ইসরায়েল-গাজা সংঘাতঃ কয়েক সপ্তাহের ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া ইসরায়েলের কোন জয় নেই
(ফিলিস্তিনিরাই জিতেছেঃ তারা এখনো গাজায় টিকে আছে আর এবং হামাসও সেখানে আছে।)
-রবার্ট ফিস্ক
এটা কোন বিখ্যাত বিজয় নয়- কিন্তু সেটাই গাজার ফিলিস্তিনিরা উদযাপন করছে। মঙ্গলবার রাতে যখন বিধ্বস্ত ভুমির উপর আতশবাজি শুরু হয়, আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলোতে প্রচুর মাথা নাড়ানাড়ি হয়েছে। ২১০০ এর ও বেশী লোক মরার পর -যাদের মধ্যে প্রায় ১৭০০ জন বেসামরিক মানুষ, ১,০০,০০০ লোক আহত হওয়ার পর তারা কি নিয়ে চিৎকার করছে? হত্যযজ্ঞের সমাপ্তি? শান্তি?
আসলে, না। প্রকৃতপক্ষে, হামাস,- 'অশুভ', 'ভয়ংকর', 'সন্ত্রাসী' হামাস, যাদের সাথে আমরা (আমরা মানে পশ্চিমারা, টনি ব্লেয়ার, ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সকল সম্মানিত পুরুষ ও নারী) কথা বলতে পারিনা- সত্যিকার অর্থেই বিজয় অর্জন করেছে।
ইসরায়েল বলেছিল, হামাসকে অবশ্যই নিরস্ত্র করতে হবে। তারা নিরস্ত্র হয় নি। ইসরায়েল বলেছিল, তাদের চুর্ন/ধ্বংস/উপড়ে ফেলতে হবে। তারা চুর্ন/ধ্বংস/উপড়ে যায়নি। ইসরায়েল প্রচার করেছিল, সব টানেল অবশ্যই ধ্বংস করা হবে। তা সম্ভব হয় নি। সকল রকেট জব্দ করা হবে। তা হয়নি। সুতরাং ৬৫ ইসরায়েলি সেনা মরল, কিন্তু কিসের জন্য? এবং ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র আর মিশরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার হামাসের রাজনৈতিক নেতারা আক্ষরিক অর্থেই মাটি ফুঁড়ে উদয় হয়েছেন, যাদের ভাইয়েরা কায়রো 'শান্তি' আলোচনায় অংশগ্রহন করেছে।
ইসরায়েলে তাৎপর্যপুর্নভাবেই, কোন উদযাপন নেই। ইতিহাসের সর্বাধিক ডানপন্থী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার আরও একবার অতিরঞ্জিতভাবে তাদের বিজয়ের দাবী করেছে এবং আরেকটি যুদ্ধবিরতি দিয়ে যুদ্ধ শেষ করেছে, যেটা ২০০৯ এবং ২০১২ সালের গাজা যুদ্ধের পর হওয়া যুদ্ধবিরতিগুলোর মতই শক্ত কিংবা দুর্বল। কাগজে কলমে ইসরায়েলের জয় হয়েছে। সকল ভেঙে পড়া জীবনকাঠামো, সকল বিচুর্ন বাড়িঘর আর সব ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এটা ধারনা দেয়না যে ফিলিস্তিনিরা 'জয়ী' হয়েছে। কিন্তু কৌশলগতভাবে ফিলিস্তিনিরা জিতেছে। তারা এখনো গাজায় আছে, হামাস এখনো গাজায় আছে, আর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আর হামাসের জোট সরকার এখনও বাস্তব।
এটা অনেকবার বলা হয়েছে যে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতারা একটা সমস্যার মুখোমুখী হয়েছিল- সেটা 'ফিলিস্তিনি ভুখন্ড'। তারা সেটাকে শীতলভাবে, নির্মমভাবে আর দক্ষভাবে মোকাবেলা করেছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের সমস্যা হল ফিলিস্তিনিরা। যদিও ইসরায়েলের জন্য তাদের জমি নিয়ে নেয়া হয়েছে, তাদের বেচে থাকার জমিটুকুও ইসরায়েলি বসতিগুলো খেয়ে ফেলেছে, 'নিকৃষ্ট' ফিলিস্তিনিরা চলে যায় নি। এবং তাদেরকে গনহারে হত্যা করা- বিশেষভাবে বিশ্বের তাবৎ টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে- একটু বেশীই হয়ে যাচ্ছে- এমনকি তাদের জন্যও, যারা এখনও ফিসফিস করে 'এন্টি-সেমিটিসম' এর দুর্নামের কথা বলেন। ইসরায়েলি মুখপাত্র তাদের কর্মকান্ডকে রক্তাক্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ রয়াল এয়ারের সাথে তুলনা করেছে, যেটা অবশ্য একুশ শতকের একধরনের প্রপাগান্ডাই ছিল।
............
............
এবার 'সামরিক' ক্ষয়ক্ষতির বিষয়। ৫০০ হামাস যোদ্ধা, ২০০৮-০৯ গাজা যুদ্ধে প্রায় ২০০ যোদ্ধা মারা গিয়েছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধে মাত্র ৬ জন ইসরায়েলি সেনা মারা গিয়েছিল। এই অভিযানে ১০ গুন ইসরায়েলি সেনা মারা গিয়েছে। অন্যভাবে দেখলে, হামাস আর ইসলামিক জিহাদ যুদ্ধ করতে শিখে গেছে। হিজবুল্লাহ, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দক্ষ গেরিলা সেনাদল, অবশ্যই এটা খেয়াল করেছে। এবং গাজার রকেট ইসরায়েলের হাজার কিলোমিটার এলাকায় পৌছে গেছে, যা আয়রন ডোমের হিসাবের বাইরে ছিল। একদা সেরতে বাস করা বিপদের ছিল। বর্তমানে বেন গুয়েনরিন এয়ারপোর্টে ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে।
.........
.........
বর্তমানে মিশর লিবিয়ায় ইসলামপন্থীদের উপর বোমা ফেলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের ইসলামপন্থীদের উপর বোমা ফেলার পর সিরিয়ার ইসলামপন্থীদের উপর বোমা ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু গাজায় ইসলামপন্থীরা জিতে গেছে। এটা অবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। (সংক্ষেপিত)
(ব্রিটেনের 'দা ইন্ডিপেন্ডেন্ট' থেকে সালাহ উদ্দিন ০০৭ কর্তৃক অনূদিত)