুলে বন্ধুদের সাথে ড্রিংক করে নেচে এডাল্টদের মতো পার্টি করাটাকে উচ্চমাপের এডভেঞ্চার মনে করত! তখনকার প্রিন্সিপাল এসবে ভীষন ক্ষুদ্ধ হয়ে শাস্তি হিসেবে ড্যান্সিং চিরতরে ব্যানড করে দেন স্কুলে!" পরে জেনেছিলাম আরো কিছু কানাডিয়ান স্কুল আছে যেখানে ড্যান্স ব্যানড এবং অনেক স্কুল আছে যেখানে নাচ নিয়ে কোন ধরনের রেসট্রিকশন নেই।
আমার এক পাকিস্তানী বান্ধবী আসমার কথা বলেছিলাম আগে। ওর বাবা অন্যখানে চাকরী নেওয়াতে আমাদের স্কুল ছেড়ে বড় শহরে মুভ করেছিল। আমি খোঁজ খবর নিতাম, স্কুলটা কেমন জিগ্যেস করতাম। ও বলত, "কেউ পড়াশোনা করেনা, অর্ধেকের বেশি ড্রাগ এডিক্টেড। আমার একদমই দমবন্ধ লাগে!"
আমি তো থ! একটা স্কুলে এত ড্রাগ এডিক্ট! মি: এমকে স্কুলটির নাম বলে জানতে চেয়েছিলাম সত্যি কিনা? তিনি বলেছিলেন, "তুমি হয়ত এই স্কুলের স্টুডেন্টদের দেখেই ক্রেজি ভাবো! কিন্তু আমি আগে বড় শহরের স্কুলে চাকরি করেছি। ট্রাস্ট মি এই স্কুলের ছেলেমেয়ে অনেক বেশি ওয়েল বিহেভড। ওরা অনেকেই বড় লোকের ছেলেমেয়ে, মা বাবা ব্যাস্ততায় তেমন সময় দেয়না। সময়ের কমপেইনসেইট করে গাড়ি গাড়ি টাকা দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চারা হাতের বাইরে চলে যায়। সবাই খারাপ না অবশ্যই, তবে অনেকেই!" আমি অবাক হয়ে ভাবলাম সব দেশেই কি ছোট শহর বড় শহরের একই কাহিনী? মি: এম যা বললেন আমাদের মফস্বলের টিচারেরাও ঢাকার বড়লোক গোষ্ঠিকে নিয়ে একই কথা বলতেন, একদম এক কথা! আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলাম যে আমি শান্তিতে ভালো স্কুলে পড়ছি। মা বাবার ছোট শহরে মুভ করার সিদ্ধান্ত আসলেই ঠিক ছিল। কানাডার মফস্বলের স্কুলেই আমি এত কালচার শক পেয়েছি, বড় শহরে তো হারিয়েই যেতাম! এসব ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
সেই কনভার্সেশন এবং ভাবনার বয়স বেশিদিন হয়ওনি, মি: এম একদিন জানালেন, আমাদের স্কুলের দুটো ছেলে ড্রাগ সহ ধরা পরেছে ক্লাসেই। তাও আবার বেশ নিচের ক্লাসের সম্ভবত ৮ এর স্টুডেন্ট ছিল তারা! ধারনা করা হচ্ছে আরো কজনও জড়িত! ভাইস প্রিন্সিপাল তীব্র পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলে শোনা যাচ্ছে (আমাদের স্কুলে কিভাবে যেন প্রিন্সিপালের চেয়ে ভাইস প্রিন্সিপালে মান্যতা বেশি ছিল)। আমি তখন বেশ পুরোন হয়ে গিয়েছি। হাজারটা কালচার শকে চমকে চমকে কোনকিছুই গায়ে লাগেনা টাইপ অবস্থা। তবে সেটা শুনে দমবন্ধ হয়ে গেল। আমি ভাবলাম আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়ে কিভাবে? ওভারঅল স্কুলে কোন র্যাগিং হতো না, খেলাধুলায় শহরে সেরাদের একটা (আমাদের জীম ক্লাসের মতো বড় শহরের আর কোন স্কুলে নাকি ছিলনা), পড়াশোনার গড়ও সন্তোষজনক। আমাদের কেউ এত খারাপ কাজ!
আমি জিগ্যেস করলাম কারা? মি: এম নাম নিলেন, অতো নিচের ক্লাসের বিধায় চিনলাম না। উনি উপরের ক্লাসে পড়া এক স্টুডেন্টের নাম নিয়ে বললেন চিনি কিনা? আমার মুখচেনা ছিল, তিনি বললেন তার কাজিন! আমি বললাম ওও। এখন কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? মি:এম বললেন, "কদিন পরে সেই মিটিংয়েই যাচ্ছি আমি। দেখা যাক কি ডিসিশান হয়!"
এসব কথা হয়ে কদিন হয়ে গিয়েছে। আমি নরমালি ঘুরে ঘুরে গল্প করতে করতে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছি সবাইকে। ব্রাজিলিয়ান মেয়ে জে আমার প্রানের বান্ধবী তাই ওর ডেস্কে আসলে গল্প শুরু হয়ে যেত। একদিন জে গল্প করছে ও নাকি পুরো লিস্ট করে রেখেছে বিয়ের পরে হাসব্যান্ডকে কিভাবে জ্বালাবে? পানি ফেলে দিয়ে হাসব্যান্ডকে হাত নাড়িয়ে, গম্ভীরভাবে বলবে, "যাও পরিষ্কার করো, তুমি আমার সারভ্যান্ট!" বলে হেসেই বাঁচেনা। আমিও হাসতে হাসতে শেষ। আমিও মজা পেয়ে এড করলাম, আমি আমার হাসব্যান্ডকে মাঝরাতে ঘুম ভাংগিয়ে বাজার করতে পাঠিয়ে দেব। কোন দোকান খোলা না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরবে সারারাত! নিজে কিছু করবনা সব কাজ ওকে দিয়ে করাব। ওরা মজা বুঝবে বলে দুজনে হেসে একে অপরের গায়ে লুটিয়ে পরছি যেন হাসব্যান্ড নামক মানুষটিকে বিভিন্ন উপায়ে অপদস্ত করা পৃথিবীর সবচেয়ে মজার কাজ! এগুলো আমরা ব্যাস মজা করে বলেছিলাম, বাস্তব জীবনে এপ্লাই করার প্ল্যান কারোরই ছিলনা।
আমরা দুই পাগলী এমনই সব পাগলামী ভরা কথাবার্তায় হেসে খুন হতাম। সেই সময় মি:এমের সাথে গল্প করতে এক টিচার ক্লাসে এসেছিলেন। তার নাম মি: বি, তিনি কি ভীষন সুদর্শন ছিলেন! একদম জীশু খৃষ্টের মতো চেহারা! সবাই অবাক হয়ে যেত এত মিল দেখে! সেই টিচার আমার একদম শুরুর দিকের সমাজ ক্লাসের টিচার ছিলেন। আমাকে স্ট্র্যাগল করতে দেখেছেন, সাহায্য করেছেন। তিনি সেই সেমিস্টার শেষ করে অন্য স্কুলে ট্র্যান্সফার হয়েছিলেন।এতদিন পরে ফিরেছেন। এসে মি:এমের সাথে কিভাবে যেন খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। মাঝেমাঝেই ক্লাসে আসেন; সেদিন বোধহয় ড্রাগ সংক্রান্ত মিটিংটা নিয়েই কথা বলতে এসেছিলেন।
ওনারা দুজন তখন একটু দূরে দাড়িয়ে কথা বলছেন। আমার আর জের কুটিপাটি হাসি চোখে পড়াতে মি: বি মজা করে বললেন, "জানো ও যখন নতুন এসেছিল একদমই হাসত না। আর এখন হাসি ছাড়া এক মুহূর্ত থাকেনা! ব্যাপার কি?" মি: এম দুষ্টুমি করে বললেন, "ওও আসলেই চিন্তার বিষয়। ও বোধহয় ড্রাগ নিচ্ছে মি: বি!" তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নাচিয়ে টেনে টেনে বললেন, "কি? তোমার মা জানলে কি বলবে?" আমার সাথে ওনারা নিয়মিত মজা করতেন, এবং অভ্যস্ত আমিও মজা করেই জবাব দিতাম। তবে ড্রাগ পর্যন্ত চলে যাওয়াতে থতমত খেয়ে গেলাম। সরলভাবে বললাম না না আমি ওসবের মধ্যে নেই। ওনার দুজনে আমাকে ভয় পায়িয়ে ভীষনরকম মজা পেয়ে বোধহয় আমার আর জের চেয়েও বেশি হেসে যাচ্ছিলেন! আমিও লজ্জা পেয়ে হেসে ফেললাম।
সেই ড্রাগ এডিক্ট স্টুডেন্টদের কি শাস্তি হয়েছিল আমি জানতে পারিনি। মি: এমের সাথে এ বিষয়ে আর কোন কথা তুলতে কেন যেন মন চায়নি আমার!
মফস্বলের বোকা মেয়েটি: ড্রাগ নিয়ে আমাদের মফস্বলে কোনকিছু শুনিনি। এটা এমনকিছু যা বাংলা সিনেমায় ভিলেনের হাতে থাকে কিন্তু আসল না চিনির প্যাকেট! তবে সিগারেট নিয়ে কিছু কাহিনী হতো। সদ্য গোঁফ গজানো অনেক কিশোর থাকে যাদের কোন এক অজানা কারনে পাশের বাড়ির সুন্দরী বড় আপুকে আর আপু ডাকতে ভালো লাগে না! রংগিন চোখে সবই নতুন, অচেনা! বড় হচ্ছে টের পেয়ে শহরের সবচেয়ে গোপন জায়গা খুঁজে দল বেঁধে আনাড়ি আংগুলে সিগারেট বসিয়ে কাশতে কাশতে ফুঁ দেয়! আহা প্রতি টানে বড় হওয়ার স্বাদ! তারপরে এটা ওটা খেয়ে, পাতাপুতি মেখে মুখ, শরীরের গন্ধ দূর করা। আপনারা ভাবছেন এতকিছু করার পরে কেউ টের পেতনা? আমার কাছে এখনো রহস্য ওদের এতো গোপনীয়তার পরেও পুরো শহরে সবাই কিভাবে জানত যে এই ইঁচড়ে পাকা ছেলেগুলো সিগারেট খায়? ছি ছি পরে যেত চারিদিকে, দেশের তরুনসমাজের অবক্ষয় নিয়ে চায়ের দোকানে চলত তুমূল আলোচনার ঝড়! সবার সামনে কান ধরে দাড় করিয়ে রেখে টিচার করতেন কঠিন প্রহার! ক্রন্দনরত মায়ের আপ্রান চেষ্টা বংশের মান ডোবানো ছেলেকে বাবার হাতের ভয়ংকর মারের হাত থেকে বাঁচানোর! সবমিলিয়ে এলাহি ব্যাপার স্যাপার। কিশোরি মেয়েদেরও অনেক শারিরীক এবং মানসিক সমস্যা থাকে সে বয়সটাতে। তবে আমি নেশা জাতীয় কিছুতে জড়িয়ে পরতে দেখিনি কাউকে দেশে থাকতে। কিছু তো থাকেই, আমার জীবনে দেখিনি বলে ছেলেদের কাহিনীটি শেয়ার করলাম।
আর আমাদের মফস্বলে কোন টিনএজারের মৃত্যু মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে হতে পারে তা কারও কল্পনাতেও আসত না। গাড়ি ছিলই হাতে গোনা কজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীদের। আমি স্কুলে নতুন নতুন গেলে বান্ধবীরা চোখ বড় বড় করে জিগ্যেস করত, "এই তুমি গাড়িতে আসো? ঐ গাড়িটা তোমাদের?" নিরিবিলি মফস্বলে দু একটা গাড়িওয়ালা মানুষেরা সুপারস্টারের চেয়ে কম কিছু ছিলনা! আর মদ্যপান? ওটাতো বাস্তবে হয়না, শুধু বাংলা সিনেমার ভিলেনের কাজ! সেটা নিয়েও কত জল্পনা, সত্যিই অভিনয়ের জন্যে মদ খেয়েছে? ছি ছি! তারপরে এক বিজ্ঞ বান্ধবীর উত্তর আরেহ না, আমাদের দেশে মদ পাওয়া যায়নাতো, ওরা কোক খেয়ে অভিনয় করে। বাকি সবাই অনেক বুঝেছে এমন ভাব করে মাথা নাড়ায়! হাহা কি ভীষন সরল, সুন্দর মানুষ এবং তাদের সাদামাটা ভাবনা! আর সেই ভাবনায় মিলেমিশে একাকার বোকা আমি!
বিশেষ কথা: পাঠক উপরের লেখা পড়ে কোনভাবেই ভাববেন না যে সব কানাডিয়ান কিশোর/কিশোরি ড্রাগ, মদে ভীষনভাবে অভ্যস্ত। তা একদমই নয়। এখানে ভীষন ওয়েল বিহেভড, মেধাবী টিনএজারও আছে। আর ভালোদের সংখ্যাই বেশি। আমি সব পর্বেই বলি কিভাবে আমার পোশাক আাশাক, কালচার আলাদা হবার পরেও ওরা আমাকে ভীষন সম্মানের সাথে ট্রিট করত! কি ভীষন ভালো ব্যবহার! খুব বেশি মিশত না প্রথম প্রথম কিন্তু হাইটাও এত মিষ্টি হেসে বলবে যেন জনম জনমের বন্ধু! আর কাউকে ছোট করত না কখনো। কেউ খারাপ মার্ক পেলে হাসাহাসি না, হয় চুপ থাকবে নয় চিয়ার আপ করবে! মায়ের পেট থেকেই যেন সম্মান, বিনয় এসব ভালো গুন নিয়ে এসেছে।
তবে এ পর্বে ট্রাবলড টিনএজদের কথা বলেছি কেননা তাদের সংখ্যাটা নিতান্তই কমও নয়। খারাপ জিনিসগুলো আলোচনা করলে অনেক সময় সচেতনতা তৈরি হয়। একসময় বাংলাদেশে কিশোর জীবন বেশ সরল ছিল যেমনটা আমি বলেছি। কিন্তু কবছরেই যেন সবকিছু বদলে গেছে! টাইটেলের কানাডিয়ান কৈশোর জীবনের সেই উচ্ছৃঙ্খলতা আমাদের দেশেও প্রযুক্তি, বিশ্বায়নের প্রভাবে ছড়িয়ে পরছে। অনেকেই আজকাল মারাত্মক সব খারাপ কাজে জড়িয়ে পরছে কৈশোরে। তবুও অনেক দেশের তুলনায় তা এখনো কম বোধ করি তবে ঠিক পদক্ষেপ না নিলে হয়ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে! পৃথিবীর সব দেশেই কৈশোর বয়সে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পরে। বিভিন্ন নেশাখোর এমনকি বড় বড় ক্রিমিনালও অনেক সময় বলে শুরুটা কৈশোরেই হয়েছিল! সেই একটা আনাড়ী সিগারেটের ফুঁ যে কখন বেআইনি ড্রাগসে পরিনত হয়ে যায় তা কেউ বুঝতে পারেনা! এদেশে সবচেয়ে চ্যালেন্জিং কাজ মনে করা হয় কোন টিনএজ বাচ্চার প্যারেন্ট হওয়া। কেননা এরা হরমোনের তারতম্যের কারনে জেদি, একরোখা হয়, কোনকিছু বুঝতে/মানতে চায়না। এডভেঞ্চারের লোভে ভুল পথে সহজেই পা বাড়ায়। বাবা মা বুঝতে পারেন না কি করা উচিৎ তাদের? যদি বেশি নজর রাখেন স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ! নজর না রাখলে হাতের বাইরে! বালাইটা যেন বাচ্চাদের চেয়ে অভিবাবকদেরই বেশি!
অনেক বিপথগামী টিনএজার সামনের জীবনে সামলে নিতে পারে নিজেকে, অনেকে পারেনা। কৈশোর বয়সের ভুল কারও সারাজীবন যেন নষ্ট না করে দেয় সেজন্যে অভিবাবকদের সাবধানে থাকতে হবে। অতি স্বাধীনতা বা অতি অনুশাসন দুটিই বিষ এ বয়সের জন্যে। সব ঠিক পরিমানে হতে হবে। বাবা মাকে বন্ধুর সাথে সাথে কড়া অভিবাবক হবার কঠিন ব্যালেন্সটি একসাথে মেইনটেইন করতে হবে। সেই বয়সে আমি আমার মায়ের কাঁধে ঠেস দিয়ে বান্ধবীর মতো সব গল্প করতাম। স্কুল থেকে ফিরেই "মা জানো কি হয়েছে?" শুরু হয়ে যেত। বাবা হঠাৎ করে রুমে ঢুকে বলতেন "দুই বান্ধবী কি গল্প করে?" আবার সেই মাই যখন ভুরুতে ইশারা করে কোন কাজ মানা করতেন সাহস হতোনা অমান্য করার। আর অবশ্যই কৈশোরের আগ থেকেই শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন নিয়ে খোলাখুলি সব আলোচনা করতে হবে। কৈশোরে পা দেবার পরে বুঝালে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্তানটি বিপথে চলে যেতে পারে। কেননা তখন কিছু বোঝার শক্তিই থাকেনা। পিয়ার প্রেশারও খুব বড় একটা কারন টিনএজারদের বিপথে পা বাড়ানোর। অভিবাবককে তাই ভালোভাবে খোঁজ রাখতে হবে সন্তান কার সাথে মিশছে। সবচেয়ে বড় কথা সকল কিশোর কিশোরির নিজের নূন্যতম বোধ বিবেচনা থাকতে হবে। নিজের ভালো নিজে না বুঝলে অন্যকেউ করতে পারেনা। এই পৃথিবীর বেস্ট প্যারেন্ট এবং টিচারও ফেইল করবে। পৃথিবীর সকল কিশোর কিশোরিরা অভিবাবকের সহায়তায় এবং নিজের বুদ্ধিতে যেন ঠিক পথে চলতে পারে সে কামনায় শেষ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৩২