আমি হাজার হাজার শিক্ষকের পক্ষে তাদের সন্তান হয়ে কথা বলছি । আমি ওনাদের কষ্টের খবর জানি, কারন আমার জন্মদাতা পিতা একজন শিক্ষক, প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক । শিক্ষকদের সঠিক প্রাপ্য মর্যাদা তাঁরা কবে পেয়েছিলেন , জানি না । গার্মেন্টস শ্রমিকরাও শিক্ষকদের চেয়ে বেশি বেতন পায় ।
জন্মের পর থেকে আভিজাত্যের স্বাদ যেমন পাইনি, দারিদ্রতাও দূর থেকে দেখেছি । মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়ার কারনে , জীবনের টানাপোড়েনটা খুব কাছ থেকে দেখেছি । উপভোগ করেছি , করার চেষ্টা করেছি । কিন্তু অবস্থা এতটা খারাপের দিকে এগোচ্ছে , কলম ধরতেই হল । এভাবে চলতে পারে না ।
শিক্ষকদের আন্দলনের মুখে গত বছরের মাঝামাঝি সময় প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো বেসরকারি থেকে সরকারিকরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল । পিপার স্প্রে, জল-কামানের তোয়াক্কা না করে অনশন , অবস্থান কর্মসূচি পালন করে , জীবন দিয়ে শিক্ষকেরা দাবি আদায়ে পথে নেমেছিলেন । সেই মিছিলে আমার বাবাও ছিলেন । নিরস্ত্র শিক্ষকদের সেই আন্দোলন দেখতে গিয়েছিলাম আমিও । ভুল বলেছি , ওনাদের পকেটে অস্ত্র ছিল । লাল কালির কলম, ছাত্রদের ভুল সংশোধনের লাল কলম । রাজনীতির রক্ত চক্ষুর সাথে লাল কলমের লড়াই চলল । দু’জন শিক্ষকের প্রান গেল । পিপার স্প্রে, জল-কামানের আঘাতে ঘুচে গেল মানবাধিকার । নির্লজ্জতার শেষ মুহূর্তে ঠিক হল , দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হবে । আমরা চোখের জল মুছে ফিরে এলাম ।
কিন্তু এটা যে শুভংকরের ফাঁকি ছিল , তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না এখন । সরকারীকরণের নামে হাজার হাজার শিক্ষকের অভুক্ত পেটে লাথি মেরেছে সরকার । ২০১৩ সালের শুরু থেকে কোনও মাসের বেতন ঠিকঠাক পায়নি কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । গত তিনমাস বেতন সম্পূর্ণ বন্ধ । উপরওয়ালারা বিরিয়ানি-মাংশ খেতে একজন আরেকজনকে দাওয়াত করেন । গল্প হয়, আলোচনা হয় , খাওয়া দাওয়া হয় । কিন্তু সেই সব আলোচনার কোথাও শিক্ষকদের কথা লেখা নেই, থাকে না । শিক্ষকের পড়িয়ে দেওয়া শিক্ষার অপব্যাবহার লালা হয়ে ঝরে তাদের মুখ থেকে ।
দিন গড়িয়ে যাচ্ছে । রাত আসছে । রাত গড়িয়ে আবার দিন । ক্ষুধা বাড়ছে । প্রয়োজন বাড়ছে । ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী , জেলে, তাঁতি, চাষা সবারই ক্ষুধা আছে ... শিক্ষকদেরও আছে । ক্ষুধায় শিক্ষকেরা মরবেন , এই পেশায় কেউ আসবে না । শিক্ষকদের সন্তানেরা উপরওয়ালাদের রাজপ্রাসাদের সামনে গিয়ে বিদ্রোহী হবে ...
ভাত দে হারামজাদা, নইলে... নইলে মানচিত্র ছিঁড়ে খাব ।