আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ ) ট্রেন যোগ হচ্ছে রেলবহরে। এ ধরনের ট্রেনের প্রথম চালান নিয়ে একটি জাহাজ শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিন বগির এই বিশেষ কমিউটার ট্রেনগুলোকে বলা হয় ‘ডিজেল ইলেকট্রিক মালটিপল ইউনিট’ (ডিইএমইউ)। এতে থাকবে দুই পাশে ইঞ্জিন ও মাঝখানে বগি।
জানা গেছে, ট্রেনগুলোতে টয়লেট বা ক্যান্টিনের ব্যবস্থা নেই। তাই শুরুতে বাংলাদেশ রেলওয়ে আপত্তি জানিয়েছিল এধরণের ট্রেনের ব্যাপারে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্তে ট্রেনগুলো সংগ্রহ করছে।
রেল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ডিইএমইউ রেলযান এই প্রথম চালু হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলো কমিউটার ট্রেন হিসেবে চালানো হবে কম দূরত্বে। চীন থেকে ২০ সেট ট্রেন আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম চালানটি শিপমেন্ট হয়েছে। আগামী শনিবার জাহাজ পৌঁছবে চট্টগ্রামে। এতে রয়েছে চার সেট ট্রেন।
রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, কমিউটার সার্ভিসের জন্য ১০টি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে সাতটি এবং পশ্চিমাঞ্চলে তিনটি রুট। এসব রুটে ডিইএমইউ ট্রেনগুলো চলবে। চীনের তাংসাং রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড থেকে মোট ২০ সেট ট্রেন সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০১১ সালের আগস্টে তাদের সাথে বাংলাদেশ রেলওয়ের চুক্তি হয়। এতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৬৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ ট্রেনগুলো আমদানি করছে। আগামী জুনের মধ্যে এগুলোর আমদানি সম্পন্ন হবে। প্রতিটি ট্রেনে ৩০০ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন । এদের মধ্যে ১৫১ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। অপর ১৪৯ জন যাতায়াত করবেন দাঁড়িয়ে।
ডিইএমইউ ট্রেনগুলো চলবে বিদ্যুতে। ট্রেনের মধ্যেই ডিজেল মেশিন থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হবে এবং তাতে চলবে ট্রেন। জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা এবং ইঞ্জিনের কার্যশক্তি কম হওয়ায় এই ট্রেন ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের রুটে চালানো যাবে না। তাই দুই সেট ট্রেনের বগি সংযোজন করে এক সেটে রূপান্তরের মাধ্যমে স্বল্প দূরত্বে এগুলো চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
জানা গেছে, ডিইএমইউর ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল মাত্র পাঁচ বছর আর শক্তি মাত্র ৪৬০ অশ্বশক্তি। বর্তমানে ভারতীয় যেসব ইঞ্জিন রেলওয়েতে রয়েছে সেগুলো ৩১০০ অশ্বশক্তির। এসব ইঞ্জিনের গড় আয়ুষ্কাল ২০ বছর। অবশ্য ৩০-৩৫ বছর ধরে চালু রয়েছে ইঞ্জিনসমূহ। রেল কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যেক ডিইএমইউ ট্রেন অপারেটিং করা যাবে ইঞ্জিনের দুই পাশ থেকেই । ট্রেনে তিনটি ইউনিট মিলে একটি সেট। ইউনিটগুলো হলো ড্রাইভিং পাওয়ার কার(ডিপিসি), ট্রেইলার কার (টিসি) এবং ড্রাইভিং ট্রেইলার কার (ডিটিসি)।
যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেকটি ট্রেন একটি বা দুটি সেট করে চালানো যাবে। ডিইএমইউ ট্রেন প্রয়োজনে প্রত্যেকটি বগি আলাদা করে বা তিনটি এক সঙ্গেও চালানোর সুযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ট্রেনগুলোতে টয়লেট বা ক্যান্টিনের ব্যবস্থা নেই। তাই শুরুতে বাংলাদেশ রেলওয়ে আপত্তি জানিয়েছিল এধরণের ট্রেনের ব্যাপারে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্তে ট্রেনগুলো সংগ্রহ করছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কমিউটার সার্ভিসের জন্য নির্ধারিত পূর্বাঞ্চলের রুটগুলো হলো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-ভৈরব-ঢাকা , ঢাকা-জয়দেবপুর-ঢাকা , চট্টগ্রাম-দোহাজারী-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-লাকসাম-চট্টগ্রাম, লাকসাম-নোয়াখালী-লাকসাম এবং লাকসাম-চাঁদপুর-লাকসাম।
পশ্চিমাঞ্চলের ৩টি রুট হলো লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট , লালমনিরহাট-দিনাজপুর-লালমনিরহাট ও লালমনিরহাট-বগুড়া-লালমনিরহাট ।
এই ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার। তবে চট্টগ্রামে চালানো হবে ৩০ কিলোমিটার থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে। পরীক্ষামূলক পরিচালনায় ট্রেনটি জনপ্রিয়তা পেলে এটাকে বেসরকারি খাতে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
Click This Link