বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
কিছুদিন আগে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্ত -এই শিরোনামে ৫ পর্বের একটা flop সিরিজ পোস্ট প্রকাশ করেছিলাম আমার ব্লগে। পোস্টগুলো কেন flop হলো - তা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত নীচের একটি বা সব কয়টি কারণকেই সম্ভাব্য মনে হয়েছে:
ক) আমার রস-কষবিহীন লেখা এবং অপাঠ্য ভাষা
খ) ব্লগের বিশ্বাসী মুসলিম ভাই-বোনেরা এসব আগে থেকেই জানেন
গ) এসব "কচকচানি" শোনার বা পড়ার সময় নেই তাদের জীবনে
ঘ) জীবনের জন্য এর চেয়ে অনেক জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয় পড়তে তারা ব্যস্ত
যাহোক, যে দু'টো সাক্ষী পড়ে, জেনে ও বুঝে মুসলিম হতে হয়, আর, অব্যাহতভাবে মুসলিম থাকতে হয়, সেগুলো "কবুল" হবার ব্যাপারে বা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবার ব্যাপারে যে কিছু শর্ত রয়েছে - তা জানার আগেই জীবনের অনেক ক'টা বছর পার হয়ে গেছে। নিজে জানার পর মনে হয়েছে, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা যথাশীঘ্র সম্ভব অন্যান্য মুসলিম ভাই-বোনদের জানানো প্রয়োজন। সে থেকেই এই লাইনের লেখায় হাত দেয়া। দু'টো সাক্ষীর প্রথমটা নিয়ে উপরে উল্লিখিত সিরিজে আলাপ করেছি। এবার দেখা যাক দ্বিতীয়টিতে আমরা কি প্রত্যয়ন করি আর আমাদের জীবনে তার নিহিতার্থই বা কি?
প্রায় সবাই জানেন ইসলামে “দাখিল” হতে হলে “শাহাদা” গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু “শাহাদা”-র প্রথম অর্ধেক (বা দু'টি সাক্ষীর প্রথমটি) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হলেও, দ্বিতীয় অর্ধেক (বা দু'টি সাক্ষীর দ্বিতীয়টি) ততটা গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা হয় না - অথচ গুরুত্বের দিক থেকে তাও সমমানের। আসলে অনেক সময়েই অনেকেই “সিরাতুল মুস্তাকিম” বা ইসলাম থেকে এজন্য বিচ্যুত হয়ে যায় যে, সে “শাহাদার” দ্বিতীয় অংশটা (বা দু'টি সাক্ষীর দ্বিতীয়টি) সঠিকভাবে অনুসরণ করছে না।
যখন কেউ সাক্ষ্য দেয় যে “মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল”, তখন আসলে সে এটাই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়া আসলে তাঁর বাণীসমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য, তাঁর রাসূলকে সুনির্দিষ্টভাবে বেছে নিয়েছেন। কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন,
“এবং তোমার প্রভু যা ইচ্ছা করেন এবং যা বেছে নেন (যা পছন্দ করেন), তাই সৃষ্টি করেন।......” (সূরা আল ক্বাসাস, ২৮ : ৬৮)।
আল্লাহ্ সৃষ্টি করেন এবং তাঁর সবকিছু করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তার রাসূল হবার জন্য বেছে নিয়েছেন। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“.....কার কাছে তাঁর বাণী প্রেরণ করতে হবে, তা আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভালো জানেন।...” (সূরা আল আনাম, ৬ : ১২৪)
এ থেকে রাসূল (সা.)-এঁর কিছু বৈশিষ্ট নিশ্চিত হয়। আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা’লা তাঁর সুবিচার, প্রজ্ঞা ও করুণার গুণে গুণাম্বিত হয়ে এমন কাউকে তাঁর রাসূল হিসেবে বেছে নেবেন না, যে কিনা বিশ্বাসঘাতী অথবা মিথ্যাবাদী। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বা মিশনের জন্য আল্লাহ্ এমন কাউকে বেছে নিবেন না যার সম্বন্ধে আল্লাহ্ জানেন যে, সেই ব্যক্তি ঐ আল্লাহর বাণী ঠিকমত পৌঁছে দেবেন না অথবা তাঁর মর্যাদা - অর্থাৎ, রাসূল হিসেবে তাঁর মর্যাদা ও অবস্থানকে যিনি নিজ স্বার্থে ব্যবহার করবেন। কেউ যদি মনে করেন যে, রাসূল (সা.) আল্লাহর সব বাণী ঠিকমত পৌঁছে দেননি, অথবা কিছু বিকৃত করেছেন - তাহলে প্রকারান্তরে একথাই বলা হয় যে, আল্লাহ্ জানতেন না যে, তাঁর রাসূল হবার ব্যাপারে সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিটি কে ছিলেন!! এমন ভাবাটা স্পষ্টতই “কুফর”।
দ্বিতীয়ত যে কেউ যখন ‘শাহাদা’ উচ্চারণ করেন, তখন তিনি আসলে এই সাক্ষ্যও দিচ্ছেন যে, রাসূল (সা.)-কে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে - সবার জন্যই নবী ও রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন :
“বলুন [হে মুহাম্মদ] : হে মানবকুল! নিশ্চয়ই আমাকে তোমাদের জন্য রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে.....” (সূরা আল- আরাফ, ৭:১৫৮)
এছাড়া রাসূল (সা.) বুখারী ও মুসলিম সংগৃহীত হাদীসে বলেন : “আমাকে ৫টি ব্যাপার/বিষয় দান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কোন নবীকে দেয়া হয় নি.... [যার একটি হচ্ছে] সব নবীকে কেবল তার [নিজস্ব] জনগোষ্ঠীর জন্য পাঠানো হয়েছে, কিন্তু আমাকে গোটা মানবকুলের জন্য পাঠানো হয়েছে।”
নবী (সা.)-এঁর সময় থেকে নিয়ে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সবার জন্য নবী (সা.)-এঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন এবং তাকে অনুসরণ করা অবশ্যকরণীয় বা ফরজ। ইসলামের দাওয়াত বা বাণী যদি কোন ব্যক্তির কাছে স্পষ্টত পৌঁছে থাকে এবং সে তথাপি রাসূল (সা.)-এঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বা তাঁকে অনুসরণ করতে অস্বীকার করে - তবে সে একজন কাফির এবং চিরতরে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে - যদি না সে তওবা করে এবং ইসলাম কবুল করে।
এছাড়া উপরোক্ত বাস্তবতার নিহিতার্থ হচ্ছে এই যে, কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য রাসূল (সা.)-এঁর রেখে যাওয়া সুন্নাহ্ ও শিক্ষা অবশ্যকরণীয় ও বৈধ হয়ে থাকবে। অর্থাৎ তাঁর উদাহরণ এবং শিক্ষা, কেবল তার সময়কার আরব দেশের অধিবাসীদের জন্যই প্রযোজ্য নয় - বরং নিউ ইয়র্কেই হোক অথবা মালয়েশিয়ায় হোক - যে কোন জায়গায় অবিস্থত সকল মুসলিমের জন্য আজকের দিনেও তা একই রকম প্রযোজ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।
আজকাল কেউ কেউ এ ব্যাপারটায় দ্বিমত পোষণ করার চেষ্টা করে থাকেন যে, তাদের রাসূল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে! এ ধরনের মনোভাব প্রকাশ করার সময় তাদের অনুধাবন করা উচিত যে, তারা নিজেরা যে সাক্ষ্য দিয়েছেন - আসলে তারা তারই বিরোধিতা করছেন! তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, নবীর আনীত বাণী - যা কুর’আন ও ওহী ভিত্তিক সুন্নাহর সমন্বয়ে গঠিত - তা সকল মানবকুলের জন্য প্রযোজ্য! আজ যারা জীবনযাপন করছেন তাদের জন্যও!!
তৃতীয়ত কেউ যখন ‘শাহাদা’ গ্রহণ করে বা সাক্ষ্য দেয়, তখন সে নিশ্চয়তা সহকারে এই সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূল (সা.) তাঁর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন - তিনি সেই বাণী শুদ্ধভাবে, পূর্ণভাবে, সবটুকু পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন:
“........রাসূলের কর্তব্য হচ্ছে শুধুমাত্র পরিষ্কারভাবে (এই বাণী) পৌঁছে দেয়া (বা প্রচার করা)।” (আল- নূর, ২৪:৫৪)
আর রাসূল (সা.) নিজে বলে গেছেন : “আমি তোমাদের এক উজ্জ্বল পথের উপর রেখে গেলাম, যার রাত এবং দিন একই রকম। আমার পরে এপথ থেকে এমন কেউ বিচ্যুত হবে না, যে কিনা ধ্বংসপ্রাপ্ত নয় [অর্থাৎ যে বিচ্যুত হবে, সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে]” (আহমাদ ও আল-বাইহাকি - আলবানীর মতে সহীহ্)
রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে যে বাণী ও দিক নির্দেশনা লাভ করেছিলেন, তার সবটুকু তিনি তার উম্মতদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি সে সব পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে গেছেন। সুতরাং কেউ যখন ‘শাহাদা’ ঘোষণা করছে, তখন সে এটাও ঘোষণা করছে যে, রাসূল (সা.) দ্বীনের মৌলিক এবং আনুষঙ্গিক দিকগুলো - সবই আমাদের পৌঁছে দিয়ে গেছেন বা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে গেছেন। সুতরাং কারো দিক বা পথ নির্দেশনার জন্য প্রয়োজন, দ্বীনের এমন কোন অংশ নেই যা মানুষকে পৌঁছে দেয়া হয়নি - অথবা আল্লাহ্ বা আল্লাহর রাসূল (সা.) যা ভুলে গিয়ে থাকতে পারেন।
নবীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এই “পূর্ণ দিকনির্দেশনা” যখন হাতে রয়েছে, তখন অন্য আর কোন উৎস বা source-এর শরণাপন্ন হবার প্রয়োজন নেই। খৃষ্টান ও ইহুদীদের কিতাবের শরণাপন্ন হবার প্রয়োজন নেই কোন মুসলিমের। ওমর(রা.)-কে তাওরাত পড়তে দেখে রাসূল (সা.) অপছন্দ করে বলেছিলেন যে, যদি মূসা (আ.) বেঁচে থাকতেন, তবে তাঁকেও রাসূল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হতো। ধর্মতত্ত্ব জানার জন্য তাই কোন মুসলিমের গ্রীক দার্শনিকদের শরণাপন্ন হবার প্রয়োজন নেই। আসলে কোন মুসলিমেরই ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ব্যাপারে শিক্ষা লাভের জন্য কোন অমুসলিমের কাছে যাবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় এবং জরুরী সবকিছুই কুর’আন ও সুন্নাহয় রয়েছে। একজন মুসলিম যা সাক্ষ্য দিচ্ছে [অর্থাৎ শাহাদা] - এটা হচ্ছে তার অংশবিশেষ। মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূল (সা.) তাঁর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন - এটা হচ্ছে ‘শাহাদা’র অর্থের একটা অংশ।
চতুর্থত, ‘শাহাদা’য় যখন কেউ ঘোষণা করেন যে, “মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল” তখন তিনি এটাও ঘোষণা দিলেন যে, তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ্ প্রেরিত সর্বশেষ নবী। আল্লাহ্ কুর’আনে বলেন :
“মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং সে আল্লাহর রাসূল ও নবীদের মধ্যে সর্বশেষ।” (আল আহযাব, ৩৩ : ৪০)
মুহাম্মদ (সা.)-এঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। এমন কোন নবী বা আসমানী কিতাব আর আসবে না, যা এসে মুহাম্মদ (সা.) যা এনেছিলেন - সেই দ্বীন বা সুন্নাহকে বাতিল করে দেবে। সুতরাং সে সময়ের পরে কেউ এসে যখন নবুয়তের দাবী করবে, তখন আমরা নিঃসন্দেহে তাকে মিথ্যাবাদী প্রতারক বলে চিহ্নিত করে প্রত্যাখ্যান করবো। তাহলে একবার “শাহাদা” গ্রহণ করার পর, আর কাউকে এখন নবী বলে গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে সেই “শাহাদা”কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
যে কেউ যখন ঈমানের সাক্ষ্য বা “শাহাদা” ঘোষণা করে, তখন এর অর্থ এই নয় যে, সে কেবল নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করলো বরং এর সাথে সাথে সে নিজের কাঁধে এমন কিছু দায়িত্বও তুলে নেয়, যেগুলো তার উচ্চারিত সাক্ষ্য থেকে স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ কেউ যখন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে, তখন ঐ “শাহাদা” সত্যিকার সক্ষ্য হতে গেলে ঘোষণাকারী ঘোষণার মুহূর্ত থেকে - আর সব উপাস্য ত্যাগ করে কেবল আল্লাহর ইবাদত করার দায়িত্ব/কর্তব্যও তার কাঁধে তুলে নিচ্ছে। একইভাবে সে যখন “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” কথাটুকুর সাক্ষ্য দিচ্ছে বা ঘোষণা করছে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রাসূল (সা.)-এঁর ব্যাপারে কিছু দায়-দায়িত্বও সে তার কাঁধে তুলে নিচ্ছে। যদি সে এসব দায়-দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে পড়ে, তবে বুঝতে হবে যে, সে তার “ঈমানের ঘোষণা” পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলো। এই অপূর্ণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যখন সে আসলে “শাহাদার ঘোষণা” কে অস্বীকার করার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে - যখন সে রাসূল (সা.)-এঁর প্রতি তার দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করবে।
নবী (সা.)-এঁর প্রতি আমাদের দায়-দায়িত্ব বা করণীয়ের একটি হচ্ছে তাঁকে ভালোবাসা। এই ভালোবাসার অর্থ যেন তেন ভালোবাসা নয় - বরং “কারো পূর্ণ ঈমান রয়েছে” - একথা তার কাছে এই দাবী রাখে যে, সে রাসূল (সা.)-কে পৃথিবীর যে কোন কিছু বা যে কারো চেয়ে বেশি ভালোবাসে। আল্লাহ্ কুর’আনে বলেন:
“বল, ‘তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পত্নী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার তোমরা আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাসো - এসব বেশী প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত।’ আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা তওবা, ৯:২৪)
[এখানে আমাদের ভাবা উচিত যে, কোন কাফির, মুরতাদ - তসলিমা নাসরিন যা হুমায়ূন আযাদ শ্রেণীর কোন আঁতেল যখন রাসূল (সা.)-কে defame করে বা তাঁর চরিত্র হনন করে Ñ তখন আমরা কেমন অনুভব করি?! আমরা তো তারপরও ঐ শ্রেণীর কবি বা সাহিত্যিকদের লেখা পড়ি, তাদের বই কিনে তাদের হাতে পয়সা তুলে দেই যাতে তারা আরো বেশি বেশি তাঁকে অপমান করতে পারে। শুধু তাই নয় তাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক, “কুফরের আলো” ছড়ানো Dog Star শ্রেণীর পত্রিকাকে, আমরা এক ধরনের status symbol বানিয়ে নিয়েছি - যেন এগুলো পড়লেই আপনি রুচিসম্মত পাঠক বলে গণ্য হবেন!! পাঠক, একবার ভেবে দেখুন আপনার দশা যদি এমন হয়ে থাকে, তবে কি আপনি আপনার ‘শাহাদার” মর্যাদা রক্ষা করছেন?]
এছাড়া যখন কেউ তার ঈমানের ঘোষণা দেন - অর্থাৎ “শাহাদা” উচ্চারণ করেন, তখন আসলে তিনি বলছেন যে, শুদ্ধ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি যাতে রয়েছে - সে ধরনের একটা জীবনযাত্রা ও আচরণের [বা behavior-এর] এক দৃষ্টান্ত ও উদাহরণ হিসেবে তিনি রাসূল (সা.)-কে গ্রহণ করছেন। আল্লাহ্ কুর’আনে বলেন,
“বস্তুত আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে এক চমৎকার উদাহরণ - তার জন্য, যে আল্লাহর ও শেষ দিবসের ব্যাপারে আশা পোষণ করে এবং বেশি বেশি আল্লাহ্কে স্মরণ করে” (আল আহযাব, ৩৩ : ২১)
আল্লাহ্ আরো বলেন,
“বলুন (হে মুহাম্মদ) : তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন....” (আল ইমরান, ৩ : ৩১)
এটা খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার যে, কেউ কেউ “শাহাদা” ঘোষণা করতে পারে, তথা ঘোষণা করতে পারে যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী ও রাসূল - তথাপি তারা তাঁকে নিজেদের জন্য এক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না, তাঁর জীবনযাত্রার ধরণকে একজন বিশ্বাসীর জন্য অনুসরণীয় জীবন ব্যবস্থা বলে মনে করতে পারে না । তারা যে শুধু নিজেরাই রাসূল (সা.)-কে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করে তাই নয়, বরং তারা অন্য যারা রাসূলকে (সা.) অনুসরণীয় মনে করে, তাদেরও বিরোধিতা করে থাকে । এটা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ঐসব লোকরা যদি ‘শাহাদা’ উচ্চারণকারী মুসলিমও হয় - তবু, শাহাদার অর্থ ও নিহিতার্থ সম্বন্ধে তাদের স্পষ্ট ধারণা নেই।
নবী (সা.) বলেছেন : “আমি শপথ করে বলছি যে, তোমাদের মাঝে আমিই আল্লাহ্র ভয়ে সবচেয়ে ভীত এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে সবচেয়ে সচেতন। কিন্তু আমি রোজা রাখি এবং তা ভাঙ্গি (অর্থাৎ ইফতার করি), সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই (রাতে) এবং আমি নারীদের বিবাহও করি। আমার সুন্নাহ্ থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার কেউ নয় (অর্থাৎ আমার সত্যিকার অনুসারীদের একজন নয়)” (বুখারী)
এই হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, তিনি সবচেয়ে বেশি আল্লাহ্ ভীরু ও আল্লাহ্ সচেতন। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ না করার পেছনে কারো কোন যুক্তি থাকতে পারে না । তিনি আরো বলেছেন যে, তাঁর দৃষ্টান্ত থেকে (অর্থাৎ সুন্নাহ্ থেকে) যে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে তাঁর অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ বিশ্বস্ততার সাথে এই দাবী করতে পারে না যে, সে রাসূল (সা.)-কে আল্লাহর নবী হিসেবে বিশ্বাস করে ও মেনে নেয়, এবং একই সময়ে তাঁর জীবনকে অনুসরণীয় ও আদর্শ লক্ষ্য ভেবে নিজেকে সেরকম করে গড়ে তোলার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে বা তাঁকে আদর্শ ভাবতে অস্বীকার করে!!
লিখেছেন-শায়খ এনামুল হক
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১০