সাহিত্যের নির্মোহ তাত্ত্বিক বিশ্লেষন আমার দ্বারা সম্ভব নয় জেনেও শুধুমাত্র ভাল লাগা জানাতে এই পোস্টের সুত্রপাত। দুদিন আগের কথা, রাতে খাওয়ার পর শুয়ে পড়ার সময় শওকত ওসমানের 'ক্রীতদাসের হাসি' হাতে নিয়েছিলাম। 'এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলা' বিষয়টি কৈশোরের পর আমার জীবনে আর খুব একটা ঘটেনি। সেদিন ঘটল। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। লম্বা সময়ের জন্য ঘুম উড়ে গিয়েছিল। দুদিনেও ঘোর কাটেনি। বইটি দ্বিতীয়, তৃতীয় বার পড়ার ইচ্ছে আছে। তবে ঘোর কাটার আগে আর সেদিক মাড়াব না। পরের বার আরো মনোযোগ দিয়ে পড়তে চাই। তবে ভাললাগার তীব্রতা থাকতেই কিছু লিখে ফেলার তাড়না অনুভব করছি।
উপন্যাসের শুরুতেই একটা চমক আছে। আপনি জানবেন, আরব্য রজনি 'একহাজার এক রাত্রির কাহিনী' নয়, 'একহাজার দুই রাত্রি'র কাহিনী। আর তার সর্বশেষ গল্পটি 'শাহজাদা হাবিবের কাহিনী' নয়, সর্বশেষ গল্পটি হল 'জাহাকুল আবদ' যার অনুবাদ এই উপন্যাস 'ক্রীতদাসের হাসি'। আপনার চমক না কাটতেই আরব্য রজনীর পাত্র পাত্রীর আপনার সামনে বিচরন শুরু করবে, বাদশাহ হারুনর রশীদ, বেগম জোবায়দা সহ আরো অনেকে।
উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে হাবসী গোলাম তাতারী আর বাদী মেহেরজানের প্রেমময় হৃদয় উৎসারিত হাস্যকলরোল দিয়ে। দ্বন্দ-বিক্ষুদ্ধ বাদশাহ হারুনর রশীদ হাবশী গোলাম তাতারীর হাসি শুনে ভয়ানক ইর্ষান্বিত হন। বাদশার মুখে হাসি নেই আর গোলামের মুখে হাসি? বাদশাহের সুকৌশলী নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে তাতারী আর মেহেরজানের উপর।
উপন্যাসের শুরু, শেষ, মাঝের ছত্রে ছত্রে নাটকীয়তার তীক্ষ্ণ বাঁক আপনাকে চমকে চমকে দেবে। উপন্যাস প্রকাশের রাজনৈতিক পটভুমি আর প্রকাশকাল না জেনেও শেষ অনুচ্ছেদে হাবশী তাতারীর তীব্র স্লেষমাখা চিৎকার ৬০ এর দশকের আইয়ুব শাষন আর বাঙালীর সংগ্রামের চেতনা আপনার চোখের সামনে পরিস্কার করে দেবে। আমি তো চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পাচ্ছি হাবসী তাতারীর শেষ চিৎকার...
...তাতারীকে কোড়া(চাবুক) মারা হচ্ছে আর তাতারী চিৎকার করে বলছে-- "শোন হারুনর রশীদ, দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে, বান্দী কেনা সম্ভব--! কিন্তু--কিন্তু--ক্রীতদাসের হাসি-- না-না-না-না---"