একটি প্রশ্নঃ
ধরুন আপনি বেশ বড় একটা ঘরের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ঘরে দুটো খাঁচাও আছে। একটি খাঁচায় আছে প্রমাদ সাইজের একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আরেকটি খাঁচার ভিতর একটি সাড়ে ৬ ফুটি হিমালয়ের ভালুক; আর তারা দুজনেই ভয়াবহ ক্ষুধার্ত।
ঠিক এক মিনিট পরেই যে কোন একটি খাঁচা খুলে যাবে কিন্তু কোন খাঁচাটি খুলবে সেটি চাইলে আপনিও নির্ধারণ করতে পারবেন।
এখন এক মিনিটের মাঝে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কার হাতে মারা পড়বেন? বাঘ নাকি ভালুক??
(উত্তর শেষে দেওয়া হবে)
পৃথিবীতে বনগুলোকে আপনি খুব সহজেই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারবেন, কোন বনে বাঘ আছে আর কোন বনে বাঘ নেই। রাশিয়ার গর্ব তাদের সাইবেরিয়ান টাইগার আছে আর আমাদের গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে। বলাই বাহুল্য, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চেয়ে সুন্দর প্রাণী পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। উত্তর ভারত, নেপালের বাঘ আর আমাদের সুন্দর বনের বাঘ কিন্তু একই প্রজাতির, কিন্তু আমাদের সুন্দরবনের বাঘকেই বলা হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
এর একমাত্র কারণ হতে পারে, সুন্দরবনের বাঘই সবচেয়ে হিংস্র এবং প্রতিটি বাঘই মানুষখেকো।
কিন্তু বিশ্বাস করতে পারেন, আমাদের সুন্দরবনের বাঘ আজ বিলুপ্তির পথে। গত সপ্তাহে সর্বশেষ বাঘ শুমারিতে মাত্র ১০৬ টি বাঘের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে সুন্দরবনে। অথচ ২০০৪ সালের শুমারিতে এই সুন্দরবনেই ৪৪০ টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল।
সর্বশেষ বাঘ শুমারির ফলাফল
এখন বন বিশেষজ্ঞরা সাফাই গাইছেন, ২০০৪ সালে বাঘের থাবা দেখে যেই শুমারি করা হয়েছিল তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। জিম করবেটরা যদি আরও ১০০ বছর আগে থাবার ছাপ দেখেই বাঘ সনাক্ত করতে পারেন, তবে ২০০৪ সালে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটি ভুল হবে কেন!! এই টেকনোলজি তো পৃথিবীর আরও অনেক দেশে ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের তো এতো বড় ভুল হয়নি। মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টের মতোই বাঘের থাবা আইডেন্টিকাল।
আর আমাদের দেশে না হয় ভুল হয়, মাত্র ৪ বছর আগে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক থেকে ৪০০ বাঘ সংরক্ষণের জন্য ৩৬ মিলিওন ডলার বা ৩০০ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতি বছর মিলিওন ডলারের ফান্ড আসে বিদেশ থেকে বাঘের জন্য। প্রতিটি সাইক্লোনের পরেই যেন বাঘের ক্ষতি না হয়, সেজন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় দাতা সংস্থাগুলো থেকে। ওরা তো আর না জেনে শত শত কোটি টাকা দেয়নি।
২০১১ সালের বিবিসির রিপোর্ট এবং মন্ত্রী সাহেবের বয়ান
ঋণদানের উপর আরেকটি নিউজ লিঙ্ক
সেই সময় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ছিলেন হাসান মাহমুদ, উনি বড় গলায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাঘ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন। যার ফলশ্রুতিতে ৪ বছরেই ৩০০ বাঘ ভ্যানিস হয়ে গেল।
এই শত শত কোটি টাকা কার পেটে গেল তবে। সবকিছুতেই লুটপাট করা আমাদের রাজনীতিবিদদের স্বভাব, কিন্তু গুটি কয়েকের লোভে সারা পৃথিবীর কাছে আমাদের গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন করে ফেলা হবে এভাবে??
মন্ত্রী মারুক, প্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে চুরি করুক, অথবা কোন কালো বিড়াল থাকুক; ৩০০ বাঘকে হত্যার দায়ে এদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত।
প্রথমের প্রশ্নের উত্তরটা জানিয়ে দেই। যদি বাঘ এবং ভাল্লুকের সামনে পড়েন, তাহলে বাঘের হাতে মরাই বেটার হবে।
কারণ বাঘ হচ্ছে জন্মগত শিকারি, এরা জানে কিভাবে প্রাণীকে হত্যা করতে হয়। আপনি টের পাবার আগেই আপনার ঘাড় মটকে দিবে।
আর ভাল্লুক মোটেই শিকারি প্রাণী নয়। এরা মাংস, মাছ, গাছের ফল, মধু সবই খেয়ে থাকে। তাই এরা জানেনা কিভাবে হত্যা করতে হয়। হয়তো বুকে চাপ দিয়ে পিষে ফেলে আপনাকে গুড়ো গুড়ো করে দিবে, এরপর আপনি জীবিত থাকতেই আপনার একটা হাত বা পা ধরে চাবানো শুরু করে দিবে।
তাই বাঘের হাতে মরাটাই বেটার হবে, যদি সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকে তবে দোয়া করি সবার যেন বাঘের হাতেই মরণ হয়