বাংলা সাহিত্যে "নীরা" নামে সিরিজ কবিতা লিখেছেন বিখ্যাত কবি ও ওপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । সেসব কবিতা বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ সম্পদ। এই টুকরো কবিতাগুলো একান্তই আমার নিজস্ব লেখা।
এখানে কবিতার শুদ্ধতা এড়িয়ে গেছি,কেবল কবিতার মত ভাবনার প্রকাশ ...
১ ।
চোখ নয় যেন বরন ডালা-তাকালেই গ্রেফতার,
হাত নয়-ছুলেই হাতকড়া,কানে দুল নয় জোৎস্নার ফুল-
এলোমেলো বোঝালো গহীনে তৃষ্ণারা..
দীঘল চুল নয়-কালো মেঘের ইশারা,
দুঃখ নয়-ভাঙা সানকিতে বৃষ্টির স্বচ্ছ জল,
মন নয়-ভরা নদী ছলছল,
শুরু আছে শেষ নেই,এমনি ভালবাসি নীরা//
২।
প্রেমিক-আততায়ী নই,
আজ থাক শহুরে কথকতা নয়নে নয়ন
শর্তহীন নির্জন রাতের ইশারা,
পরনে শাড়ীর কুচি
শার্টের আটা বোতাম ঠিকঠাক
আংগুলে আংগুল থাক ভয় নেই নীরা //
৩।
আমাদের রাত্রি দিন চোখে অভিমান,
অনুভবে ভালবাসা জানেনা কেউ এই শহরে-এমনি জীবনধারা,
এই ঘরদোর নরম বালিশ দখিন জানালা
সব ভালোলাগে তুমি কাছে থাকলেই নীরা//
৪।
জানি রোজ সকালে মুৃদু কোলাহল ফেলে হেটে যাবে,
চন্দ্রাভিজান তো নয়..খুব খুব থাকে তাড়া..
জানি অফিস,নীরার টেবিলে ফাইল,সময় নেই,
নিয়ম বলে কিছু আছে..আমার হাতে অদৃশ্য হাতকড়া//
৫।দশটি আংগুল আজও বন্দী থাক,
অনুভবে তুলে দিলাম সমুদয় চোখের কিনারা,
কপাল কার্নিশে ছোয়ালে ঠোট,
কোজাগরী রাতে যঠরের তৃষ্ণা রেখে গেলে নীরা//
৬।
ঘুমোও তুমি,রুপালি চাদ ঢেকে থাক
মেঘে..দেয়ালের ওপাশে জাগে জাগুক নক্ষত্রেরা,
সুদুরের মেয়ে রাত্রির বুক চিড়ে চলে যাক শেষ ট্রেইন,
বাজুক হুইসেল-ঘুমোও তুমি নীরা/
৭।
অধীর অপেক্ষায় গেল আরও একটি বিকেল,
অতঃপর সাদা গেট পেরিয়ে তোমার ঘরে ফেরা...
আরেক সন্ধ্যে ঘনিয়ে এল,সুনসান আধার নামে,দু
রে বাজে কাসার ঘন্টা,ব্যাস্ত নগরী মায়াবী হল নীরা//
৮।
আমি কবি নই-কবিতার মুখোপাত্র,
জয়ী নই পরাজিত নই,
তুমি থাকলেই আমার সব থাকে, ধীরে মুছে যায় বেদনারা....
কোন বিপ্লবী নই- দেবতা নই,
তোমাকেই দেবী বলে জানি,
তুমি হাত বাড়ালেই আমি আছি, যখন এ হাত ধরেছি নীরা//
৯।
বুকে কোমল তৃষ্ণার জল,মনের আবডালে লুকোনো ব্যাথা
-চোখ চোখে বওনি হলেই আমরা সর্বহারা,
এই নগর স্বার্থপর,যেতে যেতও প্রথম মৃত্যুর খুব কাছে থেকে ডেকে নিল প্রেম,
একটি কথা ভালোবাসি-নীরা//
১০।
যদি নিজেই পারতাম
যা কিছু চাই তা যোগাঢ় যন্ত্র করতে,
না কোন মানুষ নয় কোন লৌকিক দেবতার
কাছে না চেয়ে..
এই দ্রোহে তাপে কাপে শিরা উপশিরা,
ভেবে ভেবে যাতনার গর্তে দেবেছি,মিছেই এক
একটি ভোরের অপেক্ষা,
জানি বৃষ্টি এলে ভিজে যাব রোদ এলে যাব পুড়ে,
কেও বোঝেনা কেও কথা রাখেনা নীরা//
১১।
শালগ্রামশীলায় দাড়িয়ে দেবী নিগূড় মুন্ডু মালায়,
বোঝেনা কি ফুল বেলপাতার আড়ালে কতকাল কুড়ে খায় যাতনারা,,
শ্বশানের নীরবতা নিঝঝুম রাতে,পলকা হাওয়া বৃষ্টির কুচি রুপোয় জেগে থাকে সমূহ আশা,
অপরাজিতা তোমায় জানি,বাচতে শিখ নীরা //
১২।
যন্ত্রনার আকিবুকি মনে,
বিদ্যুতের খুটি যেমন আকড়ে থাকে সমুহ তার দিগবিদিগ-
কতকাল আসেনি সুখের পায়রারা,,
চাদের বাড়ি মেঘের গাড়ি আসছে যাচ্ছে,
তুমি ঘুমোলেই এ শহর নিস্তব্ধ হবে,
তুমি ঘুমোলেই এ নগর ঘুমোবে নীরা//
১৩।
দুরে যাওয়া নেই,স্টেশানে বসি-
কেউ আসার নেই তবু অপেক্ষা রেলগাড়ি যদি আসে,
চোখের অতল চষে ফেলি,খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত ভাবনারা,
রোদের আশা নেই,ছাদে রেলিং ছুয়ে দাড়াই
-বৃষ্টি আসার নেই সহসা,অপেক্ষা যদি আসে,
বুকের অতল হাতরে দেখি,সেখানে একমাত্র নীরা//
১৪।
তোমার শহরে বাতি নিভে গেছে
জেগে আছে জোনাকিরা,
জামা জুতো,এলোমেলো বই আজ থাক
শুধু বুকে থাকো নীরা ।
১৫।
কেউ বলেনি,আমি শুনেছি
যেমন সন্তপর্ণে আড়াল থাকে বেদনারা,
আমি খুঁজেছি শুধু সেই তোমাকে
হৃদয় বলেছে... নীরা নীরা নীরা।
১৬।
নীরা,
চোখে বিদ্যুত লাফিয়ে ওঠে মনে যাতনা দাপিয়ে বেড়ায়,শেষবার দেখায়ও জানা ছিল,মুখোমুখি বসে আবারতো সেই পুরনো গোল টেবিল বৈঠকি সুআলোচনা।অন্তত সে আশা করেছিল কোমল দুটি হাত..এর নাম কি বলে সময় সভ্যতা, প্রশ্ন জাগে শুদ্ধচারী ছিল কবে?সন্ন্যাস নেবে না বলেই সমস্ত আয়োজন,মন্ত্র মালা গলে থাক,বেদনার রং জানে সে আকাশের যেমন।
জঠরের আধার কিনছি ব্যাক্তিগত সুখ বন্ধক রেখে...
প্রবাহমান ধমনী জনান্তিক ভালবাসায় পুড়ে যায় রোজ,পতনের সুরে বাজে অট্ট হাসি।
সময়ের খড়স্রোত টেনে নেয় নেই সব অনাকাঙ্ক্ষিতাদের স্মৃতিগত মুখের দিকে...আড়ষ্ট সমীকরণ,ভাবনার চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে যেতে দেখি আগামী দিনর সূর্য্য।বুক ভরে হাওয়া ভরে নিই, চিরকুটে লেখা কবিতা ভাসিয়ে দিই ফেনীল সমুদ্র জলে,বুক ভরে নিই বিশুদ্ধ বতাস।