নিউ ইয়র্ক পুলিশের গুপ্তচরের চাকুরি থেকে সম্প্রতি পদত্যাগকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান যুবকের নাম পরিচয় জানা গেছে। তার নাম সামিউর রহমান। গতকাল বার্তা সংস্থা এপি পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়, নিউ ইয়র্ক পুলিশের গুপ্তচরের চাকুরি থেকে সম্প্রতি পদত্যাগকারী সামিউর জানিয়েছেন, মুসলিমদের ফাঁদে ফেলে অপরাধী বানিয়ে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে সহযোগিতার বিনিময়ে পুলিশ তাকে টাকা দিতো। আর টাকার লোভে মাঝে-মাঝেই তিনি পুলিশের কাছে বিকৃত তথ্য প্রদান করতেন। সামিউর জানান, তিনি এখন মনে করছেন তা করা ভুল ছিল। তিনি বলেন, এখন আমি নিজেকে এই ভেবে ঘৃণা করি যে টাকার জন্য আমি মানুষকে ব্যবহার করেছি।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, ড্রাগ নেয়ার মতো কম দণ্ডনীয় ক্রিমিনাল অপরাধে সামিউর পরপর তিনবার জেলে যান। শেষবার জেলে যাওয়ার পর গত জানুয়ারিতে জেলখানায় একজন সাদা পোশাকের পুলিশ তার সঙ্গে দেখা করে নিউ ইয়র্ক পুলিশের গুপ্তচর হিসেবে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে কাজ করতে তাকে প্রস্তাবে দেয় এবং এর পরের মাস থেকেই তিনি ওই চাকরিতে যোগ দেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশের ‘ক্রিয়েট অ্যান্ড ক্যাপচার’ কৌশলের আওতায় এ গুপ্তচরের কাজ সম্পর্কে সামিউরকে বলা হয়, আমরা চাই তুমি তাদের একজনের মতো হয়ে তাদের সঙ্গে মিশে যাবে, কাজটা অনেকটা স্ট্রিট থিয়েটারের মতো.... সামিউরের কাজ ছিল বাংলাদেশী যুবকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে জিহাদ, বিপ্লব, সন্ত্রাস বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা এবং এ বিষয়ে প্রত্যকের মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করা। আর এ কাজের জন্য তার প্রতি মাসের বেতন ছিল এক হাজার ডলার। এছাড়া মারিজুয়ানা রাখার মতো ছোটখাটো ক্রিমিনাল অপরাধ সত্ত্বেও তিনি পেয়েছিলেন পুলিশের সুনজর।
উল্লেখ্য, বিগত ২২শে অক্টোবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে গতকাল মানবজমিনে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদে বলা হয়, সম্প্রতি ১৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান যুবক যে নিউ ইয়র্ক পুলিশের গুপ্তচর হয়ে বাংলাদেশী মুসলিম কম্যুনিটিতে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা সম্ভাব্য মুসলিম সন্ত্রাসীদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করতো, সম্প্রতি সে তার গুপ্তচরবৃত্তির কাজ ছেড়ে দিয়েছে। তার চাকরিদাতা এনওয়াইপিডি’র প্রকাশ্যে সমালোচনা করে সে বলেছে, চাকরির পুরো বিষয়টাই শুধু টাকার খেলা। তবে সম্প্রতি এফবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশী ছাত্র নাফিসের বিষয়ে তার কোন ভূমিকা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে গতরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত সংবাদে ওই বাংলাদেশী মুসলিম যুবকের নাম প্রকাশ না করে বলা হয়, চাকরি ছেড়ে দেয়া বাংলাদেশী যুবককে কেবল সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে এনওয়াইপিডি কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও নিউ ইয়র্ক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পল ব্রাউন রয়টার্সকে জানান, তার ডিপার্টমেন্ট-এর প্রায় ২০ ভাগ এজেন্ট বিদেশে জন্মগ্রহণকারী আমেরিকান।
নাইন ইলেভেনের পর নিউ ইয়র্কের মুসলিম কম্যুনিটিতে বর্ধিত নজরদারির জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত অজ্ঞাত সংখ্যক গুপ্তচরদের একজন হিসেবে ওই বাংলাদেশীর কাজ ছিল নিউ ইয়র্কের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় বাংলাদেশী মুসলিম যুবকদের সন্ত্রাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় বর্ধিত নজরদারি করে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করা। কিন্তু অজানা কারণে গত ২রা অক্টোবর ওই বাংলাদেশী যুবক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে পুলিশের এজেন্ট হিসেবে তার পরিচয় প্রকাশ করে দিয়ে ওই চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়ার কথা ঘোষণা করে, বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়। ফেসবুকে এ বিষয়ক মন্তব্যে তার চাকরি ছেড়ে দেয়া সম্পর্কে সে লিখেছে, ‘আমি বন্ধুত্বের অভিনয় করে করে ক্লান্ত, এতদিন ভাবতাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য আমি এসব করছি, কিন্তু এখন মনে হছে সত্যি বলতে ‘ইটস অল এবাউট মানি’।
এ বিষয়ে গতকাল বার্তা সংস্থা এপি’র নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বিগত ২রা অক্টোবর সামিউর তার ফেসবুক পেজে নিজের গুপ্তচরবৃত্তির পরিচয় প্রকাশের পর বিগত ১৫ই অক্টোবর বার্তা সংস্থা এপি তার একটি সাক্ষাৎকার নেয়, এরপর সামিউর তার সাক্ষাৎকারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে জানানোর পর থেকে সামিউর ওই কর্মকর্তার নিকট থেকে তার সেলফোনে চাকরির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন বিষয়ক নির্দেশনামূলক নতুন কোন টেক্সট মেসেজ পাননি, একপর্যায়ে ওই ফোন নম্বরটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। সামিউর বলেন, তিনি এখন মনে করেন তার চাকরিকালীন বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি যে দায়িত্বপালন করেছেন তা ‘ডেট্রিমেন্টাল টু কন্সটিটিউশন’।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, সামিউরের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে কোন ধরনের নির্দিষ্ট নিরাপত্তা হুমকি ছাড়া এমনকি কোন অপরাধের অভিযোগ ছাড়া এনওয়াইপিডি কি বিশাল আকারে সিটির মুসলিম অধ্যুষিত নেইবারহুডে গুপ্তচরের জাল ছড়িয়ে রেখেছে। অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ এনওয়াইপিডি বরাবরই অস্বীকার করে।
Click This Link