দৃশ্যকল্প ১- ক্রেতা হোটেলে খাওয়া শেষ করেছেন, বিল দিতে গেলেন কাউন্টারে। ক্রেতা একটা নোট বিক্রেতাকে দিলেন। বিক্রেতা খুচরো কিছু নোট ফেরত দিলেন। ক্রেতা দেখলেন, নোটগুলোর মধ্যে একটা দশ টাকার নোটের মাঝ বরাবর এমাথা ওমাথা স্কচটেপ লাগানো।
ক্রেতাঃ ভাই, নোটটা বদলে দেন।
বিক্রেতাঃ কি সমস্যা ভাই, এই নোট তো চলবে।
ক্রেতাঃ ভাই, আপনারা চালাতে পারবেন, আমরা তো এই নোট চালাতে পারব না, একটু বদলে দেন।
বিক্রেতাঃ না ভাই বদলে দেয়া যাবে না, আর নোট নাই।
ক্রেতাঃ এই তো আপনার ক্যাশে অনেক নোট, দরকার হলে ৫ টা দুই টাকাই দেন।
বিক্রেতাঃ না ভাই, বদলে দেয়া যাবে না।
ক্রেতাঃ (রাগ করে) ঠিক আছে ভাই, আপনার নোট আপনিই রাখেন।
বলে ক্রেতা চলে এলেন, তিনি একটু আশা করেছিলেন বিক্রেতা পিছন থেকে ডাকবেন, কিন্তু পিছন থেকে কোন ডাক এল না। বিক্রেতা দশ টাকাটা ক্যাশে রেখে নির্বিকার ভাবে বসে রইলেন
দৃশ্যকল্প ২- ক্রেতাঃ ভাই, এই বছরের লিপজেল আছে?
বিক্রেতাঃ আছে
ক্রেতাঃ ২০১৩ সালেরটা তো?
বিক্রেতাঃ অবশ্যই।
ক্রেতা লিপজেল নিলেন, বিক্রেতার উপর বিশ্বাস করে আর প্যাকেট দেখলেন না। বাসায় গিয়ে দেখলেন, উৎপাদন সাল ২০১২ লেখা।
দৃশ্যকল্প ৩- ক্রেতা হোটেলে খেয়ে বিল পরিশোধ করতে গেছেন।
ক্রেতাঃ ভাই, আপনাদের হোটেলে প্লেট চামুচে ময়লা পাওয়া যায় প্রায়ই। প্রায় প্রতিদিনই তো আসি। প্লেট চামুচ গুলো একটু ভালভাবে ধুয়ে দিলে ভাল হয় না?
বিক্রেতাঃ এই হোটেলে প্লেট বাটি এই রকমই দেয়া হয় । (মানে, এই হোটেলে তুমি খাইলে খাও, না খাইলে রাস্তা মাপ)
দৃশ্যকল্প ৪- বাজারে ছোট জাতের এক ধরনের কমলা পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে বলা হয় চায়না কমলা। তো এই কমলাগুলো এক কেজির প্যাকেটে থাকে, প্যাকেট অবস্থাতেই বাজারে আসে, তো একদিন এক ক্রেতা দেখলেন, বিক্রেতা এই প্যাকেটগুলো থেকে ২-৪ করে কমলা বের করছে।
ক্রেতাঃ কি মিয়া, তুমি এই প্যাকেট থেকে কমলা বের কর কেন, এইগুলো না ইন্টেক্ট প্যাকেট?
বিক্রেতাঃ আমরা এই গুলা প্যাকেট করি তো, প্যাকেটে কিছু বেশী হয়ে গেছে, তাই কমাই।
দৃশ্যকল্প ৫- বেকারিতে ক্রেতাঃ ভাই, ২৫০ গ্রাম চানাচুর দেয়া যাবে?
বিক্রেতাঃ না, ২৫০ গ্রাম বিক্রি হয় না।
ক্রেতাঃ কেন ভাই, ২৫০ গ্রাম বিক্রি হবে না কেন?
বিক্রেতাঃ কেন টেন নাই, ২৫০ গ্রাম চানাচুর বিক্রি হয় না
ক্রেতা দেখলেন, দোকানে ডিজিটাল মাপা যন্ত্র আছে, অনায়াসে ২৫০ গ্রাম মেপে দেয়া যায়।
দৃশ্যকল্প ৬- ক্রেতা বেকারী থেকে বিস্কুট কিনে এনেছেন গত সপ্তাহের চেয়ে ১০% বেশী দামে। ক্রেতা ব্যাপারটা মেনে নিয়েছেন, হরতাল/ অবরোধ ইত্যাদি অজুহাত স্বীকার করে। সমস্যা বেধেছে অন্য যায়গায়। বিক্রেতা ডিজিটাল যন্ত্রে মেপে দিয়েছেন, কিন্তু ক্রেতা একটু দূরে ছিলেন, মাপার সময় দেখেননি। বাসায় ফেরার পর থেকে মনের ভিতর খচখচ করছে, বিক্রেতা মাপগুলো ঠিক দিয়েছে তো?
মোদ্দাকথাঃ গ্রাহক সন্তুষ্টি, সৎ ব্যবসায় বিষয় গুলো দেশ থেকে উঠে গেছে। সেই সাথে বিক্রেতাদের উপর থেকে ক্রেতাদের আস্থাও উঠে গেছে। সেখানে স্থান করে নিয়েছে তীব্র অবিশ্বাস।
(দৃশ্যকল্পগুলো আমার ও আমার সহকর্মীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া)