বিশ্ব পুঁজিবাদ এবং বাংলাদেশের অনুন্নয়ন
লেখক।। আনু মুহাম্মদ
প্রকাশক।। সংহতি প্রকাশন
প্রকাশকাল।। দ্বিতীয় সংস্করণ অক্টোবর ২০০৮
করিম প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩
প্রচ্ছদ ।। অমল আকাশ
মূল্য।। দুইশত টাকা
ISBN: 984-70046-0000-0
বিশ্ব পুঁজিবাদ এবং বাংলাদেশের অনুন্নয়ন- বইটির প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। এরপর দুই যুগ পার হয়ে গেছে। যেহেতু অর্থনীতিকে আমরা গতিশীল বিষয় হিসেবে অভিহিত করি, তাই অর্থনীতি বিষয়ক একটি গ্রন্থ, বিশেষ করে যার আলোচনার মূল বিষয় বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের উন্নয়ন বা অনুন্নয়ন, দুইযুগ পরে তার আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তথকথিত সদা পরিবর্তনশীল অর্থব্যবস্থায় বিশ্ব পুঁজিবাদের আগ্রাসনের রূপ এবং বাংলাদেশের ‘উন্নয়নের’ জন্যে গৃহীত নীতির ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো কোন মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। তা-ই প্রথম প্রকাশের দীর্ঘ সময় পরেও আজকের আগ্রাসী পুঁজিবাদ, বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে আনু মুহাম্মদের লেখা প্রবন্ধগুলোর প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।
‘বিশ্ব পুঁজিবাদ এবং বাংলাদেশের অনুন্নয়ন’ বইটির প্রবন্ধগুলো নিয়ে আলোচনার পূর্বে এর লেখক সম্বন্ধে কয়েকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। । এখন পর্যন্ত লেখকের লেখা প্রায় পঁচিশটি প্রবন্ধের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি বইয়ের মূল বিষয় হিসেবে বার বার উচ্চারিত হয়েছে পুঁজিবাদের আগ্রাসন, রাজনৈতিক অর্থনীতি, গণ মানুষের সংগ্রাম। দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে লেখক তাঁর নীতি, চিন্তা-চেতনা, আদর্শ থেকে সরে আসেন নি। পুঁজিবাদের ‘জয়কারের’ সময় যেখানে আমরা বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, বিনিয়োগের প্রতি আকুলতা প্রকাশ করি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ব্যক্তিগত জীবন-যাপন চিন্তা-চেতনা ও রাষ্ট্রীয় নীতি ও উন্নয়ন কৌশলের বিষয়ে আনুগত্য প্রকাশ করি, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বঞ্ছণাকে চিরন্তন সত্য হিসেবে মেনে নিই, সেখানে প্রচলিত ও জনপ্রিয় চিন্তা স্রোতের বিপরীতে য্ুিক্ত, তর্ক, আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতার লড়াই করে যাচ্ছেন আনু মুহাম্মদ। বাংলাদেশের প্রকৃতিক সম্পদ তেল-গ্যাস-খনিজ রক্ষা করতে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাঁর সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন পাওয়া গেছে তাঁর প্রথম প্রকাশিত এই গ্রন্থটিতে।
গ্রন্থটিতে নয়া-ঔপনিবেশিক শোষণ, খাদ্য, অস্ত্র, ওষুধ, জ্বালানি, প্রকৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা, কৃষক, বাংলাদেশের দারিদ্র্য, ক্ষুদ্রঋণের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ রয়েছে। দু’টি প্রবন্ধ; উন্নয়ন ধারণা, রাষ্ট্র ও বিশ্বসংস্থা এবং নোবেল পুরস্কার, মঙ্গা এবং ক্ষুদ্রঋণের রাজনীতি বাদে বাকি প্রবন্ধগুলো ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সালের মাঝে রচিত। সবগুলো প্রবন্ধের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব পুঁজিবাদের স্বরূপ এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর অনুন্নয়নের উৎস ও প্রক্রিয়া বুঝতে প্রবন্ধগুলো সহায়ক হবে।
মার্কসীয় অর্থনীতি মতে পুঁজিবাদ অর্থনীতি বিকাশের একটি পর্যায় এবং সাম্রাজ্যবাদ এর সর্বোচ্চ পর্যায়। মানুষের ইতিহাসে দাসপ্রথা, সামন্তপ্রথা ও প্রাক পুঁজিবাদকালেও সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্ব ছিল তার সাথে আজকের সাম্রাজ্যবাদের মিল ও অমিল আছে। লেখক লিখেছেন “প্রাচীন সাম্রাজ্যবাদের সময়কার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, সেখানে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর অধীনস্থ রাষ্ট্রগুলোর ওপর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতো। এই রাষ্ট্রগুলো চিহ্নিত হয় উপনিবেশ নামে। প্রাচীন সাম্রাজ্যবাদী শোষণ এরকম পূর্ণ সামগ্রিক আধিপত্য ছাড়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আধুনিক সাম্রাজ্যবাদে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে পরাধীন রাখা সাম্রাজ্যবাদী শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। পুঁজি সেখানে শোষণের নিয়ামক শক্তি। তবে পুঁজি শোষণ বিস্তারের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের এক ধরনের প্রভাব রাখা প্রয়োজন হয়। পুঁজিই সেখানে শোষিত রাষ্ট্রগুলোকে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে শৃঙ্খলিত করে।” (পৃ.১৮) নয়া ঔপনিবেশের স্বরূপ, পুঁজির আন্তর্জাতিকতা, অনুন্নতদেশগুলো থেকে উদ্বৃত্ত মূল্যের পাচার, অনুন্নত দেশগুলোর শ্রেণী কাঠামো, রাষ্ট্রের চরিত্র বুঝতে ‘সাম্রাজ্যবাদের আধুনিক রূপ’ ভূমিকাটি খুব সহায়ক হবে।
বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন চলেছিল এবং ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় পেয়েছে। তবে অধিকাংশ দেশগুলোতে এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল শহুরে মুৎসুদ্দি শ্রেণী যারা সেই দেশের মাটিতে মূল উৎপাদনকারী জনগোষ্ঠীর সাথে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে একটি আপোসমূলক পদ্ধতিতে স্বাধীনতা এসেছিল এবং ঔপনিবেশিক শাসন পরিণত হয়েছে নয়া ঔপনিবেশিক শোষণে। নয়া ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র্রব্যবস্থার স্বরূপ বুঝাতে ‘নয়া-ঔপনিবেশিক শোষণ এবং দরিদ্র বিশ্ব’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, “ যেখানে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি থাকে না এবং তল্পিবাহক মুৎসুদ্দী আমলা-বুর্জোয় শাসকগোষ্ঠীর সাহায্যে সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় নতুন কায়দার শোষণ, তথা নয়া-ঔপনিবেশিক শোষণ চালানো যায়, সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তর এবং কোটি কোটি মানুষ এখনও সাম্রাজ্যবাদের করায়ত্ত।” (পৃ.২৩) বিশ্বপুঁজি তার বিস্তারের জন্যে খাদ্য, অস্ত্র, ওষুধ, জ্বালানি, প্রকৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মানুষের অতি জরুরী মৌলিক চাহিদা ও অধিকারকে নিয়ে কী করে মেতে উঠেছে তার আলোচনা রয়েছে পরবর্তী অধ্যায়গুলো জুড়ে।
আজকের বিশ্বে দরিদ্র দেশগুলোর এক বিশাল অংশের মানুষ প্রতিদিন অনহার, অর্ধাহার, অপুষ্টি আর এর কারণে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। মৌলিক চাহিদা খাদ্য কেন এ বিশ্বের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, কেন বিশ্বের সব মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার মতো উৎপাদন শক্তি থাকার পরেও আজ দরিদ্র বিশ্বের এ তীব্র খাদ্য সংকট- এমন প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জমির পরিমাণ, জনসংখ্যা এ সবকে খাদ্য সংকটের কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি প্রচেষ্টা পুঁজিবাদী চিন্তাধারার মাঝে আছে। কিন্তু লেখক দেখিয়েছেন যে বহুজাতিক সংস্থাসমূহ, ধনী রাষ্ট্রসমূহের সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি, আভ্যন্তরীণ শ্রেণী বিন্যাস কী করে খাদ্যকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার করছে, খাদ্য উৎপাদন কমিয়ে অর্থকরী ফসল উৎপাদনে জমি ব্যবহার করছে, ভর্তুকি দিয়েও খাদ্য উৎপাদন না করে জমিকে পতি রাখছে। বিশ্বে একদিকে খাদ্য ঘাটতি, অনাহার, অপুষ্টি বাড়ছে, অন্যদিকে বহুজাতিক ব্যবসায়ী সংস্থাসমূহর বাজার স¤প্রসারণ এবং মুনাফা বেড়েইে চলেছে।
বিশ্বপুঁজিবাদের আরেকটি ভয়ংকর দিক বলতে গিয়ে লেখক বলেছেন, “...দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, বাসস্থান সংকট ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব হলেও অস্ত্র, সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সম্পদের যোগান ঠিকই পাওয়া যায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের অন্যতম ভিত্তি অস্ত্র ব্যবসা। এবং এই ভিত্তি টিকিয়ে রাখবার জন্য দরিদ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে সমরসজ্জা, যুদ্ধ।” (পৃ.৩৮) অস্ত্র ব্যবসা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন দেশের যুদ্ধমুখী নীতি, ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্তাদের ঘুষ গস্খহণ, ভ্রান্ত তথ্য ও প্রতিবেদন উপস্থাপন, ইচ্ছামাফিক বিক্রিত অস্ত্রের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি চক্রান্তের কথা। সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের অস্ত্র ব্যবসার স্বর্থে দরিদ্র দেশগুলোর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে । এ প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন, “প্রান্তস্থ রাষ্ট্রগুলোর সরকার নিজের দেশে যত বেশি নির্যাতনকরী ভূমিকা নেয়, সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা তত বেশি গাঢ় হয়। এবং এসব রাষ্ট্রে অস্ত্র সরবরাহ, সামরিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদিও অনেক বেশি হতে থাকে।” (পৃ. ৪৩) সামরিক অস্ত্র তৈরী ও গবেষণার পিছনের বিশ্বের সম্পদের একটি বিশাল অংশ ব্যয় হচ্ছে। দেখা যায় বৃহৎ কোম্পানিগুলো যখন ক্ষমতাধর মারাত্মক অস্ত্র আবিষ্কার করছে তখন পুরানো অস্ত্রগুলো রফতানি করা হচ্ছে অনুন্নত দেশগুলোতে আর তা অনুন্নত দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি ও গণ নির্যাতনের কারণ হচ্ছে।
অস্ত্রের পাশাপাশি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নিয়েও বিশ্বপুঁজিবাদ যে ভয়াবহ চক্রান্ত করছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক চক্রান্ত: ওষুধ’ প্রবন্ধে। অনুন্নত বিশ্বের অসাধু কর্তাব্যক্তিরা অনেক সময় দেখা যায় ওষুধ উৎপাদন ও বণ্টনের জন্য প্রয়োজনীয় মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা, উপযোগী কারখানা ব্যবস্থার প্রতি মনোযোগী হন না এবং এ সুযোগে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দরিদ্র দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে নিজেরা স্ফীত হচ্ছে।
সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের একটি বড় বিষয় হল জ্বালানি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে জ্বালানি। দেখা যায়, অনুন্নত বা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত অনেক দেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ার পরেও ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের সম্মুখীন। নানা চক্রান্তে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সহায়তায় এ খনিজ সম্পদকে লুট করে নিয়ে যায়। এই লুটপাটকে সমর্থন করতে বলা হয় উন্নত প্রযুক্তি ও বিপুল বিনিয়োগের কথা। এখানে লেখক ত্রিনিদাদের একজন শ্রমিক নেতার কথা উদ্ধৃত করেছেন,“আমাদের তেলশিল্প বহু প্রাচীন। ১৮৬০ সালে প্রথম আমাদের তেলকূপ খনন করা হয়। ১৮৭০ সাল থেকে প্রথম তেল উৎপাদন শুরু হয়। সে সময়ে আমাদের খনিগুলোর উৎপাদিত তেল ছিল বিশ্বের শতকরা ৮০ ভাগ। কিন্ত এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব কোনো প্রযুক্তি নেই। তেল সম্পর্কিত পরিকল্পনা, ডিজাইন, কাঠামো, কিছুই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এই আমাদের ১২০ বছরের তেল উৎপাদনের ফল।” তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক দেশের নিজস্ব প্রযুক্তি প্রয়োজনীয় হলেও সাম্রাজ্যবাদী চক্র তাদের বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল করে অনুন্নত দেশগুলোকে নিজেদের সম্পদ উৎপাদন, ব্যবহার, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজস্ব অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেয় নি। সেকারণে খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করে দেশীয় শিল্প বিকাশ করতে পারে না খনিজ সম্পদশালী অনেক দেশ, দেখা যায় তাদের মূল্যবান খনিজ সম্পদ রফতানি করে উন্নত দেশগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি করে। জাতীয় সম্পদের অপচয় ঘটিয়ে দেশ ও বিদেশের কিছু ব্যক্তি বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে যায় আর সিংহভাগ জনগণ হয় বঞ্চণার শিকার।
‘বহুজাতিক কোম্পানি: প্রকৃতি ও বিকাশ’ প্রবন্ধটি পাঠকদের বহুজাতিক কোম্পানি ও সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের সম্পর্ক বুঝতে সহায়ক হবে। এ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে,“ ... বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উৎপত্তি, বিকাশ ও অবস্থানের ঐতিহাসিক ভিত্তি এবং প্রক্রিয়া আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের বর্তমান শিল্পোন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাদের দ্বিতীয় স্তরের যাত্রা শুরু হয়। পুঁজিবাদী উন্নয়নের স্বাভাবিক ধারা অনুযায়ী পুঁজির পুঞ্জিভবন ঘটতে থাকে, উদ্ভব হয় একচেটিয়া পুঁজির। উৎপাদন, বিতরণ, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির ওপর এই একচেটিয়া পুঁজির আধিপত্য স্থাপিত হয়। এই পুঁজি ক্রমশ বিশালত্ব লাভ করতে থাকে; এদের স¤প্রসারণের চাহিদাও সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন রাষ্ট্রে এই পুঁজি ছড়িয়ে পড়ে। এবং সাধারণভাবে বলতে গেলে, এভাবেই উদ্ভব হয় বহুজাতিক সংস্থার। একচেটিয়া পুঁজির এই বিকাশ ও বিস্তারের কেন্দ্র ছিল পুঁজি বিকাশের অনুকূল কয়েকটি রাষ্ট্র। যেগুলো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি রাষ্ট্র, জাপান) পরবর্তীকালে একচেটিয়া পুঁজির প্রতিনিধি হিসেবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।”(পৃ.৭৮) লেখক দেখিয়েছেন যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কী করে সহজ শর্তে ব্যবসা করার নামে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর ‘অর্থনীতির ভিত্তি ও রাজনৈতিক শক্তির উৎস’তে পরিণত হয়, যার ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাটিন আমেরিকার অনেক দেশই তাদের খনিজ সম্পদ, ভূমি, কৃষি, খাদ্য শস্য, অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হন। তিনি উদাহরণ দিয়ে আরো দেখিয়েছেন যে সামরিক শাসন, অস্ত্র বাণিজ্যবৃদ্ধির সাথে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাণিজ্য প্রসার লাভের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির সরাসরি প্রভাব আমাদের দৈনিন্দিন জীবনে কী করে পড়ে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: এক জটিল বিষচক্র’ প্রবন্ধে। অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ঠেকাতে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর মদতে অনুন্নত দেশগুলো সাময়িক কিছু কর্মসূচি নেয়। এ প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন,‘‘ ...অস্বাভাবিক পরিস্থিতি রোধ করবার জন্য সাময়িক কিছু অর্থনৈতিক কর্মসূচি নেয়ায় নৈরাজ্য কিছুটা হ্রাস পেয়েছে - মানুষের হাতে কিছু অর্থ এসেছে। কিন্তু দ্রব্যের দাম অর্থাৎ বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির গতি থামেনি। মূলত এ দ্রব্য যাদের শ্রমে তৈরি, তাদের শ্রমও এক ধরনের পণ্য। অন্যান্য পণ্যের বিনিময় মূল্যের বৃদ্ধির হারের সঙ্গে শ্রমের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি না পাবার ফলে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্ষমতাকে অতিক্রম করে।”(পৃ.৮৮) সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির বিষচক্রের কারণে উৎপাদক কৃষক পণ্যের যথার্থ দাম পায় না, ক্রেতাকেও বাজার থেকে অধিক মূল্যে খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে হয় কারণ এই বাজার ব্যবস্থায় মধ্যসত্ত্বভোগী, ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের অতি শক্তিশালী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা- পুঁজিবাদের বিকাশের জন্য যা অত্যন্ত জরুরী।আর এই পুঁজিবাদ বিকাশের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির নজির রয়েছে ইতিহাসে। আর এই পুঁজির বিকাশের ধারাতেই আবশ্যিকভাবে চলে আসে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধি। লেখক একে বিশ্লেষণ করে লিখেছেন,“.. সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় একচেটিয়া পুঁজির বিশাল রূপ, পুঁজির আন্তর্জাতিকীকরণ এবং কায়িক বৃদ্ধি আস্তে আস্তে এর অভ্যন্তরেই নতুন উপাদানের জন্ম দেয়। যার ফলে উৎপদনশীলতার ব্যাপক বিকাশের পাশাপাশি বাড়ে বেকারত্ব, মুনাফার হার এবং আপেক্ষিকভাবে প্রকৃত আয় হ্রাস প্রবণতা সবসময়ই হুমকি হিসেবে থাকে। এজন্য উৎপাদন যে হারে হয়, উৎপাদিত পণ্য সে হারে নতুন নতুন বাজার খুঁজে পায় না। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে উদ্ধার করবার জন্য সেসব দেশের সরকার জনগণের অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসে। যুদ্ধ অর্থনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি বড় বিকল্প পথ। জনগণের রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে যুদ্ধ প্রস্তুতিতে। বাড়ছে মুদ্রা সরবরাহ। দেখা দিচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি। একদিকে স্থবিরতা অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি এই দুই মিলে সৃষ্টি করেছে নতুন এক ধরনের সংকট - যার নাম স্ট্যাগফ্লেশন।”(পৃ.৯১) আর এই পুঁজিবাদী অর্থনীতি প্রক্রিয়ায় দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, উৎপাদন পরিকল্পনা, সংস্কার সহ নানা ফাঁদে পড়ছে অনুন্নত দেশগুলো।
বিশ্ব পুঁজিবাদ বিকাশের সহায়ক শক্তি বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমফ। তাদের সন্তুষ্ট করতে তাদের প্রণীত নীতির জন্য বাংলাদেশ কী অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়ছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি’ প্রবন্ধে। দেখা যায় দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রাম উন্নয়নের নামে ‘টার্গেট গ্র“প’ ঠিক করে কমিউন প্রতিষ্ঠা বা সমবায় সমিতি করার জন্য তহবিল ও তা নিয়ে গবেষণা করাকে ‘দাতা গোষ্ঠী’ খুব উৎসাহ দেয়। আর একে ঘিরে ‘দাতাদের’ সাহায্যপুষ্ট নতুন নতুন সংস্থা গড়ে উঠে। এর উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লেখক মন্তব্য করেছেন,“বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক পুঁজির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সাহায্যসংস্থাসমূহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশসহ দরিদ্র বিশ্বের দেশগুলোর কৃষিকে ক্ষুদ্র স্কেলের চাষাবাদের ফাঁদে আটকে রাখা এবং বিচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতার মাধ্যমে যে কোনো সমন্বিত এবং সুসংগঠিত আন্দোলনকে বাধা প্রদান করা।।”(পৃ.১০০) বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষার জন্য দেখা যায় বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনীতি আমদানিপণ্য নির্ভর হয়ে নিজস্ব শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে। এমনকি শিল্পোদ্যোক্তারা শিল্পের বিকাশের চেয়ে অধিক মুনাফার জন্য ব্যবসার প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠে- ফলে উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমে হ্রাস পায়। এর পাশাপাশি দেখা যায় ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারসাজি’র কারণে দরিদ্র দেশগুলো রফতানি পণ্যে কম দাম পায়, তাই রফতানি পণ্যের পরিমাণ বাড়লেও প্রকৃত আয় কম হয় আর বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তেই থাকে। এই কারণে ‘আবদ্ধ পুঁজি’র শাসনে দরিদ্র দেশসমূহে ‘অর্থনীতির কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা ও সংকট’ ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
‘তৃতীয় বিশ্বে’র অর্থনীতির সাথে কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ক নিবিড়। এই কৃষকদের মুক্তির অপরিহার্য শর্ত কৃষক আন্দোলন। কিন্তু ‘দাতা সংস্থার’ সাহায্যপুষ্ট হয়ে বিভিন্ন সংগঠন তাদের ‘টার্গেট গ্র“প’ কৌশল নিয়ে এ আন্দোলরন কী করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা, টার্গেট গ্র“প এবং কৃষক মুক্তি’ প্রবন্ধে। সাম্রাজ্যবাদীদের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লেখক বলেছেন, “ ... সাম্রাজ্যবাদ তাদের(কৃষকের) কাছে ভিন্নরূপে গিয়ে পৌঁছে প্রধানত চারটি লক্ষ্য নিয়ে -
০১. তার বিপ্লবী সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করা।
০২. তাঁদের বাজারের সাথে যুক্ত করা।
০৩. স্থিতিহীন সরকারের ওপর অনাস্থা হেতু ভিন্ন একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তর সৃষ্টি করা, যার ওপর প্রয়োজনে সাম্রাজ্যবাদ দাঁড়েিত পারে।
০৪. সারাদেশ জুড়ে ভূমিহীন ও গরিব কৃষকদের অণু-পরমাণূতে বিভক্ত বিভক্ত করে ফেলে ঐক্যবদ্ধ সংহত আন্দোলন সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করা।”
এ প্রবন্ধটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশে কোনো বিপ্লবী রূপান্তর ঘটাতে হলে তার প্রধান শক্তিই হবেন ভূমিহীন এবং দরিদ্র কৃষক। তাই কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তের স্বরূপটি বুঝা প্রয়োজন।
‘বাংলাদেশের দারিদ্র্যের উৎস এবং আগামীকাল’ প্রবন্ধটিতে লেখক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ইউরোপীয় রেঁনেসা, প্রাচীন ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা, বৌদ্ধ দর্শন, চার্বাক দর্শন আলোচনা করে দেখিয়েছেন কী করে এককালের ‘অগ্রগণ্য’ ভারত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যার পরিণাম বিদেশী বণিকদের কাছে আত্মসমর্পণ এবং পরবর্তী পরিণতি ঔপনিবেশিক শাসন। আর এই উপনিবেশিক শাসনের পথ ধরেই চলে পুঁজিবাদের আগ্রাসন। সেই সাথে বাংলাদেশে ঘটে একটি নতজানু শিক্ষিত মধ্যবিত্তের বিকাশ। যে কারণে দেখা যায় কিছু বিদ্রোহ, ক্ষুদ্র স্বাধীন কিছু উদ্যোগ ঘটলেও ইংরেজদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার করতে এদেশের সক্রিয় বিত্তবানরা সহায়তা করে। আর এই শৃঙ্খল থেকে আজও মুক্তি না মেলাতে এদেশের মানুষ আজও অনাহারে দিন কাটায়, নিপীড়নের শিকার হয়, শ্রমের ফসল থেকে শ্রমজীবী জনগণের বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকে।
এখন পর্যন্ত আলোচিত প্রবন্ধগুলো আশির দশকের গোড়ার দিকে লেখা। বইটির শেষ দু’টি প্রবন্ধ ‘উন্নয়ন ধারণা, রাষ্ট্র ও বিশ্বসংস্থা’ এবং ‘নোবেল পুরস্কার, মঙ্গা এবং ক্ষুদ্রঋণের রাজনীতি’ যথাক্রমে ২০০৪ এবং ২০০৬ এ লেখা। তবে সুদীর্ঘ সময়ের পার্থক্যে লেখা হলেও দেখা যায় বাংলাদেশের মত অনুন্নয়ন দেশগুলোতে বিশ্ব পুঁজিবাদের চক্রান্তের যে স্বরূপের কথা লেখক তিন দশক আগে আলোচনা করেছিলেন তা আজও অব্যাহত রয়েছে। একদিকে বিশ্ব পুঁজির আগ্রাসন আরেক দিকে উৎপাদনমুখী অর্থব্যবস্থা না গড়ে দালালবৃত্তি, দোকানদারি একটি অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশে- আর এর পরিণামে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনুন্নয়ন দেশগুলোতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রকল্পমুখী লুটেরা অর্থব্যবস্থা বেড়েই চলছে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও বঞ্ছণা, শোষণ, নিপীড়ন থেকে এই সকল দেশের অধিকাংশ মানুষই মুক্তি লাভ করে নি। নয়া উপনিবেশিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন আর বৈষম্যের অর্থনীতির চর্চা চলেছে এবং চলছে। একদিকে মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীর হাতে অঢেল সম্পদ আর একদিকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব - এই দুই বৈপরীত্যে অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ছয় দশকে বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সুদৃঢ় অবস্থান, তথাকথিত ‘দাতা গোষ্ঠী’ বা ‘উন্নয়ন সহযোগী’ সংস্থাগুলোর ‘পৃষ্ঠপোষকতা’র নামে বিশ্ব পুঁজির বিকাশ ও স¤প্রসারণ আর দরিদ্র দেশগুলোর রাজনীতিতে মুৎসুদ্দী, দালাল একটি গোষ্ঠীর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তাই এটি খুব আশ্চর্য নয় যে আনু মুহাম্মদের ‘বিশ্ব পুঁজিবাদ এবং বাংলাদেশের অনুন্নয়ন’ বইটির প্রাসঙ্গিকতা বইটি প্রকাশিত হবার তিন দশক পরেও অটুট রয়েছে।
পুঁজিবাদের আগ্রাসনের স্বরূপ ও কৌশল এবং আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব বুঝতে হলে ‘বিশ্ব পুঁজিবাদ এবং বাংলাদেশের অনুন্নয়ন’ বইটি অত্যন্ত সহায়ক হবে। বুর্জোয়া অর্থনীতিতে অনুন্নত শব্দটি ব্যবহার না করে উন্নয়নশীল জাতীয় শব্দ ব্যবহারে প্রবণতা থাকে। লেখক শব্দের সেই রাজনীতিতে পা দেন নি, সরাসরি অনুন্নত শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আনু মুহাম্মদ শুধু তাত্ত্বিক আলোচক নন, তিনি গণমানুষের মুক্তি আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মীও। বাংলাদেশের গণ মানুষের শোষণ-বঞ্ছণার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণজাগরণ ঘটাতে, মানুষের সচেতনতাকে ক্ষুরধার করতে এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।