চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহনাফ. .সেই
ছোটবেলার অভ্যেস. ভ্যাদভ্যাদ করে তাকিয়ে
থাকা যাকে বলে আরকি.ছেলেকে নিয়ে
দুশ্চিন্তার অভাব নেই রাফিয়া বেগমের.
.দেখতে সুন্দর. .পড়াশুনায়ও ভাল. .যেকোনো
মেয়েকে সহজেই পটিয়ে ফেলতে পারবে.
.রাফিয়া বেগমের দুশ্চিন্তাটা ঠিক উল্টো
দিকে. .ছেলে তার সামান্য বোকা ধরণের.
.যদি কোনো খারাপ মেয়ের পাল্লাই পড়ে
যাই. .সারাজীবনের সব মেহনতই তো পানি হয়ে
যাবে. .আহনাফের বয়স ২১ বছর ৪ মাস ৭ দিন.
.বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে.
.বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার ইচ্ছাটাকেও
মেরে ফেলল আহনাফ. .মৃত মানুষের সবকিছু
থেকে যেন মৃত মৃত গন্ধ ছড়ায়. .তাই আহনাফ ভর্তি
হল চারুকলায়. .
-আহনাফ
-হু
-আমাকে চিনতে পেরেছিস? তোর তো আবার
শর্ট টাইম মেমোরী লস. .
-বুঝতে পারছি না চিনেছি কিনা
-আমি বীথি. .একসাথেই তো স্কুলে পড়লাম
-ও
এমন একটা ভাব যেন বীথিকে সে চিনতে
পারেনি. .বাস্তবতা হল বীথিকে সে ঠিকই
চিনেছে. .তাকে চিনবে না কাকে চিনবে.
.জীবনের প্রথম প্রেমকে কি কেউ ভুলতে পারে?
তবে বীথি কখনোই জানত না যে আহনাফ
তাকে ভালবাসে. .
-আহনাফ তুই কি আমাকে সত্যি চিনেছিস?
-না চিনলে এতগুলো প্রশ্নের জবাব দিতাম না
বীথি একটু হকচকিয়ে গেল এ ধরণের উত্তরে. .এই
উত্তরের জন্য সে কখনো প্রস্তুত ছিল না. .বীথি
দেখতে কিছুটা শ্যামলা. .কালো বলাটা
অন্যায় হবে. .তবে তার চেহারায় আলাদা
একটা মাধুর্য আছে. .এই মাধুর্যটাই তার সবচেয়ে
বড় সম্বল
-আন্টি কেমন আছে?
-ভালই তো
- তো কি মনে করে চারুকলায় ঢুকলি?
-কিছু মনে করার ইচ্ছা হয়নি বলেই চারুকলায়
ঢুকেছি
-আহনাফ
-হু
-তুই বদলে গেছিস
-মানুষ কখনো বদলায় না. .সময় আর পরিস্থিতি
বদলায়
-তুই কি আমার সাথে কথা বলতে কমপ্লেক্স ফীল
করছিস? আফটার অল আমি একটা কালো মেয়ে
-যদি বলি হ্যাঁ তাহলে?
-তাহলে আমি চলে যাব
-চলে যা তাহলে
শেষ বাক্যটা বলে আহনাফ নিজেই শিহরিত.
.নিজের ভালবাসার মানুষটাকে সে এটা কি
বলে ফেলল. .দিন যায়,মাস যায়. .আহনাফের
সাথে আরেকবার বন্ধুত্ব হয়ে যায় বীথির. .তবে
যৌবনে ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব যে কখনো
বন্ধুত্বে টিকে থাকে না তা হাড়েহাড়ে
টের পাচ্ছিল আহনাফ. .একবার ভাবল মনের
কথাটা বলেই ফেলি. .তারপর ভাবল না থাক.
.বীথি অন্য কাওকে ভালবাসতে পারে. .তখন
সে অযথাই কষ্ট পাবে. .এখন যে কষ্ট কিছুটা কম
পাচ্ছে তা কিন্তু না. .মধ্যপন্থা অবলম্বন করল
আহনাফ
-বীথি
-বল
-তোকে একটা কথা কথা বলতে চাচ্ছি
-এত হেজিটেট করছিস কেন?
-আচ্ছা বাদ দে. .পরে বলব
-পরে হয়তবা সময় না থাকতে পারে
-না থাকুক- your wish
-আচ্ছা একটা রিডল সলভ করিস তো "একটা পাখি
চারটা পাখি তিনটা পাখি"
-মানে কী?
-আসি
আহনাফের মনে হল বড় একটা পাথর নামল বুক
থেকে. .আচ্ছা বীথি যদি তাকে ফিরিয়ে
দেয়. .তাকে যদি অপমান করে? যা হওয়ার দেখা
যাবে. .২ মাস হল বীথির সাথে যোগাযোগ
নেই আহনাফের. .আজ ভার্সিটি তে দেখা.বীথি তার থেকে নেয়া কেমিস্ট্রি বইটা ফেরত দিল।
-কিরে আহনাফ ভাল আছিস?
-এইতো
-mood off?
-নাতো. .
-তোর রিডলটা সলভ করলাম
-কোন রিডল?
-ঐ যে পাখির রিডলটা
-ও. .
-উত্তরটা জানতে চাস না?
-বল
-it means i hate you
-হুম. .তোকে উইনার দেয়া গেল
-PRIZE?
-কি চাস?
-যা চাই তা দিবি?
-সাধ্যের মধ্যে থাকলে
-যা তোকে এবারের মত মাফ করে দিলাম
-ur wish
বীথি চলে গেল. .আহনাফ পুরো স্তম্ভিত. .তার
এত বছরের গোপন একটা রহস্য আজ উদঘাটিত হয়ে
গেল. .এবং যতটুকু ধারণা বীথির সাথে
বন্ধুত্বটাও গেল. .মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে.
.তবে কেন জানি আহনাফের আফসোস হচ্ছিল
না. .সে ভাবল যা হবার হয়ে গেছে এখন তাকে
সামনে তাকাতে হবে. .এই কয়েকদিন পড়াশুনা
হয়নি. .কেমিস্ট্রি পরিক্ষা আগামী সপ্তাহে, .
বইটা খুলে বসল আহনাফ. .বইয়ের মাঝখানে
একটুকরো কাগজ. .লেখা
"একটা গাধা চারটা গাধা তিনটা গাধা"