রসকষহীন স্যারদেরকেই কেন বাংলা পড়াতে হবে আমি জানি না ।
মেয়েটি যাতায়াত করত লঞ্চে । আমি শাহ্ জাহান হলে একটা সোনার লঞ্চ বানিয়ে দিতাম তার একা চলাচলের জন্য । অন্য সময় ঈদের ছুটিতে সর্বাধিক আনন্দিত হলেও এবার ভিন্ন কথা । “বার পার্বন তের পুজা তার উপর ঈদে একমাসের লম্বা ছুটি এবং ছাত্রজীবনের করুন পরিনতি” শীর্ষক রচনা লিখে প্রধানশিক্ষক বরাবর জমা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনায় ছিলাম আমি । নেহাত সামাদ স্যারের বেত একদিন জুটেছিল তাই এটা বাদ দিলাম । আমি এতটা বোকা ছিলাম না । একমাস অনেক সময় । সুন্দরি মেয়ে যদি কারো প্রেমে পড়ে যায় । না, না জানাতেই হবে । পত্র! না বাবা ! এই ভুল আর না । রতনাদির কান মলা খেয়েছি । হাতের লেখাটা উদ্ধার করতে পারেন নি, নইলে স্কুলটাই ছেড়ে দিতে হত । পেয়েছি! ঈদ কার্ড । দারুন দেখে । নির্ঘাত প্রেমে পড়বে ।
যেই কথা সেই কাজ । গাজী স্টোরের কর্ণধার অবাক নয়নে আমাকে দেখছেন । বাচ্চাদের ঈদ কার্ড ব্যবহারে নিষেদ থাকলে মনে হচ্ছে তিনি খুশি হতেন । আমি যতই লাভ(ভালবাসা) চিহ্নিত কার্ড চাই তিনি ততই আমকে চাঁদ তারা আঁকা কার্ড দেখান । নায়ক বালকের সদ্য জন্ম নেয়া ভালবাসাকে গলা টিপে হত্যাকরার মতন এক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে একটি প্রেম বিষয়ক ঈদ কার্ড আমি কিনতে সক্ষম হলাম । “ঈদ মোবারক জান । আই লাভ ইউ” লিখা কার্ডটি আমার হাতে থাকায় আমার হার্ডবিট প্রচুর বেড়ে গেল । কেউ দেখে ফেললে মানসম্মানের প্রশ্ন কিন্তু শার্টের নিচে লুকালে নষ্ট হবে বলে লুকানো গেল না । পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই । যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয় । দুই কদম আগ বাড়াতেই রাজমিনা । আমাকে পছন্দ করে । আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে গিয়াও যখন ভাবলেশ হীন আমাকে বুঝাতে পারে না তখন খানিকটা ব্যতিত হয় । আমার হাতের জিনিসটা দেখিয়া তার মুখখানা লাজুক বালিকার মত । আমারটা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি । গলা শুকিয়ে কাঠ । স্টোরের সামনে বাসা তাই বলে আমাকে দেখেই ছুটে আসতে হবে ।
“হাতে ওটা ঈদ কার্ড বুঝি”?
“না মানে হে, সামনে ঈদতো তাই ভাবলাম একটা কিনি” ।
“বা! অসমতো! দেখি” বলিয়া আমার হাত থেকে একটানে ছিনিয়া নিল । বুকে ব্যাথা লাগল । একটা সুক্ষটান অনুভব করলাম । কবিরা বলেন ওটাই ভালবাসা ।
“কিছু লিখস নাই কেনে,জানসনা কার্ডে নাম লিখতে হয়”?
“না মানে, কলম নাই। এমনেই কিনছি আরকি” ।
“আমার কাছে দারুন একটা কলম আছে । লেখাগুলো ঝিলমিল ঝিলমিল করে । চল বাসায় চল” রাজমিনা হাঁটা শুরু করল । আমিও তার পিছু পিছু কারন কার্ডটা তার হাতে । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । প্রেমটা বুঝি গেল । চোখের সামনে যার চেহারাটা ভেসে উঠল সে সেই মেয়েটির বড় ভাই । এক ক্লাস উপরে পড়ে । দানবীয় অবয়ব । কর্কশ কন্ঠস্বর । জুনিয়র পেটানোতে তার নামডাক আছে । এবার জানাজানি হবে, আমার ঘাড়ে পড়বে একমনি কিল । কাঁপা কাঁপা হাতে কলম ধরে বসে আছি । অক্ষর গুলো ভুলে গেছি।
“কিরে আমার সামনে লিখতে লজ্জা পাচ্ছিস, ঠিক আছে আমি অন্য দিক ঘুরছি”
“মানে, কি লিখতে হবে, কার নাম লিখতে হবে বুঝতে পারছি না, প্রথম ত”
“ভাজা মাছ উল্টাই খাইতে জানে না, যাকে দিবি তার নাম লিখে নিচে লেখ ভালবাসা গ্রহন কর” । চোখ বন্ধ করে একটা নাম লিখে ফেললাম । “ ও সীমা !” রাজমিনার করুন কন্ঠস্বরে আমার চোখ খুলল । রাজমিনা বেচারী! মনে হল “মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান যদি হয়” গানের রিহের্সাল করছে । কিন্তু একি আমি এ কার নাম লিখলাম । এটা তো সেই মেয়ের নাম না । ভয়ে আমি আমার এক অন্য বান্ধবীর নাম লিখে ফেলেছি ।
এত টাকার ঈদ কার্ড মাটি হয়ে গেল । আবারো কার্ডটা আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে নিতে রাজমিনা রুক্ষ কন্ঠে বলল “ এই তোদের মত অপরিনত বয়সের ছেলেদের জন্য আমাকে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় । জানিস আমি আর সীমা একসাথে প্রাইভেট পড়ি তাই আমার কাছেই এলি । যা দিয়ে দেব । বন্ধু বলে কথা । কিন্তু এই বারি শেষ ”।
পরের দিন । সীমার বাসার সবাই আমার বাসায় বেড়াতে আসলেন । সীমার মায়ের হাতে আমার দেয় ঈদ কার্ড । রাজমিনা ভুলে কন্যার জননীর হাতে কার্ড তুলে দিয়েছে । দুই পরিবারের সবাই বসিয়া হিসাব কষে দেখলেন সীমা আমার চে আট মাসের বড় । বাসা থেকে আমাকে বলা হল “ বদ ছেলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ক্লাসের বড় আপুদের প্রেম পত্র বিলি করা ” । আসামীর কাঠগড়ায় দাড়িয়ে আমি আমতা আমতা করে বললাম
“ প্রেম পত্র না, ওটা ঈদ কার্ড ছিল ” ।
লেখকঃ- শাকিল আহম্মেদ খান
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২