-- সাকি বিল্লাহ্
০১
ইজি চেয়ারে দোল খাচ্ছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী, কেমিস্ট ও বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট, ডঃ এ, এফ, আর, জিলান। সংক্ষেপে ডঃ জিলান। নিউরনের উপর ডক্টরেট করেছেন । যে ঘরটাতে তিনি বসেছেন তা তার গবেষণা কক্ষ, গবেষণা কক্ষটি ২য় তলার সিঁড়ির ডান পাশে। সম্পূর্ণ বাড়িটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত । বাড়ির চার ধারে বিশেষ উপায়ে শোভাবর্ধক গাছ লাগানো হয়েছে। বাড়িতে তিনি একা নন; তার স্ত্রী মারিয়াও থাকেন। কাজের লোক কেউ নেই । দ্বাবিংশ শতাব্দীর শুরুর কথা, এখন ২১০৭ সাল চলছে । বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে অনেক । ঘরের কাজ তেমন থাকে না বললেই চলে। তবে বিজ্ঞান এখনও সবার কাছে সমান ভাবে পৌঁছায়নি । ডঃ জিলান যে বিজ্ঞান ব্যবহার করছেন তার সামান্যতম হয়ত পেয়েছে অনুন্নত এলাকার মানুষ । তবুও বিজ্ঞান এখন অনেক দুর এগিয়েছে। ৩য় সৌরজগত আবিষ্কার করে সেখানে মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। চাঁদে মানুষ বসবাস করছে, সমুদ্রের নীচে গড়ে তুলেছে নতুন বিশ্ব; তাওতো কম নয় । এত কিছুর পরও ডঃ জিলানের মন শান্ত নয়। নতুন একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবছেন, না ঠিক নতুন নয় প্রায় বাইশ বছর ধরে তিনি এটা নিয়ে গবেষণা করছেন, যা সবার কাছে নতুন । গবেষণা কক্ষে বসে একের পর এক সিগারেট পান করছেন। প্যাবিউলাম (pabulum) সিগারেট, অত্যন্ত দামী এবং স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করে না। এ ধরনের সিগারেট বের হয়েছে ৩০ বছর চলছে। সমুদ্রের প্যাবিলাস শৈবালের পাতা থেকে এটি তৈরি করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরে এটি পাওয়া যায়। ডঃ জিলানের কাছে অত্যন্ত প্রিয় আর তাই প্রতিদিন সকালে হোটেল বয় এক প্যাকেট করে দিয়ে যায়।
এ পর্যন্ত তিনি বারটি সিগারেট খেয়ে ফেলেছেন কিন্তু চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না। কিছুতেই তার হিসাব মিলছে না। ইজি চেয়ার ছেড়ে তিনি ডেস্কটপ কম্পিউটারটির সামনে ঝুঁকে বসলেন। অত্যাধুনিক কম্পিউটার এটি। কোনো কিবোর্ড কিংবা মাউস লাগেনা এটাতে। দুটি সেন্সর মাথার দুপাশে তারের মাধ্যমে লাগিয়ে দিলেই হল, যেকোনো কাজ যা কিবোর্ড মাউস করতো তা করে দিচ্ছে; শুধু মনে মনে বা মুখে বললেই হয়। এছাড়া কম্পিউটারটিতে বিশেষ প্রোগ্রামিং করা আছে যাতে এটি প্রয়োজনে কথাও বলতে পারে, এজন্য এর পেছনে আছে দুটি থ্রি-ডি স্পীকার । জিলান কম্পিউটারটি অন করতেই ত্রিমাত্রিক স্ক্রিনে ছবি ফুটে উঠে, তার এবং তার স্ত্রীর। তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর চলছে। কিন্তু একদিনের জন্যেও তারা আনন্দ অবসর কাটাতে পারেননি। তাদের কোনও সন্তান নেই। ডঃ জিলান আবিষ্কারের নেশায় তার স্ত্রীর প্রতি অনেক অবিচার করেছেন। তবে তার স্ত্রী মারিয়া কখনও প্রতিবাদ করেনি। স্বামীর প্রতি তার বিশেষ ধরনের মমতা রয়েছে যা দ্বাবিংশ শতাব্দীতে নেই।
ডঃ জিলান ত্রিমাত্রিক ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন, এ ছবিটি তিনি এর আগেও অনেকবার পর্যবেক্ষণ করেছেন। এটি একটি নিউরনের(মানুষের মস্তিষ্কের কোষ) জটিল বিন্যাস এর ছবি।দুদিন যাবত তিনি গবেষণা কক্ষে বসে আছেন, ঘুমাননি; বিশেষ ভিটামিন ও উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়েছেন বলে কোন ক্লান্তি বোধ করছেন না। হঠাৎ তিনি প্রায় লাফিয়ে উঠলেন এবং চিৎকার করে বললেন, পেয়েছি, পেয়েছি, আমার স্বপ্ন অবশ্যই সফল হবে, অবশ্যই সফল হবে। তৎক্ষণাৎ তিনি গবেষণা কক্ষ থেকে বের হয়ে নিচে গেলন, রাত ২টা বাজে। ড্রয়িং রুমের কোনায় ঘুমিয়ে থাকা বেড়ালের গায়ে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিলেন, এটি তার এক ভক্ত তাকে জন্মদিনে উপহার দিয়েছে। বেড়ালের সাথে জিলানের বেশ ভাব হয়ে গেছে। বেড়াল জেগে উঠল এবং দুইবার মিউ মিউ সুরে ডেকে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। জিলান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল এবং তার বেড রুমে প্রবেশ করল। তার স্ত্রী মারিয়া ঘুমে অচেতন হয়ে আছে। জিলান তার এক পাশে ঘুমানোর জন্য জায়গা করে নিলো।
০২
ডঃ জিলান ঘুম থেকে উঠলেন সারে দশটায় । তার স্ত্রী তাকে নাস্তার টেবিলে ডাকছে । মুখ ধুয়ে জিলান নাস্তার টেবিলে গেল এবং টিভি টেন, অন করল । এটি বিশেষ ধরনের টেলিভিশণ । ত্রিমাত্রিক ছবি ছাড়াও এর প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দেখতে খুবই ছোট, তবে স্ক্রিন বা পর্দা ছোট/বড় করা যায় । এর পর্দাটি তৈরি হয় বাতাসের বিভিন্ন গ্যাসীয় অনুর মধ্যে । টিভি টেন এর আলোর উৎস বাতাসের ক্ষুদ্র অনু এর উপর পড়লে তা ত্রিমাত্রিক একটি হলোগ্রাফিক বিম্ব তৈরি করে যা বাস্তব চিত্রের মত দেখতে ।
টেলিভিশনে খবর প্রচারিত হচ্ছে ,“আজকের প্রধান প্রধান সংবাদের মধ্যে, পাউডার ওয়াটার, আবিষ্কার অন্যতম, এটি পাউডার আকারে আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে । নির্দিস্ট পরিমান পাউডার ওয়াটার একটি গ্লাসে নিলে তা বাতাসের জলীয় বাষ্পকে শীতল করে গ্লাস ভর্তি তরল বিশুদ্ধ পানিতে পরিণত হবে মাত্র পাচঁ মিনিটে, তবে--”। এ পর্যন্ত দেখার পর জিলান টিভি টেন টি বন্ধ করে দিল ।
দেখলে বিজ্ঞান কত দ্রুত এগুচ্ছে, আমার আবিষ্কারও প্রায় শেষের দিকে, দেখবে এ আবিষ্কার আমাদের দুজনকে বদলে দেবে । জিলানের কথায় তার স্ত্রী কিছুটা আগ্রহের সাথে বলল, কি আবিষ্কার?
:কেন তোমাকে বলিনি, নতুন জীবন সর্ম্পকে আমি গবেষণা করছি, তাওতো প্রায় ২২ বছর চলছে ।
:এতো অনেক দিন ধরেই বলছো, কিন্তু..
:কিন্তু কি? তুমি শুনলে অবাক হবে কিনা জানি না, এ আবিষ্কারটি করা হলে আমরা পাবো নতুন জীবন । কাজ প্রায় শেষের দিকে ।
:নতুন জীবন পাওয়া কি সম্ভব ? আমাদের বয়স তো কম হলো না, প্রায় আশিঁ ছুঁই ছুঁই করছে ।
: হ্যাঁ সম্ভব, তবে সম্পূর্ণ কাজটা গোপনে করতে হবে ।
: কতদিন লাগবে আনুমানিক ?
: তা প্রায় আঠারো মাস, আর এরই মধ্যে আমাদের দুজন মানুষ লাগবে, একজন তরুন অন্যজন তরুনী ।
: তরুন, তরুনী দিয়ে কি করবে?
:কেন আবার, নতুন জীবন পেতে হবে না । ব্যাপারটা একটু জটিল; প্রথমে নিউরোসিস্ট যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে হয়েছে আমাকে অনেক কষ্টে । কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করবো তা বুঝে উঠতে পারিনি । কিন্তু এখন পারছি । ট্রান্সফার সিস্টেম অব নিউরন যন্ত্রটির আবিষ্কারও প্রায় শেষের পথে । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ।
জিলানের চোখে এক ধরনের লোভ লালসার আগুন জ্বলে উঠে । আপন মনে বিড় বিড় করতে থাকে, নতুন জীবন, new life.
জিলান সারাজীবনে কোটি কোটি টাকা, বাড়ি গাড়ি, ব্যবসা গড়ে তুলেছে, যার কোন উত্তরাধিকার নেই । আবিষ্কারের নেশা তাকে এতটাই ঝেঁকে ধরেছিল যে সংসারের প্রতি তার কোনো মনোযোগই ছিল না । তার দৃঢ় সংকল্প সে নতুন জীবন আবিষ্কার করবেই এবং ক্রমশ তার সে স্বপ্ন সফল হতে চলেছে ।
০৩
আজ সকালে জিলানকে একটু আগে আগে বের হতে হবে । প্রথমে পত্রিকাতে একটা বিজ্ঞাপণ দিতে হবে, তারপর কিছু কেনা কাটা করতে হবে । বিজ্ঞাপণটা এরকম হবে: ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী দুজন তরুন তরুনী চাই; বৃদ্ধ বিজ্ঞানী, নিউরোলজিস্ট ডঃ জিলান ও তার স্ত্রী মারিয়াকে দেখা শোনার জন্য । উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও থাকা খাওয়ার সু ব্যবস্থা করা হবে ।
যোগাযোগ: ডঃ জিলান, অতশী কটেক্স, 52E78B.
অপর কাজটি হল কিছু কেনা কাটা, বিশেষত ইলেকট্রনিক্স জাতীয় ।
বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবার পরদিন থেকেই তরুন তরুনী আসা শুরু করেছে । ডঃ জিলান ও তার স্ত্রী মারিয়া দেখে শুনে এমন দুজন তরুন তরুনীকে বাছাই করলেন যারা সুদর্শণ, ২০/২২ বছর বয়স এবং আত্মীয় স্বজন নেই বললেই চলে । তাদের একজনের নাম জয়নাল এবং অন্যজনের নাম আখিঁ । কাজ কর্ম সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে মারিয়া তাদের শোবার ঘর দুটিও দেখিয়ে দিল । ডঃ জিলান গবেষণা কক্ষে প্রবেশ করেছেন প্রায় চার ঘন্টা চলছে । নতুন “ট্রান্সফার সিস্টেম অব নিউরন” যন্ত্রটির কাজও প্রায় শেষের পথে । এখন তাকে জীবনশক্তি শরবত তৈরি করতে হবে । ফর্মূলা সব আগেই তৈরি করা আছে । কিছু ভেষজ ও খনিজ উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি করা হল এ শরবত । ডঃ জিলান তা গবেষণা কক্ষের হিমাগারে রেখে দিলেন যত্ন করে । কাজ ভালই এগুচ্ছে, তবে কোন সমস্যায় যাতে পড়তে না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়ালও রাখতে হচ্ছে তাকে ।
গবেষণা কক্ষ থেকে বের হয়ে তিনি তার স্ত্রী কে জানালেন আগামী সোমবার আমাদের জীবনের শেষ পরীক্ষা শুরু হবে । মিসেস জিলানকে সব কিছু সম্পর্কে অবগত করে এবং তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন ডঃ জিলান । কিভাবে বি করতে হবে; তবুও তার স্ত্রীর চোখে বিশ্ময়, শেষ পর্যন্ত কাজটা সমাধা হলেই হল । নয়তো জীবনের কাছে হার মানতে হবে তাদের । এক পর্যায়ে মারিয়া, জিলানকে প্রশ্ন করে বসে কাজটা কি সম্ভব হবে?
জিলান উত্তর দেয়, অবশ্যই সম্ভব ।
: যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় ।
: কোন সমস্যা নেই । সম্পূর্ণ কাজটা হবে নিউরন এর স্মৃতি ট্রান্সফার এর মাধ্যমে । আমার সকল স্মৃতি ট্রান্সফার করে জয়নালের মস্তিষ্কে আর জয়নালের টা আমার মস্তিষ্কে, ব্যস ! একই ভাবে তোমার ও আখিঁর স্মৃতি পাল্টানো হবে ।
: অবিশ্বাস্য কথা ।(জিলানের স্ত্রী কিছুটা অবিশ্বাস্য দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে)
: হ্যাঁ অবিশ্বাস্য কথা, তবে খুব সাবধানে করতে হবে ।
আখিঁ ও জয়নাল বাগানে কাজ করছে । নিষ্পাপ দুটি জীবন । তাদের নিয়ে যে কি ষড়যন্ত্র চলছে তা তারা জানে না ।
০৪
আজ সোমবার । রাতটা অত্যন্ত অন্ধকার । অমাবস্যার রাত । রাতের খাবার দেয়া হয়েছে টেবিলে । জয়নাল ও আখিঁ খুব সুন্দর পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে বিভিন্ন ধরনের খাবার।
জয়নাল উপরে উঠে গিয়ে জিলান ও মারিয়া কে ডেকে আনল রাতের খাবার খাওয়ার জন্য । জিলানের হাতে জীবনশক্তি শরবতের মগ । চেয়ারে বসে জিলান ও মারিয়া আখিঁ ও জয়নালকেও তাদের সাথে খেতে বসতে বলল । আখিঁ ও জয়নাল প্রথমে সংকোচ করছিল, পরে তারাও খেতে বসল এক সাথে । খাবার এর শেষে সবাইকে জীবনশক্তি শরবত পান করতে দিলেন জিলান । জিলান খাওয়া দাওয়া সেরে গবেষণা কক্ষে চলে গেল । সব কিছু ঠিকঠাক করে আবার ফিরে এলেন তিনি প্রায় দুঘন্টা পরে । রাত তখন বারটা বাজতে দশ মিনিট বাকি । আখিঁ ও জয়নাল ঘুমিয়ে প্রায় অচেতন । তাদের জীবনশক্তি শরবতের সাথে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলেন জিলান । ঘুমে এখন অচেতন তারা দুজনেই । স্ত্রী মারিয়াকে সাথে নিয়ে জয়নাল ও আখিঁকে গবেষণা কক্ষে নিয়ে গেল ডঃ জিলান । মারিয়ার হাত কিছুটা কাঁপছে । সে এক ধরনের ভয় অনুভব করছে । তার শরীর শিহিরত হচ্ছে বার বার ।
ডঃ জিলান জয়নাল ও আখিঁকে দুটি আলাদা বেডে শুইয়ে দিল । লোভাতুর দৃস্টিতে তাকিয়ে জিলান মনে মনে ভাবছে আর কিছুক্ষণ পর এই দেহটা হবে তার । তার নতুন জীবন লাভ হবে । ডঃ জিলান প্রথমে তার স্ত্রীকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে এ যন্ত্রটি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের স্মৃতি পরিবর্তন করা যায় । তারপর তিনি তার স্ত্রীকে শুইয়ে দিলেন আখিঁর বেডে । আখিঁর মাথায় একটি ইলেকট্রনিক্স সেন্সর কপোট্রনিক হেলমেট ও মারিয়ার মাথায় আরেকটি পরানো হল । মারিয়ার গায়ের চামড়া কুচঁকে গেছে শরীর অসাড় হয়ে পড়েছে বয়সের ভাড়ে । কিন্তু সে ভাবতেও পারছেনা আর কিছুকক্ষণ পর সে নতুন একটি সতেজ দেহ ফিরে পাবে ।
০৫
সম্পূর্ণ ঘটনাটি ঘটতে দুদিন সময় লাগল । মস্তিষ্কের সকল স্মৃতি পাল্টানো সম্ভব হল । জিলান ও মারিয়া অবাক দৃস্টিতে নিজেদের আয়নাতে দেখছে । জয়নাল ও আখিঁর শরীর এখন থেকে তাদের আর জয়নাল ও আখিঁ পেয়েছে তাদের জীর্ন শীর্ন দুর্বল শরীর । জিলান এক মূহুর্ত দেরী না করে জয়নাল ও আখিঁ যারা তাদের শীর্নকায় শরীর এ অবস্থান করছে তাদের টেট্রাকোমিন-১০ ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলল । কিন্তু সবাই জানবে ডঃ জিলান ও মারিয়া আত্মহত্যা করেছেন এবং বাস্তবে হলোও তাই; পুলিশ এসে তদন্ত করল এবং সংবাদে প্রকাশ হল ডঃ জিলান ও মারিয়া বয়সের ভারে আত্মহত্যা করেছেন ।
জয়নাল ও আখিঁর দেহতে বসবাসকারী জিলান ও মারিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না । সম্ভবত যন্ত্রটিতে কোন একটা সমস্যা ছিল । জিলান ও মারিয়া আস্তে আস্তে নিজেদের জয়নাল ও আখিঁ মনে করতে শুরু করছে । তবে কি তাদের স্বপ্ন সফল হয়নি । জয়নাল ও আখিঁর মাথায় কি তাদের স্মৃতি ট্রান্সফার হয়নি, নাকি সাময়িক ভাবে হয়েছে? । আসলেই তাই, সারা জীবনের জন্য নয় সাময়িকভাবে স্মৃতি ট্রান্সফার হয়েছে । জিলান ও মারিয়া নিজেদেরকে টেট্রাকোমিন-১০ ইনজেকশন দিয়ে মেরেছে অন্য জনের মস্তিষ্কে অবস্থান করে । সে মস্তিষ্কে তারা বেশিক্ষণ থাকতে পারবে বলে মনে হয় না ।
সকাল বেলাতে ঘুম ভাঙল আখিঁ ও জয়নালের রাতের বেলা তারা অদ্ভুদ সব স্বপ্ন দেখেছে । অথচ দুজনের স্বপ্ন একই ধরনের । আখিঁ ও জয়নাল কিছুক্ষণ পর জানতে পারল তাদের মনিব ডঃ জিলান ও মারিয়া আর ইহ জগতে নেই তবে মৃত্যুর পূর্বে সকল সম্পদ তাদের নামে দিয়ে গেছে । ঘরের কোনে বসে থাকা বেড়ালটি দৌড়ে এসে জয়নাল ও আখিঁর পায়ের কাছে ঘুরাঘুরি করতে লাগল এবং মিউ মিউ সুরে ডাকতে লাগল । জয়নাল ও আখিঁ তার অর্থ কিছুই বুঝতে পারল না , একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকে; তাদের চোখে মুখে এক ধরনের বিস্বয় এর ছাপ ।