দুটো বই কেনা জরুরি । স্যান্ডেলটারও বেহাল দশা । নিউমার্কেট থেকে দেড়শ টাকায় একটা স্যান্ডেল কিনতে হবে । এর চে দামি স্যান্ডেল কেনাটা উচিৎ হবে না । আব্বার কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে । বাপের পকেটের অবস্থা জানি। কোনোরকমে চলে যাচ্ছে উনার । আরও বড় সমস্যা হল, মোবাইলটার অসুখ হয়েছে । সবুজ রঙের বোতামটা কাজ করছে না ঠিকমত । কল দিতে হলে অন্য কারো মোবাইল থেকে দিতে হবে ।
আব্বা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । উনাদের বেতন নিয়ে কে যেন লিখেছিল...
“ডিসেম্বরের বেতন পান পরের বছর মার্চে
সবাই বলে, ঠেলাগাড়ি বাইলে পারিস তারচে... ।“
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেসরকারি শিক্ষকদের “চাকুরি সরকারীকরণ” সমাবেশ থেকে ফিরে আব্বা চোখ মুছতে মুছতে বলেছিলেন, আর চিন্তা নেই ।আমাদের আর কষ্ট থাকবেনা । অনেক সময় আনন্দে কাঁদে মানুষ । আব্বার চোখের পানিতে যতটা না আনন্দ ছিল, তার চে বেশি ছিল পিপার স্প্রের যন্ত্রণা । সেই যন্ত্রণা তুচ্ছ মনে করে বাপ বেটা মিলে সেই রাতে অনেকক্ষন গল্প করেছিলাম । মা ও ছিল । আমি , মা বাবা, আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের আর কষ্ট থাকবেনা ।
না, সে কষ্টের দিন শেষ হয়নি । কথা ছিল, জানুয়ারি ২০১৩ থেকে নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে বেতন পাবেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা । তাই, বেতন আসতে দেরি হচ্ছে । আমরা মেনে নিয়েছিলাম । তবে, নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে বেতন পাননি কেউ । জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পেয়েছেন এপ্রিলে [পুরাতন কাঠামো অনুযায়ী ]। মার্চ, এপ্রিল, মে’র বেতন এখনও পাওয়া যায়নি ।
একজন শিক্ষক যখন বেতন পান না, তখন তার পরিবারের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। তার পক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান করাও সম্ভব নয়। যার প্রভাব গোটা জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার উপর পড়ে।
জাতীয়করণের তালিকায় খুলনা অঞ্চলের ৩ হাজার ৬শ’ বেসরকারী প্রাইমারী স্কুলের নাম রয়েছে
http://greenbangla24.com/archives/20111
যশোরে দু'হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ৩ মাস বেতন বন্ধ রয়েছে।
Click This Link
আমি মনে করি, শিক্ষকদের ব্যার্থতা এটা । নীতি নির্ধারকদেরকে তো তারাই শিক্ষার আলো দেখিয়েছেন। সুতারাং সঠিক শিক্ষা না দিতে পারার দায়ভার তো তাদেরকেই নিতে হবে ! পিপার স্প্রে তাদেরই প্রাপ্য !!