somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা সময়ের কাছে একদিন.....

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার ছেলেবেলায় আমি বাংলাদেশের নানাস্থানে ভ্রমন করেছিলাম। এর পেছনে কারণ ছিলো আমার কিছু পরমাত্মীয়ের সরকারী কর্মকর্তা হবার সুবাদে আমাদের ছেলেবেলার গরমের ছুটি, শীতের ছুটি ছাড়াও নানাবিধ আচার অনুষ্ঠান পালনের উদ্দেশ্যে সে সব স্থানে গমন।

আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে সে সব ছেলেবেলার স্মৃতি। মানুষ অনেক কিছুই ভুলে যায় ভুলে যেতে চায় বলে। কিন্তু আমি সব কিছুই মনে রেখে দিতে চাই। আমার খুব মনে পড়ে উত্তরবঙ্গের চিনিকল, ডিসিকলোনী, আর্মী ক্যান্টনমেন্টগুলোতে কাটানো সময়গুলোর কথা। এবছরের রোজার ঈদের পরেরদিনই চলে গিয়েছিলাম আমার ছেলেবেলায় উত্তরবঙ্গের নানা স্থানে কাটানো সেই সব স্মৃতিগুলির কাছে ।গিয়েছিলাম জয়পুরহাট। জয়পুরহাটে চিনিকল আর ডিসিকলোনী ছাড়া তার বিশেষ কোনো জৌলুশ নেই হয়ত। কিন্তু আমার সেই আত্মীয়ের অবস্থান ডিসি কলোনী হলেও চিনিকল, সেখানের অতিথী ভবন, কলোনীর সাথেও আমাদের ছিলো এক গভীর যোগসূত্র। চিনিকল কলোনীর সেই মধুর ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি, এই স্থানটিকে আমার হৃদয়ে আজও বিশেষভাবে জৌলুসমন্ডিত করে রেখেছে।


ঈদের পরদিন সারাদিন নাটোরের এক সুবিখ্যাত গ্রাম, যেখানে ১০০% মানুষ সাক্ষরতার দাবীদার সেখানে গিয়েছিলাম আমরা একটা জরুরী মিটিং এর কাজে। সেখানে সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যা নামার একটু আগ দিয়ে রওয়ানা দিলাম বগুড়া আরডিএর উদ্দেশ্যে। সেখানেই রাত্রী যাপনের পরিকল্পনা ছিলো। আমাদের সাথে ছিলো শামীম। সে হলো আমাদের সকল কাজের কাজী। তবে ড্রাইভিংটা তার বিশেষ পছন্দ হওয়ায় সেই আমাদের গাড়িগুলি চালিয়ে থাকে। কিন্তু রাতের আঁধারে আমার মিঃ সঙ্গী তার হাতে গাড়ী দিয়ে জীবন বাজী রাখতে রাজী হলেন না তাই সে নিজেই গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হলেন তার মায়ের মাথার শত দিব্যি " তুই গাড়ি চালাবি না রাতে"এই অনুরোধ উপেক্ষা করেও।

অনেকদিন পর এই রাতের সড়কপথে ভ্রমন আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো আমার ছেলেবেলাকার দিনগুলোতে। ঘুর্ঘুট্টি অন্ধকারে জনমনিষ্যিহীন ধুধু প্রান্তর ঘেষে চলছিলো শুধুই একটা মাত্র গাড়ি। সে আমাদেরটাই। আসলে ঈদের পরদিন হওয়াতে দোকানপাট সবই বন্ধ ছিলো, সন্ধ্যার পর পথঘাটে লোকজনের আনাগোনাও ছিলোই না বলতে গেলে। আমার তখন ছেলেবেলার রবিঠাকুরের সেই কবিতার লাইনটাই মনে পড়ছিলো " আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো। তুমি যেন বললে আমায় ডেকে, ‘দিঘির ধারে ঐ যে কিসের আলো!’
এমন সময় 'হাঁরে রে রে রে রে’ ঐ যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে " শামীম ডাকাতের ভয়ও পাচ্ছিলো। আসলে এই চলনবিলের ডাকাতদের ইতিহাস অতি পুরোনো। তাদের ডাকাতির সেই ভয়বহতার ইতিহাসও চলনবিলবাসীদের কাছে ভালোই সুপরিচিত। তবে আমার এতটুকুও ভয় লাগছিলো না। কারণ আমার জীবনে এমন অনেক রাতেই আমরা ছুটে গেছি এমন নির্জন পথে বহু বহুবার!!!

পথে যেতে যেতে হঠাৎ গ্রামের পথে টং চায়ের দোকানগুলোর সামনে একখানে দেখি লোকজন সব বাঁশ হাতে দাঁড়িয়ে। হা হা হা কারো চোখ এই কথা শুনে গুলুগুলু হবার দরকারই নেই। তারা মোটেও ডাকাত ছিলো না। ঈদের ছুটি পেয়ে লোকজনের কম আনাগোনায় পথের ধারের জঙ্গল থেকে উঠে এসেছিলো এক বিশাল গোখরা সাপ। তিনি রাস্তা পার হচ্ছিলের হেলেদুলে। এমন সময় বেরসিক লোকজন হই হই রই রই করে তাকে পিটিয়ে মারলো। সেই অপূর্ব সুন্দর গোখরা সাপের কারুকার্য্যময় লেজটা ঐ আলো আঁধারীতেও একটু একটু নড়ছিলো আর তার অপূর্ব সৌন্দর্য্যে ঝিলিক মারছিলো শেষবারের মতই। এই সৌন্দর্য্য নিয়ে বেঁচে থাকা হলো না তার আর। তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিলো একদল ভীতু মানুষ যারা জানে সাপ মানেই শত্রু। বাঁচবার কোনো অধিকার নেই তার।


অবশেষে পৌছালাম বগুড়া আরডিএ তে। আগে থেকে খানাপিনার অর্ডার না দেওয়ায় তারা রাতের খাবার দিতে পারলো না। তাই আমরা চকলেট বিস্কিট আর স্প্রাইট খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু সকালে উঠে প্রান জুড়ালো মন ভরালো। জানালা দিয়ে অপরুপ সুনিয়ন্ত্রিত বনভূমি। আমরা ডাইনিং এ গিয়ে দেখলাম তখনও নাস্তা রেডী হতে কিছু বাকী তাই গাড়ি করে ঘুরে আসলাম তাদের গরুর খামার, মৎস্যচাষ আর নানা রকমের ফসল ও শষ্য উৎপাদনের কৃষিক্ষেত্রে। কি ভীষন ভালো লাগার একটা জায়গা ছিলো সেটা।


সবকিছু ছাপিয়ে চোখ আটকে গেলো তাদের খেতগুলির বেড়ায় বেড়ায় টাঙ্গানো খনার বচনে- যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পূন্য দেশ, আরও শত শত খনার বচনে। তারপর বহুদিন পর খেলাম সরকারী রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজের অমন ঘিয়ে ভাজা খাস্তা পরোটা, বুটের ডাল, ডিমভাজা সহযোগে সকালের নাস্তা।


আরডিএর বাগানে ছোটবাচ্চাদের জন্য ছিলো স্লিপার দোলনা ঢেকি এসব।

১২ বছরের উপরে দোলনায় বসা নিষেধ।


কিন্তু আমি কি ১২ বছরের চাইতে আসলেও বড়? তাই বসে রইলাম সেখানে। দোলও খেলাম মনের আনন্দে। :)

এরপরের গন্তব্য ছিলো জয়পুরহাট। পথে গাড়ির জানালা দিয়ে চেয়ে দেখছিলাম, সজীব শ্যামল ধানের খেত, সেই শৈশব কৈশোরে দেখা দিনগুলোর মাটির বাড়ি, টিনের চালা, খড়ের গাঁদা যেন এক ছবি আঁকার খাতায় আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্যের পটভূমি। জয়পুরহাট পৌছে অবাক হলাম কত কিছুই বদলেছে এই পৃ্থিবীতে কিন্তু জয়পুরহাট আজ প্রায় ২ যুগ পরেও যেন একই রকম আছে।


ডিসি কলোনীতে থাকার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও আমরা গেলাম চিনিকলের অতিথিভবনে। সেখানে পরিচিত একজন যে আমাদের থাকবার ব্যবস্থা করেছিলো তাকে ফোন দিলাম। সে সারাটাদিন আমাদেরকে সঙ্গ দিলো।


আমি গেলাম তৎকালীন জিএম বাংলো, এখন সেটা এমডি বাংলো বলে পরিচিত সেই বাড়িটিতে। বাড়িটি তার হলুদ রং ও ঢং এ অবিকল দাঁড়ি্যে আছে ঠিক আগের মতই। তবে মনে হলো ভালোবাসা আর যত্নের অভাবে আজ সে মলিন। কোথাও কোথাও রং চটে গেছে, ঝুল জমে আছে কোনায় কোনায়। এসব এখনকার মানুষগুলোর চোখে পড়ে কিনা জানিনা তবে একটা সময়ে সবকিছু ছিলো ঝাঁ চকচকে, পরিপাটি। সারা বাগান জুড়ে ছিলো ফুলের মেলা। বারান্দায় টবস্ট্যান্ডগুলোতে ভরা ছিলো ফুলের থোকা। বারান্দার ছিলো আরাম কেদারা। এক পাশে চালায় ঝুলতো আঙ্গুরের থোকা। সেসব কিছুই আজ অবশিষ্ঠ নেই। ফুলশূন্য বারান্দা জীর্ন শীর্ন কলেবরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে যেন হেসে উঠলো তারা। নির্বাক বিস্ময়্ব জিগাসা করলো, অবশেষে এলে?


এককালের ঝকঝকে তকতকে সেই রুপোলী রং পাজেরো গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিলো গ্যারেজে মলিন কলেবরে নতুন রঙ সাদায়। তার পাশেই জায়গা হয়েছে নতুন চকচকে বিশাল আরেক গাড়ির। গ্যরেজটা সেই আগের মতই আছে। পুকুরপাড়ে মাছ ধরছিলো পাশের বাসার ছেলে মেয়েরা।


দুপুরে আমরা সবাই এক সাথে খেলাম তারপর ঘুরতে গেলাম জয়পুরহাট মিল কলোনীর বিশাল পুকুরের মাঝে দ্বীপাঞ্চলে ঝুলন্ত ব্রীজ ধরে।

রাতে ডিসিকলোনীতে গেলাম একজন পরিচিত মানুষের বাসায়। সেখানে রাতের খাবার খেয়ে ফিরে চললাম মিলকলোনীর অতিথিভবনে।


অজানা এক আনন্দে মন ভরে ছিলো সারাদিন। আমার জীবনে সুন্দর দিনগুলোর মাঝে কয়েকটা দিন মনে করতে বললেও হয়ত মনে পড়ে যাবে সেই দিনটির কথা........



খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে উঠলাম পরদিন। অতিথি ভবনের দরজা খুলে বের হতেই মনে পড়ে গেলো আজ থেকে বহু বছর আগে তখন আমার ক্লাস ফোর, এই অতিথি ভবনের দরজা দিয়ে খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বের হয়েছিলাম আমি। সেটা ছিলো ভয়ানক শীতের সকাল আর এখন ভয়ানক গরমের দিন। মনে পড়ে গেলো এই বারান্দায় পেছন দিক দিয়ে হঠাৎ ডেজী আপা বলে ডাক দিয়ে উঠছিলো একটা ছেলে। আমারই মত পুচকে ছিলো সেও। আমি চমকে পিছন ফিরে তাকাতেই সে বলেছিলো ওহ আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাদের ডেজী আপা। আমি কোন কথা বলিনি তবে তখনই বুঝে গিয়েছিলাম এখানে রয়েছে কোনো এক ডেজী, সে পিছন থেকে দেখতে আমারই মতন।

এরপর এই ডেজীর সাথে আমার দারুন সখ্যতা হয়েছিলো। তার কাছেই আমি জীবনের প্রথম হ্যান্স ক্রিস্চিয়ান এন্ডারসনের লেখা দ্য লিটল মারমেইড বইটা পড়ি। সেই বইটা পড়ে আমি এতই কেঁদেছিলাম যে আমার চোখের জল ধরে রাখলে ছোটখাটো এক সাগর হয়ে যেত। কারণ দুঃখী বোবা এই মাছরাজার কন্যা মর্ত্যের এক রাজকুমারের প্রেমে পড়ে তার মাছের লেজ বদলে জড়িবুটি বুড়ির কাছ থেকে মানুষের মত পা বানিয়ে জল ছেড়ে স্থলে উঠে এলো, তবুও রাজকুমার তার ভালোবাসার মূল্য দেওয়া তো দূরের কথা তার ভাষাই বুঝতে পারলো না! যাইহোক বেশ কয়েক বছর পরে জানতে পেরে ছিলাম ডেজী আপার বিয়ে হয়ে গেছে স্কুল শেষ না হতেই। তারপরপরই এটাও জানতে পেয়েছিলাম কোনো এক দূরারোগ্য ব্যাধিতে ডেজীআপা শয্যাশায়ী। অনেক বছর সেভাবেই ছিলো। আমি বেশ বড়বেলায় একবার দেখতে গিয়েছিলাম তাকে। ফুলের মতন কোমল টলটলে মুখ নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলো ডেজী আপা। সারা শরীর শুঁকিয়ে কাঁঠ হয়ে গেছে। বিছানার সাথে মিশে ছিলো তার ছোট্ট শরীর, শুধু মুখখানি তার তেমনি ছিলো, সুন্দর ঢলঢলে।

অতিথি ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব কিছুই যেন সেলুলয়েডের ফিতায় চোখের সামনে ভেসে আসছিলো। আমি রাস্তায় নামলাম। অত সকালে কেউ তখনও তেমন জেগে ওঠেনি। চারিদিক নিস্ত্ব্ধ ছিলো। পাখির কূজন ছাড়া খুব একটা শব্দ ছিলো না কোথাও। নাম না জানা এক বিশাল বৃক্ষের তলায় হাঁটবার সময় টুপটাপ শব্দ শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এই টুপটাপ শব্দ ঐ ছোট্ট ছোট্ট ফুলগুলো ঝরে পড়ার শব্দ এমন আশ্চর্য্য সুন্দর কিছু আমি বহু বছর শুনিনি আমার কোলাহল মুখরিত শহরে বহুদিন! আমি কলোনীর দুইপাশ ঘেষে সবুজ ঢাকা পথ দিয়ে হাঁটছিলাম। মনে পড়ে যাচ্ছিলো আমার জীবনের প্রথম দেখা দোলনচাঁপা ফুল যা আমি ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনীয়ারের বাস ভবনের জানালা ঘেষে আমার জীবনে প্রথম দেখেছিলাম। সেই কথা মনে পড়তেই যেন ঘ্রান ভেসে এলো দোলন চাঁপার। বুকের মধ্যে কি এক মায়ার ঢেউ। শৈশবের ভালোবাসা, ভালো লাগার মায়া!

পথে হেঁটে যেতে যেতে মনে পড়ছিলো এই কলোনীর বড় বড় গাছগুলো বা ইউক্যালিপটাসের গাছগুলোর নীচ দিয়ে পড়ে থাকা লজ্জাবতী গাছগুলোর কথা। যা দেখে আমি এত অবাক হয়েছিলাম আমার ছেলেবেলায়। যাওয়া আসার পথে পা দিয়ে ছুঁয়ে দিতে কখনও ভুল করতাম না আমি। মা বলেছিলো তাদেরকে ছুঁয়ে দিলে তারা লজ্জা পায় তাই বন্ধ হয়ে যায়। এই বিস্ময় আমাকে মুগ্ধ করে রাখতো। গাছের প্রাণ আছে সে তো সবাই জানি তবুও তারা গাছ আর এই লজ্জাবতী তার মনুষ্যসুলভ লজ্জায় নিজেকে গুঁটিয়ে নেওয়া স্বভাব দেখিয়ে শুধু গাছ নয় যেন মানুষেরই মত কোনো প্রাণীতে পরিনত হয়েছিলো আমার কাছে।

কলোনীর পাশ ঘেষেই পাঁচিলের ওপারে জয়পুরহাট চিনিকল। আখ মাড়াই মৌসুমে এই চিনিকলের ঘটঘট শব্দে কানে তালা লেগে যায়। যখন চিনি হয় তখন মিলের পাশ দিয়ে গেলে এক আশ্চর্য্য ঘ্রান নেমে আসে। মোলাসেস এটাও আমার দেখা এক অবাক বিস্ময়। মোলাসেসের গন্ধ বা তার সেই অন্যরকম কাঁদামাটির চেহারা সবই ছিলো বিস্ময়কর আবিষ্কার আমার ছেলেবেলার। চিনিকল চলার সময়ের শব্দ, সেই দৃশ্য সব চোখে ভাসে আমার..... চোখে ভাসে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। সেই চিনিকল সেই গেট, সেই পথ সবই আছে আগের মত শুধু আমার জীবনের সময়গুলো হয়ে গেছে গান- এ পথে আমি যে গেছি বার বার, ভুলিনিতো একদিনও, আজ কি ঘুচিলো চিহ্ন তার, উঠিলো পথের তৃন!!! সেই পদচিহ্ন ঘুচে গেছে আজ বহুদিন হলো। নতুন করে পদচিহ্ন এঁকে দিলাম তাই নতুন করে পুরনো পথের বাঁকে বাঁকে।

আমি বললাম এতদিন পরে এসেছি যখন আমার আরেক ছেলেবেলাও একটু দেখে আসি না? কিন্তু আমার মিঃ সঙ্গী নানা কথা বলে আমাকে বিরত রাখার চেষ্টা করছিলো। তার কাছে এই সব ছাইপাশ দেখার কোনো মূল্য ছিলো না শুধু আমার ইচ্ছের মূল্য দিতেই সে আমার সফর সঙ্গী হয়েছিলো। শেষ মেষ আমার অনুরোধ আমার ক্রোধে পরিনত হলো মানে ভাবছিলাম এতদূর যখন এসেছিই আর একটু কষ্ট করে আরেক ছেলেবেলার স্থান দেখে গেলে ক্ষতি কি? তখন আর কি করা তাই তখন তাকে রাজী হতেই হলো।

আমাদের সাথে আমাদেরকে গাইড করে নিয়ে গিয়েছিলো ওখাানের একজন স্থানীয় বাসিন্দা। সেদিন তার ঢাকায় ফিরে আসার কথা। তার অফিস খুলে যাচ্ছিলো। তবুও সে সকালেই চলে এলো আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করতে। পরোটা, ডাল, মুরগীর ঝোল, মিষ্টি ,ভাজী আরও কি কি সব দিয়ে রাজকীয় খানাপিনার ব্যবস্থা হলো। তারপর বিদায়ের পালা। সকলের কাছে বিদায় নিয়ে ফিরে চললাম জয়পুরহাট ছেড়ে। শেষবারের মত হয়ত চোখ মেলে দেখে নিলাম আমার ছেলেবেলার সেই সুপরিচিত মিল কলোনীটিকে।

জয়পুরহাট থেকে বের হবার পর শামীমকে গাড়ি চালাতে দেওয়া হলো। বেচারা আগে কখনও লং রুটে গাড়ি চালায়নি। সে কিছুদূর গিয়ে বলে এইখান থেকে রংপুর ১৬ কিমি। আমি তো চিন্তায় পড়লাম। রংপুর তো এখান থেকে এটলিস্ট ১০০ মাইল হবার কথা। সে মহা পন্ডিতি স্টাইলে বলে আরে না বাইপাস হইসে এখন রংপুর ১৬ কিমিই। আমাদের কথা শুনে আমার মিঃ সঙ্গী হাসছিলো। সে বললো তুমি শামীমকে আজও চিনোনি সে ৯৬ কিমিকে বলছে ১৬ কিমি। এতক্ষনে সব রহস্যের সমাধান হইলো। শামীম এরপর দূরে তাকিয়ে বলে সামনে ব্রীজ। আমি চারিদিকে তাকিয়েও কোথাও ব্রীজ দেখলাম না। তারপর দেখি দূরের বালির ঢিবিকে বলে সে ব্রীজ। তার এই সব উল্টা পাল্টা কর্মকান্ড ও আক্কেল জ্ঞানের অপরাধে তাকে ড্রাইভিং সিট থেকে নামিয়ে চালকের আসনের পাশে সিটে বসতে বাধ্য করা হলো।



অবশেষে পৌছালাম গোপালপুর তথা নর্থ বেঙ্গল স্যুগারমিলে। এই চিনিকল বা স্যুগারমিল বা কলোনীটি জয়পুরহাটের মত অত বড় নয়। তবুও এ বছরে নাকি এই মিলটি চিনি উৎপাদনে খুব ভালো করেছে। গেইটে ঢুকতেই এক রাশ স্মৃতি হুড়মুড় করে নামলো চোখের পাতায় মানে যখন এসেছিলাম আমি আমার ছেলেবেলায় এই কলোনিটিতে। এই কলোনিটি শুধুই একটা মাত্র রোডের উপরে দাঁড়িয়ে। খুব স্বল্প লোকজন বাড়িঘর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মিলপাড়া। আমরা গিয়ে সোজা উঠলাম অতিথি ভবনে। সেখানে সেদিন পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান চলছিলো। কাজেই হুলুস্থুল পরিবেশে আমি আর থাকতে চাইলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ঈশ্বরদী চলে যাবো। সেখানে রয়েছে স্বপ্নদ্বীপ। সেই হোটেলেই উঠবো বলে মনস্থ করলাম। তার আগে আমি দেখতে চাই আমার শৈশবে দেখা এই চিনিকলের সেই রাজপ্রাসাদসম ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের বাংলোটি।


বাড়িটি অবিকল তেমনই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু হলদে সেই রাজপ্রাসাদের হলুদ রঙের উপর চড়েছে খুবই বিদিক্চ্ছিরি এক ছাই ছাই রঙ। তার উপরে খুবই খেত্তু মার্কা স্টাইলে নকশা করা হয়েছে। আমার ছেলেবেলার সেই রাজপ্রাসাদসম বাড়িটার এই করুন পরিনতি চেহারা দেখে একটু মনটা দমে গেলো। তবে ঠিক সেই আগের মতনই আজও এতগুলো বছর মাস কালের পরেও আমার সেই রাজপ্রাসাদের পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিলো নাগকেশর ফুলের গাছটা।

আমার ঠিক মনে নেই কোন সময়ে গাছটা ফুল দিত তবে বোধ হয় আমার আগমনেই ফুলে ফুলে ছেয়েছিলো গাছটা সেদিন।

গাছের তলায় পড়ে থাকা অজস্র সুন্দর নাগ কেশরের ফুল দেখে আনন্দে মন ভরে গেলো আমার। সোহাগ চাঁদ বদনী ধ্বনী নাচোতো দেখি বালা গানটাতে মনে হয় এই ফুলটার কথাই বলা আছে। গাছের গুড়িটাকে ছুঁয়ে মনে মনে প্রশ্ন করলাম। ভালো আছো তো??


এই প্রাসাদসম বাড়িটাকে ঘিরে ছিলো অজস্র গাছ, নাম না জানা সব ফুল, আরও ছিলো ঝা চকচকে পাতাওয়ালা সব পাতাবাহার। সে সব দিনে এই পাতাবাহারগুলোর পাতা মুছে ঝকঝকে করে রাখতো মালীরা। গাড়ি বারান্দা ছিলো তিন পাশ ঘেষে। নীল রঙের কার ও আরও কয়েক রকমের গাড়ি ছিলো তখন। ছোট্ট একটা কার ছিলো যার নাম মিনিমক। সেই হলুদ আর কালোর মিশেলে গাড়িটা খুবই মজার ছিলো আমাদের ছেলেবেলায়।

এই বাড়িতে একবার এক অদ্ভুতুড়ে কান্ড ঘটেছিলো একদিন। তখন ছিলো খুব শীতের দিন। সন্ধ্যার পর থেকেই এই বাসার পাশের বাসার উঠানে, ছাদে বড় বড় ইটের টুকরা এসে পড়তে লাগলো। চারিদিকে শোরগোল উঠে গেলো। দারোয়ান ড্রাইভার লোকজন জড়ো হলো কই থেকে পড়ছে এই ইট। সে আবার যে সে ইটের টুকরা না। আস্ত বড় বড় থান ইট। যেই বাসায় ইট পড়ছিলো সেই বাসাটা ছিলো মন্টিদের। মন্টি আমাদের চাইতে একটু বড় ছিলো। অনেকেই বলছিলো এই মন্টিরই দুষ্টু কোনো প্রেমিক প্রবর হয়ত ইট ছুড়ছে বাসাটাতে। কিন্তু সারা রাতেও সেই ইট পড়া বন্ধ হলো না। এমনকি গভীর রাতে দারোয়ান সেই ভূতেদেরকে বলেছিল- ভূত বাবারা এই যে এত ইট ফেলছো এসব না ফেলে টাকার থলে ফেললেও তো পারো আমাদের উপকার হয়। এই কথা বলার পর পাশের বাড়ির ইট ফেলা ভূত রেগে গিয়ে এই বাসাতেও ইট ফেলতে শুরু করেছিলো।

দুপুর নাগাদ অনেক বড় বড় ওঝা ডেকে আনা হয়েছিলো। তারা এসে বললো, এই বাড়ির দেওয়ালে জন্ম নিয়েছিলো এক বট গাছ। সেই বট গাছ কেটে ফেলা হয়েছিলো পাঁচিল ভেঙ্গে যাবার ভয়ে। সেই গাছে বাস করতো কতগুলো অতি ভালো মুসুল্লী জ্বীন যারা হজ্জ্বে গিয়েছিলো সে সময়। তারা ফিরে এসে দেখেছিলো তাদের বাড়ি নেই তাই রাগ করে নাকি ইট ফেলছিলো। যাইহোক শেষ মেশ ভূতেদের পা ধরে মাফ টাফ চেয়ে রক্ষা পাওয়া গেছিলো। সেই সময়টা আসলেও খুব ভয় পেয়েছিলাম এসব ভূতেদের গল্প শুনে। কিন্তু আজ যখন লিখছি খুবই হাসি পাচ্ছে।

যাইহোক সেই বাড়িটার চারপাশ বাগান বারান্দা ঘুরে দেখাচ্ছিলেন এখনকার এমডি। তিনি আমাকে বুঝাচ্ছিলেন অনেক গাছ টাছ কেটে তিনি হাস মুরগীর খামার, মোষ খামার, মৎস্য খামার বানিয়েছেন। উনি খুবই গর্বিত সেই কারণে। কিন্তু আমার ভালো লাগছিলো না আমার ছেলেবেলার সেই বিশাল বড় রাজদ্যোনাের মত বাগান কেটে ছেটে এসব করায়। তবুও রক্ষা বাড়ির সামনের বাগানটা প্রায় তেমনই আছে।

বাগানটা দেখে চোখের সামনে ভেসে উঠলো আরও এক দৃশ্য। আমাদের খেলার সাথীরাই ছিলো গার্ডভাইয়ারা, মালী ভাইয়ারা, ড্রাইভারভাইয়ারা আর বাড়িতে যারা কাজ করতো রান্নার কিংবা ঘরবাড়ি ধোয়া মুছার তারাই। তো এক বিকালে আমরা খেলছিলাম রান্নাবাটি খেলা। গার্ড- মালী- ড্রাইভার ভাইয়ারা হলেন এক বাড়ির লোক আর অপরদিকে আমরা বোনেরা আর কাজের মেয়ে আয়েশা আর আরেকজন মনে হয় সুলতানা নাম ছিলো তার। আমরা চারজন ছিলাম আরেক বাড়ির লোকজন। তো আমরা ওদেরকে দাওয়াৎ দিলাম। কি সুন্দর করে রাঁধলাম পাতার পোলাও, ফুলের রোস্ট, ডালের কোরমা কালিয়া কোপতা কত্ত কিছু। সেসব তারা আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসে হাপুস হুপুস খেয়ে গেলেন। তারপর আমাদেরকে দাওয়াৎ দেবার পালা। হাত মুছতে মুছতে তারা দাওয়াৎ দিলো। আফারা এইবার আমগো বাড়ি আপনেদের দাওয়াৎ। আমরা গেলাম গদ গদ হয়ে ওদের বাড়িতে দাওয়াৎ খেতে। গিয়ে দেখি ওরা আমাদের জন্য রেঁধেছে ফুলের গোটার আলু ভর্তা, মোচড়ানো পাতাবাহারের পাতার শুটকী, লাল পাতার মরিচ পোড়া, সবুজ পাতার শাক ভাজী এইসব। আমার এক ছোট বোন বলে- কি!!!!!!!!! শয়তানী না!!!!!!!!!! আমরা তোমাদেরর খাওয়ালাম পোলাও কোরমা আর তোমরা খাওয়ালে শুটকী মুটকী মরিচ পোড়া!!! তারা বলে আপা আমরা গরীব মানুষ আমরা কই থেইকা পোলাও কোরমা পাবো বলেন!!
আমি তার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ কিন্তু সেই বোন তখন তাদেরকে মারতে শুরু করলো কিল ঘুসি ইট পাটকেল। ঐ কেনো এই সব খাওয়ালে হ্যা!!!!!!! তারা বলে মাইরেন না মাইরেন না এইটা অন্যায়। দাওয়াৎ খাওয়াইলাম আমরা আর আপনারা এসে খাওয়াইলেন মাইর!!! হা হা হা কত মজার শৈশব ছিলো আমাদের। আর আমাদেরকে ঘিরে থাকা মানুষগুলো ছিলো কত ভালোবাসার!

যাইহোক। এমডি সাহেব যখন আমাকে বাগান ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন এবং বাড়ির মধ্যে দেখাতে উদ্যত হলেন তখনই এক বজ্রকন্ঠ শোনা গেলো, এম ডি সাহেব আপনার বিশ্রামের সময় হয়েছে। আপনি বিশ্রাম নিতে যান। মানে মিসেস এম ডি এর পছন্দ হলো না এমডি সাহেবের আমাকে আহলাদী করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো আমার শৈশব। তার চেহারায় ছিলো ভাবখানা এমন- যত সব আদিখ্যেতা। মনে পড়ে গেলো আমার কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা- রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী, রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি। কিন্তু আমার গ্লানি না ধুয়েই এমডি সাহেব সুড়সুড় ভেতরে চলিয়া গেলেন। আমি তারপর কয়েক মুহুর্ত তাহাদের পারিষদের সাথে কথা টথা বলে হাঁটা দিলাম স্যুগারমিল ছেড়ে।


এই চিনিকলে আছে শহীদ সাগর। ১০৭১ এ এই চিনিকলের তৎকালীন জি এম আজিম সাহেব ও আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীগন মারা যান পাক বাহিনীর হাতে। তাদের লাশ ফেলে দেওয়া হয় এই চিনিকলেরই এক ছোট্ট পুকুরের মাঝে। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার এবং সেই পুকুরটির নাম শহীদ সাগর।

ফিরে আসার সময় চোখ পড়ে গেলো সেই রাজ প্রাসাদসম বাড়িটির পাঁচিলের পাশে ঘন ফল বাগানের উপরে। সেই রাজপ্রাসাদের আড়াইতলা ড্রইং রুমটার পাশের সিঁড়িতে বসে থাকতাম আমি দুপুরবেলাগুলোতে। কি যে ভালো লাগতো এই জায়গাটা। সেখান থেকে দেখা যেত এই ঘন বন আম জাম কাঁঠালের বাগানের ফাঁক দিয়ে কলোনীর রাস্তার কিছু অংশ। সেখানেও রয়ে গেছে আমার কিছু না বলা স্মৃতি। শৈশব কৈশোরে দেখা দিনগুলো স্মৃতিগুলো বুকের গভীরে গেঁথে যায় একেবারে।

এই বাড়িতেই ছিলো দুটি পায়রা। একটা ছাই আর ঘননীলে জড়ানো শরীর আর আরেকটা সাদা আর খয়েরীর মিশেলে। ছোট্ট বাচ্চা থেকে পালা হয়েছিলো তাদেরকে। হাতে ছাড়া কখনও মাটি থেকে বা কোনো পাত্র থেকে খেতো না তারা। শীতের পরে যখন গ্রীস্ম এলো। সাদা কবুতর ছানাটা ঘরের মধ্যে উড়ে এসে ফ্যানে বাড়ি খেয়েছিলো। এরপর আর উড়তেই পারলো না। ঘরের ভেতরেই খাঁটের তলাতে লুকিয়েছিলো বাকী কটা দিন। তার জোড়াটাও তার সাথেই থাকতো। আমি খাঁটের তলে উঁকি দিয়ে দেখেছিলাম রক্তে ভিজে গেছিলো তার বুকের সাদা ধপধপে পালক। আমি হাতে গমের দানা নিয়ে কত ডাকছিলাম আয় আয় কিন্তু তারা আর আমাদেরকে বিশ্বাস করছিলো না। কিছুতেই আর আসছিলো না। কিছুদিন পর মারা গেলো সাদা পায়রাটা। যতদিন বেঁচেছিলো জোড়াটা কি যেন এনে খাওয়াতো ওকে।

জোড়াটা মারা যাবার পর সে উড়ে গিয়ে বসলো সু উচ্চ সিড়িঘরের একদম উপরের জানালাতে। কিছুতেই আর আসতো না শত ডাকেও সে আর সাড়া দিত না। তারপর একদিন কোথায় যেন উড়ে গেলো। সেই পায়রাটাকে আমি আজও স্বপ্নে দেখি। কোথায় হারিয়ে গেছে সে জানিনা। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম তাকে হারিয়ে কিন্তু আজ এই বয়সে এসে জেনে গেছি, বেঁচে থেকেও জীবন থেকে এমন অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। পরম প্রিয়জন অনেক দূরের হয়ে যায়। আর কথা হয় না, জানা হয় না আর কখনও, কেমন আছে সে? বোবা সময় সকল কিছুর সাক্ষী হয়ে রয়ে যায় নিশ্চুপ .......



নর্থ বেঙ্গল স্যুগারমিলে রাত কাটাবার কথা থাকলেও, ওদের অতিথি ভবনের অবস্থা বিশেষ পছন্দ না হওয়ায় আর ছোট্ট একরতি সেই কলোনীতে এক চক্কর দিতেই মনে হলো কেনো যেন এখানে থাকার আর কোনো দরকার নেই আমার। যদিও জানি রাতে থেকে গেলে সকালবেলাটাতেও আমার ছোটবেলার বহু স্মৃতির দুয়ার খুলে যেত। তবুও থাকার ব্যবস্থা পছন্দ না হওয়ায় আমরা ডিসিশন নিলাম আমরা ঈশ্বরদী চলে যাবো সেই বিকেলেই। কিন্তু যাবার পথে লালপুর হয়ে যেতে হবে কারণ সেখানে নাকি সৃষ্টি হয়েছে গ্রীন ভ্যালী নামে এক নয়নাভিরাম পার্ক। অবাক হলাম এটা ভেবে যে দেশে এত কিছু হয়ে গেছে কটার খবর রাখি আমরা? আর ভাবতেও ভালো লাগে ছোট্ট বেলার দেখা সেই অজপাড়াগা এখন অনেকটাই উন্নতির পথে। গোপালপুরের কাছেই লালপুর। খুব সম্ভবত ৫ কিলোমিটার দূরত্ব। সেই লালপুরেই গ্রীন ভ্যালী পার্ক। এত দূর এসেছি আর সেই পার্ক দেখবো না তাতো হয়না, তাই রওয়ানা দিলাম সেই গ্রীন ভ্যালী পার্কের উদ্দেশ্যে।


সেদিন ছিলো পহেলা বৈশাখ। আমি লাল শাড়ি চুড়ি নিয়ে গেলেও অসম্ভব গরমের কারণে জার্নীতে আর পরার সাহস পেলাম না। গ্রীন ভ্যালী পার্কের কাছাকাছি পৌছুতেই সেই অঢেল জনতার সারি দেখে বুঝলাম এই পার্ক মানুষের হৃদয়ে ভালোই স্থান পেয়েছে। মাটির রাস্তা যা ছিলো খুব সরু রাস্তা। সেখানেই জ্যাম লেগে গেছিলো। আর সেই পথে যেতে যেত আমি দেখলাম হাতে হাতে সোনার ময়ুর নিয়ে ঘুরছে হকারেরা। আমি বললাম শামীম আমি সোনার ময়ুর নেবো গাড়ি থামা। শামীম বলে রাখেন আপনার সোনার ময়ুর। আমি এইখানে গাড়ি সামলাতেই পঁচা কাঁদার ময়ুর হয়ে যাচ্ছি। আর আমার মিঃ সঙ্গী তো আমার কান্ডে রেগে মেগে শেষ। সে ভেবেই পাচ্ছিলো না আমি এই অজপাড়াগাঁয়ের হকারের হাতের সোনালী কাগজ বা টিনের সোনার ময়ুর দেখে এত বিস্মিত হচ্ছি কেনো! আমার বিস্ময় আমি কি করে বুঝাবো সবাইকে কি সেটা আসলেই বুঝানো সভব!!! :( যাইহোক শামীম আমাকে সান্তনা দিলো সে নাকি ঢাকা ফিরে নদ্দা বাজার থেকে আমার সেই সোনার ময়ুর এনে দেবে। আমি বললাম মিছা কথার জায়গা পাস না না!!!!!!!!! সে বলে কসম আমি জানি এই ময়ুর নদ্দা বাজারে পাওয়া যায়। এরপর এতগুলো দিন কেটে গেলো শামীম আমাকে আর সোনার রুপার কোনো ময়ুরই এনে দিলো না। যাইহোক গেটে পৌছে গেইট দেখে আমি মুগ্ধ! বুঝলাম আমাদের দেশেও এমন মানুষ জন্ম নিচ্ছে যারা তাদের দেশ বিদেশে দেখা জ্ঞানের প্রতিফলনে সৃষ্টিশীল অপূর্ব সুন্দর মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে। পার্কে ঢুকেই তার সবুজ সজীব সৌন্দর্য্যে আমি মরি মরি। কি যে সুন্দর করে কেটে ছেটে গাছপালাগুলোকে মনোরম করে তুলেছে!



প্রায় ১২৩ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত গ্রীন ভ্যালী পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড। যেমন মিনি ট্রেন, বুলেট ট্রেন, নাগরদোলা, ম্যারিগো রাউন্ড, পাইরেট শীপ, হানি সুইং, স্পীডবোট, প্যাডেল বোট ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর এই পার্কের সুসজ্জিত নানা রকম বৃক্ষের সারি মন ভুলায় চোখ জুড়ায়। এখানে রয়েছে শ্যুটিং স্পট, পিকনিক স্পট, এ্যাডভেঞ্চার রাইডস, কনসার্ট এন্ড প্লে গ্রাউন্ড, সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নামাজের স্থান, ডেকোরেটর, কার পার্কিং, ক্যাফেটেরিয়া, শপ, সভা-সেমিনারের স্থান এবং আবাসিক স্থান ইত্যাদি। গ্রীন ভ্যালী পার্কে প্রবেশের জন্য টিকেট নেওয়া হয়।


তবে আমি সবচেয়ে মুগ্ধ হলাম যিনি এই পার্কের মালিক তার দেশের মানুষের বিনোদনের জন্য কিছু করার মনোভাব দেখে। শুনলাম তিনি নাকি একজন প্রাক্তন এসপি। তার জন্য রইলো শ্রদ্ধা! তবে একটা জিনিস না বললেই নয় এত সুন্দর ঝকঝকে তকতকে পার্কে মানুষজন চিপস এর প্যাকেট, চকলেট রেপার এসব ফেলে পরিবেশ দুষন করছে। আশে পাশে তাকিয়ে আমি দৃষ্টির নাগালে কোনো ডাস্টবিনের দেখা পেলাম না। তাই ওদের কর্তৃপক্ষকে বিনা পয়সায় সাজেশন দিয়ে আসলাম। বড় বড় ডাসটবিন বানিয়ে এই অপুর্ব সুন্দর বাগানটিকে রক্ষা করেন। যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আর তাতেও কাজ না হলে লাগবে শাসন মানে কড়া শাসন!!! ময়লা ফেলিলেই ৫০০ টাকা জরিমানা। হাতে না উঠলে তো পাতে উঠাতেই হবে। :)


এই পার্কে নানা রকম রাইড আর স্টাচুর মাঝে স্পাইডারম্যান স্টাচুটা বড় সুন্দর!!! যেন সত্যিকারের এক স্পাইডারম্যান ঝুলে পড়ছে রশি ধরে। বিকাল থেকে তখন সন্ধ্যা গড়াচ্ছে তবুও গরমে প্রান আইঢাই করছিলো। তাই বেশিক্ষন সময় কাটানো গেলো না ইচ্ছা থাকা সত্বেও। আমরা বসে বসে আইসক্রিম খেলাম। তারপর রওয়ানা দিলাম ঈশ্বরদীর উদ্দেশ্যে। ছেড়ে যাচ্ছিলাম লালপুর। মনে পড়ছিলো কত শত কথা, কত শত স্মৃতিময় দিনগুলো।

একেকস্থান যেনো একেক নতুন গল্পের বই এর পাতা। তাতে লেখা হয়ে গেছে নানা রকম ছোট বড় গল্প। মনে পড়েছিলো এক কিশোর প্রেমীর কথা। ফুলের নামে নাম ছিলো যার। বেচারা অনেক বকা ঝকা মাইর ধোর খেয়েছিলো আমার বাবা মা আর তার নিজের বাবা মা থেকে। আমি ছিলাম পুরাই নির্দোষ মানে তার প্রেম বুঝা তো দূরের কথা আমি জানতামও না প্রেম পিয়াসী সেই কিশোর বালক কি কি সৃষ্টি ছাড়া অনাসৃষ্টি করেছিলো সেই পুচকে বয়সে এবং অবশেষে ধরা পড়েছিলো আমাদের বাবা মায়েদের হাতে। পরে জেনেছিলাম মায়ের মুখেই। হা হা এতগুলো দিন পরেও মনে পড়ে গেলো সেই গল্পগুলো। বেচারী বালক!!! আমার কিশোরী হৃদয়ে সেদিন সেই স্থান পাক না পাক তার সেই সব অনাসৃষ্টিমুলক কর্মকান্ডের জন্য এই বুড়াকালের স্মৃতিতে অন্তত রয়ে গেলো আজও নীরবে । সেও ও তো হৃদয়েই থাকা তাই না .......


ঈশ্বরদী এলাম স্বপ্নদ্বীপের কথা শুনে। স্বনামধন্য একজন ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম সৃষ্টি করেছেন এই স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টটি। এই রিসোর্টের গেটে ঢুকে মনে হল যেন এক টুকরো রুপকথার রাজ্য গড়ে তুলেছে কেউ সেখানে।

কি নেই দেশী বিদেশী রুপকথার সকল ক্যারেকটার যেন হাজির হয়েছে সকলে মিলে সেই এক টুকরো উদ্যানে।


বিশাল ড্রাগন হাতী ডলফিন থেকে শুরু করে বাংলা ঠাকুরমার ঝুলির রুপকথার রাজকুমার রাজকন্যারা।


সবচেয়ে যেটা এখানে আমার ভালো লেগেছিলো সেটা শেয়ালের কাঁঠাল খাওয়া গল্পের দৃশ্যটি।



এখানে রয়েছে পাঠাগার।

রয়েছে চটপটি ফুচকা থেকে শুরু করে চাইনিজ থাই খাবারের ব্যবস্থাও। আমরা সেখানে জায়গা পেলাম না। তবে অদূরেই তাদের আরেকটি হোটেল সেখানে উঠলাম । তখন বিকাল। সন্ধ্যার একটু পরে আমরা গেলাম স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে রাতের খাবার খেতে। সেখানে তখন যেন ঈদের আনন্দ চলছে। এমনিতেই ঈদের পর পর ছিলো সেই ভ্রমন সাথে আবারসেদিন ছিলো পহেলা বৈশাখের উৎসব।

ঈশ্বরদী ভ্রমন এই প্রথম না। ছোটবেলায় অনেকবার এসেছি এই ঈশ্বরদীতে। তখন এ জায়গার চেহারা মোটেও এমন শহুরে ছিলো না। রাস্তাঘাটও ছিলো বেশ ভাঙ্গাচুরা অনুন্নত। কিন্তু এবারের ভ্রমন আমাকে অবাক করে দিলো। এ যেন এক নতুন রুপের নতুন বাংলাদেশ। খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার। আমার একটা স্বভাব আছে। যে কোনো স্থানে ভ্রমনে গেলেই পরদিন খুব ভোরে উঠে আশে পাশে হেঁটে আসতে আমার বড় ভালো লাগে। সেখানকার পরিবেশ, ফুল লতা পাতা মানুষ ঠিক ঐ ভোরের বেলা যেন অন্যরকমভাবে ধরা দেয় আমার মনে।

ঈশ্বরদীর সেই খুব ভোরে তখন বাইরে বের হতে আমার ভয় ভয় লাগছিলো তাই কিছুক্ষন জানালা দিয়ে চেয়ে রইলাম পাশের ধান চাল বা এমন কিছু হবে সেই শান বাঁধানো চাতালের দিকে। দূরে সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিলো বস্তা বাঁধা ত্রিপলে ঢাকনা নিয়ে।

আমার মনে হলো এই ভোর আর কখনও আমার দেখা হবে না। কি সুন্দর এক ভোরবেলা যা আমার শহরে অন্যরুপে ধরা দেয়। পাশে একটা তেজপাতা গাছে একটা হলুদ বরণ পাখি ঐ সাতসকালে বসে বসে ডাকছিলো।


একটু আলো ফুটতে আমি বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। চেয়ারে বসে দেখলাম ঠিক সামনেই এক টং এর দোকানে পেতে রাখা বেঞ্চে বসে আছে কয়েকজন খেঁটে খাওয়া মানুষ। সাদা ধুতি, চেক লুঙ্গি পা তুলে বসে তারা চা খাচ্ছিলো লম্বা কোনো টোস্ট বিস্কিট দিয়ে মনে হয়। বিস্কিটগুলো কমদামী কাঁচের জারে রাখা ছিলো। আর বহু বহু দিনপর সেই টং দোকান থেকে ভেসে আসা খড়ি মাটির চুলার ধোঁয়ার ঘ্রান ভেসে এসে লাগলো নাকে। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো আমার দাদীবাড়ির দাদীর হাতের নিকানো চুলায় খড়ি ঠেলে দেওয়া ঘ্রান ওঠা ধোঁয়ার দৃশ্যগুলো। ফেলে আসা হারানো দিনের কত স্মৃতিময় ক্ষন ভুলে থাকি আমরা আজকের এই কর্মব্যস্ত জীবনে। নগর সভ্যতায় অভ্যস্থ হয়ে ভেসে চলি নতুন দিনের গানে গানে। তবুও মায়া তবুও বুকের মাঝে গভীর কোনো ভালোবাসা ভালোলাগা উঁকি দিয়ে যায় খানিক অবসরে।

সকালের নাস্তায় খানাপিনার সমাহার দেখে আমি তো পুরাই আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলাম। তারা রুটি চাপাতি, ভাজি, মাংস ছাড়াও খিচুড়ি ডিম, চা, জ্যুস কিছুই বাকি রাখেনি দিতে। আমরা কি এতসব খেতে পারি? অর্ধেক খানা পড়ে থাকলো প্লেটেই। আমরা রওয়ানা হলাম ঈশ্বরদী রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে।


রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র , এবং দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথমটি 2024 সালে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে । রাশিয়ান রোসাটম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন । মূল নির্মাণ সময়ের মধ্যে, রাশিয়ার 2,500 বিশেষজ্ঞ সহ মোট কর্মচারীর সংখ্যা 12,500 জনে পৌঁছাবে । এটি সম্পন্ন হলে দেশের প্রায় 15% বিদ্যুত উৎপন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। (উইকি থেকে)

কিছুদিন আগে পড়েছিলাম বাংলাদেশের মধ্যে এক রাশিয়ান শহর রূপপুর। এইখানে হাজার হাজার রাশিয়ান নারী পুরুষদের জন্য গড়ে উঠেছে বাজার ঘাট দোকান পাট। সেসবের উপরে সবই রাশান ভাষায় লেখা থাকে দোকানের নাম ধাম সবকিছুই। সেই কারণে আমরা গাড়ি নিয়ে ঘুরেও বেড়ালাম বাজারের মধ্য দিয়ে। সারি সারি অত্যাধুনিক বিল্ডিংগুলো দাঁড়িয়ে ছিলো পাশ ঘেষে। দোকানপাটেও সাদা সাদা লোকের আনাগোনা। বাহ বাহ সত্যিই তো দেশের মধ্যে বিদেশ বানিয়ে ফেলেছে ওরা। কিন্তু এই লেখাটা লেখার সময় উইকি থেকে এই রূপপুর নিয়ে পড়তে গিয়ে আরও একটা মজার তথ্য পেলাম। হা হা সেটা শেয়ার করছি.....


রূপপুর প্লান্টের সেই কর্মচারী কর্মকর্তাদের বাড়িঘরের জন্য বালিশ কিনতেও নাকি সাংঘাতিক দূনীতি হয়েছে। সেখানে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। কভারসহ কমফোর্টারের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একইভাবে বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৬ টাকায়। এর বাজারমূল্য অবশ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

পাঁচটি ২০ তলা ভবনের জন্য এসব কেনাকাটা হয়েছে। প্রতিটি তলায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য কমফোর্টার শুধু বেশি দামে কেনাই হয়নি, কেনার পর দোকান থেকে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে আলাদা ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছে। মাত্র ৩০টি কমফোর্টারের জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া দেখানো হয়েছে। আর একেকটি কমফোর্টার খাট পর্যন্ত তুলতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ১৪৭ টাকা। কমফোর্টার ঠিকঠাকমতো খাট পর্যন্ত তোলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য তত্ত্বাবধানকারীর পারিশ্রমিক দেখানো হয়েছে প্রতিটির ক্ষেত্রে ১৪৩ টাকা। ঠিকাদারকে ১০ শতাংশ লাভ ধরে সম্পূরক শুল্কসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি কমফোর্টারের জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ২২ হাজার ৫৮৭ টাকা। শুধু কমফোর্টার নয়, চাদরের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। ৩০টি চাদর আনতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। আর ভবনের নিচ থেকে খাট পর্যন্ত তুলতে প্রতিটি চাদরের জন্য মজুরি দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে আসবাব কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৪ জন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। গত ২৭ জুলাই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। ঘটনা তদন্তে দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গণপূর্তমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দুটি কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে ৩৪ জন কর্মকর্তা বা ব্যক্তি এ ঘটনায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এর মধ্যে ৩০ জন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। চারজন বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের।

হা হা এই অতি জঘন্য মানুষের দূনীতি পড়েও হাসি পেলো আমার। বালিশকেও ছাড়েনি দূর্নীতি থেকে। যাইহোক ছেলেবেলার হার্ডিঞ্জ ব্রীজকে আবার দেখা হলো এই বুড়িবেলায় এসে। নীরব নিথর ব্রীজের নীচে পদ্মার তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে মানুষের মেলা, উৎসব। সেটা ছিলো পহেলা বৈশাখের পরের দিন।


গত কয়েকবছর আমার ভ্রমনে ভ্রমনে কেটেছে। একটু ছুটি পেলেই ছুটে গেছি দেশে ও বিদেশে। অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের ইতিবৃত্ত আগের বছরেও শেষ করতে পারিনি। এ বছরেও না। তবে এই কার্ফিউ এর মন খারাপ করা অকর্মন্য দিনগুলোতে ছবি আঁকা অংবং নানা কাজের ফাকে ফাকে লিখে রাখলাম যতটুকু মনে পড়ে গেলো সেসব দৃশ্যগুলো। লিখে রাখলাম, একে রাখলাম মনের ক্যানভাসের সাথে সাথে সামু ক্যানভাসের পাতায়। জানিনা কতদিন লিখতে পারবো এখানে আমরা। তবুও এই ব্লগটি এক চির সমুজ্জ্বল ক্যানভাস হয়েই গাঁথা থাকবে মনের মুকুরে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন সরকার কি ইসলাম কুপানোর নতুন মিশন নিবে?

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭

নতুন সরকারে এনজিও পন্থী লোকজন দিয়া ভরপুর। তারপর আছে লালনবাদী আর আছে পাক্কা নাস্তিকগণ। দেশে ইসলাম কুপিয়ে ইন্ডিয়া আর পশ্চিমা দেশগুলোকে খুশি রাখা ছিল তার ক্ষমতার মূল উৎস। খবরে দেখলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষ পর্যন্ত ভারতে ইলিশ পাঠাইতে বাধ্য হইলো?

লিখেছেন অনুপম বলছি, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮

আবরার ফাহাদ আর আসিফ নজরুলকে অপমান করলো এনজিওগ্রাম সরকার। ৫০০ মেট্রিক টনের জন্য তারা আন্দোলন করেছিলো কিন্তু এখন ৩ হাজার মেট্রিক টন পাঠাইলো। ভালো হইছে জাতি এখন ভন্ড মিথ্যুকদের নিজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা সময়ের কাছে একদিন.....

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮


আমার ছেলেবেলায় আমি বাংলাদেশের নানাস্থানে ভ্রমন করেছিলাম। এর পেছনে কারণ ছিলো আমার কিছু পরমাত্মীয়ের সরকারী কর্মকর্তা হবার সুবাদে আমাদের ছেলেবেলার গরমের ছুটি, শীতের ছুটি ছাড়াও নানাবিধ আচার অনুষ্ঠান পালনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের পরিচয় পরিস্কার হওয়ার পরে দেশ থ'হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



কোমলমতিরা সাহসের পরিচয় দিচ্ছে, ক্রমেই নিজের পরিচয় দিচ্ছে। ব্লগের ১ কোমলমতি নিজের পরিচয় দিয়েছে; বাকীরা কি লজ্জায় ভেঁড়ার চামড়া পরে থাকবেন, নাকি নিজেদের পরিচয় দেয়ার শুরু করবেন?

শেখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নয় বছর সাত দিন (নবম বর্ষপূর্তি পোস্ট)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩২

এ ব্লগে আমার প্রথম পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, রাত ১১টা ২৬ মিনিটে। তারপর, ২০১৬ সাল থেকে আমি নিয়মিতভাবে বর্ষপূর্তির এই দিনটিকে স্মরণ করে পোস্ট লিখে এসেছি। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×