ছোট বেলায় দেখা সত্যজিত রায়ের অমর সৃষ্টি হীরক রাজার দেশের সেই পাগলা রাজার কথা এখনও মনে আছে।
‘জ্ঞানের কোন শেষ নাই, জ্ঞানের চেষ্টা বৃথা তাই। আজ থেকে তাই পাঠশালা বন্ধ।‘
তখন মনে হয়েছিল ইসৃ যদি সত্যি সত্যি সব পাঠশালা বন্ধ হয়ে যেত তবে কত মজাই না হত। রোজ রোজ বিরক্তিকর স্কুলে যাবার কোন ঝামেলাই তাহলে আর থাকত না।
আজ অনেক বছর পর মনে হয হায় কোথায় হারিয়ে গেল শৈশবের সেই সব সোনালী দিনগুলি। যদি সুযোগ থাকত তবে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমার সেই সব সাদামাটা শৈশবের দিনগুলি ফেরত চাইতাম। সেই সব স্কুল পালানো দিনগুলি। সেইসব আনন্দ বেদনার মুহূর্তগুলি এখনও তাড়া করে ফেরে।
স্কুল পালানোর কথা বললেই অনেক বোদ্ধারা চোখ কোঁচকে ফেলবেন। কিন্তু অনেক বিখ্যাতদেরও রয়েছে পড়ায় ফাঁকি দেয়া, স্কুল পালানো এবং স্কুল থেকে বহিস্কারের ইতিহাস।
১. জেমস নেগল ফারসন: একজন আমেরিকান লেখক। উনাকে ফিলিপস অ্যকাডেমি থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এক বদমেজাজী প্রশিক্ষককে পুকুরে ছুড়ে ফেলতে তিনি সাহায্য করে ছিলেন।
২. অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: বড় হয়ে হতে চেয়েছিলেন গুন্ডা, কবি, দার্শনীক। শেষ পর্যন্ত এর কোনটাই হতে পারেননি। উনার বড় বড় নরম কান দুটি ক্লাস শিক্ষকের খুব প্রিয় ছিল। তাই ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে শিক্ষকের বেতের বাড়ির বদলে উনাকে সব সময় কান মলা খেতে হয়েছে। ক্লাসে শিক্ষক প্রবেশ করেই ফিল্মি রংবাজ স্টাইলে উনার দুই কানের উপর ঝাপিয়ে পড়তেন।
৩. বেনিতা মুসোলিনি: ৯ বছর বয়সে স্কুলের এক শিক্ষক তাকে স্কেল দিয়ে বাড়ি দিলে তার দিকে কালির দোয়াত ছুড়ে মারেন। সে যাত্রা রক্ষা পেলেও পরবর্তীতে এক ছাত্রের নিতম্বে ছুরি মারার অপরাধে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন।
৪. লিও ট্রটস্কি: একজন রাশিয়ান কমিউনিস্ট নেতা। ১০ বছর বয়সে স্কুলে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জোরে চিৎকার করতে বন্ধুদের উৎসাহ জোগান। ফলস্বরুপ বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার।
৫. উইলিয়াম রেগুলফ হার্স্ট: আমেরিকান পত্রিকা প্রকাশক। স্কুলের পত্যেক শিক্ষককে একটি করে প্রস্রাবের পটি পাঠান। প্রতিটি পটিতে অলংকরন করে দেন সেই শিক্ষকের নাম আর ছবি। ফলে হার্ভাড থেকে হন বহিস্কৃত।
৬. এডগার অ্যালান পো: পর পর কয়েক সপ্তাহ ক্লাস করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে বিদ্যালয় থেকে করা হয় বহিস্কার।
৭. বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন: ছেলেবেলায় শিক্ষকরা উনাকে লেজী ডগ বলে সম্বোধন করতেন। তাদের ধারণা এই কুঁড়ের বাদশা ছেলে বড় হয়ে কোন কাজেই লাগবে না।
৮. লেখক হুমায়ূন আহমেদ: ক্লাস ওয়ানের প্রথম ক্লাসে মারামারি করে এক ছাত্রের সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলেন। ফলে হেডমাস্টার সাহেব উনাকে কান ধরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেন। ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দেন-এ মহাগুন্ডা। তোমরা সাবধানে থাকবে। খুব সাবধান। পুলিশের ছেলে গুন্ডা হওয়াই স্বাভাবিক। প্রথম শ্রেণীতে যতদিন তিনি ছিলেন প্রতিদিনই কোন না কোন কারণে উনাকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠার পর একদিন ক্লাসের এক সুন্দরী বালিকার কাছে গম্ভীর ভাবে জানতে চান বড় হয়ে সে তাঁকে বিযে করতে রাজী আছে কিনা। ফলে শিক্ষকের কাছে নালিশ এবং যথারীতি কপালে জোটে দুই হতে দুইটা ইট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি।
৯. আহসান হাবীব: প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট। ছেলেবেলায় ভর্তি হন কুমিল্লা জিলা স্কুলে। ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক জানতে চান-হাউ ওল্ড আর ইউ?
তিনি সগর্বে উত্তর দেন-নো আই এ্যাম নট ওল্ড।
শিক্ষক হেসে ফেলে বলেন-বাহ তুইতো ইংরেজীতে দারুণ ভাল রে!
সংগৃহীত