একটি প্রচলিত কথা প্রায়শই শোনা যায়, ডাক্তারের কাছে যাবার পরেই রুগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে ওঠে। সময় চলে যায়, দিন বদলায়। আর এ দিন বদলের সাথে সাথে এখন খুব সম্ভবত ডাক্তারের কাছে গেলে মানুষ নিশ্চিন্ত হবার চাইতে দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পরে বেশী। না হয়েই বা উপায় কি?
আমার মেয়ের বয়স যখন ১৩ দিন, সেদিন সকালে প্রায় ৭টার দিকে মেয়ে আমার কান্না করতে গিয়ে এত জোরেই চিৎকার দিয়েছিল যার ফলে ওর শ্বাসপ্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মুহূর্তে শরীর নীল হয় যায়। যদিও একটু পরেই সব স্বাভাবিক। দুশ্চিন্তা থেকে বাসার সবাই মিলে সেই সকাল ৭টার দিকে ওয়ারী নিবেদিতা ক্লিনিকে নিয়ে যাবার পরে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন মেয়ে আমার নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত। এর মাঝে তারা একবার সাকার মেশিন দিয়ে কফ বের করার চেষ্টা করে ১৩ দিনের মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে আমাদের জানালের অবস্থা গুরুত্বর, তাই আর এ ক্লিনিকে কোন চিকিৎসা সম্ভব নয়। ডাক্তার আমাদের গ্রীনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে রেফারড করে দিলেন। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা। এমন অবস্থায় সেই সকালেই যোগাযোগ করি রুশদা যার নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে আল্লাহর ইচ্ছায় এ পৃথিবীর মুখ দেখে সেই ডাক্তারের সাথে। সব শুনে তিনি আমাকে তখনি বারডেম হাসপাতালের সেগুনবাগিচা শাখায় চলে আসতে বলেন। যেখানে তিনি কর্মরত। এর পরে তার মাধ্যমে বারডেমের শিশু বিশেষজ্ঞ রুশদাকে পরীক্ষা করে জানালেন ওর কোন প্রকারের অসুস্থতা নেই। এমনকি ঠাণ্ডারও কোন লক্ষন নেই। কান্নার সময় কন্ট্রোল করতে না পারায় বমি করেছিল এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়েছিল, যা খুবই স্বাভাবিক। ঠিক আধা ঘণ্টা আগেই মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল অন্য একজন ডাক্তারের চিকিৎসায়।
আমার মেয়ের বয়স প্রায় ২ বছর হতে চলল আল্লাহর রহমতে। এ দুই বছরের মাঝে আমার এক চাচার চোখে সমস্যা দেখা দেওয়াতে তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক অভিজ্ঞ চোখের ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার তার চোখের নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন চোখে হালকা ছানি পরেছে। চিকিৎসা হিসেবে তিনি প্রায় ২ বছর চোখের ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ৬ মাস পরপর পরীক্ষা করে দেখলেন। প্রায় ২ বছর চিকিৎসার পরে সেই ডাক্তার জানালেন তার চোখের ছানির অবস্থা ভালো নয়, তাকে ছানির অপারেশন করাতে হবে বলে বেশ কিছু পরীক্ষা করতে দিলেন। ডাক্তারকে অপারেশনের খরচ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি পরীক্ষা গুলো করে আনার পরেই খরচের হিসেব জানাবেন বলে দেন। আগে পরীক্ষা তার পরে খরচের হিসেব এমন কথায় চাচা আমার মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে আর পরীক্ষা না করিয়ে চিন্তা করলেন অন্য কাওকে দেখিয়ে ক্রসচেক করবেন। গত মাসে পরিচিত জনের মাধ্যমে পিজি হাসপাতালের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞর কাকরাইল ইসলামী হাসপাতালের চেম্বারে দেখা করেন। তিনি প্রথম পরীক্ষাতেই জানালেন চাচার চোখে কোন ছানির সমস্যা নেই। তারপরেও অধিকতর নিশ্চয়তার জন্য পিজি হাসপাতাল থেকে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা করে জানালেন তার চোখ ভালো আছে এবং নতুন করে চশমার পাওয়ার ঠিক করে দেন।
ঠিক গত এক সপ্তাহ আগে আমার বড় ভাইয়ের রাতে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যার কারনে ঘুমাতে খুব সমস্যা হচ্ছিল। মাঝে মাঝেই নাকি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল বলে ভাইয়ের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়াতে মিটফোর্ড হাসপাতালের এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞর শরণাপন্ন হয়। ডাক্তার ভাইয়াকে দেখে জানালেন ওর নাকের হাড় বাকা হয়ে নাক বন্ধ, যার ফলে ঘুমের মাঝেই এমন শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অপারেশন করাতে হতে পারে বলে এক্সরে করাতে পরামর্শ দিলেন। অপারেশন করানোর কথায় ভাই আমার আরও বেশী দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পরেন। তাই এক্সরে করিয়ে সোজা গেলেন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞর কাছে। তিনি সব দেখে জানালেন ভাইয়ার নাকে কোন হাড় জনিত সমস্যা নেই। গলায় একটু সমস্যা হয়েছে যার ফলে গলা শুকিয়ে যায় এবং তাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিলেন এবং ভাই আমার এখন স্বাভাবিক।
ডাক্তারদের এমন চিকিৎসা সেবার জবাবদিহিতা থাকা উচিৎ খুব কঠিন ভাবে। ডাক্তারের সামনে চেয়ারে বসার সাথে সাথে অসুস্থ মানুষটি সাইকোলজিক্যাল ভাবেই সুস্থতার আশায় মন বাধতে থাকে বলেই তখন অনেক ভাল বোধ করা শুরু করে। বর্তমানে এমন ভুলে ভরা বাণিজ্যিক চিন্তায় চিকিৎসা সেবার উপর সাধারণের আস্থায় ফাটল ধরছে। এভাবে আমার দেশীয় ডাক্তারদের উপর আস্থার অভাবের কারনে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে এ দেশের মানুষ চলে যাচ্ছে পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে চিকিৎসা করাতে। এটাই হতে পারে আমাদের দেশীয় ডাক্তারদের ব্যর্থতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬