আচ্ছা বলুন তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কে?........উত্তর দেবার বদলে হয়ত ইতিমধ্যেই আমার উদ্দেশ্য ও রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছেন। কারন বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন মত/অনুমান/প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়াও আমাদের ইতিহাস অথবা ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের বিষয়টি আমাদের সবারই জানা। শৃধৃ আমাদের ইতিহাস নয় অতীতের যেকোন ইতিহাস যেমন ১ম বিশ্বযুদ্ধ বা ২য় বিশ্বযুদ্ধ অথবা হিটলার বা সিরাজউদ্দৌলার প্রাসংগীক ঘটনা নিয়ে নানা মুনির নানা মতের শেষ নেই।
কিন্তু বিষয়টাকে একটু ঘুরিয়ে ভেবে দেখুন তো মাত্র ৪০/৫০/৩০০ বছর আগের নিকট অতীতের এইসব মোটাদাগের ইতিহাসের তথ্যের শুদ্ধতা নিয়েই যদি এত প্রশ্ন বা অনিশ্চয়তা থাকে তাহলে ১৪০০ বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রুকু-সিজদার সময় কি পড়তেন বা প্রশ্রাব পায়খানা থেকে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন থেকে শুরু করে আমাদের ধর্ম/শরীযতের/জীবন বিধানের শুদ্ধতা নিয়ে কত প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তাহলে কিভাবে আমরা দাবি করছি ইসলাম সৃষ্টিকর্তার দেয়া সর্বশেষ নির্ভুল ও অবিকৃত জীবন বিধান? আসুন সংহ্মিপ্ত পরিসরে জেনে নেই।
ক. ইসলামে তথ্যের মুল উত্স সৃষ্টিকর্তা হতে প্রাপ্ত ওহী:
এটা হয়ত আমাদের কারোই অজানা নয় যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক, যা কিছু তাঁর কাছে গ্রহনযোগ্য বা সন্তুষ্টির কারন অথবা অগ্রহনযোগ্য বা অসন্তুষ্টির কারন, যা কিছু আমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করে অথবা যা কিছু আমাদের জাহান্নামের নিকটবর্তী করে......তা তিঁনি শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন।
“যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। (সুরা বাকারা:১৫১)”
কুরআন মজীদে বারংবার এরশাদ করা হয়েছে যে, মহিমাময় আল্লাহ তাঁর রাসুলকে (সাঃ) দুইটি বিষয় প্রদান করেছেন: একটি কিতাব বা পুস্তক এবং দ্বিতীয়টি হিকমাহ বা প্রঞ্জা। (সুরা বাকারা ১২৯,১৫১,২৩১; আল ইমরান-১৬৪, সুরা নিসা-১১৩; সুরা আহযাব-৩৪; সুরা জুমুআহ-২)। এখানে পুস্তক বা কিতাব হল কুরআনুল কারীম, যা হুবহু ওহীর শব্দে ও বাক্যে সংকলিত হয়েছে। আর হিকমাহ বা প্রঞ্জা হল ওহীর মাধ্যমে প্রদত্ত অতিরিক্ত প্রয়োগিক ঞ্জান যা হাদীস নামে সংকলিত হয়েছে। কাজেই ইসলামে ওহী দুই প্রকার কুরআন ও হাদীস। মুলত এ দুটিই (কুরআন ও হাদীস) ইসলামের তথ্যের মুল উত্স। ওহী/জীবরাইল (আঃ) রাসুলুল্লাহর (সাঃ) পর আর কারও কাছে আসেননি এবং অন্যকোন উত্স থেকেও মুল ইসলাম আসেনি। তাই সকল ইসলামিক বিশ্বাস, মুলনীতি, বিধিবিধান, গবেষনা বা ঐক্যমত্য এই ওহীর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
খ. ওহীসমুহ সৃষ্টিকর্তা কতৃক সংরহ্মিত :
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
আমি স্বয়ং এ উপদেশ(الذِّكْر) অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (আল হিজর:৯)
এ আয়াতে al-dhikr الذِّكْر শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে, যা কুরআনের অন্যান্ন স্হানেও ব্যাবহার করা হয়েছে (যেমন: আল আম্বিয়া-৫০, আন নাহল-৪৩,৪৪) যা মুলত কুরআন এবং সুন্নাহ তথা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা থেকে নাযিলকৃত ধর্ম নির্দেশ করে।
‘এবং তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।‘(আন নাজম: ৩)
“জিবরীল রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে সুন্নাহ নিয়ে আসতেন, যেভাবে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে কুরআন নিয়ে আসতেন।”. Narrated by al-Daarimi in his Sunan (588) and by al-Khateeb in al-Kifaayah (12). It was attributed by al-Haafiz in al-Fath (13/291) to al-Bayhaqi, and he said: With a saheeh isnaad.
( এ বিষয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে...http://www.islamqa.com/en/ref/77243)
গ. ওহী সমুহ বিশুদ্ধভাবে সংরহ্মিত
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কিভাবে সংরহ্মিত হয়েছে তা মোটামুটি আমাদের সবারই জানা। সময় এবং পরিসরের স্বল্পতার জন্য এখানে সে বিষযে বিশদ আলোচনা না করে ওহীর দ্বিতীয় অংশ তথা সুন্নাহ বা হাদীসের সংরহ্মনের ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা হল। কুরআন সংরহ্মনের ব্যাপারে বিস্তারিত এখানে পাওয়া যাবে ...http://www.islamqa.com/en/ref/10012
মহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মাদীর প্রথম যুগের মানুষদেরকে তাঁর মহান রাসুল (সাঃ)-এর হাদীস সংরহ্মনের বিষয়ে একটি সঠিক ও সময়োপযোগী কর্মের তাওফীক প্রদান করেন। প্রথম হিজরী শতক থেকে সাহাবী, তাবিয়ী ও তত্পরবর্তী যুগের আলিমগন মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি গ্রামগঞ্জ, শহর ও জনপদ ঘুরে ঘুরে সকল হাদীস ও বর্নাকারীগনের তথ্যাদী সংগ্রহ করতেন। মুহাদ্দীসগন দীর্ঘ কয়েক বছর বা কয়েক যুগ এভাবে সফর করে সকল জনপদের সকল রাবীর বা মুহাদ্দীসের নিকট থেকে হাদীস শুনেছেন এবং লিপিবদ্ধ করেছেন। একজন সাহাবীর বা একজন তাবেয়ীর একটিমাত্র হাদীস বিভিন্ন রাবীর মুখ থেকে শুনতে ও সংগ্রহ করতে তাঁরা শত-শত মাইল সফর করেছেন। একটি হাদীসই তাঁরা শত শত সনদে সংগ্রহ করে তুলনার মাধ্যমে নির্ভুল ও ভুল বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করেছেন।
হাদীসের বিশুদ্ধতা রহ্মার জন্য তারা নিম্নলিখিত পদহ্মেপগুলি গ্রহন করেছেনঃ
১. সকল হাদীসের সনদ অর্থাত সুত্র বা reference সংরহ্মন
২. সনদের সকল রাবী-র ব্যাক্তিগত পরিচয়, জন্ম, মৃত্যু, শিহ্মা, উস্তাদ, ছাত্র, কর্ম, সফর ইত্যাদী যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ।
৩. রাবীগনের ব্যাক্তিগত সততা, বিশ্বস্ততা ও সত্যপরায়নতা যাচাই করা।
৪. বর্নিত হাদীসের অর্থগত নিরিহ্মা ও যাচাই করা।
৫. সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবী তার উর্ধ্বতন রাবী-র নিকট থেকে স্বকর্ণে হাদীসটি শুনেছেন কিনা তা যাচাই করা।
৬. সংগৃহীত সকল হাদীসের তুলনামূলক নিরীহ্মার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত মিথ্যা থেকে নির্ভুল বর্ণনাগুলি পৃথক করা।
৭. সংগৃহীত তথ্যাদি ও তুলনামূলক নিরীহ্মার মাধ্যমে যে সকল রাবীর মিথ্যাচার ধরা পড়েছে তাদের মিথ্যাচার উম্মাহর সামনে তুলে ধরা।
৮. সংগৃহীত সকল হাদিস সনদসহ গ্রন্থায়িত করা
৯. রাবীদের নির্ভুলতা বা মিথ্যাচার বিষয়ক তথ্যাদি গ্রন্থায়িত করা
১০. পৃথক গ্রন্থে বিশুদ্ধ হাদীস সংকলিত করা
১১. পৃথক গ্রন্থে মিথ্যা ও জাল হাদীসগুলি সংকলিত করা
১২. জাল বা মিথ্যা হাদীস সহজে চেনার নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করা।
(হাদীস সংকলনের, সংরহ্মনের এবং বিশুদ্ধতা রহ্মার ইতিহাস বিস্তারিত জানতে ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের হাদীসের নামে জালিয়াতি বইটির প্রথম পর্ব পড়তে পারেন। বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন...http://www.shorolpoth.com/wp-content/uploads/2012/10/hadiser-name-jaliati-INTRODUCTION.pdf)
এতগুলি তথ্য সংগ্রহ ও নিরিহ্মার পর তারা হাদিসকে শুদ্ধতার শ্রেনীবিভাগে বিভক্ত করেছেন অর্থাত সহীহ, যয়ীফ বা জাল বলেছেন। এবং কোন হাদিস নিচের criteria গুলোর সবগুলো পুর্ণ করলেই কেবল তাকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছেঃ
১) হাদীসের সকল বর্ণনাকারী বা রাবী পরিপূর্ণ সত ও বিশ্বস্ত বলে প্রমানিত।
২) সকল রাবীর ‘নির্ভুল বর্ণনা ক্ষমতা’ পূর্ণরূপে বিদ্যমান বলে প্রমানিত।
৩) সনদের প্রত্যকে রাবী তাঁর ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে স্বকর্ণে হাদিসটি শুনেছেন বলে প্রমানিত।
৪) হাদীসটি অন্যান্য প্রমানিত হাদীসের বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমানিত।
৫) হাদিসটির মধ্যে সূক্ষ্ম কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি নেই বলে প্রমানিত।
পৃথিবীতে আর কোন বিস্তারিত ইতিহাস/তথ্য এত নির্ভুল ভাবে সংরহ্মনের নজির নেই। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন ব্যাক্তির-ই বানী-কর্ম-অনুমোদন এত বিস্তারিত ও বিশুদ্ধভাবে সংরহ্মিত হয়নি।
তাই ইসলামের বিশুদ্ধতার এ সৌন্দর্যে অবিভুত হয়ে অনেক আমুসলিমই ইসলামকে আলিঙ্গন করেছেন। যেমন দেখুন না খ্রীষ্ট ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহন করার পর কি সুন্দর ভাবেই না ইসলামের বিশুদ্ধতার প্রমান দিচ্ছেন আব্দুর রহিম গ্রীনঃ
কুরআন সত্যতা: Click This Link
হাদিসের/সুন্নাহর সত্যতা: Click This Link
ঘ. দ্বীন ইসলাম পরিপুর্নঃ
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল”। (আল মায়েদা: ৩)
সেই দিনটি ছিল আরাফাতের দিন, আর তা ছিল বিদায় হজের সময়কার জুম‘আর দিন। এই আয়াতটি ঐ দিন বিকাল বেলায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারী কিতাবুল ঈমান ১/১৭; মুসলিম-৩০১৭) আর এই আয়াতটি অবতীর্ণের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাশি দিন জীবিত ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতের মধ্যে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য আমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, সুতরাং তিনি কখনও তার মধ্যে কমতি করবেন না এবং কখনও বৃদ্ধিরও প্রয়োজন হবে না। আর এই জন্যই তিনি আমাদের নবীর মাধ্যমে নবীদের আগমনের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
আর তিনি এই আয়াতের মধ্যে আরও স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য ইসলামকে আমাদের দ্বীন হিসেবে পছন্দ করেছেন, তাই এই দ্বীনের প্রতি তিনি কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না। আর এ কারণেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কারও নিকট থেকে তিনি ইসলাম ব্যতীত কোন কিছু গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন:
“কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং সে হবে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” - (সূরা আল ইমরান: ৮৫); তিনি আরও বলেন:
“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম” — (সূরা আল ইমরান: ১৯);
আর দীন পরিপূর্ণ করে দেয়া এবং তার যাবতীয় বিধিবিধান বর্ণনা করার মধ্যে উভয় জগতের সকল প্রকার নিয়ামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাই তিনি বলেছেন:
“এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম।” - (সূরা আল-মায়িদা: ৩)
এই আয়াতখানা একটি সুস্পষ্ট ভাষ্য, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে: নিঃসন্দেহে দীনে-ইসলাম মানুষের প্রয়োজনীয় দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয় ব্যাখ্যাসহকারে যথাযথভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে।
(আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন..http://www.shorolpoth.com/wp-content/uploads/2012/10/bn_islam_ekmatro_poripurno_deen.pdf)
তাইতো এরশাদ/মইন.ইউ.আহমেদ/কোন পীরসাহেব নবীজিকে স্বপ্নে দেখল, কি না দেখল, অথবা কোন বুজুর্গের কোন কারামত দেখা গেল, কি না গেল, তাতে পূর্নতাপ্রাপ্ত দ্বীন ইসলামের অথবা অন্যান্য মুসলিম সমাজের কিছু আসে যায় না। এটা আমার আপনার এমনকি ঐ বুজুর্গের(!) উপর থেকেও দ্বীন ইসলামের কোন হুকুম আহকাম এতটুকু কমাতে বা বাড়াতে পারবে না।
ঙ. দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজন নিষিদ্ধঃ
দ্বীন ইসলামকে শুধু পরিপূর্ণতার ঘোষনা দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বরং এই পরিপূর্ণতার ব্যাত্যয় ঘটানোকে তথা দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন বিয়োজনকে সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
“যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে”। (বুখারী ও মুসলিম)
“সকল নব-আবিস্কৃত (দীনের মধ্যে) বিষয় হতে সাবধান! কেননা প্রত্যেকটি নব-আবিস্কৃত বিষয় বিদ‘আত, আর প্রত্যেকটি বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিনাম জাহান্নাম”। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী)
“যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করবে বা কোন নবাবিস্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ……. তার ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ, নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া কবুল করা হবে না ….।” (বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০)
চ. রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে সন্দেহযুক্ত কথা তথা জাল-যয়ীফের চর্চার ব্যাপারে সতর্কবানী/নিষেধাঞ্জাঃ
আল্লাহ বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে কোন ফাসেক ব্যক্তি কোন খবর দিলে তা যাচাই কর।” (হুজুরাত-৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি আমার থেকে এমন হাদীছ বর্ণনা করে যে, তার ধারণা হয় ওটা মিথ্যাও হতে পারে, তবে সে অন্যতম সেরা মিথ্যুক। (মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
“একজন ব্যক্তির মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই (পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে) বলে বেড়াবে।” (মুক্বাদ্দামা মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপরে মিথ্যা রোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বুখারী ও মুসলিম)।
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছগুলি দ্বারা এটাই প্রতিভাত হয় যে, হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং এ বাক্যগুলো থেকে হাদীছের ছহীহ-যঈফ যাচাই কতটুক আবশ্যক তা সহজেই অনুমেয়। (বিস্তারিত পাবেন এখানে..http://www.shorolpoth.com/যà¦à¦«-à¦-à¦à¦¾à¦²-হাদà§à¦/)
ছ. এই ওহীই দ্বীন ইসলামের Benchmark:
এই পরিপূর্ণ এবং বিশুদ্ধ ওহীই হচ্ছে আমাদের দ্বীন ইসলামের একমাত্র Benchmark তথা সত্য-মিথ্যার বা ভাল-খারাপের পার্থক্যকারী। কে সিরাতুল মুস্তাকিমের কাছাকাছি আছি, তা আমাদের এই Benchmark থেকেই মেপে দেখতে হবে। কাজেই পতিতার পুনর্বাসন ভাল না খারাপ তা আমাদের এই Benchmark থেকেই জেনে/বুঝে নিতে হবে; মন্ত্রী সাহেব বা সুশীল সমাজের কাছ থেকে নয়। তাইতো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যদি পর্ণোগ্রাফী/সমকামিতা/ব্যাভিচার বা ধর্মনিরপেহ্মতার পহ্মে ভোট দেয় গনতন্ত্রে তা হয়ত গ্রহনযোগ্য হয়ে যাবে, কিন্তু ইসলামে তা অগ্রহনযোগ্য বা বড় গুনাহর কাজ হিসাবেই থেকে যাবে। সময়ের পরিক্রমায় বিঞ্জান তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে, স্হানের পরিবর্তনে কালচার তার অবয়ব পরিবর্তন করেছে অথবা অবস্হা ভেদে যুক্তিও তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে কিন্তু ১৪০০ বছর আগে পরিপুর্ন ভাবে নাযিল হওয়া ইসলাম আজও অপরিবর্তিত, আজও পর্দা/হুদুদ/জিহাদ-কে কোন চক্রান্ত ইসলাম থেকে বাদ দিতে পারেনি আবার আজও সমাজতন্ত্র/নারীবাদ/সন্নাসীবাদ-কে ইসলামের মধ্যে কেউ ঢুকাতে পারেনি, ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্তও পারবে না।
কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এই বিশুদ্ধ ও পরিপুর্ণ ইসলামে আমরা ওহীর ঞ্জান অর্জন ছেড়ে দিয়ে এখন স্বপ্ন/কিছছা-কাহিনী/জাল-যয়ীফ চর্চা ও প্রচার শুরু করেছি। সহীহ হাদীস ছেড়ে দিয়ে আমরা মীর মোশাররফ হোসেনের কারবালার পড়ে সাহাবা (রাঃ)গনকে গালিগালাজ করছি। আর তাইতো আজ মুসলিম ফীরকা/দল/উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পরিশেষে একটি পরিবারের একটি সত্য ঘটনা বলে শেষ করছিঃ
আমার ছোট বোনের বয়স তখন ৮ বা ৯ বছর হবে। ছোটবেলা থেকেই সে মায়ের অত্যন্ত বাধ্যগত মেয়ে ছিল। একবার সে প্রতিদিনের মত বাইরে বান্ধবীদের সাথে খেলতে/ঘুরতে গেছে। বাসা থেকে একটু দুরে কোন একজন লোক তাকে খুব সুন্দর করে বলল তোমার আম্মা স্বর্নকারের দোকানে আছেন এবং এরকম আরেকটা দুল বানাবেন, তাই তোমার কানের দুলটা চাচ্ছেন....। বাধ্যগত মেয়ে হিসাবে সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে তার স্বর্নের কানের দুলটা খুলে দিয়ে দিল। এবং খানিক পরে বাসায় এসে দেখতে পেল আম্মা বাসাই আছেন। স্বভাবতই তাড়াতাড়ি মাকে ব্যাপারটা জিঞ্জাসা করল, আর সব ঘটনা বলার পর মায়ের বকুনিই শুনতে হল এবং সুন্দর ও একমাত্র কানের দুলটা হারাতে হল।
---এখানে আমার বোনের আনুগত্যের কোন অভাব ছিল না কিন্তু তথ্যের শুদ্ধতা যাচাই না করে অন্ধ আনুগত্যের কারনে তাকে বিপদে পড়তে হল এবং আনুগত্যের পুরস্কারের বদলে তিরস্কার পেতে হল।আমরা যেন আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের হ্মেত্রে এমন মারাত্মক ভুল না করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ ইলম অর্জন এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪