কানাডায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেকে ইমিগ্র্যান্ট যায়। এই প্রবাসীদের একটা বড় অংশই আর ফিরে আসেনা এবং সেখানেই বিয়ে করে সন্তানসন্ততী নিয়ে জীবন যাপন করেন। এই বাচ্চাদের অনেকেই চোখ ফুটে বাংলাদেশকে দেখেনা, দেখে কানাডাকে! তারা আদৌ কতটুকু বাংলাদেশি হতে পারে তা নিয়েই থাকছে আজকের পর্ব!
আগের পর্বগুলো:
কানাডার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (২য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (৩য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (চতুর্থ পর্ব)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৫)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৬) ১৮+
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৭) আমার ভারতীয়, পাকিস্তানী অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৮) কিছু ভারতীয় যে কারণে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে
মারিয়া না মরিয়ম?: সময়টা আমার কানাডিয়ান স্কুলের অনেক প্রথমদিকের। আমি মাত্র দুই মাসই কষ্টে কোনভাবে পার করেছি! কোন বন্ধু নেই, পড়াশোনায় ভালো করতে পারছিনা ভাষা সমস্যার কারনে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা কোন ক্লাসে কোন বাংলাদেশি চোখে পরেনি। সবার নিজের নিজের দেশের মানুষ আছে শুধু আমারই নেই। পুরো স্কুলে শুধু আমার কানাডিয়ান কাউন্সিলরের সাথেই মন খুলে কথা বলতে পারি। আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম বাংলা না বলতে পেরে আমার অবস্থা খারাপ। আমাকে কোন বাংলাদেশি খুজে দিতে। উনি বললেন দেখি কি করা যায়? পরেরদিনই মরনিং এনাউন্সমেন্টে শুনলাম তিনি বলছেন স্কুলে কোন বাংলা স্পিকিং স্টুডেন্ট থাকলে মেইন অফিসে যোগাযোগ করতে। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। দুই দিনের মধ্যে আবার কাউন্সিলরের ডাক পরল। তিনি বললেন, "একটা বাংলাদেশি মেয়ে আছে মারিয়া নামে, ওর বাবা মা চায় ওর বাংলাটা যাতে ইমপ্রুভ করে, আর তুমিও কথা বলতে চাও। সো পারফেক্ট ম্যাচ।"
আমার খুশি আর দেখে কে! মেয়েটার সাথে রোজ ব্রেকে বিশ মিনিট কথা বলার সময় করে দিলেন তিনি। মারিয়া জিন্স প্যান্ট আর মাথায় হেজাব পরত, শ্যামলাটে, আর চোখে বড় পাওয়ারের চশমা। ও অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিল আর আমার থেকে এক ক্লাস নিচে পড়ত। ওকে বললাম খুব ভালো হল তোমার সাথে পরিচয় হয়ে, বাংলাদেশের কাউকে খুজছিলাম অনেকদিন। ওমা! মেয়েটা বলেকি, "আমার বাবা মা বাংলাদেশের, আমি এখানকার। ৫ বছর বয়স থেকে কানাডায়।" "এখানকার" শব্দটা অনেক কষ্টে অন্যরকম করে বলেছিল, এখন আমার মনে পরছে না। ওর বলার ধরনটা কেমন যেন ছিল, যেন ওকে বাংলাদেশি বলায় প্রচন্ড বিব্রত। যেন এটা কোন লজ্জার ব্যাপার! বাংলা পুরো আঞ্চলিক ভাষায় বলত, শুদ্ধ বাংলা পারত না। আমাদের দেশে মা বাবা আঞ্চলিকের সাথে সাথে শুদ্ধ ভাষা শেখায় জোর দেয় যাতে বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে কেউ হাসি তামাশা না করে। কিন্তু ওখানে বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও বাংলা বলার প্রয়োজনীয়তা না থাকায় অনেক প্রবাসি বাচ্চা শুধু বাড়িতে শোনা আঞ্চলিক ভাষাটাই জানে।
যাই হোক, ওর এইকথা শুনে বুঝে গেলাম she is not my type. তাও বড় মুখ করে কাউন্সিলরের কাছে আবদার যখন করেছি, প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ওর ভুল ভাল বাংলা শুনলাম। ওরও আমার সংগ নিশ্চই ভালো লাগত না। তারপরে একদিন ও পরীক্ষা বলে আসতে পারবেনা বলল। আমিতো হাফ ছেড়ে বাচলাম। ওর সাথে আসলে বলার মতো কোন টপিকই ছিলনা। দুজনে শুধু বসে থাকতাম ২০ মিনিট ধরে। এর পরে আমি একদিন একটা পরীক্ষার কথা বললাম। এভাবে দুই পক্ষ থেকে বাহানা করতে করতে ওর সাথে মিটিংটা কমে কমে নাই হয়ে গেল।
এর বেশ কিছুমাস পরে তখন আমি ওয়েল এডজাস্টেড স্কুলে, এক পাকিস্তানি মহিলা (আগের কোন এক পর্বে বলেছি) আমাকে বললেন তুমি মরিয়মকে চেন? আমি বললাম না কে? উনি বললেন কেন বাংলাদেশেরতো মরিয়ম? আমি বুঝলাম মেয়েটার নাম বাড়িতে, সাউথ এশিয়ান কমিউনিটিতে মরিয়ম কিন্তু স্কুলে মারিয়া। এসব আমার কখনোই ভালো লাগেনি, কানাডিয়ানদের খুশি করতে মা বাবার দেওয়া নামটাও চেন্জ করতে হবে? যাই হোক সবারই ব্যক্তিগত চয়েস আছে।
এর পরে ওর সাথে আর কোন কথাই হয়নি, এমনকি একটা টিউটারিং ওয়ার্কশপে একই গোল টেবিলে বসেও কোন কথা বলিনি আমরা। ও ওর কানাডিয়ান বন্ধুদের সাথে, এবং আমি আমার জাপানিজ বন্ধুদের সাথে বিজি ছিলাম! এখানে বলে রাখা ভালো আমরা দুইজনে একে অপরকে ঘৃনা করতাম না, শুধু আমাদের মধ্যে সব মিলিয়ে ভালো ম্যাচ হতো না। আমি বাংলায় কথা বলা একজন বাংলাদেশি প্রানের বান্ধবী চেয়েছিলাম। আর ওর শুধু মাথার হেজাব আর গায়ের রংটাই আমাদের মতো ছিল। কিন্তু মনের রং অনেক আগেই কানাডার রংগে ছেয়ে গেছে। সেখানে বাংলাদেশের কোন অস্তিত্বই নেই। আর ও বাবা মায়ের শুদ্ধ, পরিষ্কার বাংলা শিখতে হবে সেই চাপে আমাকে আকড়ে ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশি আমি ওর ভুল ভাল বাংলায় বলা কানাডিয়ান টপিক (মুভি, শো, তারকা,কালচার) নিয়ে বলা কথাগুলোর কিছুই বুঝতাম না। মাথা ঝাকিয়ে যেতাম কিন্তু ওর বলা কথাগুলোয়ে কিছুই এড করতে পারতাম না। তাই আমার চেয়ে বেশি আশাহত হয়ত ওই হয়েছিল! ও অনেক ভালো, নামাজি, ব্রিলিয়ান্ট কানাডিয়ান একটা মেয়ে ছিল, যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
ভারতীয় বাংলাদেশি?: এটা সবচেয়ে কষ্টের এক্সপেরিয়েন্স। কানাডায় বাংলাদেশির কানাডিয়ান হওয়াতো মেনে নেওয়াও যায়। কিন্তু ভারতীয় হয়ে যাওয়াটা? এই মেয়েটা অনেক পরে এসেছিল। মেয়েটার জিন্স, প্যান্ট পরত, চুল সোনালি রং করা, বেশ ফর্সা, আমি বাংলাদেশি প্রথমে বুঝতে পারিনি। একই লাইনে পরীক্ষার খাতা নিতে দাড়িয়ে ছিলাম। ও নিজেই পরিচিত হল আমাকে জিগ্যেস করল আমি বাংলাদেশি কিনা? আমি হ্যা বলায় বলল, ''আমিও বাংলাদেশি, বাংলাদেশের আরেকজনকে সাথে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগছে।" এই পুরো কথাটা ইংলিশে বলল, এবং আমিও বুঝে গেলাম ইনি মারিয়া টাইপ বাংলাদেশি। লাইনে এগিয়ে আর তেমন কথা হলনা সেদিন।
এরপরে কয়েক মাস পরে একটা এডিশনাল হেল্প ক্লাসে একই টেবিলে বসে আছি আমরা ৭/৮ জন। আমার সেই ক্লাসটা তেমন করা লাগত না তাই একা একাই ছিলাম। ওর অনেক বন্ধু ঐ ক্লাসে, তো ও কথা বলছিল নিজের বন্ধুদের সাথে। এমন সময়ে বলল, "আমি বলিউড মুভি খুব পছন্দ করি। ওয়ান্ডরফুল সব মুভি ওদের।" বন্ধু যে শুনছিল জিগ্যেস করল সাবটাইটেলে দেখ? ও বলল, "আমি হিন্দি বলতে পারি, বুঝতে পারি।" ওরা বলল তোমার মাদারটাং?
ও বলল, "না আমার মাদারটাং বাংলা, but I don't speak Bengali, I speak Hindi." আমার কানে এখনো বাজে কথাটা। ওর কানাডিয়ান চালচলনে খারাপ লাগেনি কিন্তু সেকন্ড অপশনেও বাংলাদেশ না অন্য কোন দেশ! আড়ালে কারও কথা শোনা উচিৎ না কিন্তু একই টেবিলে বসে থাকায় কানে চলেই আসল। আর মিথ্যে বলবনা বাংলাদেশি হওয়ায় আলাদা কৌতুহলতো ছিলই! সেদিন বাড়িতে আসার পথে পুরোটা সময়ে ওর বলা কথাটা কানে বাজছিল। আমার খারাপ লাগা এটা ছিলনা যে ও এরকম, আমার খারাপ লেগেছিল এটা ভেবে যে প্রবাসে ওর মতো হাজারটা বাংলাদেশি বাচ্চা ভারতীয় হয়ে যাচ্ছে!
এখানে দুইজন বাংলাদেশি প্রবাসি বাচ্চার কথা বললাম। একজন নিজেকে বাংলাদেশি না কানাডিয়ান মানতে গর্ববোধ করে। আরেকজন নিজেকে সবসময় বাংলাদেশি বলে কিন্তু বাংলাদেশি হওয়ার মানে কি তার কোন আইডিয়াই নেই!
বাস্তবতা: ওপরের গল্পটার প্রতিটা লাইন যেমন আমার জীবনের বাস্তব ঘটনা, তেমনি সার্বিকভাবে কঠিন সত্য। প্রবাসী বাচ্চারা ছোটবেলা থেকে বাড়িতে হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমা দেখে তাই বাংলা শিখুক না শিখুক হিন্দি ঠিকই শিখে ফেলে! পেপারে অনেক সময়ে প্রবাসি পাতায় দেখবেন পয়েলা বৈশাখে বাচ্চারা নাচানাচি করছে আর বাবা মা বলছেন তারা বিদেশেও দেশীয় কালচার লালন করে রেখেছেন! আচ্ছা বছরের একটা দিন নাচ গান করলেই বাংলাদেশি হওয়া যায়? তাহলেতো আমি বাংলাদেশিই না! আমি নাচ, গান কোনটাই পারিনা। এটা আমাদের কালচারের একটা অংশ কিন্তু পুরো কালচার না।
প্রবাসি বাচ্চাদের কোনই দোষ নেই, বাংলাদেশকে না দেখলে মায়া আসবে কোথা থেকে? ওরা রবীন্দ্রসংগীতের তালে নাচবে পুতুলের মতো, কিন্তু এর মানে হয়তো বুঝবেনা। আমি সবসময়েই বলেছি কোন কানাডিয়ান আমাকে বাংলাদেশি কালচার কানাডায় ফলো করতে বাধা দেয়নি। সবসময় সালোয়ার কামিজ পরে চলাফেরা করেছি, নিজের আসল নামটা পাল্টাইনি, বন্ধুরা খাওয়ার শেয়ার করতে চাইলে হালাল না হওয়ায় রিফিউজ পর্যন্ত করেছি। কিন্তু ওরা ভুরুটা পর্যন্ত কুচকায়নি মুখে কিছু বলাতো দূরের কথা। আর বলবেই বা কেন? আমার দেশ, আমার কালচার। তেমনি করে কানাডাকে নিজের দেশ ভাবতে থাকা বাচ্চাদেরকে আমাদের প্রবাসি বাবা মারা বাধা দেওয়ার কে? এতে ওরা বাংলাদেশকে আরও অপছন্দ করতে শুরু করবে, ভাববে জোর করে নিজেরদের কালচার ফলো করানোটাই আমাদের কালচার!
প্রবাসি বাংলাদেশি মা বাবাদের অনেকে (সবাই না) আশা করে থাকে আমাদের বাচ্চাকে কানাডায় মানুষ করে কানাডিয়ান স্কুলে পড়াব আর বাড়িতে হিন্দি চ্যানেল চালিয়ে রাখব এবং বাচ্চারা বাংলা ভাষা শিখবে, বাংলাদেশি কালচার ফলো করবে এবং বাংলাদেশি ছেলে অথবা মেয়েকে বিয়ে করবে। এটাও কি সম্ভব? একটা বাচ্চা কালচার শেখে পরিবার, স্কুল এবং আশেপাশের পরিবেশ থেকে। প্রবাসী বাচ্চারা স্কুলে, আশেপাশে তেমন কোন বাংলাদেশি পরিবেশ সাধারণত পায় না। তারপরে ঘরেও যদি বিদেশী চ্যানেল চলতে থাকে তাহলেতো এরা বাংলাদেশের ব ও বুঝবে না।
কিন্তু মা বাবারা ভাবে আরে আমি বাংলাদেশি আমার বাচ্চা কেন তা হবেনা? এই কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর আপনি বাংলাদেশে মানুষ হয়েছেন, এদেশের জল, মাটি, রোদ গায়ে মেখেছেন। ওরা সেই সৌভাগ্য পায়নি! ওদের কাছে কানাডাই নিজের দেশ যেমন করে আপনার কাছে বাংলাদেশ নিজের দেশ। আপনি যেমন বছরের পর বছর কানাডায় থেকেও মনেপ্রানে বাংলাদেশের জন্যে টান অনুভব করেন ওরা তেমনি করে কানাডার জন্যে টান অনুভব করে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই বাচ্চারা দিন দিন নিজের মা বাবা, পরিবারের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে কালচারাল ডিফারেন্সের কারনে। মানসিক দ্বন্দে বড় হচ্ছে নিজের আইডেন্টিটি নিয়ে, নিজের জাতীয়তাবোধ নিয়ে। আর মা বাবাও দুশ্চিন্তায়, যে বাংলাদেশি কালচারকে সারাজীবন লালন করেছেন তা তাদের বাচ্চারা বুঝতে পারছেনা! এসব সমস্যা সলভ করার একটাই পন্থা। যতটুকু পারা যায় বাংলাদেশি কালচার জানানো বাচ্চাদেরকে কেননা নিজের শেকড়কে জানার, মানার অধিকার ওদের আছে। তারপরে ওদের সিদ্ধান্ত ওরা নিজের শেকড়ের সাথে মিশে থাকবে নাকি যে দেশে থাকছে সে দেশের কালচার ফলো করবে। তবে বাচ্চারা কানাডিয়ান কালচার ফলো করতে চাইলে বাধা দেওয়া যাবে ন। জানি অনেক কঠিন তা বাংলাদেশি মা বাবাদের জন্যে কিন্তু পারিবারিক সম্মান, দেশীয় আবেগকে বাচাতে গিয়ে নিজের বাচ্চাদেরকে কষ্ট দেবেন না দয়া করে। আমার বিনীত অনুরোধ এটা।
ছোট্ট একটা পসিটিভ গল্প দিয়ে শেষ করি। আমাদের পরিচিত প্রবাসি গল্প করেছিলেন যে একটা ৮ বছরের বাচ্চা কানাডায় যেয়ে গুগল ম্যাপে বাংলাদেশ সার্চ করে ম্যাপের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকত। আর বলত "এটা আমার বাড়ি না? এটা আমার বাড়ি না?" শুনে মনটা ভরে গিয়েছিল। দেশের প্রতি বাচ্চাটার এই টান শুধু বাড়বেই কমবেনা। ওর মতো হাজারটা প্রবাসি বাচ্চা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে, শুধু মা বাবার কাছে বাংলাদেশের কথা শুনে, ইন্টারনেটে দেখে, বুকের গভীর আবেগে শেকড়ের টানে বাংলাদেশের জন্যে পাগলের মতো ভালবাসা বয়ে বেড়াবে সেই আশা নিয়ে শেষ করছি।
বিশেষ কথা: আমার লেখা পড়ে দয়া করে ভাববেন না প্রবাসে ঘরে ঘরে এই সমস্যা। যারা এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শুধু তাদের কথা লিখেছি। অনেক ব্যতিক্রমধর্মী বাবা মা আছেন যারা জোর না করে কৌশলে দেশপ্রেম ঢুকিয়ে দেন এবং বাচ্চারা গর্বের সাথে বাংলাদেশি পরিচয় দেয় নিজেকে। তাদেরকে অভিনন্দন।