আমার মনে হয় যদি আমাদের উপর আসমানি গজব নেমে আসে তার একটা কারন হবে এই ফুড ইন্ডাস্টিজ। জার্মানিতে আমি একটা রেস্টুরেন্টে সপ্তাহে ২/৩ দিন কাজ করতাম। কাজ তেমন কঠিন কিছু না। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেন করে সামনে দেওয়া। মাঝে মাঝে খাবার বানানো। অনেক খাবার নষ্ট হতে দেখেছি। বানানোর সময়, তৈরি করার সময় এবং যারা খাবার খেতে আসে তারা তো করেই৷
এরপর একটা চেইন কফি শপে কাজ করলাম কিছুদিন। এখানে অবস্থা আরো ভয়াবহ। প্রতিদিনই ৫০/৬০ ইউরোর খাবার নষ্ট হয়,মাঝে মাঝেই সেটা ১২০/১৩০ ইউরো ছাড়িয়ে যায়।
আর আছে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি। পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে দুই ধরণের মুরগীর প্রজনন করা হয়। ডিমের জন্য লেয়ার মুরগী, আর মাংসের জন্য ব্রয়লার। ব্রয়লার মুরগী ছয়-সাত সপ্তাহের মধ্যে আকারে বেশ বড় হয়ে যায়। মাংশ হয় প্রচুর। আর লেয়ার মুরগীর আকারে বড় না হলেও অনেক বেশি ডিম দেয়। তবে ডিম তো দেয় শুধু মুরগী। মোরগগুলোর কী হয়? মেরে ফেলা হয়। জন্মের প্রথম দিনই ওদের মেরে ফেলা হয়। কারণ মোরগ লাভজনক না।
আর তাই প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে এক দিন বয়েসী ৭০০ কোটি বাচ্চা মোরগ হত্যা করা হয়। হ্যাঁ, ৭০০ কোটি। ৭ বিলিয়ন। ৪/৫ টা পদ্ধতিতে বাচ্চা মোরগগুলো মারা হয়। সবগুলোই বেশ ভয়ংকর এবং ক্রুর।
এক— বড় প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হয়। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যায়।
দুই— ইলেট্রিক শক দিয়ে।
তিন— গ্যাস চেম্বারে।
চার— ম্যাসেরেইশান। এটা হল সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি৷ একটা বিশালাকৃতির ব্লেন্ডারের মধ্যে জীবন্ত বাচ্চা মোরগগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্লেডে কেটে বাচ্চা মোরগগুলোকে ছাতু হয়ে যায়৷ একে বলা হয় Chick Culling বা Male Chick Culling।
জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন খাবার নষ্ট হয় প্রতি বছর যা মোট উৎপাদনের প্রায় তিনভাগের একভাগ।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে পৃথিবীতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮২১ মিলিয়ন।
এই নষ্ট হওয়া খাবার দিয়ে ৮২১ মিলিয়ন মানুষ না শুধু এর চেয়েও প্রায় তিনগুন মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব। মানে পুরো দুনিয়া থেকে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যাকে অদৃশ্য করে ফেলা সম্ভব শুধুমাত্র যদি আমরা খাবার একটু কম অপচয় করি...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৪১