গতকাল ইফতারের পর থেকে টিভিতে শুধু চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাঘিনী সালমাদের সম্পর্কে কে কি বলছে তা শোনার চেষ্টা করেছি। বিশ্বকাপ ফুটবলের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা যা এনে দিল সালমা বাহিনী। যে সম্মান যে গৌরব আমরা মেয়েদের হাত ধরে পেয়েছি তার বিনিময়ে ওদেরকে বাংলাদেশ আসলে কি দিয়েছে তা কি ভেবেছি? ভাল ক্রিকেটার মানেই মোটা টাকা, বিস্তর সুযোগ সুবিধার ছড়াছড়ি আমরা সবাই জানি কিন্তু সালমাদের বেলায়ও কি এমনটা ঘটেছে?
খোঁজ নিয়ে দেখতে গিয়ে জানতে পারলাম সালমাদের কাছে এমন সুযোগ সুবিধা যেন রূপকথার গল্প। গল্প এখানে ঠিক তার উল্টো। যে সাবিক মাশরাফিদের লক্ষ লক্ষ টাকার মোটা বেতন থেকে শুরু করে নানার রকমের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তার তুলনায় সালমারা খেলে প্রায় বিনা টাকায়। পৃথিবীর অন্য সকল মেয়ে ক্রিকেট খেলোয়াড় সহ বাংলাদেশ ছেলে ক্রিকেটারদের বেতন সুবিধাদির সাথে বাংলাদেশের মেয়ে ক্রিকেটারদের অবস্থার তুলনা করতে গেলে আপনি লজ্জিত হবে আমি নিশ্চিত। যার বয়াবহ চিত্রটি নিম্নরূপ......
আপনি প্রথম ধাক্কা খাবেন যখন জানতে পারবেন বাংলাদেশে ছেলে ক্রিকেটারের সর্বচ্চ বেতন যেখানে ৪ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে সেখানে মেয়েদের সর্বচ্চ বেতন ৩০ হাজার টাকা! যেখানে ছেলেরা ওডিয়াই খেলে ম্যাচ ফি পায় ২ লক্ষ টাকা সেখানে মেয়েরা পায় মাত্র ৮ হাজার টাকা।
কদিন আগেই ভারতীয় নারী দলের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। হারমানপ্রিত-মিতালী রাজদের আগে বেতন ছিল বছরে ১৫ লাখ রুপিতে, তা এবার দাঁড়াল ৫০ লাখে। মজার ব্যপার হলো, এই সমান বেতন তামিম ইকবাল-মাশরাফি বিন মুর্তজারা গেল বছর ‘ইনক্রিমেন্টের’ পর থেকে পাচ্ছেন! যদিও অঙ্কটা রুপি নয়, টাকার হিসাবে।
নারী ক্রিকেটারদের উন্নয়নের জন্য সবার আগে এগিয়ে আসে উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। ২০১০ সালে তারা কেন্দ্রীয় চুক্তির অধীনে নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে যায়। বছরে তাদের উপার্জন ২৫ লাখ টাকা। ইংল্যান্ডের মেয়েরা পায় ৫২ লাখ টাকার কাছাকাছি। পাকিস্তান অনেক কম, তারপরও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। বছরে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার মতো। আর অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটারদের কথা শুনলে মাথা ঘুরে যেতে পারে, নতুন চুক্তিতে বছরে বাংলাদেশি টাকার অঙ্কে প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা উপার্জন করছেন তারা!
সেখানে বাংলাদেশের মেয়েরা মাসের হিসেবে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। যা বছরে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার ও সর্বনিম্ন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
ক্রিকেট বিশ্বে পঞ্চম ধনী বোর্ড বাংলাদেশের। আইসিসির হিসাব অনুযায়ী, বিসিবির সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪১০ কোটি টাকা (৫১ মিলিয়ন ইউএস ডলার)। অথচ সেই দেশের নারী ক্রিকেটের এমন হাল।
*** তথ্য সংগ্রহ প্রিয়.কম থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২১