প্রথম আলো পত্রিকায় ৪০০ টাকায় কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস সংক্রান্ত একটি খবরে চোখ আটকে গেল। মন ভালো করার মত একটি জাতীয় খবর! মন ভাল করার জন্য খবরটি পড়তে গিয়ে একটা শূন্যতায় আটকে গেলাম আমি। একি ৪০০ টাকায় ডায়ালাইসিস নাকি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সুবিধা প্রদানের প্রকল্প?
প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর ভিত্তিতে জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইন্সটিটিউট হাসপাতালে ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইসের মাধ্যমে মোট ৫৯টি যন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে। যার ১৪টি যন্ত্র নিয়ে নিয়ে ৩০ নভেম্বর প্রকল্পটি উদ্বোধন হবার কথা। বাকি মেশিন গুলো আগামী ৩ মাসের মধ্যে চলে আসার কথা।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. নূরুল হক বলেন, শর্ত অনুযায়ী ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে ভারত ও বাংলাদেশের নার্স ও যন্ত্রবিদেরা কাজ করবেন। তাঁদের বেতন দেবে স্যান্ডর। কেন্দ্রে থাকবে দুটি ইউনিট। সাধারণ ইউনিটে যন্ত্র থাকবে ৪৪টি। প্রাইভেট ইউনিটে ১৫টি যন্ত্র চলবে। প্রতিবার ডায়ালাইসিসের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৯০ টাকা। দরিদ্র রোগীরা দেবে ৪০০ টাকা করে। বাকি ১ হাজার ৭৯০ টাকা সরকার দেবে ভর্তুকি হিসেবে। প্রাইভেট ইউনিটে অবস্থাপন্ন রোগীরা সেবা পাবে। তাদের পুরো টাকাই দিতে হবে। সব টাকা যাবে স্যান্ডরের তহবিলে। কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক দুজন চিকিৎসক থাকবেন। তাঁদের বেতনও স্যান্ডর দেবে। ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা কাজের ওপর নজরদারি করবেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই ধরনের কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ডায়ালাইসিস যন্ত্রও দেশে চলে এসেছে।
নতুন প্রকল্পের সকল আয় যাবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের তহবিলে, এবং গরিব রোগীর ৪০০ টাকার পরের ১৮০০ টাকা সরকারি ভাবেই ঐ প্রতিষ্ঠানটি পেয়ে যাবে। যদিও আমাদের দেশে আবার নিজেকে গরীব বলে প্রমাণে কত পথ কত টাকা খরচ করতে হবে সেটা একটি প্রশ্ন থেকেই যাবে। এক কথায় রোগী ধনী হোক আর গরীব হোক স্যান্ডরের তহবিলে প্রতি ডায়ালায়সিস বাবদ ২২০০ টাকা করে জমা হবে। মানে দাঁড়ালো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফার নিশ্চয়তা দিল আমাদের দেশের সরকার। যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু মাত্রই ৫৯ টি মেশিন দেবে, আর আমরা তাদের জায়গা দিচ্ছি, হাঁসপাতাল দিচ্ছি, হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিচ্ছি, রোগী দিচ্ছি, আয়ের নিশ্চয়তা স্বরূপ সরকারি ভর্তুকি দিচ্ছি, ভারতীয় নাগরীকের চাকুরীর সুযোগ দিচ্ছি এবং সব শেষে সব আয়ও তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি।
আমাদের দেশে সরাসরি বেসরকারি পর্যায়ে ২০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে ডায়ালাইসিস করা যায়। সরকার উল্লেখিত সকল সুবিধা দেশীয় কোন প্রতিষ্ঠানকে দিলে কিন্তু চিকিৎসা সেবা বাড়ার সাথে সাথে এদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আরও কম খরচে চিকিৎসা সুবিধা দেবার পাশাপাশি দেশের টাকা দেশেই থেকে যেত। তা না করে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়কে নিশ্চিত করার জন্য এখন সরকার টাকার নিশ্চয়তা প্রদান করে দিল। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবরে সমকালের একটি খবরে জানা যায় দেশে ৫৫০ টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। সে হিসেবে গত ৫ বছরে নিশ্চয়ই এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। তাই ৫৯ টি মেশিন দিয়ে কোন বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলা যাবে সেটা ভাবা কিন্তু বোকামি। আর নিজেদের দেশ বাদ দিয়ে অন্যদেশের প্রতিষ্ঠানকে এমন সুবিধা দেবার খরব কি আসলেই আনন্দিত করতে পারে আমাদের?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩