সিলেট থেকে ৬০০ কোটি টাকা লোপাট করে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স । প্রায় এক মাস আগে রাতে নগরীর গ্যালারীয়া মার্কেটের অফিসের মালামাল রাতের আঁধারে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে বীমা করে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ২৭ হাজার গ্রাহক। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা গতকাল সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। সিলেট নগরীর জল্লারপাড় রোডে কয়েক বছর আগে বীমা ব্যবসা শুরু করে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি। ওই সময় থেকে কর্মী নিয়োগ করে কোম্পানির কর্মকর্তারা বীমায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়ায়। পরে তারা সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের গ্যালারীয়া মার্কেটের সাত তলায় অফিস খুলে বসেন। এ অফিসের ইনচার্জ নিয়োগ করা হয় সিলেটের স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন চৌধুরীকে। তিনি ছাড়াও সিলেট অফিসে আরও চারজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। মিঠুন চৌধুরী গতকাল জানিয়েছেন, ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত সিলেট কার্যালয়ের অধীনেই ২৭ হাজার গ্রাহক ছিল। তাদের জমা ছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এ টাকা নিয়ে ১৬ই এপ্রিল রাতের আঁধারে সিলেট থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স। ১২ই এপ্রিল একটি নোটিশ দেয় তারা। এ সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। তবে অন্য কর্মকর্তাদের ঢাকা অফিসে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি জানান, ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সময় সিলেট অফিসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন পাওনা ছিল ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ টাকা পরিশোধের ব্যাপারে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোন কিছু জানানো হয়নি। এদিকে, সিলেট থেকে কোম্পানির কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকেও ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গোটা বিভাগের গ্রাহকরা বিপাকে পড়েছেন। সমপ্রতি দু’টি মরণোত্তর বীমার পাওনা হিসেবে টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ওই টাকা কোম্পানির পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে না। কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পর প্রতারিত গ্রাহকদের তোপের মুখে পড়েছেন সিলেটের ইনচার্জ মিঠুন চৌধুরী। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় এখনও অফিসে যাচ্ছেন। গত ২৭শে এপ্রিল তিনি সিলেটের কোতোয়ালি থানায় প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। ওই জিডিতে তিনি প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার খবর দেয়া ছাড়াও তাদের ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাওনার কথা উল্লেখ করেন। কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা জিডি নম্বর ২৩২৭/২০১২। এর পর মিঠুন চৌধুরী তার পাওনার কথা উল্লেখ করে ২৬শে এপ্রিল এবং ২রা মে সিলেটের আইনজীবী আবদুর রকিবের মাধ্যমে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের কর্মকর্তাদের কাছে উকিল নোটিশ পাঠান। মিঠুন চৌধুরী গতকাল জানিয়েছেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে উকিল নোটিশ যে জবাব দেয়া হয়েছে তাতেও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এর ফলে তিনি মামলার প্রস্তুতি চালাচ্ছেন বলেও জানান।
প্রতারিত গ্রাহকদের মানববন্ধন: প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের গ্রাহকদের সংখ্যা সিলেটে ২৭ হাজার। এর মধ্যে সিলেটের জালালপুরের এক গ্রাহক একাই ওই কোম্পানিতে ৬৫ লাখ টাকার বীমা করেছেন। সিলেটের সমাজকর্মী মনোরঞ্জন তালুকদারও করেছেন ৮ লাখ টাকার বীমা। লাখ লাখ টাকা বীমার করে অনেক গ্রাহকই কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছেন। এখন তাদের পাওনা টাকা পাওয়ার পালা। প্রতারিত গ্রাহকরা জানান, টাকা উদ্ধারে জন্য তারা রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ নেতা রাকেশ রায়, সমাজকর্মী রাজিউল ইসলাম তালুকদার রাজু, প্রতারিত গ্রাহক মনোরঞ্জন তালুকদার, সুব্রত বর্মণ, বিপ্রেস রায় প্রমুখ।