somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Giant Clashes গ্রীস vs পারস্য (১)

২১ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইতিহাসের ঘটনা দেখতে, শুনতে খুবই ভালো লাগে। আর যদি তাতে কোন ঐতিহাসিক যুদ্ধের রক্তের স্বাদ পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। :)

ইতিহাস ঘাঁটলে হাজার হাজার যুদ্ধের কাহিনী বেরুবে, যেখানে এক রাজ্যের আক্রমণে আরেক রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমি আমার লেখার উপকরণ হিসেবে একটু বড় ধরনের ঐতিহাসিক যুদ্ধের পটভূমি বেছে নিয়েছি।
এমন কিছু ইতিহাস এবং যুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরব, যেগুলো দুটি বৃহৎ শক্তির মাঝে শত শত বছর ধরে সংঘটিত হয়েছিল। এগুলোর একটির উত্থানে অপরটি হয়তো হারিয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাস হতে এবং পরিণামে বিজয়ী শক্তি পরিণত হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যে।

যেহেতু শতবর্ষের ইতিহাস তাই এক পোষ্টে সঙ্কুলান হওয়া সম্ভব হবে না। আশা রাখি আপনারা ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন।

প্রথমেই শুরু করব, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে শুরু হওয়া গ্রীস এবং পারস্য সাম্রাজ্যের দ্বন্দ্বের কাহিনী দিয়ে যার পরিসমাপ্তি হয়েছিল ২০০শত বছর পরে ‘অ্যালেকজান্ডার দ্যা গ্রেটে’র হাতে পারস্য সাম্রাজ্যের ‘আখামেনিদ’ বংশের(৫৫৮-৩৩০খ্রি পূ) পতনের মাধ্যমে। এখন শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক ঐ সময়ের এই দুটি সাম্রাজ্যের কিছু তথ্য-

পারস্য সাম্রাজ্যঃ
সেইসময় মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়েছিল পারসিয়ানরা, আর এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘গ্রেট কিং সাইরাস’ (খ্রি পূ ৫৫০)। বাইবেলে ‘কোরেশ’ নামে পরিচিত অসাধারণ জনপ্রিয়, রাজনৈতিক এবং সামরিক জ্ঞানের অধিকারী সাইরাস তার ২০বছর শাসনামলে একে একে মিডিয়ান, লাইডিয়ান, লাইসিয়ান দখল করে নেয়। ফলে সুবিশাল মধ্য এশিয়ার পুরোটাই তার দখলে চলে যায় এবং সবশেষে দখল করেন ব্যাবিলন সাম্রাজ্য।


কিং সাইরাসের সুবিশাল সাম্রাজ্য

পরবর্তীতে ‘কিং দারিয়ুস’(৫৫০-৪৮৬ খ্রি পূ ) সাম্রাজ্যের সীমানা পূবে ইন্ডিয়া পর্যন্ত এবং অপরপার্শ্বে পূর্ব ইউরোপ দখলের পর পশ্চিম ইউরোপের গ্রীসের দিকে নজর দেয়।

গ্রীসঃ
গ্রীস’কে বর্তমান গ্রীসের সীমানা ধরে একটি রাজ্য হিসেবে চিন্তা করলে ভুল করবেন। অসংখ্য ছোট ছোট রাজ্যশহর এবং দ্বীপে বিভক্ত স্থানীয় শক্তিগুলোর মাঝে সম্প্রিতি দূরে থাক; একে অপরের উপর আধিপত্য বিস্তার আর শক্তি পরীক্ষাতেই ছিল সদা লিপ্ত। আর এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় দুটি শক্তি ছিল এথেন্স ও স্পার্টা এবং পরস্পরের সবচেয়ে বড় শত্রুও ছিল তারা।


প্রাচীন গ্রীস

এথেন্স’কে বলা হয় গণতন্ত্রের জন্মভূমি আর অপরদিকে স্পার্টা ছিল দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা তৈরির জন্য কারখানা। শুধুমাত্র সুযোদ্ধাদেরই স্পার্টার যোগ্য সন্তান বলে বিবেচনা করা হত, আর দুর্বলের প্রতি তাদের এতোই ঘৃণা ছিল যে জন্মের পর কোন নবজাতকের সামান্য খুঁত পেলেই বধ্যভূমিতে নিয়ে ফেলে আসা হতো।

যেভাবে সুত্রপাতঃ
৫৪০ বিসি’তে এথেন্স রাজা হিবিয়াস এর স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে এথেন্সবাসী এবং শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাঁকে উৎখাতের জন্য আহ্বান করে স্পার্টানদের। তাতে কার্যসিদ্ধি হয় কিন্তু কাজ শেষ হয়ে গেলে স্পার্টানরা এথেন্স ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। এই নতুন বিপদ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য এথেন্সবাসী আবার দ্বারস্থ হয় ‘সুপার পাওয়ার’ পারস্য সাম্রজ্যের। পারস্য রাজা দারিয়ুস সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু বিনিময়ে এথেন্সকে শপথ করতে হয় পবিত্র ‘জল এবং মাটি’র(Earth and Water)। এদিকে নব্যগণতন্ত্রে বলীয়ান এথেন্সবাসী একসময় নিজেদের সঙ্ঘটিত করে ফেলে এবং প্রবল যুদ্ধে কোনরূপ পারস্য সাহায্য ছাড়াই স্পার্টানদের রাজ্য হতে বিতাড়িত করে দেয়।


স্পার্টানদের বিরুদ্ধে এথেন্সবাসীর প্রতিরোধ

যেহেতু পারস্য শক্তির কোন সাহায্য দরকার পড়েনি, তাই ভেবে নেয় পারস্যের সাথে করা চুক্তিরও আর কোন মূল্য নেই। কিন্তু ধূর্ত পারস্যরাজ এ সুযোগ হারাবে কেন!! ‘জল এবং মাটি’ চুক্তির দ্বারা এথেন্সের উপর পারস্যের কর্তৃত্ব দাবী করে বসে। ঘটনায় হতবাক এথেন্সবাসী কি করবে ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরাক্রমশালী পারস্যের আক্রমণ আসন্ন জেনেও প্রত্যাখ্যান করে এই দাসত্বের দাবী। ফলশ্রুতিতে পারস্য সাম্রাজ্য শুরু করে তাদের এথেন্স অভিযানের প্রস্তুতি।
এরিমধ্যে পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত লাইডিয়ান অঞ্চলের এক সাবেক গ্রীক কলোনিতে বিদ্রোহ শুরু হলে তাতে বিদ্রোহীদের সাহায্য পাঠায় এথেন্স। এ খবর শুনে ক্ষুব্ধ রাজা দারিয়ুস হুকুম দেয় এথেন্সকে আগুনে ভস্মীভূত করার। অবশেষে ৪৯৯ বিসিতে শুরু হয় পারস্যের এথেন্স দখল অভিযান।

সৈন্যভর্তি প্রায় ৬০০ পারস্য যুদ্ধজাহাজ যাত্রা করে এথেন্স জয়ের উদ্দেশ্যে, আসার পথে ছোট বড় সব গ্রীক দ্বীপ করায়ত্ত্ব হয় তাদের। মধ্যবর্তী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য দখলে নেয় গ্রীক দ্বীপ এরাত্রিয়া।


প্রাচীন বহুমাল্লা বিশিষ্ট যুদ্ধজাহাজ 'ট্রাইরিম'

এরপরেই সঙ্ঘটিত হয় পারস্য এবং এথেন্সের মধ্যে বিখ্যাত ম্যারাথন যুদ্ধ... (পরের পর্বে আসবে)

বিদ্রঃ আমার পূর্বের লেখা জলদস্যুকথনে'র দ্বিতীয়পর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেফ হলেই প্রকাশ করব। :P ;)
বসে থাকতে ইচ্ছা করছিলোনা তাই এই সিরিজটি শুরু করলাম। :)
আর লেখা বিষয়ক কথাটি হচ্ছে, আমার আগের ইতিহাস বিষয়ক লেখাটি পড়ে কেউ কেউ রেফারেন্স দেবার উপদেশ দিয়েছিল। আমিও স্বীকার করি তা দেওয়া উচিত। কিন্তু আমি এই ইতিহাসকে গল্পের মতই দেখতে ভালোবাসি, তাই কাঁচাহাতে সেভাবেই লেখার চেষ্টা করি। তথ্যসূত্রের বাহারে আমার নিজের লেখার মান কেউ দেখবেনা, সেই ভয়ে আর দেইনা। ;)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০১
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×