মানুষিক ভাবে যে আমরা দিন দিন বিকার গ্রস্থ হয়ে পরছি তা বেশ বুঝতে পারছি। সাম্প্রতিক সময়ের দুটি আলোচিত ঘটনা আমাদের তারই ইঙ্গিত দেয়। কে আমাদের আপন আর কাকেই বা আপন বলা যায় সেটা নিয়েও যে আমরা সংকটের মধ্যে ঢুকে গেছি। সেখানে পিতা যেমন নিরাপদ নয় তেমনি স্ত্রী বিশ্বাসের জায়গায় সবথেকে অনিরাপদ। সাধারন দৃষ্টিতে আমরা যা দেখি তাই নিয়ে ন্যায়ের দাবীতে হুমড়ি খেয়ে পরার পরে জানা যায় দেশের মানুষ যে কারনে সোচ্চার তার অনেকাংশেই ভুল ছিল। তখন আস্থা এবং ন্যায় একই সাথে মূল্য হারায়।
হবিগঞ্জের বিউটিকে আমার কাছে অভাগা বলেই মনে হচ্ছে। পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ মানুষ পিতা যখন তার নিজ সন্তানের হত্যাকারী তখন বিউটি হতভাগ্য কন্যা। বিউটির ধর্ষণ নিয়ে যতটা আলোচনা এবং সরাসরি ধর্ষণ বলতে যে বিষয়টি আমরা বুঝে থাকি এক্ষেত্রে বিষয়টি কিন্তু একটু ভিন্ন। আসামী বাবুলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে অলিপুর এলাকায় এক হাজার টাকায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে কয়েক দিন বিউটিকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকে বাবুল। (এসপি বিধান ত্রিপুরা, কালেরকণ্ঠ) পরে গ্রাম্য সালিসে বিয়ের বিষয়টি সমাধান না হওয়া এবং এর পরবর্তীতে বিউটির বাবা ছায়েদ মিয়া গ্রাম্য রাজনীতিতে সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে ময়না মিয়ার দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে ছায়েদ মিয়া, ময়না মিয়া এবং ১০ হাজার টাকায় একজন পেশাদার খুনি মিলে বিউটিকে হত্যা করে দোষ চাপানোর চেষ্টা করে বাবুলের উপর।
অন্যদিকে পৃথিবীর সব থেকে শক্ত বিশ্বাসের সম্পর্কে নিজ স্ত্রী যখন হত্যাকারী তখন আমাদের দাঁড়াবার জায়গা যে দিন দিন কমে আসছে তা খুব ভাবায়। রংপুর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ পিপি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এ্যডভোকোটে রথিশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোঁজ হয়েছিলেন এবং পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। সমগ্র দেশে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের সভা সমাবেশে দাবী দাওয়া জানানো হয় তার জীবিত উদ্ধারের। তিনি হিন্দু বলে জঙ্গিদের কাজ বলেই সবার প্রথম ধারণা ছিল। কিন্তু এখানেও শেষ পর্যন্ত সকলের সাধারন ভাবনা গুলোকে ওলটপালট করে দিয়ে নিজের স্ত্রী এবং তার সহযোগীরা হয়ে যায় খুনি।
পিতা সন্তানকে হত্যা করছে, স্ত্রী করছে স্বামীকে! এভাবে চলতে থাকলে যে ভবিষ্যতে সম্পর্কের মানুষ গুলোর প্রতি আস্থা কমতে থাকবে তেমনি ন্যায় বিচারের দাবীতে সোচ্চার হতেও দিধাগ্রস্থ হয়ে পরবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩