নীরা,
আমি সেই--একলা ঘরে শুয়ে রইলে যার কথা তোমার মনে পরে না।বাহিরে-অফিসে যেয়ে যার জন্য সময় হয়না।বিশ্বাসী ভৃত্ত্বের মত আমি জানি তোমার হৃদয় করমচার মত সবুজ,সমস্ত বুক জুড়ে পুরাকালের গন্ধের মত ভেসে আসা সুদূরের ঘ্রান।আজকাল সেসব আমার জন্য নয়।এই মৌন জীবন,চোখের সীমা-প্রান্ত বেধে দিয়ে অনেক নির্ভার আছো।অস্থির অবগাহনে বুদ্ধের মূর্তির মতো আমার শান্ত দুই চোখ।যখন দেখি আমার চলার পথে জ্যোৎস্না ছিটকে পড়ে।তুমি দূরে থাকো ভুলে থাকো ।আমি একলা থাকি বিকেলবেলা,বিকেল তবু একলা থাকেনা।ঈশ্বর মহান,মনে হলেই ইচ্ছে করে ফেটে পরি অট্টহাসিতে।
ইয়োরোপের অন্যভুবন পেরিয়ে আসা আমার পান্থনিবাস এখন কারাবাস।জীবনের তিব্র চুপ তুমি উপহার দিলে হৈ হৈ জনসমুদ্রে,বাড়ি,জানালার কপাট,দরজা এমনকি হৃদয়ের অন্তঃপুরে। দিবাস রাতি,শুভ দিন , শুভ ক্ষন কখনও মনে পড়ে না ।আমার সব জলাঞ্জজলি-ভুলেও আমন্ত্রন দিলে না,তুমি সুচতুর সচেতন ভাবে এড়িয়ে গেছ সব পহেলা বৈশাখ,মাঘ সংক্রান্তির রাত, চৈত্রের দিন,কদম ফোটার দিন এমনকি কৃষ্ণ চুড়ার রঙ্গিন সব মুহূর্ত ।মাঝে মাঝে মনে হয় এই পথ চলা থমকে আছে,দু হাত নিচে-পা শূন্যে ।আমার মন কাঁদতে নেই,ছিঃ –চলার পথে হোঁচট বুকে বেতের মত পিটানো ব্যাথা।
মনে পড়ে এমন কোন দিন ? তুমি ডেকেছ-সারা পাওনি,আমার জানালা বন্ধ ছিল? ছিটকিনি খুলিনি ? আমার বুকে তোমার জন্য কেবল গোলাপ গাছ পুঁতেছি,সেই খানে তুমি থাকো অপার্থিবা ।আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এলে যে রকম পাপ হয়,আমি তোমার তেমন । তুমি কাছে থাকলেই আমার সব থাকে-আমি যেন খুঁজে পাই শান্তিনিকেতন। তুমি নদীর মত দেবী কোমল, জ্যোৎস্নার মত শুভ্র আমার চোখে ।এক দিন প্রতিদিন কতদিন তোমার মুঠো ফোনে বেল বাজে। আশায় আমার মনে হাজার চোখ জ্বলে থাকে,একবার যদি তবু শুনি তোমার কন্ঠ! জানি তুমি অনেক বিলাসি,অন্তত আমার ফোন দেখেও ফেলে রাখায়।
আমাদের সাজানো বাগানে কিছু লোক প্রেতের মত আসে,পিশাচের মত বাতাস ভারী করে রাখে। এর চেয়ে অমোঘ মৃত্যু শ্রেয়তর সুখ। এরা আমার ভালো লাগা কেড়ে নেয়।আমার সময় উড়িয়ে নেয় বেপরোয়া দস্যুর মত,যেখানে আমার ইচ্চেরা বিধ্বস্ত,বাগানে কুসুমগুলি মৃত । কেবল থাকে দাবাদহ আমার বুকজুড়ে কিন্নরী ব্যাথা। এরা রুপচোর,গন্ধহীন কর্পূরের মত গুপ্তচর।এদের গ্রীবায় সভ্যতা ধ্বংসের নিপুন ছাপ,ভালবাসা ছিড়ে কুরে এরা দিয়ে যায় উচ্ছিষ্ট পাঁজর ও পঁচা গলিত রক্ত,এরা আমাকে খেয়ে নেবে।
কি ভাবছো?সব কিছু বদলানো দরকার? নতুন গধুলি রাত্রি সকাল বিকেল চাই? ঘরের পর্দা ,দরজা এমনকি মনের অন্তপুর বদলে নেবে? দেখতে চাও কতটা বাতাস নামে হৃদয়ের গহীনে ? সুখ নয় পাপ নয় ভয় নয় পুরাতন জন্মের কথা নয়,কালের স্মৃতি সব ভুলে যাবে? দুপুরের রাস্তায় হঠাৎ আমি, সকালের অফিস যাবার পথের আমি,পার্সেলের ঠিকানায় লেখা আমি,সেল ফোনের ডায়ালে আমি, ঘুমোবার আগে আমি,মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি,অফিস ব্রেক এ আমি,অফিস শেষে পেছনে হলুদ গেইট ফেলে গেলে আমি! হিম সন্ধে বেলা, কি তপ্ত গরম, ফাকা বাড়ি,বাড়ীর চৌহদ্দি পেরিয়ে মনের সীমানায় যেখানেই দেখ দেখবে এক ঝলক আমি ।
কিছু মানুষ আশে পাশে ভিড় করে,যেন টুরিস্ট গাইড।বিনে পয়সার খিশ্তি। আশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে দেবদারু গাছের মত।যেন কিছু জানে না।আর যদি হয় রূপসী সুনয়না নারী? পরামর্শ দাতার অভাব হয়না। কথায় বলে কাঠের পুতুলও টাকা দেখলে হাত বাড়ায়। তেমনি গোলাপের বাগানে ধুতরা ফুল চাষি।শয়তানের ছায়া নিয়ে ঘিরে কাছে ভেড়ে ভাড়ারের মত।খুলনা আমার বুকে বিষম পাথর হয়ে আছে।এ শহর আমাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় রূপসার কাছে। আমার হাত ছাড়িয়ে কোথায় যাবে তুমি?এই শহর ট্রাফিক বাতি বড় বাজার ডাকবাংলো কোথাও ভুলে থাকতে পারবেনা,এমন কি নিজের মনের ওলিতে গোলীতে একাকী হোঁচট খাবে। জানালা খুলে ভয় পাবে, মাঝ রাতে আলো জ্বলে বসে থাকবে জুবুথুবু হয়ে ঘুম ভেঙ্গে।
সুনয়না মেয়ে জানি সোনাডাঙ্গার আকাশে এখন ঝকঝকে রোদ। শান্তিধাম মোড়ে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানি,সাহেবের কবর আমার আফসোস আরও বাড়িয়ে দেয়।প্রেসক্লাব,শামছুর রাহমান, খান জাহান আলি রোড গুলো প্রতিদিনের মত ব্যাস্ততা নিয়ে মুখর হবে।সাতরাস্তা রয়েল জন্মভুমি ভবন জাতির সংঘ পার্কের আশপাশ আমার মনে কেবল ভুবনডাঙ্গার আকাশ ডেকে আনে।ডানা মেলে সেখানে মেঘলা আকাশে উড়ে নিঃস্বংগ চিল,নিচে ঝিলমিল নদী শুকিয়ে আছে বিষাদে।তোমার মন থেকে আমাকে কাটা ছাড়ানো মাছের মত আলাদা করার জন্য অনেক ওরাং ওটাং চারবেলা চারদিকে।
আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখি তুমি রূপসা ব্রিজে রলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছো শান্ত ভাবে। ঝিরঝির মেঘলা বাতাসে তোমার খোলা চুল উড়ছে। গায়ের রঙ নিয়ে অনেক দুঃখ তোমার । রঙ টা একটু ময়লা,পদ্ম পাতার মত,কেউ বলবে না থির বিজুরি। একা ঘুমুতে তোমার অনেক ভয়। ঘুমের ভিতর তোমার আচমকা জেগে ওঠা কতদিন , সেল ফোনে তোমার ভারী নিঃশ্বাস-মাঝ রাতে পাশ ফিরে পানি খেতেও কত ভয় তোমার ! আজ তুমি কেমন শান্তভাবে কথা বল,আমার পৃথিবীতে ধিরে বৃষ্টি নামে।তোমার কাজল দীঘির মত ঘন কালো চোখে বিস্মৃতির মধ্যে শুনি এলাচের গন্ধমাখা হাসি। চোখ ও ভ্রুতে সে হাসি আরও শিল্প হয়ে ওঠে ।
(চলবে)
FB :https://www.facebook.com/sajid.e1.London