২০০৮ থেকে আজ ২০২২। জীবনের অনেকগুলো দিন, মাস, বছর, ক্ষন। বলতে গেলে নিরবিছিন্ন ভাবেই থেকে গেছি ব্লগের পাতায়। সেই প্রথম নিকটি থেকে শুরু করে আজকের এই দিনটি পর্যন্ত যতগুলো নিকে আমি লিখেছি তা সবই ধরা আছে এই সব দিনরাত্রীর ব্লগের পাতায়। তখনকার বহুল পরিচিত নিক থেকে লেখা বহুল পঠিত প্রেম কাব্যগল্প সিরিজ "বসন্তদিন" হয়ত কারো কারো মনে আছে, মনে আছে সেই নিকটাও কিন্তু সেই নিকটির হারিয়ে যাওয়াতে কারো কিছুই যায় আসেনি। এটা আমার নিজের কথা বললাম। এই যে এতগুলো দিন ক্ষন বছর মাস ধরে শায়মা নিকটা সকলেই দেখছে ব্লগের পাতায় হয়ত একদিন এই নিকটাও হারিয়ে যাবে প্রথম কিছু দিন মানুষ সে শত্রু মিত্র যাই জুটেছে ব্লগের জীবনে তারা খুঁজবে মনে মনে বা বাইরে বাইরেই কিন্তু তারপর কমে আসবে সেই খুঁজাখুঁজি ব্যপারটা। ঠিক সেই গানটার মতই। তোমাকে খুঁজি না প্রিয়, খোঁজোনা তুমি আমায়..... বুঝির জায়গায় খুঁজি বসিয়েছি।
সে অনেক বছর আগে সাগর সরোয়ার ভাইয়া মনে হয় তখন জার্মানীতে থাকতেন। প্রবাস জীবনের কাজের ফাকেই নিসঙ্গতা কাটাতেই বুঝি উঁকি দিতেন বাংলা ভাষাভাষী এই ব্লগের পাতায়। সেই সাগর সারওয়ারভাইয়া দেশে আসলেন আর তারপর হঠাৎ একদিন তার মৃত্যু সংবাদে কেঁপে উঠলো সমগ্র ব্লগ। সবাই স্তম্ভিত হলো, ক্ষুব্ধ হলো, কষ্ট দুঃখ বেদনা এবং ভালোবাসায় সিক্ত হলো ব্লগ। অনেক অনেকদিন ধরে এই ব্লগের পাতায় ঝুলে রইলো সাগরভাইয়া আর তার সহধর্মিনী রুনির খুনির ফাঁসি চাই। সেই বিচার, সেই খুনি ধরা পড়লো না আজও। লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলো সেই নৃশংস খুন, খুনী আর তার শিকার সাগরভাইয়া। ব্লগের পাতায় ধরা রইলো তার নাম, কিছু লেখা ও সেইসব দিনের সরব উপস্থিতি। শুধু সাগরভাইয়াই আজ নীরব হয়ে গেছেন। আর কোনোদিন তিনি চোখ মেলবেন না। তার সেই আকস্মিক মৃত্যু আমাকে বিষন্ন করে তুলেছিলো। আমি তখন ছিলাম বড়ই আবেগপ্রবন প্রাণী। আজকের এই প্রস্তর কঠিন মনের মানুষ তখনও হয়ে উঠিনি আমি। তার মৃত্যু আমাকে এতই শোকবিহ্বল করে তুলেছিলো যে আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম। লেখার সময় অনেক কেঁদেছিলাম আমি।
তোমার হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া
রাজামশাই ভাইয়া। আমার আজকালকার ফুল নিয়ে সিরিজ লেখা মরুভূমির জলদস্যু ভাইয়াকে দেখলে প্রায় সকল সময়ই যার কথা মনে পড়ে সেই আমার এই রাজামশাই ভাইয়া। রাজামশাই ভাইয়াও খুব ফুল নিয়ে লিখতেন। ফুলের জাঁতপাত বংশ পরিচয় সবই ছিলো তার চেনাজানা। খুব ঠোঁটকাটা জবাব লিখতেন কিন্তু কখনই কাউকে হেয় করে নয়। আর সবচাইতে বড় কথা তিনি বড়ই মজার মানুষ ছিলেন। অনেক মজাও করে কথা বলতেন। সকলকে মন্তব্যে দিতেন স্বর্ণমুদ্রা। এই ভাইয়ার সাথে আমার ইয়াহু মেসেঞ্জারে কথা হয়েছে বেশ কিছুদিন। সেই কারনটাও মজার।
ব্লগে যখন আসি সবকিছুই তখন আমার কাছে নতুন। বাংলা লিখতে পারা। ছাপার আখরের মত করেই লেখা উঠে আসা। মনের কথা যা কিছুই লিখছি কেউ না কেউ পড়ছে। জবাব দিচ্ছে। কালপুরুষ ভাইয়াও খুব উৎসাহ দিতেন। তার কবিতা প্রতিদিনই প্রায় থাকতো ব্লগের পাতায়। এই ভাইয়াটাও অনেক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার লেখা, ছবি তোলা ছবি আঁকা বাপরে! যাইহোক সেই সময়টাতে একটা সিরিজ লিখছিলো কিষান নামে একজন। কিষান কিষানীর প্রেম কাহিনী। সেই সিরিজ পড়েই মনে হয় আমার হৃদয়ের গভীরে গেঁথে গেলো সিরিজ লেখার বাসনা তাই প্রায়ই আমি সিরিজ লিখে থাকি। সে যাইহোক সেই সিরিজের ছেলেটা পড়তো ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মেয়েটাও একই ইউনিভার্সিটি। তাদের প্রেম শুরু, নৌকায় পূর্নিমা দেখার দৃশ্য সবই চোখে ভাসতো আমার। তারপর সেই গভীর পাগলা প্রেমের একদিন মৃত্যু হলো। সেই কারণটা আমি বলতে চাচ্ছিনা। কারো ইচ্ছা হলে নিজেই পড়ে নিতে পারে। কারণ আজ সেই লেখাটার লেখককে কেউ মনে রাখেনি বটে কিন্তু ব্লগের পাতা ধরে রেখেছে ঠিকই সেই লেখাটা।
যাইহোক আমার খুব জানতে ইচ্ছা হত কে এই কিষান? আর সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো সেই সিরিজে কিষানের সাথেই লিখতো সেই কিষানী যাকে একদিন কিষানকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিলো। সেই আপুটা কে সেটাও খুব জানতে ইচ্ছা হত আমার। তারা দু'জনই
নিজেদের জন্যই লিখতে চেয়েছিলেন সেই অমর প্রেম কাব্য তাই জানাতে চায়নি কারা তারা। কিন্তু আমি একদিন জেনে গেলাম ঐ দু'জন কে? এরপর আপুটা নিজেই জানিয়েছিলেন আর স্বপ্নজয়ভাইয়া সেই সিরিজটা নিয়ে বানিয়েছিলেন ইবুক। যাইহোক এত কিছু বললাম কারণ সেই কিষানভাইয়াটাই ছিলেন আমার সেই রাজামশাই ভাইয়া। যিনি কিনা অনেক দুঃখ কষ্ট বেদনা নিয়ে সৌদি আরব কিংবা দুবাইতে ছিলেন একাকী এবং নিসঙ্গ। দেশে ভাইয়ার ফ্যামিলী থাকতেন। ব্লগ অর্থাৎ ব্লগের মানুষেরা দিনে দিনে হারিয়ে গেছেন যারা চিনতেন তারাও হারিয়েছে। প্রায় হারিয়ে গেছে এই হারিয়ে যাওয়া মানুষেরা তাদের নাম কিন্তু ব্লগ বুকে নিয়ে দাঁড়ি্যে আছে তাদের সেদিনের সেই সরব উপস্থিতি। রাজামশাই ভাইয়ার মৃত্যুসংবাদ যেদিন জানতে পাই সেদিন লিখেছিলাম।
এক দেশে ছিলো এক রাজামশাই- যে রাজামশাই চলে গেছেন এক অজানার দেশে-২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:২৮
বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি ভালো নেই। এই কথাটা শুনলে মনে হয় না কেউ সেটা বিশ্বাস করবে। কারন আমি ভালো থাকি বা খারাপ থাকি আমি কাউকে কখনও বুঝতে দেইনা। সব সময় একই রকম থাকার চেষ্টা করি আর সেটা ভালো থাকার চেষ্টা। আমার ভালো থাকাটা বেশ
গাঢ় রঙের । সহজেই চোখে পড়ে সেটা। কিন্তু মানুষের সব দিন সমান যায়না, তাই আমাকেও ইদানিং বেশ খারাপ থাকতে হচ্ছে। নিজেকে অনেক রেগুলার এ্যাকটিভিটি থেকে বিরত রাখতে হচ্ছে। তাই আগের মত নাচ, গান বা লেখালিখি থেকে একটু দূরে ছিলাম এবং আছিও।
যদিও আমি নিজেই এখন অনেকটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছি তবুও একটু হলেও ঢু দেই আজও এখানে বা সবার ব্লগই পড়বার চেষ্টা করি এখনও এবং সুযোগ পেলে লিখিও কিন্তু আমার চাইতেও যারা অনিয়মিত বা একেবারেই হারিয়ে যাওয়া ভাইয়া আপুনিরা তাদের কথা স্মরণ করেই লিখেছিলাম এই পোস্টটা। অনেকের সাড়া পেয়েছিলাম আবার অনেকের পাইনি। আজও সেই পোস্টে হারিয়ে যাওয়া অনেকেরই দেখা পাই। আজ হঠাৎ একটু আগে ঐ পোস্টে মেহবুবা আপুনির কমেন্ট দেখতে গিয়ে আমি থমকে গেলাম। বেশ কিছুক্ষন মাথাই ঢুকছিলোনা আপু কি বলতে চেয়েছেন। আপু লিখেছেন-
১৩৯. ২৬ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:২২ ০
মেহবুবা বলেছেন: "২৭.রাজামশাই-এই রাজামশাই নিয়ে আমি রীতিমত রিসার্চ করেছিলাম । হা হা এবং শেষ পর্যন্ত পুস্পপ্রেমী এই ভাইয়া রিসার্চে সফলও হয়েছিলাম আমি। ভাইয়া যদি কখনও আমার এই কথাগুলি পড়ে নিশ্চয় মনে মনে ক্ষেপতে থাকবে। যদিও ভাইয়াটাকে কখনও রাগ করতে দেখিনি আমি। কোথায় গেলো ভাইয়াটা সব ফুলগুলি নিয়ে ?
http://www.somewhereinblog.net/blog/mohdfiendblog
সব ফুল দিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে।
ছুটে গেলাম ভাইয়ার পোস্টে । তার লাস্ট পোস্টে কেনো যেন আমার যাওয়া হয়নি।
শেষ পোস্ট
সেখানে দেখলাম গিয়াসভাইয়া লিখেছেন-
১০. ১৫ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১ ০
গিয়াসলিটন বলেছেন: এই মাত্র জানতে পারলাম এই পোস্ট দাতা ব্লগার রাজা মশাই ইন্তেকাল করেছেন । ইন্নানিল্লাহি অয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন ।
ভাইয়া গত ১৫ই জুন ছেড়ে গেছেন চিরতরে আমাদেরকে সেকথা আমি আজ জানতে পেলাম। ভীষন মনটা খারাপ হলো।
আমার রাজামশাই ভাইয়া। ভাইয়া ২০০৮ সালে এই ব্লগে রাজামশাই নামে এসেছিলেন। সেই প্রিয় ভাইয়াটার পোস্টের সবচাইতে প্রিয় সাবজেক্ট ছিলো ফুল। সেই ফুলওয়ালা ভাইয়া আর কোনোদিন লিখবেন না কোনো পোস্ট। ভাবতেই কি এক অজানা কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়াকে যখন প্রথম জানি, একটা রাজার ড্রেস পরা প্রোপিক আর কারো পোস্টে মন্তব্যের ঘরে পোস্ট পড়ে খুশী হলে কিছু স্বর্নমুদ্রার ছবি দিতেন। বলতেন এই নে খুশি হয়ে দিলাম। খুব অল্প কিছু কথা কিন্তু খুব মজা লাগতো সেটা দেখে।
এরপর তার আরও এক নিকের হদিশ খুঁজে বের করেছিলাম। সে ছিলো এক রহস্য আর আমার অনেক আনন্দের একটা দিন। কারণ রুপকথার রাজামশাই এর মতনই সে ছিলো এক রুপকথার গল্প। রাজামশাই ভীষন ভালো একজন মানুষ ছিলেন। বেশ গাম্ভীর্যের সাথে রসিকতা করতেন তিনি। ফুল বিষয়ে অগাধ জ্ঞান। দেশের বাইরে ছিলেন সে সময়টা। বুদ্ধি খাঁটিয়ে বের করেছিলাম তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
আমি তাকে রাজামশাই ভাইয়া ডাকতাম তাই তিনি রাগ করে বলতেন রাজামশাই ভাইয়া আবার কি শুধু রাজামশাই বল। ভাইয়ার সাথে অনেক আগে মেসেঞ্জারে কথা হত। ভাইয়া আমাকে এ্যাড করেছিলেন আমার নির্ভূল অনুসন্ধানের খবর পেয়ে। খুব জানতে চেয়েছিলেন কি করে আমি এত বড় গোয়েন্দা হলাম। ভাইয়াকে বলেছিলাম এই গোয়েন্দাগিরি ছিলো তাকে অনেক অনেক ভালো লাগার কারণ।
যাই হোক,রাজামশাভাইয়া বেশ আবেগী ছিলেন, একটু অভিমানীও বুঝি। একবার তিনি বেশ রাগ করে ব্লগ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন।
এইটা রাজামশাই এর শেষ পোষ্ট নয়
নিবিড় অভ্র বলেছেন: .
রাজামশাই আপনি চলে গেলে এই অধমদের কি হবে......???
আমি কার কাছে ফুরুস ..... চন্দ্রপ্রভা.... কিংবা..... শারঙ্গ ফুলের খোঁজে যাব!!! প্লিজ.....
নিবিড় ভাইয়ার মত অনেকেই এইভাবে বাঁধা দিয়েছিলো তাকে আর তিনি ফিরেও এসেছিলেন। সবার এত ডাকাডাকি বা অনুরোধ তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি।
২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৩ ০
লেখক বলেছেন: আইলাম ফিরে
ভাইয়া ফিরে এসেছিলেন আবারও লিখেছিলেন ফুলেদের গল্প কিন্তু আজ শত ডাকলেও ফিরবেন না তিনি । আমার রাজামশাই ভাইয়া চলে গেছেন অচিনপুরের এক অজানা দেশে। ভাইয়া তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া আর ভালোবাসা। অনেক ভালো থেকো তুমি ঐ অজানার দেশে। একে একে সাগর ভাইয়া গেলেন, ইমন ভাইয়া গেলেন, তুমিও চলে গেলে।
আমরাও আসছি। আমি আসছি...
এম এম ওবায়দুর রহমান ভাইয়া। অসাধারণ এক গল্পকার ছিলেন ভাইয়া। একটা সময় তার ছোট গল্প লেখার অসাধারণ দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে যেতাম আমি। মনে বাঁজতো তখন সেই গান তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী আমি শুনি শুধু অবাক হয়ে শুনি... হ্যাঁ সেসব দিনে আমি খুব গান শুনতাম। গান শুনে কাঁদতাম, হাসতাম। আজকের মিররডল আর একলব্য শুভভাইয়াকে যখন কথায় কথায় গান শুনাতে দেখি আমার মনে পড়ে আমার ফেলে আসা সেসব দিনের কথা।
যাইহোক বলছিলাম ওবায়দুল হক ভাইয়ার কথা। ভাইয়ার সেসব অসাধারণ গল্প পড়ে মুগ্ধ হতাম আমি। একই সাথে ভাইয়ার মজার মজার মন্তব্য ও কর্মস্পৃহার অনেক উদাহরনও ছিলো এই ব্লগের পাতায়। হঠাৎ ভাইয়া লেখালিখি বন্ধ করেছিলেন ব্লগের পাতায়। থামিয়েছিলেন এখানে লেখালিখি কিন্তু হঠাৎ গত বছর থেমে গেলেন ভাইয়া তার জীবন থেকেই। হঠাৎই জেনেছিলাম তার মৃত্যুসংবাদ। শোকবিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম শুনে। ভাইয়া চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে তবু জেগে আছে ভাইয়ার ব্লগের পাতা। ভাইয়ার মন্তব্যগুলি। মাঝে মাঝে যখন পুরোনো লেখায় চোখ বুলাই চোখ পড়ে যায়। ভাইয়ার নামটা মনে আসে। চোখে ভাসে ভাইয়ার ক্যাপ পরা হাসিখুশি মুখটা।
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ভাইয়া। আজও যারা ব্লগে আসে তারা অনেকেই তার নামটা আজও ভুলে যায়নি। ভাইয়া বেশিদিন আমাদেরকে ছেড়ে যায়নি তবে ভাইয়ার অসাধারণ সব গল্পগুলি আর ভাইয়ার সুহৃদ মন্তব্যগুলি জেগে আছে যারা তাকে চিনতেন সকলেরই হৃদয়ে। ভাইয়া অসাধারন গল্পকারই নন বড়ই মিষ্টভাষী এবং নির্বিবাদীও ছিলেন। ব্লগে লিখতে গিয়ে আমরা নানা রকম বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হই, মত বিরোধ ক্রোধ জন্মায় কিন্তু আমার ধারনা ভাইয়া এমন কোনো পরিস্তিতিতে কখনই পড়েননি। অত্যন্ত ভালোমনের মানুষ এই ভাইয়াটা যেমনই ছিলো ব্লগের সম্পদ তেমনই মূল্যবান স্মৃতি নিয়ে জেগে থাকবেন তার পাঠক ও ভক্তকূলের হৃদয়ে। পরবর্তী প্রজন্ম যারা জানবে না চিনবেও না তাকে ব্লগের পাতা হয়ত চিনিয়ে দেবে তাদের কাউকে কাউকেই তার ধরে রাখা লেখাগুলি ও মন্তব্যের মাঝেই।
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন। সরল মনের এই ভাইয়ার এই বয়সের আকস্মিক মৃত্যু দাগ কেটেছিলো সকলের হৃদয়েই। তার এই আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে স্তম্ভিত হয়েছিলাম আমরা সবাই। হেনা ভাইয়ার মতই আরেক নির্বিবাদী সহজ সরল ভালো মনের মানুষ এই ভাইয়াটাও হারিয়ে গেলো হঠাৎ খুব সম্প্রতি। তার মৃত্যুর খবর কেউ জানিনি আমরা। হঠাৎ একদিন ফেসবুকের ইনবক্সে একজন পুরানো ব্লগার ভাইয়া আমাকে জানাতে বলে ব্লগের উদ্দেশ্যে। এই সংবাদ আমাদেরকে দ্বিধা দ্বন্দে ফেলে দিয়েছিলো। যাইহোক সকল সন্দেহ দ্বিধা কাটিয়ে অবশেষে প্রমানিত হয়েছিলো ভাইয়া আর কোনোদিন লিখবে না এই ব্লগে গাইবে না আর কোনোদিন তার দরাজ কন্ঠের গানগুলি।
আমার ইমন জুবায়ের ভাইয়া । ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮ ২০০৮ এর অক্টোবর থেকে হঠাৎ একজনকে এই ব্লগে লিখতে দেখি। তার লেখাগুলো নতুন ব্লগারেরা সচরাচর যেমনটা লিখে থাকেন তেমনটা নয়। তার প্রথম লেখাটা ছিলো রবিঠাকুর সন্মন্ধীয়। তখন আমি আকন্ঠ রবিঠাকুরেই ডুবে থাকতাম কাজেই লেখাটা চোখে পড়লো ঠিকই কিন্তু কেন যেন কোনো মন্তব্য করা হলোনা। হয়তোবা এমন গুরুগম্ভীর লেখাটায় মন্তব্যের কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি আমি সেদিন। তারপর একের পর এক তার জ্ঞানগর্ভ লেখাগুলি দেখে একটু ভয়ে ভয়েই থাকতাম। কাছ ঘেষতামনা খুব একটা তার। হ্যা আমি ইমন ভাইয়ার কথাই বলছি। আমাদের ইমন জুবায়ের ভাইয়া।
এরপর তার সাথে আমার কিছুটা সখ্যতা হলো তার রাগসঙ্গীত বিষয়ক পোস্টগুলোদেখে। ততদিনে আমি জেনে গেছি ভাইয়া ব্ল্যাকের জন্য গান লিখেছেন অনেক অনেক। যাইহোক সেসময় আমি ছায়ানটে রাগ সঙ্গীতের কোর্স করছিলাম। সেখানে একজন পিচ্চি ভাইয়া ইমন জুবায়ের দেখে আমি ধরেই নিলাম সেটাই এই ইমন ভাইয়া। আমি সেখানে তাকে কিছুই জিগাসা করিনি কিন্তু ব্লগে এসে তাকে সেকথা জিগাসা করতে উনি হেসেই খুন যদিও উনি খোলাসা করে দিলেন যে ছায়ানটের সেই ইমন তিনি নন তবুও তার সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানালেন না তার স্বভাবসিদ্ধ গাম্ভীরতায়।
২০০৯ এর ১৭ই অগাস্ট। হঠাৎ অবাক করে দিলেন ইমনভাইয়া আমাকে আমার জন্মদিনে।
শুভ জন্মদিন অপ্সরা
এই পোস্টটিতে উনি সবার আগে শুভেচ্ছা জানালেন আমাকে আর নাফিস ইফতেখারকে। তার আগে ভাইয়াকে কবে কোথায় কখন আমি বলেছিলাম আমার জন্মদিনের কথা সেকথা আর মনে নেই আমার। শুধু মনে আছে এত অবাক হয়েছিলাম! এত ভালোলাগা, এমন শুভেচ্ছার আনন্দ আসলেই অভাবনীয় এক মুহুর্ত ছিলো আমার কাছে।
এর কিছুদিন পর বাচ্চাদের নিয়ে লেখা আমার এক পোস্টে ভাইয়ার কিছু কমেন্টে বুঝতে পারি বাচ্চাদের জন্য তার এক বুক ভালোবাসার কথা। সত্যি বলতে কি একমাত্র এই পোস্ট টিতেই আমি দেখেছিলাম ভাইয়ার স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য্যের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। শিশুসুলভ চপলতায় উনি আমাকে দিয়েছিলেন উনার ভাগনীর বেশ কিছু ছবি। সেসব ছবি এডিট করে করে রাজকন্যা, কখনও বা ফেইরী এসবে সাজিয়ে দেবার খেলায় মেতেছিলেন তিনি।
এরপর আমি অন্য নিকে চলে আসলাম। বেশ কিছুদিন জানতে দেইনি কাউকেই সেই পুরানো আমিকে। ভাইয়ার সাথে একটা দূরত্ব তৈরী হলো।আমি তাকে ঠিকই চিনতাম কিন্তু উনি আমাকে আর তখন চিনতে পারতেন না। তবুও লুকোচুরির ছলে অনেক অনেকবার তার পোস্টে কমেন্ট করে আসতাম আমি। এমনি একদিন তার এক পোস্টে ভাইয়াকে জানালাম আমি ২১ ডিসেম্বর নিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের কথা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ভাইয়া এমন একটা পোস্ট দিলেন আমাকে যে আমি আবারও অভিভুত হলাম! নিশ্চিন্ত হলাম আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার ব্যাপারে।
না, শায়মা আপা, ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না
নাহ ২০১২ তে পৃথিবী ধ্বংস হয়নি। বেশ কিছুদিন যাবৎ ভাইয়া কিছুটা নীরব হয়ে গিয়েছিলেন যেন তবুও মাঝে মধ্যেই উঁকি দিতেন আমার সব হাবিজাবি পোস্টে। কবিতায় বা তার এতটুকু ভালো লাগার পোস্ট হলেও দিয়ে আসতেন কিছু প্লাস! ফেসবুকে আমি তাকে জ্বালিয়ে মারতাম। ভাইয়া হু হা করে চুপ হয়ে যেতেন। ইদানিং বেশ চুপচাপ থাকতেন। আজ হঠাৎ সকালবেলা ফেসবুক খুলে সুরন্জনা আপুর স্টাটাস দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম!! ব্লগে এসে নিশ্চিৎ হলাম রেজোয়ানার পোস্ট দেখে।সাথে সাথে ভাইয়ার ব্লগে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারলাম না। তার প্রিয় পোস্টের তালিকার সবার আগে চোখ আটকে গেলো।
ভাইয়ার প্রিয় পোস্টে-
!!টোনাটুনি পিঠাঘর - বাংলাদেশের ১০১ পিঠাপুলির নাম ও গড়ন বা রচনা সমগ্র!! - শায়মা
ভাইয়া তুমি নেই তবে তুমি ছিলে এই ব্লগ বা সমগ্র ব্লগসমাজের গর্ব! এমন একটা মানুষও বুঝি খুঁজে পাওয়া যাবেনা যার এ ব্যাপারে দ্বিমত থাকতে পারে। তোমার অবদান শুধু ব্লগেই নয় সঙ্গীত জগতেও কম নয়। তোমার জ্ঞানের পরিধি কত বেশি বিস্তৃত ছিলো তা হয়তো আমার সারাজীবনে পরিমাপ করেও শেষ করা হবেনা। আমি ভেবে পাইনা ইতিহাস, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, মিথ, সঙ্গীত, শাস্ত্র কোন বিষয়েই না তুমি জানতে! তোমার মত আর একটি ইমন জুবায়ের হয়তো শত বর্ষেও জন্মাবেনা এইখানে।
তোমার মত নির্বিবাদী একনিষ্ঠ ও সকল সমালোচনার উর্ধে একজন মানুষকে আমি সত্যিই আর কখনও দেখিনি। চর্মচক্ষুতে দেখা হয়নি তোমাকে তবে মনের চোখে যতটুকু দেখেছি তাতে তুমি এক অসাধারণ মানুষ ছিলে। তোমার তুলনা শুধু তুমিই।
আর কখনও অবাক হবোনা ওমন কোনো শুভেচ্ছায়, ওমন কোনো আনন্দে যা এক জীবনে তুমি আমাকে একদিন ভাসিয়েছিলে। আর কখনও কিছু জানতে হলেই জিগাসা করতে পারবোনা তোমাকে। কেউ আর সান্তনা দিয়ে প্রমান করেও দেবেনা যে পৃথিবী ধ্বংস হবেনা। আমার কোনো ভয় নেই । সব ভয়কে জয় করে তিনি নিজেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর কখনও কোনোদিন কোনো লেখা ভেসে উঠতে দেখবোনা তার এই ব্লগের পাতায়। যার লেখকের জায়গাটায় লেখা থাকবে ইমন জুবায়ের। তবুও তুমি বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে। যে কোনো আলোচনায় শ্রেষ্ঠ লেখকের নামে উঠে আসবে তোমার নাম! অনেক অনেক ভালো থেকো ভাইয়ামনি!!! যেখানেই থাকো!!!!!
একদিন তুমি লিখেছিলে আমার এই ব্লগে প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্ট আর আমি আজ লিখছি তোমার মৃত্যুদিনের শোকসন্তপ্ত স্মৃতির পোস্ট।এর চাইতে বেদনা আর কি হতে পারে? বলতে পারো ভাইয়া তোমার ওই ওপারের দেশ হতে?
এই ছিলো ভাইয়াকে নিয়ে লেখা আমার কিছু কথা। ভাইয়ার লেখাগুলি ব্লগের সম্পদ হয়ে বেঁচে রইবে চিরকাল এই ব্লগের পাতায়।
কি করি আজ ভেবে না পাই ভাইয়া কিংবা কি করি আজ ভেবে না পাই ভাইয়ামনি। এমন উচ্ছল জীবন খুব কম দেখা যায়। এই উচ্ছলতা, এই জ্ঞান গরিমা ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণ ও মগজের মাঝেও যে বাস করতে পারে এমন কিছু অসুস্থতা বা কষ্টকর জীবন তা মনে হয় আমার জেসন ভাইয়া বা কি করি আজ ভেবে না পাই ভাইয়াকে না দেখলে না জানলে জানাই হত না। এই ব্লগজীবনে আমি যাদের সাথে হেসে কাটিয়েছি অনেকগুলো দিন ভাইয়া তাদের মাঝে একজন। ভাইয়া আর আমি ছড়া ছড়া লেখা লিখতে লিখতেই ছড়াকার হয়ে উঠেছিলাম। যদিও আমি সকল সময় বলেছি আমি তোমার গুরু। ভাইয়া সেটা মেনেও নিয়েছে কিন্তু আমি জানি গুরু মারা বিদ্যা কি? ভাইয়ার ছড়া সেই বিদ্যার আলোয় আলোকিত ছিলো। কারণ আমি ভাইয়ার মত জীবনের প্রতিটি কোন দেখিনি। ভাইয়ার জানা আছে দেশ ও বিদেশ, ভাইয়ার জানা আছে উঁচু থেকে নীচু তলা। ভাইয়ার জানা আছে রাজনীতি দর্শন সাহিত্য ও কাব্য। আমি তো এত কিছু জানি না। তাই ভাইয়ার ছড়া বা আমাদের ভাষায় দেওয়া নাম ছড়িতা তার ক্ষয় নেই।
সেই সব ছড়িতা ছড়িয়ে আছে ব্লগের পাতায় শুধু ভাইয়ার কোনো খবর নেই। ভাইয়া যেন একেবারেই উধাও হয়ে গেছে আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে। জুন জুলাই এর দিকে আমি অনেক অনেক বড় ঝামেলায় পড়েছিলাম। ব্লগ বা ফেসবুকের সময় ছিলো না আমার জীবনে। কেউ হয়ত বিশ্বাসই করবে না তাই কি হয়! আজকালকার দিনে! ফেসবুক বা ব্লগেই আসবে না তুমি! এও কি সম্ভব তোমার মত পাঢ় ব্লগ পাগলার পক্ষে! হ্যাঁ সম্ভব কারণ আমি যখন কোনো কিছুর পিছে সত্যিই লাগি তখন আমার দিন দুনিয়া ব্লগ ফেসবুক সব একদিনে থাকে আরেকদিকে থাকে সেই লেগে থাকার জয়। ঠিক এমন এক সময়ে ভাইয়া আমাকে অনেকবার মেসেজ দিয়েছিলো। হয়ত কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু প্রায় এক দেড় মাস পর আমি যখন ফিরলাম ভাইয়াকে অনেক ডাকাডাকির পরেও ভাইয়া আর কোনো উত্তর দেয়নি। জানিনা ভাইয়া কি বলতে চেয়েছিলো। হয়তো তার ছড়িতাগুলি নিয়ে সংকলনের কথাই অথবা কোনো ইচ্ছা বা মনের কথা। জানিনা আমি। শুধু জানি ভাইয়া অনেক অসুস্থ্য। বাসাতেই আছেন উনার দেশের বাড়িতে। ভাইয়া আর আসেনা ব্লগে।
কেউ কাউকেই মনে রাখেনা বেশিদিন আজকালকার এই ব্যস্ত জীবনে। শুধু ব্লগের পাতাই ধরে রাখে সকলের সরব উপস্থিতির দিনগুলি, মূল্যবান কিংবা খুবই ছেলেখেলার আচরণ ও অবদানগুলি। ব্লগের জন্য ভালোবাসা....... বেঁচে থাকুক ব্লগ আরও অনেক বছর গুটি গুটি পায়ে কিংবা মূমুর্ষ হৃদয়েই তবুও ব্লগ বেঁচে থাকুক যতদিন পৃথিবী বেঁচে থাকে।
কিছুদিন আগে নুরুভাইয়াকে হারিয়েছি আমরা। লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে আজ আরও অনেক হারিয়ে যাওয়া মানুষের কথা। সামু পাগলা, স্বর্ণা, দুরন্ত স্বপ্নচারী, ইশতিয়াক চয়ন, নদী ভাইয়া, মাহী ফ্লোরা আপুনি, রেজওয়ানা, নুশেরা আপুনি অনেককেই.... যারা জেগে আছে পৃথিবীর বুকে তবে এই ব্লগের বুকে তাদের আর পদচিহ্ন পড়ে না। বেঁচে থাকলে হয়ত আবারও কখনও লিখবো কিংবা লিখবো না তাদেরকে নিয়ে। নয়ত লুকিয়ে রাখবো হৃদয় গহীনে।
আজকের এই বিশেষ দিনে সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনায় ভাসা এই ব্লগের খাতায় জুড়ে দিলাম আরও একটি পাতা। ধরে রাখুক এই লেখাটাও আমাদের প্রিয় এই ব্লগ যেখানে লিখে দিলাম হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষগুলোর নাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:০৩