মুঘল সাম্রাজ্য ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত ছিল;এছাড়া আফগানিস্তান ও বেলুচিস্তানের বেশ কিছু এলাকাও মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলো। মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৭০৭ সাল পর্যন্ত এর সীমানা বিস্তার করে এবং ১৮৫৭ সালের এর পতন ঘটে।
চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লঙের উত্তরসূরী জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে দিল্লীর লোদী বংশীয় সর্বশেষ সুলতান ইবরাহিম লোদীকে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ছবিতে চেঙ্গিস খান
এই ২ টি ছবি তৈমুর লঙের
শাসনকাল ঃ
সময় সম্রাট
- ১৫২৬–১৪৩০ বাবর
- ১৫৩০–১৫৩৯ এবং পুনর্গঠনের পরে
১৫৫৫–১৫৫৬ হুমায়ুন
- ১৫৫৬–১৬০৫ আকবর
- ১৬০৫–১৬২৭ জাহাঙ্গীর
- ১৬২৮–১৬৫৮ শাহজাহান
- ১৬৫৯–১৭০৭ আওরঙ্গজেব
১৭০৭–১৮৫৭- অন্যান্য
পারিবারিক কুষ্ঠি
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ঃ
ইতিহাস
মুঘল সাম্রাজ্যের ৩০০ বছরের বেশি ইতিহাস অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী।
বাবরের ভারত আক্রমণ
ফরগণা নামে এক মধ্য এশিয় সামন্ত রাজ্যের তৈমুর বংশীয় রাজা ওমর শেখ মিরজার ছেলে বাবর মধ্য এশিয়া থেকে রাজ্যচ্যুত হয়ে কাবুল আক্রমণ করেন। এই সময় তিনি ভারত আক্রমণের পরিকল্পণা করেন।
ছবিতে বাবর
১৫২৬ সালে পাণিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে নিহত করে মুঘল সাম্রাজ্যের সুচনা করেন। এই যুদ্ধেই ভারতে প্রথম কামান ব্যবহার হয়েছিল।
খানুয়ার যুদ্ধ-এই যুদ্ধে বাবর রাজপুত রাজা সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করেন।
১ম পানি পথের যুদ্ধ
শেরশাহের উত্থান
বিহারের এক জায়গীরদারের ছেলে ফরিদ খান শেরশাহ নাম ধারণ করে বাবরপুত্র হুমায়ুনকে বিল্বগ্রাম ও চৌসার যুদ্ধে পরাজিত করলে হুমায়ুন পারস্যে রাজা তামাস্পের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা ভবিষ্যতে আকবরের শাসনব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে।
ছবিতে শের শাহ
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ ও আকবরের উত্থান
আকবর
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে শেরশাহের উত্তরাধিকারী আদিল শাহের সেনাপতি হিমু হুমায়ুনপুত্র আকবর ও তাঁর সেনাপতি বৈরাম খানের সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হোন।
ছবিতে বৈরাম খানের সেনাবাহিনীর
এরপর আকবরের শাসনকালে মুঘল সাম্রায্য উত্তর ও মধ্যভারতে বিস্তৃত হয়।
১৫৬০ সালে বৈরাম খানকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেণ।আকবর রাজপুতদের সাথে মিত্রতানীতি নেন। মান সিংহকে সেনাপতিত্বে বরণ করেন। কিন্তু মেবারের শাসক প্রতাপসিংহকে মিত্র করতে সফল হন নি।
ছবিতে আকবর
হলদিঘাটের যুদ্ধ
এই যুদ্ধে মুঘল পক্ষীয় সেনাপতি মান সিংহ মেবারের রাণা প্রতাপ সিংহকে পরাজিত করেন।
ছবিতে আকবরের সেনাপতি মান সিংহ
রাজমহলের যুদ্ধ *
মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মুনিম খান ১৫৭৫ সালের ৩ মার্চ আফগান শাসক দাউদ খার কররানীকে পরাজিত করলে মোগল সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে বাংলা।
এই যুদ্ধে দাউদ খান কররাণী পরাজিত হলে বাংলায় মুঘল শাসন শক্তিশালী হয়। যদিও পরে বারো ভুঁইয়া নামে পরিচিত জমিদারেরা বিদ্রোহ করেন। আমাদের বাংলার ঈসা খা আকবরের সেনা পতি মান সিং কে তরাবারী যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন ।
আকবরের পুত্র ছিলেন জাহাঙ্গীর।
৩১ শে অগাস্ট ১৫৬৯ এ জন্ম গ্রহন করেন। ভাল নাম নুরুদ্দিন সেলিম জাহাঙ্গির । রাজপুত জগত গসাই ছিলেন তার প্রিয় স্ত্রি, এর গরভে শাহজাহান জন্ম নেন । এছাড়া তিনি বিধবা নুর জাহান কে বিয়ে করেছিলেন ।
ছবিতে নুর জাহান
শাজাহানের ৪পুত্র ও ২ কন্যা ছিল ।
শাহজাহানের শাসনকাল
শাহজাহান তখতে এসে সমস্ত উত্তরাধিকারীর দাবীদারদের হত্যা করেন।
শাহজাহানের শাসনকালে জগত বিখ্যাত তাজমহল তৈরি হয়
ঔরংজীবের উত্থান
ঔরংজীব
শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর ছেলেরা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। দারা, সুজা ও মুরাদকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন ঔরংজীব। তিনি মারাঠা, ইংরেজ, শিখ ও অন্যান্য মুঘল্বিরোধীদের দমন করার সাময়িক চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে সফল হননি।
দাক্ষিণাত্য ক্ষত
এসময় মারাঠা নেতা শিবাজী সক্রিয় হয়ে ওঠেন যা মুঘল সাম্রায্যকে বিপন্ন করে।
ঔরংজীবের মৃত্যু ও পতনের সুচনা
ঔরংজীবের মৃত্যুতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর যোগ্য উত্তরসুরীর অভাব ভারতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়
সৈয়দ ভাতৃদ্বয় ও ফারুখশিয়ার
ফারুখশিয়ার নামে মুঘল সম্রাট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে ফরমান দেন।মুঘল সম্রাটদের অযোগ্যতা অনেক আমলাদের সক্রিয় করে তোলে এদের মধ্যে সৈয়দ ভাতৃদ্বয় উল্লেখ্য।
মহম্মদ শাহ আমল ও নাদির শাহের আক্রমণ
মহম্মদ শাহ সৈয়দ ভাতৃদ্বয়দের দমন করলেও তিনি অতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। পারস্য সম্রাট নাদির শাহ এসময় ভারত আক্রমণ করেন। দিল্লি শ্মশানে পরিণত হয়।
ছবিতে নাদির শাহ
মারাঠা সাম্রাজ্য ও আব্দালির আক্রমণ
মারাঠা সাম্রাজ্যের এসময় চরম উন্নতি হয়। কিন্তু আফগান নেতা আহমেদ শাহ আব্দালির হাতে পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠা প্রভাব বিনস্ট হয়। দিল্লি আবার লুন্ঠিত হয়।
শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর
এই যুদ্ধে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম অযোধ্যার নবাব সুজা উদ দোউলা ও বাংলার নবাব মীর কাশীমের সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বিরোধীতা করেন কিন্তু পরাজিত হন। তিনি ইংরেজদের দেওয়ানী দিতে বাধ্য হন। এরপর মুঘল সম্রাট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আশ্রিত হয়ে থাকেন। এই সময় মুঘল সাম্রাজ্য লালকেল্লায় সীমাবদ্ধ ছিল।
সিপাহী বিদ্রোহ ও মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ অবদমিত হলে যোগদান কারী মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে রেংগুণে পাঠানো হয়। এভাবে মুঘল সাম্রাজ্য শেষ হয়।