নিজের এবং প্রাসাদের বাজেটের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণই নেই বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের। বৃটিশ রাজপরিবারের প্রাসাদগুলো, রাজ কর্মচারী এমনকি রাজা-রাণী ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণেও কোন কর্তৃত্ব নেই রাণীর।
বরং রাজপরিবার ও রাজকীয় বৃত্তি বাবদ যাবতীয় অর্থভাতা বা সিভিল লিস্টের পরিমাণ নির্ধারণ করে বৃটিশ সরকার তথা পার্লামেন্ট। এতে অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়েই পার্লামেন্টের মুখাপেক্ষী থাকতে হয় এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাণী বা রাজপরিবারকে। আর এ অবস্থা তৈরি হয়েছে ২০০৬ সালের এক চুক্তিবলে। এএফপি জানায়, চার বছর আগে চুক্তিটি হলেও তা এতদিন গোপন ছিল। গত বৃহস্পতিবার বৃটিশ একটি পত্রিকা দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে তা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। বৃটিশ তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ওই পত্রিকাটি দীর্ঘ ৪ বছর অনুসন্ধান চালায়। পরে তারা রাণী ও সরকারের মধ্যে বিনিময় হওয়া শ’ খানেক চিঠি উদ্ধার করে। এগুলোতে সরকারের কাছে অর্থ চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন রাণী। এ রকম চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে রাজপরিবারকে ২০ লাখ পাউন্ড সহায়তাও দেয় বৃটিশ সরকার। অর্থবরাদ্দ নিয়ন্ত্রণের এ চুক্তিটি হয়েছিল বিগত লেবার পার্টির সরকার ও রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মধ্যে। এতে বলা হয়েছিল, রাজপরিবারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন অসঙ্গত ব্যবধান দেখলে সরকার রাজপরিবারকে বরাদ্দ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে রাজপ্রাসাদের যাবতীয় ব্যয় সরকার নিজেই বহন করবে। এই ‘অর্থনৈতিক স্মারক’ রাজপরিবারের ব্যয়ের বিষয়েও নাক গলাতে অনুমতি দেয় সরকারকে। রাজপরিবার কিভাবে বার্ষিক বরাদ্দকৃত ৩ কোটি ৮২ লাখ পাউন্ড অর্থ প্রাসাদ নির্বাহ ও কর্মচারী পালনে ব্যয় করছে তা সরকার জানতে চাইতে পারে বা এতে অনাস্থা আনতে পারে এ চুক্তির মাধ্যমে। রাজকীয় বাজেট নিয়ে সরকার ও রাণীর মধ্যে কয়েক বছরের বিতর্কের পর এ চুক্তিটি হয়। লন্ডনে অবস্থিত বাকিংহাম প্যালেস, লন্ডনের পশ্চিমের উইন্ডসর প্রাসাদ ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবন নির্বাহে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য রাজপ্রাসাদ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছিল। তবে সরকার রাজপরিবারের দাবির সঙ্গে একমত ছিল না। এরই এক পর্যায়ে চুক্তিটি করতে বাধ্য হয় উভয়পক্ষ। এ সংবাদ প্রকাশের পর ইংল্যান্ডজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজতন্ত্রের বিলোপ চায় এমন একটি সংগঠন ‘রিপাবলিক’ রাজপরিবারের ব্যয়ের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, আমরা ট্যাঙদাতারা ওই পরিবারটির পয়সা জমানোর ব্যাংক নেই। তারা আমাদের পকেটে হাত ঢুকানোর আগে অবশ্যই তা আমাদের জানাতে হবে। সংগঠনটি আরও বলছে, রাজপরিবারের যাবতীয় ব্যয়ের ওপর উন্মুক্ত পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।