ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া এক বাচ্চার মা গর্ব করে বলছেন- আমার বাচ্চা বংলা লেখা দেখলে জানতে চায়-মম এটা কি বাংলা।
বাবাও চোখ বড় বড় করে বলতে শুরু করেন-বাসায় আমরা বাচ্চাদের সামনে তেমন একটা বাংলা বলি না। ইংরেজীতে ভাল দখল না থাকার কারণে আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। ইংরেজী হচ্ছে অভিজাত একটি ভাষা। সারা পৃথিবী জুড়ে এর ব্যবহার। বাচ্চাদের ছোট বেলা থেকেই ইংরেজী শিক্ষা দিতে হবে। না হলে গোড়া দুর্বল থেকে যাবে।
এই মাথা মোটাদের আমি কোন ভাবেই বোঝাতে পারি না যে, ইংরেজী হচ্ছে আর দশটা ভাষার মতই বিদেশী একটি ভাষা। আগে নিজের মার্তৃ ভাষার চর্চা তারপর কারো যদি শখ থাকে তবে সে অন্য কোন বিদেশী ভাষার চর্চা করতে পারে। নিজের ভাষা না জেনে অন্য ভাষা বলার মধ্যে কোন গৌরবের ব্যাপার নাই।
বাংলাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। এবং ঐ দিনটিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালন করা হয়। ইংরেজরা দুইশত বছর এ দেশ শাসন করে গেছে। ফলে তাদের চিন্তাধারা এখনও আমাদের মাঝে রয়ে গেছে।
ডি.জে, ভি.জে, আর.জে এই জিনিসগুলি কি আমার বুঝতে অনেক দিন সময় লেগেছে। এরা বাংলা-ইংরেজী মিশিয়ে নতুন একটা ভাষার উদ্ভাবন করছে। হাই ফ্রেন্ডস, সো ভিউয়ারস, সো লিসেনারস কি যেন বলছিলাম.... কোন এক বিচিত্র কারণে কিছুক্ষণ এদের বকবক শুনলে আমার মাথা ভার হয়ে যায়। দুই চোখ আপনিই ঘুমে বুজে আসতে চায়।
আমাদের মাথায় কোন ভাবে ঢুকে গেছে ব্রিটিশ শিশুরা আমাদের বাচ্চাদের চেয়ে টলার, স্ট্রংগার, শার্পার (সম্ভবত বেশী হরলিক্স খাবার কারণে।)। এদের সব কিছু আমাদের অনুকরণ করে যেতে হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি কখন আমাদের বাচ্চারা ব্রিটিশ শিশুদের মত হড়বড় করে ইংরেজী বলতে পারবে।
ব্রিটিশ শিশুদের আই.কিউ এর কিছু নমুনা-
ওয়ানপোল জরিপ সংস্থা অনলাইনে ব্রিটেনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীর উপর জরিপ চালায়। জরিপের ফলাফল নিম্নরূপ:
১. প্রশ্ন: টেলিফোনের আবিস্কারক কে?
উত্তর: শতকরা দশ জনের উত্তর ছিল:
ক. রানী এলিজাবেথ।
খ. চার্লস ডারউইন।
গ. নোয়েল এন্ডমন্ডস।
২. প্রশ্ন: চন্দ্রপৃষ্টে প্রথম পা দেয়া ব্যক্তির নাম কি?
উত্তর: শতকরা বিশ জনের উত্তর ছিল:
ক. স্টার ওয়ারস সিনেমার প্রধান চরিত্র লুকে স্কাইওয়াকার।
খ. শিল্পপতি রিচার্ড ব্রানসন।
৩. প্রশ্ন: স্যার আইজাক নিউটন কি আবিস্কার করেছেন?
উত্তর: জরিপে অংশ নেয়া এক তৃতীয়াংশের উত্তর ছিল:
ক. স্যার আইজাক নিউটন আগুনের আবিস্কাররক।
জরিপে অংশ নেয়া ষোল শতাংশের উত্তর ছিল:
ক. স্যার আইজাক নিউটন ইন্টারনেটের আবিস্কারক।
ক. স্যার আইজাক নিউটন সৌর পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন।
খ. স্যার আইজাক নিউটন আমেরিকা আবিস্কার করেছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পক্ষে প্রচারণা চালানো বার্মিংহাম সায়েন্স সিটির ড. পাম ওয়াডেল বলেছেন, জরিপের কিছু ফলাফল হাস্যকর। শিশুরা বিজ্ঞানের হিরোদের চেয়ে সিনেমার হিরোদের বেশী চেনে। বিজ্ঞানীর পরিবর্তে এরা নামকরা গায়কদের ব্যাপারে আগ্রহী বেশী। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৯ থেকে ১০ বছরের ৭০ শতাংশ শিশু আবার বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়ার ব্যাপারে অনেক আগ্রহী। ১১ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে এই হার আবার ৩৩ শতাংশ।
পাদ টিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার লন্ডন গেছেন। ইংল্যান্ডে প্রবাসী বাঙ্গালীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে কে কার আগে রবি ঠাকুরের সাথে দেখা করবে।
এক বাঙ্গালী যুবক দীর্ঘ আট বছর ধরে লন্ডনে ব্যারিস্টারী পড়ছে। পাশ আর করা হয়ে উঠেনি। এটা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথাও নেই। কারণ তত দিনে সে ইংরেজদের আদব কায়দা ভালই রপ্ত কর নিয়েছে। সে আসল রবি ঠাকুরের সাথে দেখো করতে।
প্রথম সাক্ষাতেই সে উনার সাথে ইংরেজীতে কথাবার্তা বলা শুরু করে দেয়। এবং কথায় কথায় জানিয়ে দেয় দীর্ঘ দিন এদেশে থাকার কারণে বাংলা প্রায় সে ভুলেই গেছে তারচেয়ে ইংরেজীতে সে বেশী অভ্যস্ত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুবকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন-বাঙ্গালীর ছেলে বাংলা বলতে ভুলে গেছ, এ কথা জানাবার আগে লজ্জা বোধ করা উচিত ছিল। কিন্তু তুমিতো দেখছি ইংরেজীটাও ভাল করে রপ্ত করতে পারনি।
** রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদাহরণ দেয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে-ব্রিটিশ সরকার একবার সিদ্ধান্ত নিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হোক। তখন সারা ভারতজুড়ে চলছিল ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন। তাই রবি ঠাকুর ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই উপাধি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তা না হলে আজকে আমাদের বলতে হত-স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তথ্য সূত্র: বিবিসি নিউজ।