somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মাষ্টমী ও শ্রীকৃষ্ণের জন্মকথা, সবাইকে শুভ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৪ তম শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে সবাইকে শুভ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা..., **শুভ জন্মাষ্টমী**।


সনাতনী ভারতবর্ষের ধর্ম ও ইতিহাসের প্রাণপুরুষ লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভাদ্র মাসের শ্রীকৃষ্ণাষ্টমীতে তার আবির্ভাব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ তিথি বহুল সমাদৃত। শ্রীকৃষ্ণ এক সবর্গ, স্তবনীয়। তিনি স্বয়ং ভগবান। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চিরকালীন বিশ্বাস- ‘কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং’। তিনি সর্বকারণের কারণ। তিনি সৎ ও আনন্দস্বরূপ। তার সমান কেউ নেই, তার ঊর্ধ্বেও কেউ নেই। উপনিষদের ভাষায়- ‘তিনি এক সবর্গ ও স্তবনীয় পুরুষোত্তম।’



সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিনী নক্ষত্রে ভোজ বংশীয় রাজা উগ্র সেনের পুত্র কংসের কারাগারে দেবকীর কোলে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শাস্ত্রে দেখা যায়, এই আবির্ভাব ছিল বসুদেব-দেবকীর প্রতি ভগবানের তৃতীয়বারের প্রতিজ্ঞা পালন। অষ্টমী তিথিতে দেবকীয় অষ্টম গর্ভে জন্ম নিয়েছিল বলে এই তিথির নাম ‘জন্মাষ্টমী’ তিথি। আর এ উপলক্ষে যে আয়োজন বা উৎসব, তার নাম ‘জন্মাষ্টমী’ উৎসব।


গীতাতে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- ‘আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর (শাসক, নিয়ন্তা, স্রষ্টা) হয়েও নিজ প্রকৃতিকে (অনির্বচনীয় মায়াশক্তিকে) আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।’ এ ছাড়া তিনি তার জন্ম নিয়ে আরও বলেছেন, তার জন্ম সাধারণ মানুষের মতো নয় এবং তার মৃত্যুও সাধারণ মানুষের মতো নয়। মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং মারা যায়; কিন্তু আমি জন্মরহিত হয়েও আবির্ভূত হই এবং অবিনশ্বর হয়েও অন্তর্ধান করে থাকি। আবির্ভূত হওয়া এবং অন্তর্হিত হওয়া- দুটিই আমার অলৌকিক লীলা।

অন্যান্য প্রাণী যেমন কর্মের ফলস্বরূপ জন্মগ্রহণ করে, ভগবান কিন্তু তেমনভাবে আবির্ভূত হন না। কর্মের ফলরূপে জন্ম হলে দুটি ব্যাপার থাকে- আয়ু এবং সুখ বা দুঃখভোগ। ভগবানের এ দুটির কোনোটাই হয় না। কেননা তিনি হলেন আয়ু, সুখ ও দুঃখের ঊর্ধ্বে। অবতরণের সময় ভগবান নিজ শুদ্ধ প্রকৃতিরূপ শক্তিকে আশ্রয় করে অবতরণ করেন এবং অবতাররূপে এই শক্তি দিয়ে কাজ করেন।

শ্রীমদ্ভগবত গীতায় আছে- যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ভক্ত ও সাধারণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য কৃপা করে ভক্তের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর ‘অবতার’ রূপ নিয়ে থাকেন। তখন তিনি ষড়গুণ যথা- ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন ‘পূর্ণাবতাররূপে’ প্রকাশিত হন।

শ্রীরামকৃষ্ণালোকে- ‘যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে’ : শ্রীভগবান সর্ব ভাবময়, তিনিই অদ্বিতীয় প্রাণপরুষ। অতএব, যে ধর্ম মার্গই অনুসরণ করুক না কেন, সব পথেই সাধক তাকে পায়।’ এই শ্লোকটি ব্যাখ্যায় স্বামী অপূর্বানন্দ লিখেছেন- ‘এই শ্লোকটিতে প্রকৃত হিন্দুধর্ম বা বেদান্ত ধর্মের বাস্তবরূপ প্রকটিত হয়েছে। ‘যত মত তত পথ’- এটিই বেদান্ত ধর্মের মর্মবাণী।

গীতার ৭ম অধ্যায়ের ১০ নম্বর শ্লোকে ভগবান স্বয়ং বলেছেন-

‘বীজং মাং সর্বভূতানাং বিদ্ধি পার্থ সনাতনম্।

বুদ্ধির্বুদ্ধিমতামস্মি তেজস্তেজস্বিনামহম্ ॥ ১০

হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতের সনাতন বীজ বলিয়া জানিও। আমি বুদ্ধিমান্দিগের বুদ্ধি এবং তেজস্বীগণের তেজস্বরূপ।


শ্রীকৃষ্ণ যখন আবির্ভূত হন তখন পৃথিবীতে বহু ধর্মমত ও উপধর্মমত প্রচলিত ছিল। যে সনাতন যোগধর্ম অনেকবার প্রচারিত হয় এবং লয়ও হয়, শ্রীকৃষ্ণ তা-ই পুনরায় প্রচলন করলেন। শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন, ‘হে অর্জুন, আমার এই দিব্য জন্ম ও কর্ম যিনি তত্ত্বতঃ জানেন, তিনি দেহত্যাগ করে আর জন্মগ্রহণ করেন না- তিনি আমাকেই পেয়ে থাকেন।’

বেদে বলা আছে ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়, নিরাকার, জ্যোতির্ময়, সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বশক্তিমান। বেদজ্ঞ জ্ঞানী ঋষিরা নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা করে থাকেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে নিরাকার ঈশ্বরের উপলব্ধি খুবই কঠিন কাজ।

মহাকাল ও মহাজগৎ ব্যাপ্ত হয়ে যিনি অনন্ত সর্বশক্তিমান সত্তায় শাশ্বত সত্যরূপে বিরাজিত, আমরা তাকেই ভগবান বা ঈশ্বর নামে ডেকে থাকি। কেবল সনাতনীকল্প মনীষায়ই তিনি অষ্টোত্তর শত নামে সম্ভাসিত হয়েছেন। ভক্তরা তাকে যে নামে ডাকেন, সে নামে তিনি সাড়া দেন।

যেভাবে তাকে পেতে চান, সেভাবেই তিনি ধরা দেন। সনাতনী সমাজে তার অবস্থান অনেকটা পরিবারের একজনের মতো। তাই তো তিনি দেবকী ও বসুদেবের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে কংসের কারাকক্ষে তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হন পুত্ররূপে, কৃষ্ণ নামে।

শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারী রাজাকে ধ্বংস করেন এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ সেই সময় পৃথিবীতে এক অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল। আর তারই অবসান ঘটাতে তিনি ধরাতে অবতরণ করেন।

কৃতজ্ঞতাঃ
তারাপদ আচার্য্য : সাধারণ সম্পাদক, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম, দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ, এবং “দৈনিক যুগান্তর, ০২/০৯/২০১৮”
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×