মেয়েটি বসে আছে।জানালার নিচে ছোট্ট একটা বালিশ বুকে চেপে।কারো দীর্ঘশ্বাসের মত উদাস হাওয়া এসে মাঝে মাঝে তার কপালের চুলগুলো ছুয়ে যাচ্ছে। একমনে কাঠগোলাপ গাছটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির নাম তন্বী। এখনও ভোর হয়নি, আলো ফুটবে ফুটবে একটা ভাব, এই আলোআঁধারির মাঝে গাছটির ফুলগুলোকে একগুচ্ছ তারা বললে ভুল হবে না। কিন্তু তন্বী ফুল দেখছে না। সে অপেক্ষা করছে। দীর্ঘ তিন বছর ধরেই তার এই অপেক্ষা চলছে।তিন বছরের প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সে।অপেক্ষায় থেকেছে, কি কারনে তার সপ্নগুল নষ্ট হয়ে গেল, কি তার দোষ ছিল, মনের বাধনের ঠিক কোন জায়গাটায় সুতো নড়ে গিয়েছিলো তার জানতে হবে। কেউ একজন বলছিল, এক ভোরে সে তার অসম্পূর্ণ কথাগুলো শেষ করবে;তাকে সব বলবে। এই তিন বছরের প্রতিটি রাতেই তন্বী সেই অব্যক্ত কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।প্রতিটি রাত জানালার এই একি জায়গায় বসে, কাঠগোলাপ গাছটির দিকে তাকিয়ে সে ভেবে গেছে। একটি বছরের প্রতিটি দিন এর কথা ভেবেছে। শুধু কোন দিন ভাবতে পারিনি স্মৃতিগুলোকে ঝেড়ে ফেলে জীবনে সামনে আগানোর কথা। ১০৯৫ টি রজনীর মত আজকের নির্ঘুম রজনীটিও এমনি এমনি কেটে গেল।ভারি কন্ঠে কেউ ফোনের অপাশ থেকে বলল না- তন্বী.... আমি...... অর্ক!
ছেলেটার পাগলামি
বালিশে উপুড় হয়ে ফোনটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ক।এতটা বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও প্রতিটী ভোরে ফোনে কত সহস্রবার যে একটা নাম্বা্রের দিকে তাকিয়ে ভেবেছে ফোন করবে! কত কিছু বলার ছিল। কিন্তু এখনও মনে হয় হয়ত সঠিক সময় এখন হয়নি। কিংবা কে জানে, তার ফোনের অপেক্ষায় কেউ থাকে কিনা! হয়ত এখন যদি ফোনটা করে বসে তাহলে হয়ত সেদিনের মতো তন্বীর জীবনে আবার ঝড় উঠতে পারে।কত ভাবনা কত চিন্তা! এই ভাবনাগুলোই তাকে আটকে রেখেছে। কিনবা কে জানে সে নিজেই হয়ত ভয় পায় সেই নরম স্নিগ্ধ চেহারার কঠোরতার সামনা সামনি হতে। প্রতিটি রাত, প্রতিটি ভোর তার পার হয় নিজেকে চেপে রাখার কষ্ট নিয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই কষ্টটা বুঝি তার প্রাপ্পই ছিল।
শুরুটা যেভাবে হয়েছিলো
২০০৬ সালের দিকের কথা, অর্ক তখন ঢাকায় চলে এসেছে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর জীবনে যেন অন্য একটা রঙ যোগ হয়েছে।হঠাত্ত কি একটা কাজে ফার্মগেট গিয়েছিলো। হঠাত রাস্তায় তন্বীর সাথে দেখা। তন্বীকে আগে থেকেই চিনত সে। গ্রামে তাদের প্রতিবেশি ছিল।খুব একটা কথা বার্তা না হলেও কেউ কাউকে কখনও এড়িয়ে চলে নি। এতদিন পর চেনা একজনকে দেখে এগিয়ে গেল অর্ক। তন্বীর চোখমুখ লাল হয় আছে। দিশেহারা একটা ভাব। অর্ক এগিয়ে গেল-
'তন্বী- ভাল আছ'!
অর্ককে দেখে যেন কি একটা ভরসা পেল। কিন্তু বলি বলি করেও কিছু বলছে না দেখে অর্কই বলল; 'কিছু হয়েছে!'
'না মানে। আজকে কলেজে ভর্তির শেষ দিন, মারকশিটের ফটকপি করা হয়নি, কোথা থেকে কি করবো............. মানে......'
ঠোটের কোনে একটু হাসি ঝুলিয়ে অর্ক বলল ' আরে বেপার নাহ! হয়ে যাবে আমাকে দাও, করে দিচ্ছি।'
'আরে না না, তোমার করতে হবে না, আমি করে নিব'
' আরে এগুলো কি আমি নিজের হাতে করবো নাকি, করে দেই।'
নাহ, কোনো গল্পের নায়িকার মতো নায়কের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়নি সে। নিজেই নিজের কাজটুকু করে নিয়েছিল। যদিও অর্ক তার পাশে ছিল।তারপর জে যার মত নিজের পথে পা বাড়িয়েছিল। তারপর অনেক দিন কেটে যায়।
একদিন বাসে দেখা, রাস্তার দুরত্তের সাথে সাথে আলাপও জমে উথেছিল।তারপর নাম্বারের আদল বদল।ধীরে ধীরে না বলা সুরে মনের কথাও একজন আরেকজন বুঝেনিচ্ছিল। অর্ক খুব একটা কথা বলত না। সারাদিন তন্বীই কথা বলত। ছট বাচ্চাকে মানুষ যেভাবে প্রশ্রয় দেয়, অর্ক যেন তন্বীকে সেভাবেই দেখত। রাতের পর রাত জেগে তাদের কোথা হত না। তাদের কথা হতো ভোর বেলায়। রাত জাগার খুব বাজে অভ্যাস ছিল অর্কর। সারা রাত জেগে মুভি দেখা আর বই পড়ায় কেটে যেত অর্কর রাত। আর ভোরে ঘুমুতে যাবার আগে তন্বীর সাথে একটু কথা তার বলতেই হতো। কিন্তু কোন দিন ফোন দিয়ে তার মনে হয়নি তন্বী ঘুমে ছিল। মনে হতো ওরই অপেক্ষায় হয়ত বসে আছে। যত রাত ই হোক বা ভোর কোনদিন তন্বী গলায় অপেক্ষা আর ভালবাসা ছাড়া কিছু ছিল না। অর্কর সব ছেলেমানুষি যেন তন্বীর কাছে বড় বেশি ভালো লাগার ছিল।
এরপরে যা হয়..................
চলবে..............