“গল্পটা অনেকদিন আগের শোনা। একদেশে এক মুঁচি ছিল, যে নির্দ্বীধায় মানুষের শরীরে অস্ত্রপাচার করত এবং তার মাধ্যমে অনেক রোগী ভালও হত। কিছুদিন পর সেই দেশে এক ডাক্তার আসল, কিন্তু কেউ সেই ডাক্তারের কাছে যায় না, কারন ডাক্তার সাহেব অনেক চিন্তা ভাবনা করেন আর অনেক সময় নিয়ে অস্ত্রপাচার করে থাকেন। অপরদিকে মুঁচি সাহেব তো অনেক সিদ্ধ হস্ত আর তার অনেক নাম ডাক। রোগী না পেতে পেতে ডাক্তার হতাস হয়ে গেল। এরপর অনেক চিন্তা ভাবনা করে ডাক্তার সাহেব একটা কাজ করল। সে মুঁচির কাছে গেল এবং তাকে বলল যেহেতু এই দেশে আমারা দুজনেই একই কাজ করি...তাই আসুন আমরা আমাদের ঞ্জান শেয়ার করি তাহলে তা দুজনেরই উপকারে আসবে। এই বলে ডাক্তার সাহেব যখন তাকে কাটাছেড়া করার বিপদজনক দিকগুলি শেয়ার করলেন। এরপর থেকে মুঁচি সাহেব আর অস্ত্রপাচার করতে পারে না, কারন এখন অস্ত্রপাচার করতে গেলেই তার হাত কাঁপে।............।“
গল্পটির সাথে আমি এটি সত্য ঘটনার বেশ মিল পেয়েছি। ঘটনাটি পৃথিবীর অন্যতম পবিত্র স্হান মদীনার। সেখানে মদীনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বড় শায়খকে কোন এক হালাকায় জিঞ্জাসা করা হয়েছিল, কুমিরের মাংশ খাওয়া জায়েজ কিনা? তিনি একটু চিন্তা করে বলেছিলেন, তার জানা নেই। অর্থাত্ ব্যাপারটা তাকে দেখে বলতে হবে। এত বড় একজন শায়খ যিনি অসংখ্য আলেমের ওস্তাদ, তিনি নিশ্চিত না হয়ে শরীয়তের এত ছোট্ট ব্যাপারেও ruling দিলেন না। অথচ আমাদের দেশে অনেক বড় বড় scholarly issues-এর ফতওয়া দিয়ে দিচ্ছেন এমন এমন ব্যাক্তি যাদের ইসলামের উপর academic পড়াশুনাই নেই। যেকোন প্রশ্ন আসলেই কোনএকটা ফরমেটে ফেলে উত্তর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কুমিরের মাংশ খাওয়ার ফতওয়া তো মামুলি ব্যাপার আরও বড় বড় ফতওয়া পাবেন ব্লগে বা ফেবুতেই। তবে আবদুল্লাহ শাহেদবা আবদুল্লাহিল হাদী. ভাইদের মত academic পড়াশুনা করে আসা ব্লগারদের কাছ থেকে পাবেন না, পাবেন এমন সব ব্লগারদের কাছথেকে যাদের ইসলামী শরীয়ার উপর academic পড়াশুনা তো দুরের কথা ইসলামের অনেক সাধারন ব্যাপারেও যাদের knowledge নেই।
আমাদের দেশে ভাল আলেম নেই তা নয়। যেমন নিচের ভিডিও লিংকে পাবেন, পৃথিবীযশা কিছু বাংলাভাষী আলেমের পরিচয়, যারা দ্বীন শিহ্মায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিভ্রমন করেছেন, কিন্তু প্রচারবিমুখতার কারনে এই প্রতিভাগুলোর সাথে আমরা অনেকেই অপরিচিত।
লিংকঃ link- Great Islamic scholars of BD
যারা ডঃ জাকির নায়েকের লেকচার শুনেছেন, তারা জেনে থাকবেন তার মত একজন বিশ্ববিখ্যাত দ্বায়ীও নিজেকে যোগ্য আলেম হিসাবে উল্লেখ না করে বরং তালেবী ইলমের একজন ছাত্র হিসাবেই উল্লেখ করে থাকেন। অথচ ঞ্জানের পরিধী, দ্বীন ইসলামের জন্য তার খেদমত এবং তার কাছে বিধর্মী/নাস্তিকদের নাস্তানাবুত হওয়ার কাহিনী দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। তিনি নিজেও বিভিন্ন শুদ্ধ আক্বীদার আলেমদের মতামত উল্লেখপুর্বক কুরআন সুন্নাহর রেফারেন্স তুলে ধরেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেনঃ
“যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না। আর এটিতো মুত্তাকীদের জন্য এক নিশ্চিত উপদেশ। আর আমি অবশ্যই জানি যে, তোমাদের মধ্যে কতক রয়েছে মিথ্যারোপকারী (কুরআনের প্রতি)।” (সূরা হাক্কাহঃ ৪৪-৪৯)
আবার পবিত্র কুরআন নাযিলের খুব কাছের একজন প্রত্যহ্মদর্শী ছিলেন আবুবকর (রাঃ)। কিন্তু তাকে যখন কুরআনের একটা শব্দের অর্থ জিঞ্জাসা করা হল (যে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত ছিলেন না) তিনি বললেন, “যদি আমি কুর’আন সম্পর্কে এমন কিছু বলি যা আমি জানি না, তাহলে কোন মাটি আমাকে বসবাসের জায়গা দেবে, কোন আকাশ ছায়া দেবে”? অথচ বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে তিনি যেকোন একটা উত্তর দিয়ে দিতে পারতেন।
উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেছেন, “ধর্মীয় ব্যাপারে তোমার মত প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্ক হও”।
তাইতো অনেক আহ্মেপের সাথে ব্লগার মনপবন বলেছিলেনঃ মেডিক্যাল কলেজে হবু ডাক্তারদের পাঁচ বছর ধরে সিলেবাস শেষ করতে হয়, লেকচার নামের টর্চার সহ্য করতে হয়, লাশ কাটতে হয়। এরপর আবার কাগজে-কলমে পরীক্ষা দিতে হয়, হাতে-কলমে দিতে হয়, মুখে দিতে হয়। সবকিছুতে পাশ করে এমবিবিএস এর সনদ হাতে পেলে তবেই ডাক্তারী বিদ্যা জাহির করবার অনুমতি মেলে।
কিন্তু পোড়ার বঙ্গদেশে ইসলাম এমনই এক বিদ্যা যাকে ফুটপাথের মলমের ফিরিওয়ালা থেকে আদু-মন্ত্রী অবধি সবাই পাটায় পিষে ফতোয়া বের করে জনগণের কাছে বিতরণ করে। আপামর জনসাধারণ - মাওবাদী ছাত্র, বিসনেস এডমিন্সট্রেশনের শিক্ষক, সুদি ব্যাঙ্কের এমডি, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, সার্জন ডাক্তার, টেলিফোনের ইঞ্জিনিয়ার, ‘কাসুটি জিন্দেগি’-প্রান গৃহবধূ - কারো হাত থেকেই ইসলাম নিস্তার পায়না। প্রায় সবার ব্রেনেই ওহি আসে এবং সেটা ব্যবহার করে ‘ইসলাম কী’- এ ব্যাপারে নিজস্ব থিওরি তারা দাঁড় করান এবং এই থিওরিটাই ইসলামের নামে প্রচার করতে লেগে যান।“
ফলাফল - ‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকারী এবং তার প্রয়োগে মহামারী। আমরা কুর’আনের কিছু আয়াত এবং কিছু বিক্ষিপ্ত হাদিস ব্যবহার করে ইসলাম বিষয়ক এমন একটা সিদ্ধান্ত নেই এবং প্রচার করি যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইসলামের মূল শিক্ষার বিপরীত।.
এজন্যই উর্দুতে বলা হয়,”নিম হাকিম খাতরায় জান, নিম মোল্লা খাতরায় ঈমান”। অর্থাত হাতুড়ে ডাক্তার জীবনের শত্রু আর হাতুড়ে আলেম ঈমানের শত্রু।
link- Great Islamic scholars of BD
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮