শিরোনামঃ গুরুচন্ডালী-১: “প্রাত ভ্রমন, আমি ও কয়েকটি কাকতাড়ুয়া”
উপ-শিরোনামঃ “আবারও প্রাতভ্রমন (জগিং) ও কিছু কথা (চলিত ও সাধুভাষায় লিখিত(গুরুচন্ডালী))
সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠিয়া দন্ত মাজন শেষে মা’কে বলিলাম, “দরজাটা বন্ধ করিয়া দাও, আমি প্রাতভ্রমনে যাইতেছি” । মা বলিলেন, “দেশের অবস্থা ভাল না এত সকালে জগিং না করিলে কি নয়? আবার তুই ইন্টারনেটে কি সব যা-তা লিখিস, না জানি কবে তোকে পুলিশ ধরিয়া লইয়া যায়” ।
মা জানেন আমি কারো বাধ্য নই, সেনানিবাসের মহাবিদ্যালয়ের(কলেজ) কঠোর নিয়মই আমাকে বশ করিতে পারে নাই আর মামুলি কয়েকটা পুলিশ কি করিবে ! হস্তে সময় কম কারন আগে আগে না বাহির হইলে পরে সুরজ খানা পূব গগনে উদিত হইলে আর রক্ষা নাই, প্রাতভ্রমন এইখানেই শেষ করিয়া বাসায় ফিরিতে হইবে নতুবা গা গরম হইয়া শরীরে পানিশূন্যতা তৈয়ার হইতে পারে ।
আমি বলিলাম, “পুলিশের তো আর কোন কাজকর্ম নাই আমার মতন একটা কানামাছিকে ধরিয়া নিয়া যাইবে, উহাদের কোন লাভ হইবে বলিয়া আমার ধারনা হয় না, যদিওবা ধরিয়া নিয়া যায় তাহা হইলে বড়জোড় কানামাছি কানামাছি খেলা ছাড়া আর কোন কিছু করিতে পারিবে বলিয়া মনে হয় না” । মা কিছুটা বিরক্ত হইয়া, “ঠিক আছে কথা না বাড়াইয়া সাবধানে যাস, গেটের চাবি তোর বাবার কাছে, নীচে মনে হয় ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পাঠ করিতেছেন” । আমি বলিলাম, “না দরকার হইবে না, আমার কাছে একখানা চাবি আছে । তুমি ঠান্ডা পানি দিয়া দুইখানা রুটি তৈয়ার করিও আর একটা অর্ধ ভাঁজা (হাফ পোজ) ডিম রাখিও যদি শরীর ভাল বোধ করো, আমি প্রাতভ্রমন শেষে নাস্তা সারিব আর যদি শরীর অসুস্থবোধ করো তাহা হইলে বুয়াকে তৈয়ার করিতে বলিও” ।
বুয়ার তৈয়ারী খাবার আমি ইদানিং জোরপূর্বক গলাধকরণ করাৱবার চেষ্টা করিতেছি কারন আমি জমিদারের নাতি বৈকি । বশিরউদ্দিন খান (পরে সরকার নাম ধারন করেন) আমার বাবার নানা, যিনি ভাওয়াল(জয়দেবপুর ও গাজীপুর) রাজার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, নথিপত্র ঘাটিলে এখনও গাজীপুর আদালতের ভাওয়াল যাদুঘরে তাহার নাম ও প্রমান পাওয়া যাইবে । তাহার মেয়ে মোসাঃ হাছনা খানম কালীগঞ্জ জমিদার পচাব্দী গাজী’র ছেলে এম,এ, ওহাব সরকার(পরে মুনসী নাম ধারন করেন) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । পচাব্দী গাজী ও বশিরউদ্দিন সরকার উভয়ই বিভিন্ন পরগনায় ভাওয়াল রাজার নিকট হইতে জমিদারী পাইয়া ছিলেন এবং ওনারা আমার শ্রদ্ধেয় প্র-পিতামহদ্বয় । ব্রিটিশ আমলে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হইলে আমার দাদাজান এম,এ,ওহাব সরকার, সরকারী ল্যান্ডলর্ড নিযুক্ত হন (বর্তমানে পূর্বাচল টাউন)। সরকারী কাজ করার দরুন তাহার নামের পরে সরকার যুক্ত হয় কিন্তু পরবর্তীতে মসজিদে ইমামতি করার কারনে তাহা পরিবর্তিত হইয়া মুনসী প্রচলিত হয় । মানুষের ধান ক্ষেতে ঘোড়া দৌড়ানোই তাহার সারাদিনের রুটিন ছিল কিন্তু পরে তিনি অনুতপ্ত হইয়া কলকাতা হইতে ডাক্তারী পড়িয়া মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ।তাহার গুণকীর্তন করা আমার উদ্দেশ্য নহে বরং নিজের পরিচিতিও এইখানে তুলিবার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু কেন বলিলাম তাহা বোধ করি নিচের বাক্যগুলি পাঠে বুঝিতে পারা যাইবে ।জমিদারের নাতি হইয়া জমিদারী দেখানো আমি পছন্দ করি না কিন্তু বলার উদ্দেশ্য হইতেছে জমিদাররা ছিল অত্যাচারী আবার অনেকে কথায় কথায় বলে আমার দাদা জমিদার ছিল কিন্তু বাস্তবিক কোন প্রমাণ দিতে বলিলে বলে অনেক জমি ছিল আমার দাদার তাই জমিদার কিন্তু জমিদারী আমলে সাধারণ কাহারও নিজের জমি ছিল বলিয়া আমার ধারনা নাই; সকল জমিই জমিদারদের ছিল আর বাকিরা তার ভোগ দখলের খাজনা দিত অতি উচ্চহারে, তাই জমিদার পরিচয় দিয়া নিজেকে বড় ভাবিবার কোন অবসর আমি পাই নাই কারন জমিদারগণ অতিব অত্যাচারী ছিলেন । অন্যদিকে যেহেতু আমাদের দেশে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই ব্যাবসা করিতে আসিত আবার অনেকে বিবাহ করিয়া থাকিয়া যাইত তাই বার জাতের রক্ত মিশিয়া আমাদিগকের রক্ত একখান ষান্ডার অথবা জোঁকের রক্তে পরিনত হইয়াছে যাহার কারনে না চাইলেও মানুষকে কষ্ট দিতে স্বীয় রক্তবিন্দু গুলি টগবগ টগবগ করিতে থাকে ।
যাহা হোক মূল বিষয়ে আসা যাক,
বাসা হইতে ইজতেমা ময়দান খুব বেশি দূরবর্তী নহে । ইজতেমা ময়দান মোট ১৬০ একর জমি বা ৭০ লক্ষ বর্গফুটের এক বিশাল মাঠ, একপাশে উত্তরা আধুনিক শহর ও অন্যপাশে বাংলাদেশের প্রথম শিল্পনগরী টংগী(যাহার গোড়া পত্তন হয় ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে ); মধ্যিখানে কোলঘেঁষে বয়ে গেছে তুরাগ নদী যার ৩০ বছর পূর্বেকার নাম ছিল কহর দরিয়া । এই নদীতেই প্রাত ভ্রমন শেষে স্নান করিতেন এক সময়কার মহারানী সোনাবানু, তাহার কিছু ধ্বংসাবশেষ ও রুপকথা মানুষের মুখে এখনও শুনিতে পাওয়া যায় ।
হাটিতে লাগিলাম, অবশেষে ইজতেমার প্রধান গেইটে প্রবেশ করিলাম, পিচঢালা পথ সোজা মাঠ পর্যন্ত চলিয়া গেছে, একপাশে বাটা সু কোম্পানী লিমিটেড অন্যপাশে আশরাফ টেক্সটাইল মিলস, এক সময় এই প্রধান ইজতেমার রাস্তায় সারিবদ্ধ কড়ই গাছ ছিল পাশে ছিল আশরাফ টেক্সটাইলের পুকুর । দিনগুলি আজ কোথায় হারাইয়া গেল তাহাই ভাবিতে লাগিলাম, সেই পুকুরে কত গোসল করিয়াছি, মাঝে মাঝে দারোয়ানকে ফাকিঁ দিয়া বড়শির ছিপ ফেলিয়া কত মাছও ধরিয়াছি আর আজ সেইখানে এক সুবিশাল মার্কেট ‘আশরাফ সেতু’ । যাহাই হোক হাটিতে লাগিলাম কারন এই পিচঢালা পথে দৌড়ানো বোকামি হইবে কারন হোচট খাইলে পুরো রক্তারক্তি হইতে বাধ্য । সামনেই রাস্তাটা শেষ হইল, কিছু দাড়ি টুপির আর আরবের পোষাক পরিচ্ছদে ঢাকা বুজুর্গান চোখে আসিল, তাহারা মেছওয়াক করিতেছিল মনে হয় এইমাত্র নামাজ শেষ করিয়া মেছওয়াক করিতেছে । জানি না এই সত্য কথা টা লেখা ঠিক হইবে কিনা, ইহাদের ব্যাপারে?, ইহারা সর্বদা এইরূপ মেছওয়াক বা দন্তমাজন করিয়া থাকেন নিবারক নিম গাছ দিয়া কিন্তু তাহার পরও আমি দেখিয়াছি তাহাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মুখে দুর্গন্ধ, তাই তীব্র আতঁর জাতীয় সুগন্ধী মাখিয়া থাকেন সর্বক্ষণ; শাক দিয়া জ্যান্ত মাছ ঢাকিবার প্রয়াস আরকি । মেছওয়াক করা সুন্নত বৈকি কিন্তু তার মানে এ্ই না যে ব্রাশ আর টুথপেষ্ট ব্যাবহার করিলে তাহা সুন্নত হইবে না বা ব্রাশ ব্যাবহার করা হারাম । আসুন দেখি কেনই বা সুন্নত বলা যাইবে না, মহানবী(সাঃ) একজন অতি উচ্চ পর্যায়ের বিঞ্জানী ছিলেন, তিনি মেছওয়াক করিতে বলিয়াছেন গাছের ডাল দিয়া আর আধুনিক সময়ে উহার সংস্করণ হইল ব্রাশ আর টুথপেষ্ট; যাহা মেছওয়াকেরই ভিন্নরুপ, এক হিসাবে বলিতে পারেন তিনি ব্রাশের আবিষ্কারক । কেহ যদি আযান দেওয়ার জন্য মাইক ব্যাবহার করিতে পারেন, মসজিদে আলোর জন্য বৈত্যুতিক বাতি আর আরামের জন্য পাখা বা এসি ব্যাবহার করিতে পারেন, দ্রুত যাতাওয়াতের জন্যে ঘোড়া না ব্যাবহার করিয়া যানবাহন ব্যাবহার করিতে পারেন, যোগাযোগের জন্য কবুতর ব্যাবহার না করিয়া মোবাইল ব্যাবহার করিতে পারেন, খড়ম না পরিয়া জুতা পরিতে পারেন, হজ্জ্বের জন্য উট ব্যাবহার না করিয়া উড়োজাহাজ ব্যাবহার করিতে পারেন তাহা হইলে কেন ব্রাশ ব্যাবহার করা যাইবে না?? যাই হোক কাহারো সাথে কুতর্কে যাইতে চাহি না । “ইহা যার যার বুঝ, দাড়ি ফেলিয়া রাখিয়াছে মোছ” । আবার আরেক ব্যাপার উপস্থিত হইল, মোছ বা গোফ রাখিব নাকি দাড়ি? আমাদের দেশের অনেকেই আমার সাথে একমত হইবেন না জানি তবে আমি দাড়ি বা গোফ এর ব্যাপারে বিশদ গবেষণা করিয়া দেখিয়াছি আরবদের হিংস্র মাংসাসী ও রাজকীয় প্রাণী হইতেছে সিংহ । সিংহের দাড়িসদৃশ কেশর থাকে যাহা পুরুষত্বের ধারক বলিয়া আরবে হাজার বছর ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে । পূর্বে দাড়ি ছাড়া পুরুষদের লেজকাটা বানর বলিয়া ধারনা করা হইত । তাহলে আমাদের সংস্কৃতি কি বলে?? আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ঘাটাইলে যা পাওয়া যাইবে তাহা হইল আমাদের সমগ্র বাংলাদেশেই এক সময় সবর্ত্র বিচরণ করিয়া বেড়াইত এখনকার রাজকীয় বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বলাবাহুল্য ইহাদের দাড়ি নাই তবে যেহেতু বিড়াল প্রজাতি তাই গোফ আছে যাহা হাজার বছর ধরিয়া আমাদের পুরুষগন পুরুষত্ব দেখাইবার জন্য গোফ রাখিয়া আসিতেছেন এই বাঘের গোফের অনুকরণে । আসলে দাড়ি বা গোফ কিংবা মেছওয়াক কোনটাই আমার উদ্দেশ্য নহে, যাহার যা করিতে মন চায় সে উহাই করুক তাতে অন্যের এত ভাবনার বিষয় কেন? যাহা হোক, হুজুরকে পাশ কাটাইয়া জগিং শুরু করিলাম । আমাকে দেখিয়া তাহার চোখমুখ কুঞ্চিত হইয়া গেল, হয়ত মনে মনে ভাবিতেছে, “ইহারা জাহান্নামের খড়ি, সাত সকালে নামাজ না পড়িয়া ইংরেজ ফিরীঙ্গীদের লেবাসে(পোষাকে) আসিয়াছে পবিত্র ময়দানে ফালাফালি করিতে” আমি অন্যদিকে চোখ ফিরাইয়া নিলাম কারন আমি নিয়মিত না হইলেও প্রায়শই নামাজ আদায় করি । যাহাই হোক, শ্লথ গতিতে দৌড়াইয়া নদীর তীরে কিছুক্ষণ থামিয়া আবার হাটিতে লাগিলাম । নদীর মিশকালো জল ও নাক ঝাঁঝালো গন্ধে নাসারন্ধ্র বন্ধ হইবার যোগাড় । দম বন্ধ করিয়া আবার হাটিতে লাগিলাম হঠাৎ লক্ষ্য করিলাম একজন মাঝি বা জেলে ডিঙ্গি নৌকা সমেত নদীর কিনারায় কি যেন করিতেছেন, ভাবিলাম এই জলে মাছ কিভাবে ধরিবে, মাছ তো দূরে থাকিবে এই নদীতে এখন ব্যাঙও পাইবে না, তাহা হইলে সে কি করিতেছে?? অত্যন্ত উৎসাহের সহিত নিকটে গেলাম, সে একজন মাঝি না তবে মহিলা মাঝি বা জেলে বলা যাবে কিনা বুঝিতে পারিলাম না কারন সে মাছ না ধরিয়া বিভিন্ন বোতল ও আবর্জনা কুড়াইতেছিল (ধরিতেছিল) । হয়ত ভবিষ্যতে তাহার নাম হইবে মাঝি বা জেলে কিন্তু সংজ্ঞা খানা বদলাইয়া এইরকম হইবে: জেলে ও মাঝির সংজ্ঞাঃ “যাহারা নৌকায় চড়িয়া খাল বিলে বা পুকুরে (পূর্বে নদী ছিল) পুনঃব্যাবহার করা যায় এমন সব আবর্জনা ছিপ বা জাল দিয়া ধরিয়া থাকেন উহাদের মাঝি বা জেলে বলা হয়, যেমন পদ্মা বিলের মাঝি বা জেলে, তুরাগ খালের মাঝি বা জেলে কিংবা বুড়ীগঙ্গা পুকুরের মাঝি বা জেলে ইত্যাদি” ।
প্রাতভ্রমন আর কি করিব, মনখানা সাত সকালেই খারাপ হইয়া গেল, মহিলা মাঝি আমাকে দেখিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হইয়া বলিল, “কিছু বলিবা বাবাজি?” আমি উত্তর দিলাম, “না চাচী, দূর থাকিয়া দেখিয়া ভাবিয়াছিলাম আপনি মাছ ধরিতে ব্যস্ত কিন্তু কাছে আসিয়া যাহা দেখিলাম তাহা মানিয়া লইতে পারিতেছি না” ।
মহিলা উত্তর দিলেন, “কি আর করিব বাবাজি, এই দেশে কত গুলা কুত্তা আর শকুনের জাতেরে প্রতিবার ভোট দেই আর ক্ষমতায় আইলে গরীব মানুষের কথা, নদীগুলার কথা সব ভুইল্যা যায়” ।
আমি মাথা নাড়িয়া সায় দিলাম আর মুখে বললাম, “হুম্, আচ্ছা আপনি কাজ করেন আমি যাই”, বলে সামনে হাটতে থাকলাম ।
বিশাল মাঠ, দুবার চক্কর দিলাম আজকে, প্রায় ৫ থেকে ৬ কি.মি. হাটার সমান হবে । পূর্বপাশে সোর্ড ব্লেড ফ্যাক্টরী ও সোনাবানুর শেষ ধ্বংসাবশেষ, সম্মুখে হাটিতে থাকলাম, কিছু শালিক আর দাড় কাক সোর্ড ব্লেড ফ্যাক্টরীর ভিতরের কাঁঠাল গাছে বসিয়া ডাকিতেছে । ছোট বেলায় এই মাঠে কত অজানা পাখি দেখিয়াছি তাহার অনেকগুলো আর দেখি না, উহাদের মধ্যে ঘুঘু, বক, চিল, শঙ্খচিল, মাছরাঙা, দোয়েল, কোকিল আরো কত পাখি ছিল অনেকগুলার নাম জানিতাম না । আর এখন শুধুই কাক আর শালিক কিংবা চড়ুই; ভাবিতে ভীষণ কষ্ট লাগিল শৈশবে এই নদীতে ঝিনুক কুড়াইতাম মুক্তা পাওয়ার আশায় আজ ঝিনুক তো দূরে থাকিবে পানি টুকুও ধ্বংস হইয়াছে ।
তুরাগ নদীর এক সময়কার নাম ‘কহর দরিয়া’ ছিল বৈকি, তবে অনেকেই নদী, নদ আর দরিয়ার মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়া উঠিতে পারে না, তাহাদের জন্য বলিতে হয় নদ বলতে বোঝায় যাহা হইতে দ্বীতিয় কোন স্রোত বা শাখা নদীর জন্ম হয় নাই যেমন ব্রহ্মপুত্র একটি নদ, অন্যদিকে নদী বলিতে বোঝায় যাহার থাকিয়া এক বা একাধিক নদ/নদীর জন্ম হইয়াছে যেমন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি, আবার যেসকল নদীতে বছরের সব ঋতুতে পানির স্রোত থাকে উহাদের দরিয়া বলা হইয়া থাকে । তবে ইহা নিয়া নানান মুনীষির নানান মতবিভেদ রহিয়াছে ।
বাংলাদেশে সর্বমোট ৮০০ এর উপরে নদ-নদী থাকিলেও ভারতের পানি চুরির কারণে তাহা ক্রমশ কমিতেছে । এই তুরাগ নদী এক সময় স্রোতস্বিনী ছিল সারা বছর তাই এর নাম ছিল কহর দরিয়া কিন্তু আজ নিথর কালো বিষের পেয়ালা মাত্র । ভারত আমাদের নদ/নদী গুলি যেইভাবে ধ্বংস করিয়া দিতেছে তাহার বিরুদ্ধে বর্তমানে বা অতীতে কোন রাজনীতিবিদ কিংবা মন্ত্রী আমলা কেহই কিছু করিতে পারিতেছেন না ।
মোটা অংকের টাকা খাইয়া অনেক পুলিশ কিংবা হর্তাকর্তারা দেদারসে দূষিত পানি আমাদের নদীতে ফালাইতে দ্বিধাবোধ করিতেছেন না, অন্যদিকে ভারত পানি বন্ধ দিয়া ৬৮ টা খাল খনন করিয়া পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার ও অন্যান্য রাষ্ট্রে চাষভাষ করিয়া তাদের অর্থনীতি স্বচ্ছল করিতেছে বৈকি, এহেন সমস্যা যেনো কাহারও চক্ষুগোচর হয় না, বিশেষত গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদ’দের ।
কিছুদূর হাটিতেই একখানা তিলা-ঘুঘু চোখে পড়িল; বাটার সংরক্ষিত বনের ভিতরের এক দেবদারু গাছে । মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হইল ভাবিলাম এখনও আমাদের ঘুরিয়া দাড়াইবার সুযোগ আছে, এই দেশের নদী, প্রাকৃতিক বন আর পশুপাখিদের বাঁচাইবার নিমিত্তে এখনও সময় আছে । জানি আপনারা বলিবেন, শুধুমাত্র একটা লেখা দিয়া আর কি হইবে, তবে আমি বলিব আর কিছু না হোক কিছু লোক যাহারা আমার লেখা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পাঠ করিয়াছেন তাহাদের কেউ কেউ যদি মনেপ্রাণে মাতৃভূমির পরিবেশ, নদ-নদী ও পশুপাখি বাচাইবার নিমিত্তে চিপস খাওয়ার পর উহার প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে ইহাই-বা কম কিসের ।
তাহা ছাড়া আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ কলকারখানায় চাকুরী করেন বা করবেন অথবা কলকাখানার ব্যাবসা করেন বা করবেন; তখন আমার এই একখানা লেখা পড়িয়া থাকিলে অন্তত নদী বা পরিবেশ দূষিত হয় এইরূপ কর্ম হইতে বিরত থাকিবেন আশা করি এবং অন্য কাউকে করিতে দেখিলে তাহা ফিরাইবার চেষ্টা করিবেন, যাহাতে কয়েকটি কাক না সাজিয়া কাকতাড়ুয়া হইয়া সকল কাকনামের ধারক কুলাঙ্গারদের দেশ থাকিয়া তাড়াইতে পারি ।
পাঠককে অশেষ ধন্যবাদ।
--------সাকি বিল্লাহ্
(প্রথম প্রকাশ মে, ২০১৩)