কি খাচ্ছি? ফল, খাবার নাকি বিষ? পর্ব-১ (একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ)
--সাকি বিল্লাহ্
আসলে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা খুবই কঠিন বিষয় যে কোন ফলে বা খাবারে বিষ আছে আর কোনটাতে নেই ।
ধারাবাহিক এ পর্বে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে আলোচনা করব বিভিন্ন খাবার ও ফল নিয়ে; কোন কোন খাবার বা ফলে কি কি বিষাক্ত রং বা কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে আর এর প্রতিকার কি?
আজকের আলোচ্য বিষয় "তরমুজ":
তরমুজ সবারই প্রিয় সবজী জাতীয় ফল । প্রচন্ড এই গরমে আমরা তরমুজ খাব এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু ব্যাবসায়ী তরমুজ পরিপক্ক না হওয়ার আগেই বাজারজাত করছে আর অপরিপক্ক তরমুজের রং সাদা হতে লাল করার জন্য বা স্বাদে মিস্টি করার জন্য ইনজেকশন বা ঔষধসুচেঁর মাধ্যমে দিচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল ।
তরমুজের রং লাল করার জন্য দেয়া হচ্ছে কৃত্রিম রং বাইক্সিন বা রেড ডাই -২(bixin dye or red dye-2) এবং মিস্টি করার জন্য দেয়া হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লোমেট(sodium cyclamate) ও স্যাকারিন ( Sacharin) ১০:১ হারে । যা সাধারণ চিনির চাইতে ৩০-৫০ গুন বেশি মিস্টি আর শুধু স্যাকারিনের ক্ষেত্রে যা ৫০০-৭০০ গুন । আজকাল বেশির ভাগ ভোগ্য পন্যেও দেয়া হচ্ছে এ কেমিক্যাল যা এক দীর্ঘ মেয়াদী বিষ বা স্লো পয়জন ।
এবার চলুন দেখি এ বাইক্সিন ডাই, রেড ডাই-২, স্যাকারিন বা সোডিয়াম সাইক্লোমেট খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে মানব শরীরে ।
#সোডিয়াম সাইক্লোমেটঃ দীর্ঘদিন এ বিষ খেলে মানুষের নিম্নোক্ত প্রদাহ হতে বাধ্য,
১. ব্লাডার(মুত্রথলি) ক্যান্সার
২. টিউমার
৩. পুরুষ্ত্ব বিনস্ট হওয়া(Male fertility System or Sperm Problem)
৪. উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে
ও
৫. মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে
ইত্যাদি ।
#স্যাকারিনঃ দীর্ঘদিন স্যাকারিন খেলে যা যা ক্ষতি হতে বাধ্য,
১. অস্থিরতাঃ বিশেষত হাত ও পা কাঁপা যা ইংরেজীতে restless leg or hand syndrome বলে
২. মাথা ও পেশীতে ব্যাথা অনুভূত হওয়া
৩. পার্কিনসন্স ডিজিজ (Parkinson's disease)
পার্কিনসনের অসুখের লক্ষণ:
- মাসল শক্ত হয়ে যাওয়া।
- হাত-পা কাঁপা।
- চলা-ফেরার গতি স্লথ যাওয়া।
- হাঁটা-চলার ধরণ পাল্টে যাওয়া।
- ব্যালেন্সের অভাব - ফলে মাঝে মাঝে মাটিতে পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
৪. জয়েন্ট পেইন বা অস্থিসংযোগ স্থলে ব্যাথা
ও
৫. বিষন্নতা বা depression ইত্যাদি
সর্বশেষে আসা যাক কৃত্রিম রং বাইক্সিন ডাই বা রেড ডাই-২ বা bixin dye or red dye-2
#বাইক্সিন ডাইঃ
১. কিডনী প্রদাহ বাড়বে এবং মিডনী নস্ট হয়ে যেতে পারে
২. ব্লাডার বা মুত্রথলিতে পাথর হতে পারে
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে
৪. অনিদ্রা বা insomnia হতে পারে
ও
৫. শরীরের বিভিন্ন অংশে এলার্জি দেখা দিতে পারে
এবার আসুন আমরা কিভাবে এ ধরনের কেমিক্যাল দেয়া তরমুজ থেকে বেঁচে থাকতে পারব,
১. তরমুজ কৃষকের ক্ষেত থেকে সরাসরি আহরন করা যেতে পারেঃ এ ক্ষেত্রে কৃষকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ রাখতে পারেন আর ১০-১৫ দিনের তরমুজ একসাথে কিনে নিয়ে আসতে পারেন নিজেই অথবা কয়েকজন বন্ধু ও আত্মীয় একসাথে; দামও অনেক কম পড়বে (গড়ে ১০০ তরমুজ এর দাম পড়বে ১০০০/- থেকে ১৫০০/- টাকা) প্রতিটি ১০ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে আর পাঠিয়ে দিতে পারেন কোন মালবাহী বাস বা ট্রাকে, এক্ষেত্রে অনেকে এসএ পরিবহনের সাহায্য নিয়ে থাকেন ।
২. সরকারকে আরো কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে
৩. সাধারণ মানুষদের কাছে স্বল্পমূল্যে পরীক্ষন যন্ত্র, পরীক্ষা করার কেমিক্যাল বা উপাদান ও তাদের প্রসিক্ষণ দেয়া যেতে পারে যাতে করে বাজারে যেকোন পন্য কেনার আগে নিজেই তা যাচাই করে নিতে পারেন ।
৪. এ ক্ষেত্রে সাইখ সিরাজ ভাই বা তৃতীয়কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অর্গানিক কোন ফার্ম খুলতে পারেন যেখানে প্রাকৃতিকভাবে সব ফসল উৎপাদিত হবে । আর ঘোষণা করা হবে কেউ কোন ধরনের কৃত্রিম কেমিক্যাল এর প্রমান পেলে তাকে ১ কোটি টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে ।
এবং ৫. সকল ব্যাবসায়ী ভাইবোন ও সাধারণ মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সর্বোপরি ব্যাবসায়ীদের সততা বোধ জাগ্রত করতে হবে বিভিন্ন টিভি এডের মাধ্যমে ।
এ বছর আমি তরমুজ খাওয়া বাদ দিয়ে ছিলাম । সামনের বছর উপরের ১ নং উপদেশ গ্রহন করব বলে মনস্থির করেছি । কেমিক্যাল মুক্ত ফল ও খাবার খান, সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:০৩