নিহত নক্ষত্র আহমদ ছফার ৮ টি ছোট গল্পের সংকলন এবং এটিই সম্ভবত ছফা ভাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যে গান, কবিতা বা উপন্যাসের তুলনায় ছোট গল্প ততটা সমৃদ্ধ নয়। রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, মানিকের বাইরে তেমন উল্লেখ্য কেউ নেই। আমাদের এপার বাংলার অবস্থা আরো করুন। সেখানে আহমদ ছফার নিহত নক্ষত্র শুস্ক মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির মত।
বইয়ের প্রথম গল্প নিহত নক্ষত্র। ৮৫ পৃষ্ঠার বইয়ের ৩৫ পৃষ্ঠা জুরেই গল্পটা। গল্পের নায়ক বোর্ড স্ট্যান্ড করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হওয়া ছাত্র মুনতাসীর। মেধাবী, সুভাষী, বাকপটু ব্যক্তিত্ব এই মুনতাসী। রোমান্টিক বিপ্লব, প্রেম আর আড্ডার মধ্য দিয়ে মুনতাসীরকে ঘিরে কাহিনী এগোতে থাকে। সারাদিন ক্লাস আর লাইব্রেরীতে ব্যস্ত থাকা মুনতাসীর হঠাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। নানান প্রতিবন্ধকতায় একসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে কারখানার শ্রমিক হয়ে যায়।
গল্পটা পড়ার সময় আমার ছফার মানিকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি হোসেন মিয়াকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধের কথা মনে পড়লো। আহমদ ছফার প্রিয় চরিত্র ছিল হোসেন মিয়া। ছফার গুরু প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক স্যারের প্রিয় চরিত্র ছিল চাঁদ সওদাগর। গুরু-শীর্ষ দুইজনের প্রিয় চরিত্রের মিল হল চরিত্র দুইটিই অসম্ভব শক্তিশালী। ব্যক্তিগত ভাবে, আমি এ পর্যন্ত যথা কিঞ্চিৎ সাহিত্য পড়েছি তাতে চাঁদ সওদাগরের মত এতটা শক্তিশালী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চরিত্র আর পাইনি।
আহমদ ছফাও সেইভাবে অথবা অজ্ঞাতসারে মুনতাসীরকে অসম্ভব শক্তিশালী করার চেস্টা করেছেন। ছফার প্রাঞ্জল বর্ণনাতে দারুনভাবে কাহিনী গড়ে উঠছিলো তবে শেষে গিয়ে সবকিছু আমার কাছে কেমন অতি প্রাকৃত লেগেছে। হোসেন মিয়া যেমন সবকিছুকে চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণ করে চালকের আসনে বসেছিলো মুনতাসীর সেটা পারে নাই। অসম্ভব মেধাবী ছাত্র অতি নায়কোচিত কর্মকান্ড করে অসুখে পরে এবং মৃত্যু বরন করেন। ব্যর্থ যাত্রা, নিহত নক্ষত্র।
নিহত নক্ষত্র ছাড়া আস্বাদ গল্পটি বেশ ভাল লেগেছে। আলম আদালত/থানার দালাল, আমাদের গ্রাম বাংলায় যাদের বলা হয় টাউট, এই গল্পের মূল চরিত্র। জটিল মনস্তত্ত্ব, সামাজিক অবস্থা এতটা মুনশিওয়নার সাথে চিত্রিত করেছেন, চরিত্র গুলোর ভাষা ছিল শহুরে আঞ্চলিক। বাংলাদেশের একটা মফস্বল শহরের গন্ধ পাবেন। আর ভাল লেগেছে কবি।
বইটির কিছু রিভিউ দেখলাম, ব্লগাররা সবগুলো গল্পেরই প্রশংসা করেছেন। তবে আমার কাছে বাকীগুলো তেমন ভাল লাগেনি..
(আমি PDF পড়েছি, বইয়ের ছবি নেটে পাওয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪