এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের জ্বালায় আজকাল ক্লান্ত হয়ে পড়ি, বিরক্ত হই, কেমনে সামলাই আমি এত রকম ভূতেদের দৌরাত্মি! ভূতদেরকে বলি যা যা তবুও তারা আমাকে ছাড়ে না। নেচেই চলে মাথার উপর আর তাদের জ্বালায় আমিও নাচি ধেই ধেই। এবারের মাথায় চাপা নানা ভূতেদের মাঝে এক ভূতের নাম ছিলো আচার ভূত। এই ভূতটা হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আমাদের বাসার পাশের আম গাছটায় এসে জেঁকে বসলো, সেই আমের মুকুল ধরবার সময়টাতেই। তারপর লম্বা একটা লাঠি নিয়ে আমি বাসায় ঢুকলেই আমার বেডরুমের জানালা দিয়ে আমাকে খোঁচাতেই থাকে আর নাকি গলায় বলে, এ্যঁই এ্যঁই এই মুঁকুলগুলো থেঁকে কাঁঁচা আঁম এঁকটু বঁড় হঁলেই কিঁন্তু সেঁ সঁব দিঁয়ে আঁচার বাঁনাবি। আমার নাম আঁচার ভূঁত। আঁমি আঁচার বঁড় ভাঁলোবাসি। উঁম আঁমের আঁচার, টঁক আঁচার, মিঁষ্টি আঁচার, কাঁশ্মিরী আঁচার, কুঁচি আঁচার, কাঁচা আঁমের রঁসগোল্লা আঁচার আঁর আঁমসত্ব কিঁ মঁজা কিঁ মঁজা!! আঁমাকে বাঁনিয়ে খাঁওয়াবি বঁল বঁল ? আমি উত্তর না দিলেই চুল ধরে টানে, খামচি দেয়। ঘুমানোই দায় হলো অবশেষে। তাই তার জ্বালায় বানাতে বসলাম সকল রকম দাবী দাওয়া আচারগুলো। তবুও কি শান্তুি আছে!!! এতকিছু বানাবার পর বলে ওঁই ওঁই এঁইবার বাঁনা আমের মোরোব্বা আর গ্রীন ম্যাংগো জ্যাম। কি আর করা ভূতের পাল্লায় পড়ে সবই বানাতে হলো আমাকে।
মাঝের বোতলগুলোতে আমসত্ব আর একপাশে কাশ্মিরী আচার আরেক পাশে কাঁচা আমের রসগোল্লা আচার।
এই যে বোতলগুলো খুলে দেখালাম।
এবার পিছের তাকে দেখা যাচ্ছে কুঁচি আচার??
মাঝের জারটা কিন্তু আচার না, তাই বলে এটাকে যেন আগুন আচার ভেবোনা কেউ।
শুধুই সাজাই আর শুধুই দেখি খেতে পারিনা, আহা কি সুন্দর!!
আচারগুলোর সাথে এবার বানালাম আমের মোরোব্বা আর গ্রীন ম্যাংগো জ্যাম
অবশেষে সবগুলো আচারই সাজিয়ে দিলাম আমার রাক্ষস আচার ভূতটার জন্য!
এর প্রায় কিছুদিনের মাঝেই হঠাৎ গাড়িতে বসে আছি। চারিদিক থই থই গ্রীন ম্যাংগো জ্যামে নহে, ট্রাফিক জ্যামে। সামনেই দাঁড়িয়ে এক নতুন বৌ রিক্সা। নতুন বৌ বলার কারণ সেই ছোট্টবেলার মত নানান সাজপোশাক ঝালর লাগানো তার চারিপাশে। ঢাকা শহরের ইদামিং কালের রিক্সাগুলো বড় রসকষহীন। সাথে সাথে মনে পড়ে গেলো ছোটবেলায় রিক্সার পিছে আঁকা শাবানা জসিম ববিতা, বাঘ , পঙ্খীরাজের ছবিগুলির কথা। এসব দেখে আমি মুগ্ধ আর মুগ্ধ হতাম। এই রিক্সার পিছেও দেখি অমনি এক পদ্মফুল আর দুই পাশে দুইটা ময়ুর। নীচে লেখা সাথী আর্ট। আর অমনি দেখি রিক্সা থেকে হঠাৎ লাফিয়ে নামলো একটা রঙচঙে ভূত। আর সে আমার গাড়ির বদ্ধ জানালার কাঁচ গলে ঢুকে এসে বসলো আমার পাশে। আমি বললাম তুমি কে হে?? সে বললো আমি রিক্সা আর্ট ভূত। তোমার ঘাড়ে চাপবো বলে পাশে এসে বসেছি। আমি বললাম না না কোনো দরকার নেই বাবাজান, দাদাজান। এই খেত্তু মার্কা রিক্সা আর্ট আমি করতে পারবো না। সে ভীষন রেগে বিরাশী সিক্কা ওজনের এক ধমক দিয়ে বলে- তুই করবি না!!!!!!! গাক গাক !!!!!!! তোর ঘাড় করবে!!!!!!!!! গাক গাক। ছোটবেলায় অমন হা করে দেখতিস কেনো আমাকে গাক গাক!! এই ভূতটা নাকি সুরে কথা বলে না বলে গাক গাক করে। বলেই সে চেপে বসলো আমার মাথায়। অনেক কষ্টেও কিছুতেই ছুটাতে পারলাম না তাকে। আমি বাড়ি ফিরেই বসে গেলাম ছোট থেকে আমার দেখা যত তত রিক্সা পেইন্টিং এ। হাতের কাছে যা পেলাম হাড়ি, কুড়ি, বাসন, গেলাস, কেটলী, ট্রে, টিকাপ। তাতেই সেই রিক্সা পেইন্ট করতে শুরু করলাম।
এই যে এক কেটলীর বাচ্চাকাচ্চাসহ রিক্সা পেইন্টের বাচ্চা এঁকে ফেললাম।
এই যে কেটলীর বাচ্চা কাচ্চা জ্ঞাতিগুষ্ঠিদের সাথে পারফিউমের এক সুন্দর বক্সকেও রাঁধা কৃষ্ণ বানিয়ে দিলাম।
বাহ কি সুন্দর দেখো ছবি আপুনি!!!!!!!!! এতা তোমাল দন্য।
এই যে আরেকটা। এটা কার জন্য?
কাঁচের এই জার দুইটার কাঁচের ঢাকনী ভেঙ্গে পড়েছিলো অনেক দিন। এই সুযোগে এগুলোকে বানিয়ে দিলাম মিল্ক পট, স্যুগারপট।
রিক্সা পেইন্টের ভূত ভিডিও বানালাম বসে বসে। এইবার ভূত দূর হয়ে যা আলাই বালাই কালাই..... প্রতিফলন আমার এই কথা শুনে হাসতে হাসতে মরে যেত এক সময়.....কত কথা মনে পড়ে যায়.... হায় হায় .....
রিক্সা পেইন্টের ভূত ছেড়ে যেতে না যেতেই আবার মাথায় চাপলো চা ভূত। চা ভূত টুং টাং সূরে বলে। রোজ রোজ যে এত চা খাস? লেমন টি,মিল্ক টি, গ্রীন টি, আইস টি, কোল্ড টি, হট টি কই কোনোদিন তো সাজাস না আমাকে, টুং টাং!! আমি বললাম- আরে!!!!!!!!!! তোমাদেরকে নিয়ে আমি এই জীবনে কত সাজালাম!!!!!!!! কত ছবি আর ভিডিও বানালাম। কিন্তু সেই ভূত বলে টুং টাং টুং টাং মানে নো নো নো নো ঐ যে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনলি যে স্যুগার ক্যান্ডি স্টিক লাল নীল হলুদ সবুজ টুং টাং টুং টাং টাং.... সে সব কি মরলে সাজাবি বাঁদরী!!!!!! টুং টাং টুং টাং ....... বাপরে সে তো রেগে মেগে লাফিয়ে আমার ঘাড়েই চেপে বসলো। উনাদেরকে নিত্য নতুন স্টাইলে সাজাতে হবে। কি আর করা এই টুং টাং ভূতটাকে নামাতেই অপরূপা স্যুগারস্টিকে চা তথা মিঃ টি টিং টং কে সাজিয়ে গেলাম কয়েকদিন।
ওহে সুন্দর মরি মরি ....
তোমায় কি দিয়ে বরণ করি.....
স্যুগারস্টিক স্টাইলিশ চা
পুতুলনাচের ভূত তো অনেকগুলো বছর যাবৎ ঘাড়ে চেপেই রয়েছেন। আমি নামাতে চাইলেও আমার স্কুল তাকে নামতে দেয় না। কাজেই সে এখন ডালভাত আমার কাছে। তবে এবারে স্কুলের কার্নিভালে মাথায় চাপলো বায়োস্কোপের ভূত। আরে এটা তো আমি অতি সহজেই পারবো। আর পাপেট শো টুনটুনি আর রাজার গল্প ছিলো এবারের অনুষ্ঠানে। সেটা তো পুারন ভূত।
ছবিতে আসল বায়োস্কোপ ওয়ালা আসল ভূতের মত দাঁড়িয়ে আমার পাশে আর আর তার কাজ কেড়ে নেওয়া আমার কর্মকান্ডে সে বড়ই বিরক্ত।
পাপেট শো টুনটুনি আর রাজার গল্পের রিহিয়ারসেলের সময় রাজা মশাই
রাজার সাত রাণী
সান্ত্রী সেপাই টুনটুনি আর মহারাজা
রাজা খেতে বসেছেন আর এমন সময় টুনটুনিটা এসে বলে- ভারি মজা ভারি মজা। রাজা খেলো ব্যাঙ ভাঁজা।
তবে আসল বিপত্তি বাঁধলো শো এর দিনে। ভূত শত্রুতা করলো এইবার। ৮ মিনিটের পাপেট শো এর অডিও এর ৩ মিনিটের মাথায় থেমে গেলো অডিও। আর কিছুতেই চললো না। এইদিকে অডিয়েন্স উসখুশ শুরু করলো। উঠে যায় যায় অবস্থা। আমি এতই কনফিডেন্ট হয়ে গেছিলাম এত বছর ধরে পাপেট শো করে করে যে হাতে স্ক্রিপ্টও রাখিনি। যদিও আমিই লিখেছিলাম স্ক্রিপটা তাই বলে তো আর মুখস্থ ছিলো না? তবুও উপায় না দেখে ওভার কনফিডেন্ট আমি মাইক নিয়ে শুরু করে দিলাম লাইভ ভয়েস। একবার মোটা গলার রাজা তো আরেকবার চিকন গলার টুনটুনি তো আরেকবার রিনরিনে মহারাণী। অবশেষে ভূতকে হারিয়ে শেষ করলাম পাপেট শো টুনটুনি ও রাজার গল্প! নিজেকে বাহবা দিলাম এতটুকু ভয় না পেয়ে ইনস্ট্যান্ট ডিসিশন নেবার জন্য। মাঝে মাঝে আমি দুঃসাহসী হয়ে উঠি।
যাইহোক শেষ হলো পাপেট শো। তবুও কি শান্তি আছে? ইউটিউবে হঠাৎ চোখে পড়ে গেলো ডিআইওয়াই। বাহ কি সুন্দর করে বানিয়ে ফেলছে তেলে জলে মিশ না খাওয়া ল্যাম্পগুলো! দেখতে না দেখতেই এক লাফে সেদিন ছুটির দুপুরে ঢুকেই পড়লো অয়েল ল্যাম্প ভূতটা আমার ঘরে। আর ঘরে ঢুকেই সোজা মাথায় চেপে বসলো। পানি, কিচেন থেকে সয়াবিন তেল, আর কাপড়ের ফুল, সো পিস সব নিয়ে বসে গেলাম ল্যাম্প বানাতে। সলতে বানায় কি করে। আসমা বানিয়ে দিলো সলতে নরম নেকড়া নেহি তো কিয়া হে নতুন ঝকঝকে সাদা কাপড়ের টুকরো হাতে পাঁকিয়ে বানানো হলো সলতে। জ্বলে উঠলো ল্যাম্পগুলো আলো ঝলমল!!
আহা! তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় .....
নীল জলে হলুদ ফুল ভাসে আর আমার মন উড়ে যায় দূরাকাশে ....
হাতের কাছে যা পেলাম তাই দিয়েই একের পর এক টপাটপ ল্যাম্প।
ও ভূত তোদের যন্ত্রনা আর তো প্রাণে সয় না গান গেয়েও লাভ হলো না।
ছুটির দিনে ঘুরছিলাম ইউনিমার্টে। হঠাৎ চোখে পড়লো সিউইডস ফর সুশী। আর অমনি ঐ সি উইডস প্যাকগুলোর তাক থেকে দুম পরে লাফিয়ে পড়লো ঘাড়ে আরেক ভূত। ঘাড়ে চড়েই শুরু করে দিলো চ্যাং চুং প্যাং পুং। আমি বলি কি বলিস রে বাবা ভূত। সে বলে সুশী সুশী। ওহ বুঝলাম আমাকে সুশী বানতে বলছে। আমি কি সেটা বানাতে পারি!!! তাই আমার ঘাড়ে চেপে বাড়ি বয়ে এসে শিখিয়ে দিলো কেমন বানায় সুশী। তোমরাও বানাও আমার সাথে সাথে .....
প্রথমেই দেখো কত সুন্দর হয়েছে না?
লাগবে স্টিকি রাইস। সুশী রোল, আর চিকেন/ফিস/এগ/মিট, আর সালাদের যা যা ভালো লাগে আর সস
সুশী রোলের পাতলা সিউইডসগুলো সুশীম্যাটে রেখে এক কোনা দিয়ে স্টিকি রাইস রান্না করে এক চামচ দিয়ে দেবে।
তার উপর দিয়ে মাছ মাংস ডিম সব্জী সালাদ যা খুশি দিয়ে একটু সস ঢেলে রোল করে নেবে। ব্যাস হয়ে গেলো সুশী। নেমে গেলো চ্যাং চুং ভূত।
এই ভূত কিন্তু জলজ্যান্ত ভূত। তিনি জামা কাপড়ের বিজনেস শুরু করেছে। তার বানানো জামা পরে তাই জোর করে মডেল বানিয়েই ছাড়লেন।
সাজুগুজু করে ছবি তোলানোর ভূত। তার ছবি নেই কিন্তু মডেলবিবির ছবি আছে।
হঠাৎ টিভিতে দেখলাম এক ছোট্ট পিচ্চু মেয়ে কি সুন্দর করে নাচছে। যদি দেখার ইচ্ছা হয়, তোমার নিঠুর মনে লয়, কালিন্দীরও ঘাটে আইসো দুপুরের সময়। বললাম বাহ সুন্দর তো! সাথে সাথেই টিভি থেকে ভূতটা লাফ দিয়ে এসে চাপলো আমার ঘাড়ে।আমাকে দিয়ে গান গাইয়ে নিলো- আমার বন্ধু চিকন কালিয়া, দেইখো আসিয়া ......
গানের ভূত
গান গাইয়েই কি ছাড়লো ভূতটা দেখো আমাকে টিভির ভেতরে টেনেও নিয়ে গেলো!!!!!!!!!
ভূতের পাল্লায় পড়ে আমি বক বক বক বক বক বক ........
উফফফ ভূতেদের জ্বালায় প্রান বাঁচানোই দায়!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫