(এ পোষ্টটি শুধু মুসলিমদের জন্য। বাকিদের জন্য প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে)
"বাংলাদেশে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আহলে হাদিস অনুসারীদের একটি মসজিদসহ মাদ্রাসা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে মামলার তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
মামলায় ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় হেফাজতে ইসলাম এবং কওমী মাদ্রাসার সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাদ্রাসাটির পরিচালক অভিযোগ করেছেন, কয়েকশ লোকের হামলা চালিয়ে তাদের মসজিদ মাদ্রাসা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এখন তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে মারধোর করার অভিযোগ ওঠায় উত্তেজিত লোকজন ঘটনাটি ঘটিয়েছে।" -বিবিসি
এ ব্যপারে হেফাজতে ইসলামের যুম্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তার ফেসবুক পেজে এই ঘটনার নিন্দা জানানো তো দূরের কথা বরং বলেছেন, "স্থানীয় গ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ এটি ।"
উপরের ঘটনাগুলি আরও অনেকগুলি মিডিয়া এবং কিছু আলেমদের বক্তব্য থেকে জেনে, একজন মুসলিম হিসাবে খুব লজ্জা পেয়েছি। কারন আমরা সাধারন মুসলিমরা নিজেদেরকে তো কোন দলগত মুসলিম হিসাবে পরিচয় দেই না, তাই আল্লাহর জন্য সকল মুসলিমকে ভালবাসতে কোন কার্পন্য অনুভব করি না। ৫ই মে যখন কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা মার খেয়েছে তখনও কষ্ট পেয়েছি, তারা কোন মতধারার সেই চিন্তা চোখের জলধারায় এতটুকুও তো প্রভাব ফেলেনি। যখন শুনি কওমী মাদ্রাসায় একটি এতিম কষ্টে আছে, তখন তো তার অন্য কোন পরিচয় আমরা খুঁজে দেখি না, যদিও তারা যে ফিকহ অনুসরন করেন সেগুলোর কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতটিকে আমি পছ্ন্দ করি। যখন শুনি কোন মুসলিম ভাই ন্যয়বিচার পাচ্ছেন না বা বিনা দোষে রিমান্ডে কষ্ট পাচ্ছে, তখনও তো আমাদের হৃদয়ে একই রকম ব্যথা অনুভব হয় যদিও আমি তার দলীয় মতাদর্শের সাথে একমত হতে না পারি। আমরা তখনও কষ্ট পাই যখন দেখি তাবলীগের ভাইয়েদের রক্ত ঝরছে পারস্পারিক বিবাদে, যদিও তাদেরও কিছু বিষয়ের সাথে আমি একমত নই। এরপরও যখন তাবলীগের ভায়েরা রাস্তায় থামিয়ে তাদের দাওয়াতের কিছু কথা শোনাতে চায়, পূর্ণ বিনয় নিয়ে তাদের কথা শুনি এজন্য যে, তারা আল্লাহর জন্য বের হয়েছে এবং আমি আল্লাহর জন্যই তাদের দিকে আমার বিনয়কে উন্মোচন করে দেই।
কিন্তু এই দুঃখ কোথায় রাখবো যে, ভারতে মসজিদ ভাঙছে রামের অনুসারীরা আর বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা ভাঙছে রাসুল (সাঃ) এর অনুসারীর দাবীদারগন? তাও ইসলাম হেফাজত করার ব্যনারে সংগঠিত হওয়া মানুষগুলি? তাহলে হেফাজতে ইসলাম কি আসলে হানাফী মাযহাবের মত একটি ক্ষুদ্র ফিকহী স্বার্থ সংরক্ষন করার একটি সংগঠন, যাদের হাতে অন্য ফিকহের মসজিদ মাদ্রাসাও নিরাপদ নয়? যারা মসজিদ মাদ্রাসা ভেঙ্গে ফেলার নিন্দা জানাতে পারে না (যদি ধরে নেই তাদের বিচ্ছিন্ন লোকের কর্মকান্ড), আর তারাই ইসলাম হিফাজত করবে?
অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, "আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে, স্বজনের সম্পর্কে হলেও" [সুরা আল আন'আম-১৫২]
আর এভাবে মুসলিমরা যদি মুসলিমদের মসজিদ মাদ্রাসা ভেঙ্গে ফেলা শুরু করে তাহলে আর বিরোধীদের কোন কাজ নেই। আমাদের এ ধরনের কাজ মেক্রন বা মোদীদের একটি ব্যঙ্গাত্মক হাসি ছাড়া আর কিসের উদ্রেক করবে?
আজ লজ্জা হচ্ছে এই ভেবে যে সেদিন সিজদায় পড়ে এই মসজিদ-মাদ্রাসা ভাঙ্গার কারিগরদের জন্যই কি কেঁদেছিলাম? আমার মনে হয় সংগঠনের নামটা পরিবর্তন করে দিয়ে 'হেফাজতে হানাফি-মাযহাব' রাখলে আমাদের মত দলহীন সাধারন মুসলিমগনকে বিভ্রান্ত হতে হবে না। তবে তারপরও আপনাদের যতটুকু ভাল ততটুকু, আল্লাহর জন্য ভালবাসি। কারন আমার জীবনের চেয়ে প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -
- “ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম:৮১)
- ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না এবং একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।’ [মুসলিম : ৬৭০৫; মুসনাদ আহমদ : ৯০৫১]
- 'মুসলিম হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যার কথা ও হাত হতে অন্য মুসলিমগণ চিন্তামুক্ত।' (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ আমাদেরকে শুধু নামে বা শ্লোগানে নয়, বরং রাসুল (সাঃ) আদর্শ অনুযায়ী মুসলিম হওয়ার তাওফীক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৫