সকালে ঢাবি পড়ুয়া এবং তরুণদের একটি সংগঠনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিন্দু ধর্মের এক ছোট ভাইর ফেসবুকের একটি পোস্ট নজরে আসলো। সে তার পোস্টে গতকাল “বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট” সংবাদ সম্মেলনের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। যার শিরোনাম ছিল “২০১৯ সালের আড়াই মাসেই ২৭ সংখ্যালঘু খুন, ৩৭ নারী ধর্ষণ” এবং পোস্টের শেষে সে আরও উল্লেখ করেছে “*** যে দেশের স্বাধীনতায় সবথেকে বেশি আত্মত্যাগ করলো হিন্দুরা, তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে কেন? এ কেমন অকৃতজ্ঞতা? এ কেমন কাপুরুষোচিত আচরণ?
প্রশ্ন হচ্ছে এদেশে কি শুধুই হিন্দুদের উপরে সকল নির্যাতন হয়? তাহলে পরিসংখ্যানের বাকি ধর্ষণ, হত্যা খুন, নির্যাতন গুলো হয় কাদের উপর? হিন্দু বাদ দিলে বৃহৎ অংশটি কিন্তু মুসলিমদের উপরেই হচ্ছে। মানে আমরা কেওই নিরাপদ নই। উল্লেখ্য গত ২০১৬ সালে সারা দেশে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৬৫৯ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৮১৮ জন। যদিও মহিলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে বাংলাদেশে গত ২০১৭ সালে মোট ১ হাজার ২৫১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু বাদ দিলে এখানে সবথেকে বড় অংশটি মুসলিম।
এবার যদি হত্যা খুনের দিকে তাকাই তাহলে মানবজমিন পত্রিকার তথ্যমতে সারা দেশে ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৫৪৯ ও ২০১৮ এর প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২১২ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আর ২০১৯ পর্যন্ত এসে হিন্দু বাদ দিলে এখানেও সকল খুন হত্যার বড় অংশটিও মুসলিম।
ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার। এছাড়া প্রতি বছর খোদ আমেরিকায় বন্দুক হামলায় যে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যায় তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। অন্যদিকে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতের মত উন্নতশীল দেশে ধর্ষণের অভিযোগ জমা হয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩টি। ভারতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করেন। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়।
আমার কাছে অদ্ভুত লাগে যখন এ দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিশোধ হয়। এদেশে সকল ধর্ম নিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ হয় না। এরা কেন যেন যে কোন অন্যায়কে অত্যাচারকে মুসলিম ধর্মের অনুসারীদের অন্যায় বলে মনে করে, ধর্মীয় অত্যাচার বলে মনে করে এবং একরকম বিদ্বেষ পোষণ করেন মনে মনে। তানাহলে সকল ধর্ম একদিকে আর মুসলিম ধর্মকে আরেক দিকে রাখার মানে কি হতে পারে আমার জানা নেই। আমরা মুসলিমদের মৌলবাদী বলে থাকি আবার বলি ধর্ম যারযার উৎসব সবার। কিন্তু আমার কাছে কেন যেন মনে হয় ইসলাম ছাড়া বাকি সকল ধর্ম মৌলবাদে বিশ্বাসী। তানাহলে অন্য সকল ধর্মের আয়োজনে আমাদের মুসলিমদের সরব অংশগ্রহন থাকলেও মুসলিমদের ধর্মীয় আয়োজনে অন্য ধর্মের মানুষ গুলোর অংশগ্রহণ থাকেনা। আমরা সবাই মুখে ঠিকই বলি ধর্ম যারযার উৎসব সবার কিন্তু মুসলিমদের উৎসব সবার হয়না।
আমাদের এই ঢাকা শহরের জীবনের দিকে তাকাই। ১৮ কোটি মানুষের ২ কোটির বাস এখানে। হয়তো তার থেকেও বেশী। এখানে হিন্দু মুসলিম আমরা সবাই একসাথে মিলে মিশে আছি ৩৬৫ দিন। আমার কোন হিন্দু বন্ধু যেমন আমার দ্বারা আক্রান্ত নয় তেমনি আমিও নই। এমনকি আমাদের পাশাপাশি সহবস্থান আনন্দের। কিন্তু আমরা বারবার হেরে যাই ঐ সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষ গুলোর কাছে। যারা মুখে প্রগতিশীল হলেও মনের ভেতর সেই ধর্মীয় বিভেদটুকু পুষে রাখে। আবার কেও যদি মনে করেন প্রগতিশীল হওয়া মানেই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিসর্জন দেওয়া তাহলে সেখানেও ভুল। সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা বরং এক ধর্মের প্রতি আরেক ধর্মের সম্মানের কথাই শেখায়। সংঘর্ষ শেখায় না।
ধর্ষণ মানেই ধর্ষণ। হত্যা মানেই হত্যা। হোক এটা যার সাথেই যে কোন ধর্মের মানুষের সাথে। এটা অপরাধ। শুধু মাত্রই নিজ ধর্মের মানুষের উপর ধর্ষণ হত্যার প্রতিবাদ করবো আর বাকিরা কোন মূল্য রাখেনা এমন মানসিকতাই আসলে ব্রেন্টন ট্যারেন্টের মত ধর্মীয় উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী জন্ম দেয় মনে মনে। কখনো কখনো সেটা বাইরে প্রকাশ পায় এবং এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:১৯