সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর একমাত্র লক্ষ্য একটাই যতটা সময় সম্ভব আপনাকে তাদের ওয়েব পেজে রাখা, ইংরেজিতে যাকে বলে screen on time বাড়ানো। ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম সবারই সর্বোচ্চ চেস্টা থাকে আপনাকে বেশি স্ক্রল করানো এবং যত সম্ভব বেশি বিজ্ঞাপন দেখানো। তারা হিসাব রাখবে আপনি কোন পেজে লাইক দিচ্ছেন, কোন ভিডিও বেশিক্ষণ দেখছেন, কোন ভিডিও কয়েক সেকেন্ড দেখেই স্কিপ করছেন। এবার তারা সেই হিসাব করে সেই জাতীয় কন্টেন্টগুলো আপনার ওয়ালে দেবে যা আপনি পছন্দ করেন।
উদাহরণ দেই, ধরুন আপনি ফেইসবুকে ওয়ান প্লাস ফোনের পেজে এবং আপডেটগুলো লাইক দিয়েছেন, ইউটিউবে ওয়ান প্লাসের রিভিউগুলোই দেখেছেন, লাইক দিয়েছেন। এবার আপনার ওয়ালে দেখতে পাবেন ওয়ান প্লাস সবচেয়ে সেরা ফোন, বাজেট ফোন জাতীয় পোস্ট, ভিডিও, বিজ্ঞাপন। কারন আপনি অন্য ফোনের ভিডিও দেখেন না। অর্থাৎ ইন্টারনেট আপনি যা ধারনা করেন সেটা যে ঠিক তার সাপেক্ষের যাবতীয় তথ্য প্রদান করে।
এবার কনফারমেশন বায়াস ব্যাপারটা কি। অল্প কথায় বললে, পৃথিবীর বেশিরভাগ ঘটনা, পক্ষ, তত্ত্ব, দল শতভাগ সঠিক না কিংবা সব যুক্তিই ওয়াটার টাইট না। কিছু সবল বা দূর্বল থাকে।
বেশিরভাগ মানুষ সেই কথা শুনতে, পড়তে বা কোন ঘটনা সে সেভাবেই ব্যাখ্যা করে যা সে ইতিমধ্যে পছন্দ করে (তার মতকে কনফার্ম করে)। একটু বিস্তারিত বললে, আমাদের মত কেমন হবে তা নির্ভর আমাদের তথ্যের উপর, তথ্য কেমন হবে তা নির্ভর করে উৎসসের(সোর্স) উপর। আর আমরা সেইসব উৎস থেকেই তথ্য নেবো যারা আমাদের মত করে বলবে। এবং সেই মানুষের সাথেই বন্ধুত্ব করি যারা একই মত রাখেন।
এটা একটা ভয়াবহ চক্র। এরমধ্যে ঢুকলে আপনি যা বিশ্বাস করেন তার সাপেক্ষে শত শত দলিল পাবেন, পক্ষের লোক পাবেন। আপনার মনে হবে আপনি যথেষ্ট সচেতন এবং পড়াশোনা করেন, আদতে আপনি ভয়াবহ পোলারাইজড।
ইন্টারনেট এই কনফারমিটি বায়াসকে একবারে ভয়াবহ জায়গা নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।
যেমন ধরুন আপনি বিশ্বাস করেন, আফগানিস্তানে মোল্লারা নারীদের, শিশুদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, আমেরিকা গিয়েছে তাদের রক্ষা করে গণতন্ত্র দিতে। মোল্লারা অত্যাচার চালিয়েছে এমন কিছু খবরের পোস্টে আপনি লাইক দিলেন, এমন দুই একটা ভিডিও আপনি পুরোটা দেখলেন। ইন্টারনেট বুঝে গেছেন আপনি কি পছন্দ করেন, কোন জিনিশ বেশিক্ষন দেখেন (confirmation bias), এবার দেখবেন আপনার টাইম লাইন ভরে এসব পোস্ট আসছে মোল্লাদের অত্যাচারের ভিডিও, সংবাদ প্রতিবেদন, আমেরিকার সৈন্যরা আফগান বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ছবি, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি। উল্টোটাও সত্য।
বিপোরীত মতের কিছু ফেইসবুক বা ইউটিউব আপনার ওয়ালে দেবে না কারন সেগুলো আপনি দেখেন, আপনার স্কিন অন সময় কম হবে। তাদের বিজ্ঞাপন কম দেখবেন এবং মুনাফা কম হবে। '
এভাবে দুনিয়া আরো পোলারাইজড হচ্ছে। আমরা বিপরীত মত কি জানতেই পারছি না। আমাদের একটা আবছা ধারনা আছে। উস্তাদ তারিক রমাদান বলেছিলেন,
❝The global world is a village; they say. a village of villagers who know nothing of each other. In more senses than one: they do not know who they are, and they do not know who they are living with. This situation can only lead to half-hearted, fearful and dormant conflicts rather than a confident celebration of our riches. it will lead to a 'CONFLICTS of PERCEPTIONS'❞.
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:১৫