এবার সামার ভ্যাকেশনের শুরুতে আমার এক কলিগ বললো প্লিজ আমাকে একটা ছবি এঁকে দেবে? একটা সিনারী এঁকে দিও। কোনো মানুষ পশু পাখি এসব না কিন্তু কারণ তিনি খুবই নামাজী। কোনো প্রাণীর ছবি ঘরে রাখে না। সে বলছিলো, এই ধরো গাছপালা, নদী সাগর এমন কিছু এঁকে দিও। তবে ভাবছিলাম প্রাণীর ছবি আঁকা যাবে না তবে গাছেরও তো প্রাণ আছে। সে যাইহোক, আমি আবার মানুষের মুখ নৃত্যরতা বালিকা, ফুল পাতা রংধনু আর ময়ুর আঁকতে ভীষন ভালোবাসি। আমাদের বাসার দেওয়ালে নানা রঙ্গে, নানা ঢঙ্গে আমি গ্লাস পেইন্টে, এক্রেলিকে, জলরঙ্গে তেলরঙে ময়ুর এঁকে এঁকে টাঙ্গিয়ে দিয়েছি। সিনারী আমার আঁকতে তেমন ভালো লাগে না। তবুও তার রিকোয়েস্টে আঁকলাম। খুবই সহজ অঙ্কন। ইউটিউবে এমন অনেক সহজ শিক্ষন আছে।
আমি যখন পেন্সিলে মানুষের মুখ আঁকার চেষ্টা করি সেটা আমার অনেক টাইম নিয়ে নেয়। আবার যখন নৃত্যরতা বালিকাদের আঁকি বা ময়ুর পাখি সেসবও অনেক সময় ধরে আঁকতে হয় কিন্তু সিনারী আঁকা যে এত অল্প সময়ের খেলা সেটা আমি জানতাম না আর তাই একের পর এক এঁকে গেলাম ইজি এক্রেলিক পেইন্টিং ইউটিউব আইডিয়া নিয়ে নিয়ে।
ক্যানভাস ফুরিয়ে গেলো। এখন কি করি? আমার বেডরুমের বিশাল বড় রাজকীয় পালঙ্কের গায়ে যে রং তুলির নক্সাটা ছিলো সেটা আমার তেমন পছন্দ হচ্ছিলো না তার থেকেও বেশি অপছন্দ ছিলো বেড সাইড টেবিলের আঁকাআঁকিটা। তাই বিষম সাহসে সেটার উপরও তুলি চালিয়ে দিলাম এরপর। সেই ছবি আমি অবশ্য এখানে দেবো না।
তারপর পুরোনো মাটির ডেকোরেশন পিসের রংচটা চেহারা রঙ্গে রঙে রঙ্গিন ঝলমলে করে তুললাম...
আমার এই কান্ড দেখে তো আসমা সুফিয়ারা ভয়েই শেষ। তারা নাকি ভাবছিলো এরপর আমি তাদেরকে ধরে ধরেই গাঁয়ে লাল নীল হলুদ সবুজ বেগুনি রঙ করে দেই কিনা?
আরও কিছু এঁকেছিলাম গ্রাফাইট পেনসিলে........ সেসবও রেখে দিলাম আমার ব্লগের পাতায়।
এই ভাইয়াটা ব্লগার না। তবে আমার ফেসবুকে আছে। তার রিকোয়েস্টে তার পোট্রেইট আঁকতে গিয়ে আমি নাকের পানি চোখের পানি এক করেছিলাম। এত কঠিন মুখ আমি জীবনে আঁকিনি।
এরপর শুরু হলো আমার প্রচ্ছদ আঁকাআঁকি। এর থেকে একটা আমার বই এর জন্য নেবো আরেকটা রানার ব্লগ ভাইয়াকে দিয়ে দেবো। যেটা বেশি সুন্দর সেটা অবশ্য আমার হবে। কম সুন্দরটা ভাইয়ার জন্য।
এত এত আঁকলাম! তবে একটাও আমার পছন্দ হলো না...... কি যে করি এই পছন্দটাকে নিয়ে......
যাইহোক এটা আমার টেরারিয়াম, পটারিয়াম আর মিনিরিয়ামের গ্রুপ ছবি, একই ফ্রেমে।
আঁকাআঁকির মাঝে পলিমার ক্লে দিয়ে ছবি বানাবানিও করলাম। মানে ছবির মত ক্রাফটস.... এই ক্লে আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে এনেছিলাম দু একটা। সেটাই বানাতে বসলাম।
এরপর মাথায় চেপে বসলো পলিমার ক্লে ভূত! ইউনিমার্টে যাই আর কিনে কিনে আনি। ঐ দোকানী লোকটা মনে হয় ভাবে আমার বাড়িতে ডজনখানেক বাচ্চা কাচ্চা আছে যারা এসব দিয়ে খেলাধুলা করে। আসলে সেই একাই একশোটা আমি নিজেই। যাইহোক পলিমার ক্লে দিয়ে টোস্ট বাটার, ডিমপোচ বানিয়ে, কেক পেস্ট্রি বানিয়ে আমি মহা আনন্দিত। আসলে যে এসন বানিয়েছে সে ছাড়া কোনো কুটনাবুড়া বুঝবে না এই আনন্দের আনন্দ!! যাইহোক সেসব কিছুর ছবি এনে দিলাম আমার ব্লগের পাতায়।
এই ব্রেকফাস্ট প্লেটগুলো বানিয়ে আমি মহানন্দিত হয়েছিলাম!
এইসব আঁকাঝোঁকা ঝোঁকাআঁকা নিয়ে মেতে ছিলাম সামার ভ্যাকেশনের দিনগুলোতে ....... কিন্তু হঠাৎ....
আঁকতে আঁকতে হঠাৎ দেখি মানুষ যখন ছবি
এ লহমায় থমকে দাঁড়াই, অবাক হয়ে ভাবি....
এই টুকুনি এই জীবনে কি ছিলো তার চাওয়া?
একটু ভালো বাঁচতে চেয়ে হলো না তা পাওয়া!
অবাক সাহস, অবাক বক্ষে অকুতো তার ভয়!
দুহাত মেলা সেই পাখিটা ভুলে যাবার নয়।
অবাক পাখি তাকিয়ে দেখো অবাক চক্ষু মেলে
তোমার স্বপ্ন জিনেছে আজ লক্ষ দামাল ছেলে!!
এই মৃত্যু নাড়িয়ে দিলো আমাকে, তোমাকে, এই দেশ ও দেশে দেশে সকলকেই......আমার মতে, এবারের স্বাধীনতার জনক আবু সায়ীদ! তার মৃত্যু জাগিয়ে দিয়েছে এ দেশের আপামর জন সাধারনকে। এক কাতারে এনে দিয়েছে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে। আবু সায়ীদসহ আরও যারা প্রাণ দিলেন এই আন্দোলনে। শ্রদ্ধা এই বীরেদের তরে.....
আমরা তোমাদের ভুলবোনা .......
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯