somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লবের বাঁশিওয়ালাঃ সিরাজ সিকদার ও তাঁর সর্বহারা পার্টি

০৬ ই জুন, ২০১১ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান কায়েম হয়। মুক্তি আসে না। নতুন করে শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির চরম প্রকাশ ১৯৭১ সাল। এ পর্বে এসে বাংলায় নানা রাজনৈতিক সংগঠন-ব্যক্তিকে দেখা যায়, যার মধ্যে সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা পার্টি এক অনন্য অবস্থান তৈরি করে। এ কারণে এক শ্রেণীর কাছে সর্বহারা পার্টি ও সিরাজ সিকদার একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের নাম, আর অন্য একটি অংশের কাছে সিরাজ সিকদার ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত পার্টি একটি আদর্শের নাম। সিরাজ সিকদার বহু আগে নিহত হয়েছেন, মুজিবের শাসনামলের শেষের দিকে। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গতিপথে খুব কৌশলে সিরাজ সিকদারকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে আড়াল করা হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস; কিন্তু বাস্তবতায় আজও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক।

ঔপনিবেশিক এলিট জাতীয়তাবাদী প্রভাবিত ইতিহাসবিদদের কাছে নিম্নবর্গের মানুষের চৈতন্য বলে কোনো কিছু ধরা পড়েনি। ফলে এ অঞ্চলে নিম্নবর্গের মানুষের যে লড়াই, তা তারা দেখতে পায়নি। শেষ পর্যন্ত শাসকশ্রেণীর ঝোলনোল খেয়ে বাড়বাড়ন্ত ইতিহাসবিদদের কাছে ইতিহাস রক্ষা না পাওয়ারই কথা_এটা আবার ইতিহাসের শিক্ষা। সিরাজ সিকদার তেমনই একজন নিম্নবর্গের ফিনিঙ্ পাখি। অনেকে তাঁকে সিআইএর চর বলেন, অনেকের মতে তিনি বাংলার চে গুয়েভারা। প্রবীণ বামপন্থীরা, যাঁদের তিনকাল পেরিয়ে এসে ঠেকেছে কালীঘাটে যাওয়ার অপেক্ষায়, তাঁরা তাঁকে নানা রকম 'মার্কসবাদী ডিসকোর্সের' অধীনে ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, এটা হঠকারী। তার পরও সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা পার্টি এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে অনন্য, কারণ এই বাংলায় যখন সবাই চীন-রাশিয়াকে নকল করে কমিউনিজমের আন্দোলন করছেন, সেখানে সিরাজ সিকদার ভিন্ন এবং বঙ্গীয় রীতিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের চেষ্টা করেছেন। সমসাময়িক বাঘা কমিউনিস্টদের পুতুল বানিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনদের অনুষঙ্গ হিসেবে। এ কারণে সাহসের যে নাম লাল তারই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন সিরাজ সিকদার।

চারু মজুমদারের পূর্ববঙ্গীয় উত্তরসূরি
ষাটের দশক পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের দশক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ সময় পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও বিকশিত হতে থাকে জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন। পাকিস্তানপর্বে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় কমিউনিস্ট পার্টি মূলত আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মধ্যে মিশে গিয়ে কাজ করতে থাকে। পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েক বছরের মধ্যেই বাঙালিদের স্বপ্নভঙ্গ হতে থাকে। এ পর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থীরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার নানা প্রক্রিয়া হাতে নেয়। এ সময় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও জমে ওঠে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নামে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাঁর সঙ্গীদের। মামলার শেষ পর্যায় এসে শেখ মুজিবুর রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এই দশকে ভারতে এযাবৎকালের সব থেকে বড় ধাক্কা আসে সশস্ত্র কৃষক আন্দোলনের মাঝখান থেকে। ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ফাশিদেওয়া, নকশালবাড়ীতে ঘটে যায় এ সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পথ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ নেয় চারু মজুমদারের নেতৃত্বে একদল কমিউনিস্ট। পরে যাঁরা সিপিআই (এমএল) নামে পার্টি তৈরি করেছিলেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশে নকশাল আন্দোলন নামে পরিচিত হয়েছিল। নকশালবাড়ীর সেই প্রবল জোয়ার পূর্ব পাকিস্তানেও আছড়ে পড়ে।
পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি আগেই রুশ ও চীন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একটি ধর্মভিত্তিক বৈরী রাজনৈতিক আবহাওয়ায় কমিউনিস্ট হিসেবে রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের পথ তখন সহজ ছিল না, খুব কম লোকই সেই পথে এগোতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র সিরাজুল হক সিকদার বা সিরাজ সিকদার।

ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের ছাত্র বুয়েটের লিয়াকত হল শাখার সভাপতি সিরাজ সিকদার ইতিমধ্যেই মার্কসবাদের মৌলিক জ্ঞান আয়ত্ত করে ফেলেছেন। এই বয়সেই পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) সদস্যপদ পেয়েছেন।

পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) চারু মজুমদারের সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের তত্ত্বকে হঠকারী হিসেবে আখ্যায়িত করল। এর প্রতিক্রিয়ায় পার্টি থেকে বেরিয়ে এলেন সিরাজ সিকদার। তিনিসহ অন্য তরুণ কর্মীরা পার্টি থেকে বেরিয়ে গঠন করলেন রেড গার্ড। ঢাকা শহর ভরে উঠল, 'বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস' বা 'নকশালবাড়ী জিন্দাবাদ'-এর মতো দেয়াললিখনে।

সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে রেড গার্ড
লেনিন যাঁরা ভালো করে পড়েছেন তাঁরা জানেন বিপ্লব করতে হলে বিপ্লবী তত্ত্বের প্রয়োজন পড়ে। তবে তাঁর সঙ্গে প্রয়োজন হয় বিপ্লবের রণকৌশল। লেনিন থেকে শিক্ষা নিয়ে মাও সেতুংয়ের দীর্ঘমেয়াদি সশস্ত্র গণযুদ্ধের তত্ত্বমতে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে বিপ্লবী পার্টির সেনাবাহিনী, যে সেনাবাহিনী জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এ লড়াইকে রাষ্ট্রক্ষমতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ রণকৌশল আঁকড়ে ধরে সিরাজ সিকদার প্রথমে অন্য ভ্রাতৃপ্রতিম কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার অংশ হিসেবে মিয়ানমারে কমিউনিস্ট পার্টির সাক্ষাতের জন্য রওনা হলেন টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারে। সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা থান-কিন-থাউর সঙ্গে দেখা করলেন নে-উইনের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রামের স্বরূপ জানতে। তবে মিয়ানমারের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা থান-কিন-থাউর সঙ্গে সিরাজ সিকদার দেখা করতে যাননি। তাঁদের চারজনের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠান। সেই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ফজলুল হক রানা। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা মিয়ানমারে গিয়েছিলাম মূলত সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির লড়াইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানার জন্য। আমাদের তাঁরা ক্যাম্পে রেখে খেতে দিয়েছিলেন। অনেক বিষয় আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সে সময়।'

ফিরে এসে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘাঁটি নির্মাণে লেগে গেলেন। বাকি কমরেডদের নিয়ে লেগে গেলেন পাহাড় কেটে সুরঙ্গ তৈরিতে। বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে ঘোরের মধ্যে থাকা এই বিপ্লবীদের সঙ্গী-সাথির বয়স খুবই কম। তবে মানুষ ছাড়া বিপ্লব কার সঙ্গে করবেন? অবশেষে ক্ষান্ত দিয়ে ফিরে এলেন ঢাকায়।

মাও সেতুংয়ের চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র থেকে পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন

সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে পাকিস্তানের কালপর্বে ঘটে যাওয়া ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতিকাল ১৯৬৭-৬৮ সালে সিরাজ সিকদার গড়ে তোলেন মাও সেতুং থট রিসার্চ সেন্টার বা মাও সেতুংয়ের চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র। মাও সেতুং গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় মালিবাগে। মালিবাগের এ বাসাটি ভাড়া নেন ফজলুল হক রানা। এ সময় পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংঘের কর্মীদের আক্রমণের কারণে রিসার্চ সেন্টারটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন সিরাজ সিকদার।
তবে সিরাজ সিকদার দমে যাননি। এর পরই ১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি গড়ে তোলেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত থিসিস দেন, যা পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের থিসিস নামে খ্যাত। ১৯৬৮ সালের ১ ডিসেম্বর পরিবর্ধিত ও পুনর্লিখিত দলিলটি পরবর্তী সময়ে সর্বহারা পার্টি গড়ে ওঠার থিসিস হিসেবে, তাত্তি্বক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের থিসিসে সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই থিসিসেই সিরাজ প্রধান ও মূল সংঘাতগুলো (কনট্রাডিকশনস) উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি সফল বিপ্লবের বিভিন্ন পর্যায় ও তা সম্পন্নের রূপরেখা দেন। সম্মেলনে উপস্থিত সবার অনুমোদন পায় তা। থিসিসে সিরাজ সিকদার ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সারসংকলন করেন। কেন ভারতীয় উপমহাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি ব্যর্থ হয়েছে সে বিষয় তিনি একটি পর্যালোচনা দেন। পূর্ব বাংলার বিপ্লবের চরিত্র ব্যাখ্যা করে বলেন, 'পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলা একটি স্বাধীন শান্তিপূর্ণ নিরপক্ষে প্রগতিশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এক অর্থে তিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতিও ঠিক করে ফেলেন।

দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ করার জন্য বাহিনী তৈরির কাজেও তিনি লেগে যান। এরপর তিনি গঠন করেন ইস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও ইস্ট বেঙ্গল রেভল্যুশনারি আর্মি, যা পূর্ব বাংলার বিপ্লবী সেনাবাহিনী নামেও পরিচিত। এ সময় তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে মাওয়ের স্লোগান দিয়ে দেয়াললিখন করেন। শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা মাওয়ের বিখ্যাত উক্তি নিয়ে চিকা পড়ে : বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। এ সময়ের একটি ঘটনার সাক্ষী শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী শ্রমিক আবু ইসহাক। তিনি বলেন, ভাই (সিরাজ সিকদারকে কর্মীদের অনেকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন) আমাদের বললেন, এই স্লোগান ঢাকার বিভিন্ন ওয়ালে লিখতে। আমরা লিখতাম। একটু পরে পুলিশ এসে সারা রাত ধরে সেই স্লোগান মুছত। তখন ভাই হেসে বলতেন, এটা দিয়েই হবে।'

এ সময় শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চল হয়ে দাঁড়ায় তাদের গোপন প্রশিক্ষণের অন্যতম ক্ষেত্র।

সর্বহারার হাতে তৈরি বাংলাদেশের পতাকা!
শ্রমিক আন্দোলনের থিসিসের পরই শ্রমিক আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা) স্বাধীনতার প্রশ্নে লড়াই শুরু করে। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের তাত্তি্বক লাইন গ্রহণ করায় এ সময় সংগঠন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশালসহ একাধিক অঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনের মজবুত ভিত গড়ে ওঠে। সংগঠনের নেতৃত্বে বরিশালের ঘাট শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অর্থনীতিবাদী প্রকাশ্য আন্দোলন-সংগ্রামও গড়ে ওঠে বলে জানিয়েছেন সর্বহারা পার্টির সাবেক নেতা-কর্মীরা।

ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকার প্রকৃত ইতিহাস
১৯৭০ সালের ৮ জানুয়ারি পার্টির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি নতুন পতাকা ওড়ানো হয়। ওই পতাকারই পরিবর্তিত রূপ আজকের বাংলাদেশের পতাকা। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে ওড়া ওই পতাকায় সবুজ জমিনের মধ্যে লাল সূর্য। সে সময় নতুন একটি পতাকা উত্তোলনের ঘটনা বিভিন্ন পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়।

পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ফজলুল হক রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় পতাকার মূল নকশার পরিকল্পকদের একজন ছিলেন অবাঙালি, সাইফুল্লাহ আজমী। যাঁর পরিবার বিহার থেকে অভিবাসী হয়ে এসেছিল এ দেশে। এ পতাকার সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার একটিই পার্থক্য, তা হলো সর্বহারা পার্টি কর্তৃক লাল সবুজের পতাকার মধ্যে শুধু মশাল জ্বালানো একটি অংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় নেই। এ প্রসঙ্গে সিরাজ সিকদার নিহত হওয়ার পর সর্বহারা পার্টির সভাপতি রইসউদ্দিন আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে সবখানে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ। পতাকায়ও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট। কিন্তু সিরাজ সিকদার ভিন্ন ঘরানার রাজনীতি করতেন। এ কারণে তিনি পতাকায় তিনটি মশাল দিয়ে স্মারক রেখেছিলেন। এক. ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দুই. জাতিগত সংখ্যালঘু ও তিন. ভাষাগত সংখ্যালঘু।

সশস্ত্র হামলা শুরু
পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন শুধু তাত্তি্বক আর শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কোনো সংগঠন ছিল না। প্রথম থেকেই সংগঠনটি সশস্ত্র অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের বিকাশ নিশ্চিত করে। এ রকম একটি ব্যর্থ হামলা চালায় ১৯৬৮ সালের ৬ মে কার্ল মার্কসের জন্মদিনে। ওই দিন পাকিস্তান কাউন্সিলে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন। হামলাটি সফল হয়নি। তবে হামলা থেমে থাকেনি। এ হামলার পরে আরো বেশ কিছু হামলা হয় বিদেশি দূতাবাসে। তার মধ্যে ওই বছরের অক্টোবর নাগাদ ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন, আমেরিকান ইনফরমেশন সেন্টারসহ আরো বেশ কিছু জায়গায়। বিদেশি শত্রুদের স্থানে হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতাকারীদেরও একটি তালিকা তৈরি হতে থাকে। সে তালিকায় ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম নিহত হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার হারু বাবু।

শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের কাছে খোলা চিঠি

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়াদের ক্ষুদ্র সংগঠন আওয়ামী লীগ মূল নেতৃত্বে চলে আসে। তবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার ডাক দেয় পাকিস্তানি জান্তা সরকার। তবে সিরাজ সিকদার ও তাঁর সংগঠন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান নেয় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সিরাজ সিকদার শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি খোলা চিঠি লেখেন। ১ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেন, উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা। পরদিন ২ মার্চ পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন শেখ মুজিবকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানায়। একই সময় সংগঠনটি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী জোট সরকার গঠন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠনের অনুরোধ জানায়। তবে মুজিব তখন ব্যস্ত আলাপ-আলোচনায় সমাধান খুঁজতে।

চিঠির সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে ছাপা হবে ছোট অক্ষরে,
আপনার ও আপনার পার্টির ছয় দফা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইহিতাস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, ছয় দফার অর্থনৈতিক দাবিসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যমে, পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন, মুক্ত ও স্বাধীন করে।

আপনাকে ও আপনার পার্টিকে পূর্ব বাংলার সাত কোটি জনসাধারণ ভোট প্রদান করেছে পূর্ব বাংলার উপরস্থ পাকিস্তানের অবাঙালি শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান করে স্বাধীন ও সার্বভৌম পূর্ব বাংলা কায়েম করার জন্য।

পূর্ব বাংলার জনগণের এ আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন আপনার প্রতি ও আওয়ামী লীগের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো পেশ করছে :

১. পূর্ব বাংলার নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এবং সংখ্যাগুরু জাতীয় পরিষদের নেতা হিসেবে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করুন।
২. পূর্ব বাংলার কৃষক-শ্রমিক, প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি-সংবলিত স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার কায়েম করুন।
৩. পূর্ব বাংলাব্যাপী এ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানান। এ উদ্দেশ্যে পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিবাহিনী গঠন এবং শহর ও গ্রামে জাতীয় শত্রু খতমের ও তাদের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের আহ্বান জানান।
৪. পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার জন্য শ্রমিক-কৃষক এবং প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে 'জাতীয় মুক্তি পরিষদ' বা 'জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট' গঠন করুন।
৫. প্রকাশ্য ও গোপন, শান্তিপূর্ণ ও সশস্ত্র, সংস্কারবাদী ও বিপ্লবী পদ্ধতিতে সংগ্রাম করার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
(এরপর ৬ নম্বর পয়েন্টে শ্রমিক আন্দোলনের খোলা চিঠিতে ১৩টি করণীয় নির্ধারণ করে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে জমি বণ্টন, শ্রমিকদের শ্রম শোষণ বন্ধ, ভাষাগত, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার দেওয়ার বিধানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা হাজির করে)।

তবে শেখ মুজিব ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলনের এই খোলা চিঠি আমলে আনেননি। হতে পারে নিরঙ্কুশ ভোটে জয় পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ তখন একলা চলো নীতিতে অটুট ছিল।

তবে মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর সেই সরকারের প্রতি আরেকটি খোলা চিঠি দেওয়া হয় শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সেখানে যুদ্ধের ময়দানে করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়। তবে এবারও প্রবাসী সরকার শ্রমিক আন্দোলনের সেই চিঠিতে কর্ণপাত করেনি।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই সর্বহারা পার্টি তৈরি
১৯৭১ সালের ২ জুন যুদ্ধের ময়দানে কামানের গোলার মধ্যে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পার্টি তৈরি হয়। নাম হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। বরিশালের পেয়ারা বাগানকে বেছে নেওয়া হয় পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর জন্য। এর আগে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে পার্টিগুলোর নাম সবই মোটামুটি কমিউনিস্ট পার্টি বা এর কাছাকাছি নাম রাখে; কিন্তু সিরাজ সিকদার প্রলেতারিয়েতের বাংলা সর্বহারার নামে নামকরণ করেন পার্টির।
সর্বহারা পার্টি গঠনের ওই দিনে বরিশালের পেয়ারা বাগানে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফজলুল হক রানা। কালের কণ্ঠকে তিনি সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগানে সেদিন লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। মনে হয়েছিল পেয়ারা বাগান যেন কোনো মুক্তাঞ্চল। এখানে নারী-পুরুষ যে এক নতুন পৃথিবীর জন্মের আগে সমবেত হয়েছে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য।'

সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টি প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আশ্রয় দেয়। এ সময় সর্বহারা পার্টি কর্মসূচি হাতে নেয়, দেশপ্রেমিক মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে। এ অবস্থা ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সর্বহারা পার্টি ধরে রাখে। আগস্টের শুরুতে সর্বহারা পার্টির অন্যতম কেন্দ্রীয় সদস্য এবং বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার নকশাকার সাইফুল্লাহ আজমীসহ পাঁচজন যোদ্ধাকে সাভারে পাঠানো হয় মুজিববাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে। মুজিববাহিনী তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী দলের বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টির সব ঐক্য ভেস্তে যায়। তবে এরও আগে ভারতে খুব গোপনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে মুজিববাহিনী। মূলত এই বাহিনী গড়েই তোলা হয় যুদ্ধ থেকে কমিউনিস্টদের হটিয়ে দেওয়ার জন্য।
১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছে মূলত এ দেশের বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রুপ, যার মধ্যে সর্বহারা পার্টি অন্যতম।

বরিশালের বানারীপাড়া অঞ্চলে অবস্থান নেয় শ্রমিক আন্দোলন, ৩০ এপ্রিল গঠন করে জাতীয় মুক্তিবাহিনী, যা দখলমুক্ত করে পেয়ারা বাগানের খানিকটা। এ মুক্তিবাহিনী পরিচালনা করতে সিরাজ সিকদারকে প্রধান করে সর্বোচ্চ সামরিক পরিচালনামণ্ডলী গঠন করা হয়। বরিশালের পেয়ারা বাগান স্বাধীনতাসংগ্রাম চলার সময় প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল। এ বিষয়ে সর্বহারা পার্টির তৎকালীন বৃহত্তর বরিশাল (বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর) অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক রইসউদ্দিন আরিফ (পরবর্তী সময়ে সিরাজ সিকদার নিহত হলে অস্থায়ী সর্বোচ্চ বিপ্লবী সংস্থার সভাপতি) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক বড় অপারেশন চালাতে হয়েছিল। আবার সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত। সর্বহারা পার্টি এ অঞ্চলে অজস্র সফল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান বাহিনীর ওপর।'

বরিশাল অঞ্চলে অসংখ্য সফল হামলা চালিয়ে সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। তবে স্বাধীনতার যত ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেখানে বরিশালে সর্বহারা পার্টির অবদানকে খুব কৌশলে উহ্য রেখেছেন রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ইতিহাসবিদরা।

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বহারা পার্টির সতর্কবাণী
ভারতীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে দ্রুত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ভারতীয় বাহিনীর এই তৎপরতাকে সাদা চোখে দেখেনি সর্বহারা পার্টি। পার্টি মনে করে, পাকিস্তানের উপনিবেশ থেকে দেশ এবার ভারতীয় উপনিবেশের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। এ সময় নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে সর্বহারা পার্টি বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লেখে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ভারতীয় সৈন্যদের অনতিবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া, যুদ্ধের সৈনিকদের দিয়ে নৌ, আকাশ ও স্থলবাহিনী তৈরি করা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ২৭টি দাবি পেশ করা হয়। তবে মুজিব সরকার সর্বহারা পার্টির সেসব দাবির একটিতেও কর্ণপাত করেনি। যদি সে সময় আওয়ামী লীগ বিচক্ষণতার পরিচয় দিত, তাহলে আজ অবধি যুদ্ধাপরাধের বিচার ঝুলিয়ে রাখতে হতো না।

চিঠিতে বলা হয়েছিল
পূর্ব বাংলার সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য পূর্ব বাংলার লাখ লাখ মানুষ আত্মবলিদান করেছেন। তাঁদের আকাঙ্ক্ষিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হতে পারে নিম্নলিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে :
১. পূর্ব বাংলার ভূমি থেকে অনতিবিলম্বে শর্তহীনভাবে সব ভারতীয় সৈন্য, সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টাদের ভারতে ফেরত পাঠানো।
২. পূর্ব বাংলার স্থিতিশীলতা আনয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কাজের জন্য পূর্ব বাংলার সম্পদ এবং কষ্টসহিষ্ণু, পরিশ্রমী ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ, সাহসী ও দেশপ্রেমী জনগণের ওপর সর্বতোভাবে নির্ভর করা।
৩. পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্য থেকে নিয়মিত স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী গড়ে তোলা এবং জনগণকে সামরিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সশস্ত্র করে স্থানীয় বাহিনী গড়ে তোলা। পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষার জন্য এই সামরিক বাহিনী ও জনগণের ওপর নির্ভর করা। পূর্ব বাংলার নিয়মিত বাহিনী ও স্থায়ী বাহিনী মুক্তিবাহিনীর পক্ষেই সম্ভব।
৪. পূর্ব বাংলার জামায়াত, পিডিপি, মুসলিম লীগ (তিন অংশ), নেজামে ইসলাম এবং পাকিস্তানি সামরিক ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এ ধরনের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, দল ও ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়া, ভোট প্রদানের অধিকার, মিটিং-মিছিল সংগঠিত এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার অধিকার বাতিল করা; তাদের ভূমি গ্রামের ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা; ভূমি ব্যতীত তাদের শিল্প-ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রাষ্ট্রীয়করণ করা; এদের মধ্যকার গোড়া জনবিরোধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান করা;
প্রমাণিত আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানি সামরিক দস্যুদের অন্য দালালদের কঠোর শাস্তির বিধান করা; কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সব দেশপ্রেমিককে আলবদর, রাজাকার বা পাকিস্তানি সামরিক গোষ্ঠীর দালাল বলে খতম করার ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিরোধিতা করা।

এ রকম ২৭টি জরুরি করণীয় নির্ধারণ করে সর্বহারা পার্টি। যেখানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে ভারতে শরণার্থী, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পায়। তবে রাষ্ট্রযন্ত্র থোড়াই পরোয়া করে সেসব। উঠতি মধ্যবিত্ত যে রাষ্ট্র পেল, যে রাষ্ট্র তারা ধর্মীয় জাতিগতভাবে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের কাছে হারিয়েছিল, তা দখল করে নিল নিজেদের মধ্যে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হাজির করেছিল, তবে বাস্তবে মুসলিম থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের যে ইতিহাস, সেখানে দুই ধারার মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল এক, সাবেকি মুসলিম লীগ, দুই, উঠতি মধ্যবিত্ত। সর্বহারা পার্টির কোনো দাবি না মেনে নেওয়া এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই বিরোধী মতামতকে উগ্রভাবে দমন করা, ভারতীয় হস্তক্ষেপের বাড়াবাড়ির কারণে সিরাজ সিকদার নতুন থিসিস দিলেন। এই নতুন থিসিসের নাম দিলেন, 'পূর্ব বাংলার বীর জনগণ আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব (জাতীয় মুক্তি ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা) সম্পূর্ণ করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান।' এই দলিলটি বের হয় ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে, পরে যা আবার ১৯৭৪ সালের মার্চে পুনঃপ্রকাশিত হয়। এই দলিলে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়, কিভাবে বাংলাদেশ নামের নতুন দেশটি ভারতীয় অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। মূলত এই দলিলের মাধ্যমেই শোষিত শ্রেণীর জন্য প্রকৃত জনমুক্তির বাংলাদেশ গড়তে 'সশস্ত্র সংগ্রাম' অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সর্বহারা পার্টি। এর ফলে বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন এলাকায় থানা লুটের ঘটনা ঘটতে থাকে, একই সঙ্গে শ্রেণীশত্রু খতমের নামে স্থানীয় ভূস্বামী, জোতদার থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সচ্ছলদের হত্যা করা হতে থাকে গোটা বাংলাদেশে।
সর্বহারা পার্টি মুক্তিযুদ্ধকে পূর্ণাঙ্গ মনে করেনি কখনোই, তাদের চোখে এটি ছিল পাকিস্তানের শোষণ থেকে বেরিয়ে ভারতের আগ্রাসনের মুখে পড়ার একটি পর্ব মাত্র। এ কারণে সর্বহারা পার্টি ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দিবস হিসেবে কালো দিবস ঘোষণা করে ওইদিন হরতাল পালনের আহ্বান জানায়। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সর্বহারা পার্টি সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। পার্টির মুখপত্র 'স্ফুলিঙ্গ' ও প্রচারপত্রে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী শক্তির কাছে মুজিব সরকারের আত্মসমর্পণ দিবস। একমাত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমেই জনগণের বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃত বিজয় আসতে পারে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে মুজিব সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন, হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে সর্বহারা পার্টি ঢাকায় হরতাল আহ্বান করলে সন্তোষ থেকে মওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে সমর্থন করেন। হরতাল সফল হয়। দেশব্যাপী থানায় থানায় সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালিত হয়।
এই হরতালে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের সর্বহারা পার্টির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন রইসউদ্দিন আরিফ। হরতালের কথা স্মরণ করতে গিয়ে কালের কণ্ঠকে আরিফ বলেন, 'আমি ছিলাম ফরিদপুরের দিকে। হরতালের আগের রাতে এলাকার কৃষকরা মহাসড়কে গাছ কেটে ফেলে রাখে। এত বেশি গাছ তারা কেটে ছিল যে মহাসড়ক থেকে গাছ সরাতে সরকারের লোকদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।'

রাষ্ট্রের প্রথম ক্রসফায়ার
১৯৭৫ সালের ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশব্যাপী সফল হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে পার্টির কার্যক্রমকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সর্বহারা পার্টির এক সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিরাজ সিকদার। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এক সদস্য হওয়ার কারণ হলো ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্য মুজিববাহিনী অথবা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি এক সদস্য হওয়ায় এ সময় পার্টি রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিটি সেলে দুজন করে লোক নিয়োগ দেয়, যাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফজলুল হক রানা।
চট্টগ্রাম থেকে আত্মগোপন করে সিরাজ সিকদারকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল পার্টির গোয়েন্দা উইং। তিনি পার্টির শহীদ এক কর্মীর বাসায় যাচ্ছিলেন দেখা করার জন্য। এর পরই চট্টগ্রাম ত্যাগ করে কোনো ঘাঁটি অঞ্চলে ডুব দেবেন। একটি স্কুটার নিয়েছেন, যাবেন পাহাড়তলী। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় এলে স্কুটার থামায় সাদা পুলিশ। সিরাজ সিকদার নির্বিকার ভঙ্গিতে নিজেকে পরিচয় দেন ব্যবসায়ী হিসেবে। এমনকি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলে ঘাবড়ে যায় ডিবির সাদা পুলিশের দল। এবার কয়েক ব্যবসায়ীকে ফোন করা হয়। তাঁরা জানান, তিনি একজন ভালো ব্যবসায়ী। তবে ঢাকার গোয়েন্দা সদর দপ্তর নিশ্চিত যে যাঁকে ধরা হয়েছে তিনি সিরাজ সিকদার। ওই দিনই সিরাজ সিকদারকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

পরদিন, অর্থাৎ ২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার (১৯৭৫) রাতে একটি পুলিশ ভ্যানে সিরাজ সিকদারকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর অদূরে সাভার এলাকায়। তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। হঠাৎ গর্জে ওঠে পুলিশের রাইফেল। কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সাভারের তালবাগ এলাকা। পুলিশ হেফাজতে থাকা এবং হাতে হ্যান্ডকাফ পরা সিরাজ সিকদার নিহত হন। এ সময় চারটি ঘাতক বুলেট সিরাজ সিকদারের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি বুলেট তাঁর বুক ভেদ করে এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় করে দেয় হৃৎপিণ্ড। সেটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্রসফায়ার। তবে পরের দিন পুলিশের প্রেস রিলিজ, যা সংবাদপত্রগুলোতে পাঠানো হয় তার ভাষা আর আজকে ক্রসফায়ারের পর যে প্রেস রিলিজ ছাপানো হয় তা হুবহু। ১৯৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ-বাকশাল আমলে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারে হাজার হাজার বামপন্থী, কমিউনিস্ট হত্যার শিকার হন। সেসব হত্যা ছিল হয় রক্ষীবাহিনী, অথবা সরকারি বাহিনীর গুপ্তহত্যা। কিন্তু হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে হত্যা ছিল বাংলাদেশ যাত্রায় সেটাই প্রথম। সেই খুনের রাস্তা থেকে বাংলাদেশ এখনো উঠে আসতে পারেনি। পুরো জনপদই পরিণত হয়েছে খুনের জনপদে।

সিরাজ সিকদার রয়ে গেছেন কিংবদন্তি হয়ে সর্বহারা তথা প্রলেতারিয়েতের এত সুন্দর বাংলা এর আগে বাংলায় হয়নি। এখানে ইসলামী বলি, কমিউনিস্ট বলি_সবাই তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। নিজের দেশের মাটি, নদী, ঝড়বৃষ্টিতে সিক্ত যে ভূমি তার দিকে কারো নজর নেই। সেদিক থেকে সিরাজ সিকদার অনন্য। দেশীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে রাজনীতি, রণকৌশল হাজির করাই ছিল সিরাজ সিকদারের বড় কৃতিত্ব।

আজকের তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নয়। যেকোনো ধরনের একটা ক্যারিয়ার, চাকরি হলেই সে খুশি। করপোরেট কম্পানির শ্রমদাস হওয়ার জন্য কাতারে কাতারে তরুণ-তরুণীরা কী ব্যগ্র-ব্যাকুল! স্বদেশপ্রেম, লড়াই যেন আজ 'অ্যাকুয়ারিয়ামের পচা মাছ'। অথচ এই বয়সে সিরাজ সিকদার বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এক আজন্ম স্বপ্নের সাম্যবাদী সমাজের আন্দোলনের নেতা হয়ে। সিরাজ সিকদার ইতিহাসে তাই একটি মিথ হয়েই রয়েছেন, তাঁর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা তেমন একটা হয়নি এত দিন, হয়তো এখনো সেই সময় আসেনি। হয়তো ভবিষ্যতে সিরাজ সিকদার আর সর্বহারা পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আবারও নতুন করে আলোচনায় আসার বাকি আছে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×