somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক সভ্যতার আধুনিক চিন্তা

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক সভ্যতার আধুনিক চিন্তা
শুধু প্রচারের জোরে এই আশ্চর্য দর্শন মানুষের মন-মস্তিষ্কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যে, মহিলারা যদি নিজেদের ঘরে স্বামী-সন্তান, পিতা-মাতা ও ভাইবোনের জন্য গৃহস্থালী কাজকর্মে নিযুক্ত থাকেন তাহলে তা অবরোধ ও অবমাননা, কিন্তু যদি পর পুরুষের জন্য খাবার পাক করেন, ঘরদোর পরিষ্কার করেন, হোটেল ও উড়োজাহাজে তাদের আপ্যায়ন করেন, দোকানপাটে মিষ্টি হাসির দ্বারা গ্রাহকের চিত্ত আকর্ষণ করেন এবং অফিস-আদালতে বসদের মনোরঞ্জন করেন তবে তার নাম সম্মান ও স্বাধীনতা। ইন্নালিল্লাহি ...
এর সঙ্গে এই মর্মান্তিক কৌতুকও যুক্ত হয়েছে যে, অর্থোপার্জনের জন্য বাইরে দৈনিক আট ঘন্টা কাজ করার পরও আধুনিক নারী ঘরের কাজকর্ম থেকে মুক্তি পায়নি। আগের মতোই তাদেরকে ঘরের সকল কাজও করতে হয়। ইউরোপ-আমেরিকায় অধিকাংশ নারীকে দৈনিক আট ঘন্টা বাইরে কাজ করার পর ঘরে এসে রান্না-বান্না, হাড়ি পাতিল ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদিও করতে হয়।
মহিলাদেরকে ঘর থেকে বের করার জন্য আজকাল যে যুক্তি পেশ করা হয় তা এই যে, ‘জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির যুগে আমরা আমাদের অর্ধেক জনশক্তিকে কর্মহীন করে রাখতে পারি না।’ এই যুক্তি এমনভাবে আওড়ানো হয়, যেন দেশের সকল পুরুষের পূর্ণ কর্মসংস্থান হয়ে গিয়েছে! এরপরও কর্মক্ষেত্রে এত পদ শূন্য রয়েছে যে, অতিরিক্ত জনশক্তির প্রয়োজন!
অথচ বাস্তবতা এই যে, এমন এক দেশে এইসব যুক্তি আওড়ানো হয়, যেখানে চাকুরির খোঁজে অসংখ্য উচ্চশিক্ষিত বেকারের জুতার সুখতলা অনবরত ক্ষয়ে যাচ্ছে। কোথাও একটি ক্লিনার বা ড্রাইভারের পদ খালি হলে দশটি মাস্টার্স ডিগ্রিধারী বেকারের দরখাস্ত জমা হয়ে যায়। আমাদের কর্ণধারদের কর্তব্য হবে, প্রথমে সকল বেকার যুবকের কর্মের ব্যবস্থা করা। এই অর্ধেক জনশক্তির পূর্ণ কর্মসংস্থান আগে করুন এরপর অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা যাবে।
পরিবার-ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে
আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে ঘরের দায়িত্বশীল বানিয়েছেন, গৃহের ব্যবস্থাপনা তাদের উপর অর্পিত হয়েছে। যাতে পারিবারিক বন্ধন ও শৃঙ্খলা অটুট থাকে। কিন্তু তারা যখন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হলে তখন ফলাফল এই হল যে, পিতাও বাইরে, মা-ও বাইরে, সন্তানরা স্কুলে। অতএব ঘরে তালা ঝুলছে।
নারীর স্বাভাবিক দায়িত্ব তো এই ছিল যে, তাঁর গৃহে অবস্থানের দ্বারা একদিকে যেমন গৃহস্থালী শৃঙ্খলা অটুট থাকবে অন্যদিকে সন্তানও তার কোল থেকে স্নেহ ও মমতা এবং তালীম ও তরবিয়ত লাভ করবে। মায়ের কোলই শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। এখান থেকেই সে উত্তম আচার-আচরণের শিক্ষা গ্রহণ করে, জীবন-যাপনের উত্তম পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। কিন্তু আজ পাশ্চাত্যের জীবন-ব্যবস্থায় সন্তান পিতা-মাতার স্নেহ ও মমতা থেকে বঞ্চিত। পরিবার-ব্যবস্থা ছিন্ন ভিন্ন
হয়ে গিয়েছে। স্বামী এক জায়গায় কাজ করছে, স্ত্রী অন্য জায়গায়। উভয়ের মধ্যে দিনভর কোনো যোগাযোগ নেই, অন্যদিকে দু’জনের কর্মক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা। এভাবে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তালাক-ডিভোর্স পর্যন্ত পরিস্থিতি গড়াচ্ছে।
গর্বাচেভের অভিজ্ঞতা
এই কথাগুলো যদি শুধু আমি বলতাম তাহলে কেউ বলতে পারত যে, এগুলো প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের কথা, কিন্তু কয়েক বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বই গোটা বিশ্বে পঠিত। এতে Status of woman শিরোনামে একটি অধ্যায় রয়েছে মহিলাদের সম্পর্কে। সেখানে অত্যন্ত স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভাষায় তিনি লিখেছেন-
‘আমাদের পশ্চিমা সমাজে আমরা নারীদেরকে ঘর থেকে বাইরে এনেছি এবং এর মাধ্যমে কিছু বৈষয়িক সুফল অর্জন করেছি। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উৎপাদনের হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু অন্যদিকে আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের পরিবার-ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এর ফলে আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি, তা ওই বর্ধিত উৎপাদন থেকে অনেক অনেক বেশি। এজন্য আমি একটি আন্দোলন শুরু করেছি, যার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য এই যে, যে নারীরা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তাদেরকে পুনরায় ঘরে ফিরিয়ে আনা। কীভাবে একে সফল করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন। অন্যথায় এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবার-ব্যবস্থার মতো আমাদের জাতিও ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে যাবে।’
এই কথাগুলো লিখেছেন মিখাইল গর্বাচেভ, তার উপরোক্ত বইয়ে। বইটি সহজলভ্য। উৎসুক পাঠক কথাগুলো ওই বই থেকেও পড়ে নিতে পারেন। #
লিখেছেন পাকিস্তানের সাবেক চিফ জাস্টিস মাওলানা তকি উসমানী ।
মাসিক আল কাউসার '২০০৯ ভলিউম থেকে সংগ্রহিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×