কোয়ারেন্টাইন দিনের পড়াশোনা,
1. The Future of Money- Dr. Imran N. Hosein
আমেরিকান সরকার ১৯৩৩ সালের এপ্রিল মাসে যেকোন প্রকার লেনদেনে স্বর্ণ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং একটা নির্দিষ্ট পরিমানের স্বর্ণ সংরক্ষণ করা যাবে না। সব স্বর্ণ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ডলার দিয়ে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ কিনে নেয়, দাম ১ আউন্স ২০ ডলার। নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি স্বর্ণ মজুদ পাওয়া গেলে তাকে শাস্তি দেওয়া হতো, ১০ হাজার ডলার জরিমানা অথবা ৬ মাসের জেল। এভাবে জনগণের কাছে সঞ্চিত সব স্বর্ণ আমেরিকান সরকার নিয়ে নেয়। ঠিক তার কয়েক মাস পরে ১৯৩৪ সালের জানুয়ারি মাসে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম ডলারের ৪১% অবমূল্যায়ন (devaluation) করে এবং সরকার স্বর্ণ মজুদ আইন বাতিল করে। স্বর্ণের দাম পূর্ণ নির্ধারণ করা হয় এক আউন্স ৩৫ ডলারে। অর্থাৎ, কিছু না করেই মানুষ তাদের প্রায় ৪০ ভাগ সম্পদ হারিয়ে ফেলে এবং তা কিছু মানুষের পকেটে চলে যায়।
কাগজের মুদ্রার একটা বড় সমস্যা হল এর নিজের কোন মান (Value) নেই। ১০০০ টাকার একটা ব্যাংক নোট ছাপতে সরকারের দরকার হয় ১০/১২ টাকা। কিন্তু জনগনকে সমপরিমান সম্পদ বা শ্রম দিতে হয়। সরকার নিজের ইচ্ছামত মুদ্রা ছাপতে পারে। এটাই কাগজের টাকার প্রহেলিকা!
অসাধারণ একটা বই।
রেটিংঃ ৯/১০
2. তাজ উদ্দিন আহমেদেঃ নেতা ও পিতা- শারমিন আহমদ
বইটা পড়ার পরে প্রথম প্রতিক্রিয়া, আরে বইটা এখনো নিষিদ্ধ হয় নাই! স্বাধীনতার ঘোষক কে? দুই জন বিখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা চমৎকার ঝগড়াঝাটি আছে। শারমিন আহমদ এই ঝগড়ার সমাধান দিয়ে দিয়েছেন তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে। আবার ধরুন ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের রসায়নটা কেমন ছিল তার কিছু নমুনা উল্লেখ করেছেন। তাজউদ্দিন আহমেদের ঘটনা বহুল জীবনের একটা প্রাঞ্জল বর্ণনা। দারুণ একটা বই।
রেটিংঃ ৭/১০
3. আওয়ামী লীগঃ যুদ্ধ দিনের কথা- মহিউদ্দিন আহমদ
১৯৭১ সাল নিয়ে পড়াশোনা একটু গভীরে করতে গেলেই অবস্থা হয় অন্ধের হাতি দেখার মত। বিভিন্ন বইতে একই দিনের একই ঘটনার ৫/৭ রকম বর্ণনা। সবাই বিখ্যাত ব্যক্তি। আবার একই বইতে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। যেমন ধরুন ২৫ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান কি পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন? এই বইতেই দুই ধরনের উত্তর আছে। কিংবা ৭ মার্চ শেখ সাহেব বক্তব্যের শেষে জয় বাংলার পরে জিয়ো পাকিস্তান বলেছিলেন কিনা। এই বইতেই দুই ধরনের তথ্য।
৭০ এর নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা থেকে ৭২ সাল পর্যন্ত এই বিক্ষুদ্ধ সময়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক অবস্থা নিয়ে লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ অনেকটা উনার পছন্দ মত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে একটা বয়ান খাড়াঁ করেছেন। প্রায় শতাধিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বইটিতে সংযুক্ত করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠকের কাছে সবই সত্য মনে হবে যেটা হয়তো মহিউদ্দিন আহমেদ নিজেও দাবি করবেন না।
তবে বইটা কয়েকটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন, যার উপসংহার টানেননি। এই বইতে মহিউদ্দিন আহমেদ, সব ঘটনায় ভুট্টোকে মূল দায়ী করেছেন এবং ইয়াহিয়া খানেরর অপরাধকে অনেকটাই খাটো করে দেখিয়েছেন। বইয়ের বিষয়ের বিস্তারের তুলনায় আকার যথেষ্ট ছোট।
PDF পড়েছি, এর মান বেশ চমৎকার। গুগল করলেই পাবেন।
রেটিংঃ ৬/১০
4. শত বর্ষের ফেরারি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- আহমদ ছফা
একজন সার্থক লেখকের পরিচয় পাওয়া যায় কিছু বাক্য থেকেই। যেমন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট ভেনিসের সেই "ম্যাজিকাল লাইন" জু'স ব্লাড ইজ আলসো রেড। মাত্র একটি বাক্য দিয়েই তিনি ইউরোপে ইহুদিদের কি অবস্থা ছিল প্রকাশ করেছেন।
আহমদ ছফা এই বইতেও একটা ম্যাজিকাল লাইন বলেছেন, "বৃহত্তর বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং বাংলা ভাগের পেছনে যদি কোন একজন ব্যক্তির ভূমিকা থেকে থাকে সে অবশ্যই বঙ্কিম"।
বঙ্কিমচন্দ্র সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভাগ্যবান ব্যক্তি। যদি কোন সভ্যদেশ হতো, তাহলে এমন উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির লেখা পাঠ্যবই তো দূরে থাক, জাতীয় সাহিত্য থেকেই মুছে ফেলা হতো। বঙ্কিমের জীবনের গল্প বেশ অদ্ভুত। হত দরিদ্র বঙ্কিম মুসলিমদের টাকায় পড়াশোনা করে। মজার ব্যাপার হল, পড়াশোনা শিখে বঙ্কিম বাবু মুসলিমদের বিরুদ্ধেই কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল লেখা-লিখি শুরু করে।
প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক স্যার এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "বঙ্কিমের একটা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছিল। তার পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করেছিলেন। মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধইর্যা সেই ঋণ শোধ করেছিলেন"।
বইটিতে বঙ্কিমের সাংস্কৃতিক ভন্ডামি নিয়ে একটা চমৎকার আলোচনা করেছেন। অবশ্য পাঠ্য!
রেটিংঃ ৮/১০
5. পেশোয়ার এক্সপ্রেস- কৃষণ চন্দর
কৃষণ চন্দর ভারতের উর্দু কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান সাহিত্যিক। উনার লেখা বিখ্যাত বইগুলো হল, শয়তানের পদত্যাগ, আমি গাধা বলছি, ভগবানের সাথে কিছুক্ষন, প্রেমের গল্প সমগ্র, হংকংএ এক রাত এবং পেশোয়ার এক্সপ্রেস। হংকংএ এক রাত এবং পেশোয়ার এক্সপ্রেস এই দুটো ছাড়া বাকীগুলো পড়েছি। এক কথায় অসাধারণ! পেশোয়ার এক্সপ্রেসের PDF নামিয়ে পড়লাম। যদি নাম দেখেই আন্দাজ করেন পেশোয়ার এক্সপ্রেসের পটভূমি ১৯৪৭, তাহলে আপনি সঠিক! এর পটভূমিও দেশভাগের দাঙ্গা।
রেটিংঃ ৬/১০
6. ইমামুল আজম ইমাম আবু হানিফা-
ইমাম আবু হানিফা সম্ভবত মুসলিমদের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী আলেম। বর্তমানে ২/৩ ভাগ মুসলিম হানাফি মাজাহাব অনুসরণ করে। আহলে হাদিস আলেমদের বক্তব্য শুনে এক সময় আহলে হাদিদের প্রতি অনুরক্ত হয়েছিলাম। পরে, সব মাজাহাব নিয়ে পড়াশোনা করে আমি এখন হানাফি মাজাহাবকে সবচেয়ে ভাল লেগেছে। ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোর কিন্তু অমান্য বিধিমালা, নারীর অধিকার, অমুসলিমদের অধিকার এসব ক্ষেত্রে খুবই নমনীয়। এটা হানাফি মাজাহাবের একটা বৈশিষ্ট্য।
ইমাম আবু হানিফার ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তাভাবনা ছিল অসামান্য। এক কথায় বললে আবু হানিফা র. বুদ্ধিবৃত্তিক (intellectuality), পর্যালেচনামূলক চিন্তা (Critical thinking) এবং উপস্থিত ও বিতার্কিক জ্ঞান (debate, ready wit) এই ক্ষেত্রে তিনি সবার থেকে এগিয়ে। আলেমরা ইমাম আবু হানিফা র. কে অবিহিত করেন "ইন্টালেকচুয়াল স্কলার" বলে। দুঃখ জনক ব্যাপার হল বাংলায় ইমাম আবু হানিফাকে নিয়ে লেখা বই তেমন নেই। এই বইটা দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম। তবে পড়ে যথেষ্ট হতাশ হয়েছি।
রেটিংঃ ৫/১০
7. অন্য ঘরে অন্য স্বর - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
8. খেঁয়ারি- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ৭০ এর দশকের সমাজের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবনটা অনেকটা নগ্ন ভাবে তুলে ধরেছেন। লেখার মধ্যে একটা ঝাঁজ আছে যেটা পশ্চিম বাংলার রাবীন্দিক ভাবধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই দুইটা বইও তার ব্যতিক্রম না। সংগ্রহে রাখার মত বই দুইটা।
রেটিংঃ দুটো বই-ই ৬.৫-৭/১০
9. বিএনপিঃ সময়-অসময়- মহিউদ্দিন আহমদ
মহিউদ্দিন আহমদের উইকিপিডিয়া সিরিজের বই। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনপ্রিয়তায় বিএনপির অবস্থান ১ অথবা ২। ইতিহাসে কোন রাজনৈতিক দলের এত অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার পারদ এত উপরে উঠার নজির খুব একটা নেই। বিএনপির একটা বড় দূর্বলতা হল বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা আওয়ামী লীগ দূরে থাক, জামাতের যে পরিমান বুদ্ধিজীবী আছে তার অর্ধেকও বিএনপির নেই। আর প্রকাশনার কথা বললে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বামদলদের যে পরিমান প্রকাশনা আছে, বিএনপির তার সিকি ভাগও নেই। এত বড় রাজনৈতিক দল; একটা বড় লাইব্রেরিতে যান, সম্ভাবনা খুবই বেশি বিএনপি বা প্রেসিডেন্ট জিয়া সম্পর্কে কোন বই খুঁজে পাবেন না। বিএনপিকে নিয়ে লেখা সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই এটা। যার লেখক একজন ছাত্রলীগ নেতা!!
রেটিংঃ ৫.৫/১০
10. সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ- মাসুদ মাহমুদ
হোজা নাসির উদ্দীনের পড়ে সোভিয়েত কৌতুক সম্ভবত সবচেয়ে দারুন। তবে অবস্থা বিবেচনায় মাঝে মাঝে সোভিয়েত কৌতুক নাসির উদ্দীনকেও বলে বলে ৭ টা গোল দিতে পারবে। এর কারন সোভিয়েত কৌতুক অসম্ভব প্রাকটিক্যাল। যেমনঃ
যৌথ খামারে জুতো সরবরাহ এসেছে মাত্র একজোড়া । তো তা কাকে দেয়া হবে,সে নিয়ে মিটিং বসেছে । বক্তৃতা দিচ্ছেন যৌথ খামারের ডিরেক্টর:আমি প্রস্তাব করছি,জুতো জোড়া আমাকে দিয়ে দেয়া হোক,এই প্রস্তাবের পক্ষে যাঁরা,তাঁরা চুপচাপ বসে থাকুন আর "সোভিয়েত শাসন ব্যবস্থার "বিপক্ষে যাঁরা,তাঁরা হাত তুলুন!
রেটিংঃ ৮/১০
11. হারানো লেখা- আহমদ ছফা
আহমদ ছফা গতানুগতিক বুদ্ধিজীবিই ছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক স্যারের সংস্পর্শে এসে তার চিন্তা ধারার একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে লেখা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় তবে তা তিনি পুরোপুরি গ্রহন করেননি বা ধারন করতে পারেননি। তাই ছফার লেখার মধ্যে কিছুটা জাতীয়তাবাদের ছোয়া পাওয়া যায় এবং কিছু বিষয় তিনি সযত্নে এডিয়ে গেছেন। তার কারন সম্ভবত আব্দুর রাজ্জাক স্যার যে মানের বুদ্ধিজীবী ছিলেন তার মতের পক্ষের বা বিপক্ষের তার ধারের কাছে আর কেউ ছিল না। আব্দুর রাজ্জাক স্যার উনার চিন্তা-ভাবনার কিছুটা আহমদ ছফাকে দিতে পেরেছিলেন এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
এই বই বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার সংকলন। সংগ্রহে রাখার মত বই।
রেটিংঃ ৬.৫/১০
12. জাসদের উত্থান-পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি- মহিউদ্দিন আহমদ
সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। তার বিপ্লবের রোমান্টিক চিন্তা ভাবনা নিয়ে তেমন কোন বই আগে পড়ি নাই। মহিউদ্দিন আহমেদ অনেকটা উইকিপিডিয়ার মত করে বইটা লিখেছেন। জাসদের রোমাঞ্চকর যাত্রার কথা প্রাঞ্জল ভাবে তুলে ধরেছেন। লেখক নিজেই জাসদের নেতা ছিলেন। জাসদ বা গণবাহিনীর নেতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে গেছেন। অথবা উল্লেখ করেছেন ইতিবাচক ভাবে। এই বিষয়ে আর কোন বই আছে কিনা জানি না। Pdf পড়েছিলাম। Pdf এর মান বেশ চমৎকার। তবে উইকিপিডিয়ার মত। একটা ধারনা নেবার জন্য ভাল তবে সবকিছু বিশ্বাস করা যাবে না।
রেটিংঃ ৬.৫/১০
13. দেশে দেশে- বিচারপতি মুফতি তকী উসমানি
International date line তথা তারিখ রেখার প্রান্ত গিয়েছে সাগর, মরুভূমি, বন অথবা সাইবেরিয়ার উপর দিয়ে। তবে ফিজি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ফিজির তাভিউনি দ্বীপের উপর দিয়ে তারিখ রেখা গিয়েছে। তাভিউনি দ্বীপের একপাশ যদি হয় শুক্রবার অন্য পাশে শনিবার। মাঝামাঝি যদি দাঁড়ান, তাহলে বাম পা থাকবে শনিবারে আর ডান পা শুক্রবার।
ফিজির আরেকটি দ্বীপ সাভুসাভু। এখানে আছে গরম পানির ঝর্ণা৷ স্থানীয় মানুষ ডিম, সবজি থেকে শুরু করে মাংস এই ঝর্ণার পানিতে সেদ্ধ করে। মাত্র ৫ মিনিটেই ডিম সেদ্ধ হয়ে যায়।
ভ্রমণ এবং ভ্রমন কাহিনী পড়া দুইটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়ের মধ্যে দুইটি। এ পর্যন্ত ১০ টি দেশ ঘুরেছি। আমি কোন দেশে গেলে প্রথমেই সেই দেশের একটা ছোট পতাকা কিনি, সেই শহরের ম্যাগনেটিক স্টিকার কিনি এবং আমার ওস্তাদের পরামর্শ অনুসারে বাজার আর বইয়ের দোকানে যাই (যাবার চেস্টা করি)। আমার ওস্তাদ বলেছিলেন,
"একটা কথা খেয়াল রাখন খুব দরকার। যখন কোন নতুন জায়গায় যাইবেন, দুইটা বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন। ওই জায়গার মানুষ কী খায়। আর পড়ালেখা কি করে। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কী খায় এইডা দেখনের লাইগ্যা। আর বইয়ের দোকানে যাইবেন পড়াশোনা কী করে হেইডা জাননের লাইগ্যা"।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিচার মুফতি তকী উসমানির লেখা চমৎকার একটা বই। সংগ্রহে রাখার মত।
রেটিংঃ ৭/১০
14. এক ডজন হরর গল্প
পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো যেমন ইনকা সভ্যতা, মায়ান সভ্যতা, হরপ্পা, মেসোপোটেমিয়া সব সভ্যতায়ই ৩ টি "কমন" বিষয় আছে; তার মধ্যে একটা হল ভূত। সব সভ্যতার মানুষই ভূত বা এই অদৃশ্য সৃষ্টিতে বিশ্বাস করতো। পৃথিবীর সব সাহিত্যেই ভূত নিয়ে গল্প আছে। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যাতিক্রম না। ভূত নিয়ে অসাধারণ কিছু গল্প আছে বাংলা সাহিত্যে। তবে এই বইটা তার মধ্যে পরে না। পশ্চিম বাংলার ১২ জন লেখকের ১২ টা গল্পের সংকলন বইটা। গল্পগুলো একেবারেই সাধারণ মানের।
রেটিংঃ ৩.৫/১০
15. বেত্তমিজ- রশীদ জামিল
কাদিয়ানিদের ব্যাপারে আমার কিছু পড়াশোনা ছিল, তাদের সাথে কথা বলারও সুযোগ হয় বেশ কয়েক বার। বাংলায় তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন বই নেই, একটা হতাশা কাজ করতো। এই বইটি কাদিয়ানীদের বিয়ে। তাই বইটি যখন প্রকাশিত হয়, অনেকের চেয়ে একটু বেশিই খুশি হই। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম। অনুবন্ধ পড়েই একটু ধাক্কা খেলাম। অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দে ভারা।
বইয়ে টুকটাক ইংরেজি শব্দ সবাই ব্যবহার করে। তবে এই বই পূর্বের সব অভিজ্ঞতা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ৪৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়লাম। আক্ষরিক ভাবেই প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছি এই অযাচিত ইংরেজি শব্দের আধিক্য দেখে। অবশ্যই কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার হবে প্রয়োজনে কিন্তু যে সব ইংরেজি শব্দের সহজ বাংলা প্রতিশব্দ আছে সে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার। বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কোন মন্তব্য নেই। লেখক অনেক পরিশ্রম করেছেন। তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। তবে বাক্যের গঠন এবং শব্দ চয়ন ছিল খুবই দুর্বল।
রেটিংঃ ৩/১০
16. নিশিকাব্য- নির্মলেন্দু গুণ
নখরা করতে জানো না তো কেমন রমনী তুমি?
এটাই এই বইয়ের সেরা কবিতা। গুণ-দা উর্দু, ফারসি সাহিত্যের মত ৩/৪ লাইনের শায়েরী লিখেছেন বা চেস্টা করেছেন। যদি গালিব, সাদী, ফারাজ, ইকবাল, খৈয়ামের শায়েরি না পড়ে থাকেন, বেশ ভাল লাগবে।
রেটিংঃ ৫/১০
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭